ইংরাজি সাহিত্যের ডক্টরেট অরূপা পটঙ্গীয়া কলিতা আধুনিক অসমিয়া সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নাম। পাঠক-সমালোচক মহলে বিপুলভাবে সমাদৃত এই লেখক ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। সেগুলো মধ্যে আছে ১৯৯৩তে পশ্চিম বাংলার ‘সাহিত্য সেতু’ নামের লিটিল ম্যাগাজিনের থেকে শৈলেশ চন্দ্র দাসগুপ্ত সাহিত্য সেতু পুরস্কার, ১৯৯৫তে ভারতীয় ভাষা পরিষদ পুরস্কার, ১৯৯৮তে দিল্লীর ‘কথা’ নামের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির দেয়া ‘কথা পুরস্কার’। ১৯৯৫তে অসম সাহিত্য সভার দেয়া ‘বাসন্তী বরদলৈ স্মৃতি পুরস্কার’ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি এই বলে প্রত্যাখ্যান করেন যে সাহিত্য কর্মে তিনি লেখকের লিঙ্গভেদ মানেন না।
১৯৯৪তে প্রকাশিত তাঁর ‘অয়নান্ত’ নামের উপন্যাসটি অসমিয়া উপন্যাসের প্রথম শ্রেণির গুটি কয় উপন্যাসের মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। অয়নান্তের ন’ বছর পর তিনি লেখেন এই বিখ্যাত উপন্যাস ‘ফেলানি’। ২০০৩এ প্রকাশিত এই উপন্যাসের পটভূমি গেল কয়েক দশকের জাতিদাঙ্গাতে অভিশপ্ত ও অশান্ত অসম। জাতিদাঙ্গা ও উগ্রপন্থার শিকার দরিদ্র মানুষের যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনের এক মর্মস্পর্শী উপন্যাস এটি। ‘ফেলানি’র চরিত্রগুলোর অবস্থান সমাজের প্রান্তে , কেন্দ্রে নয়। সমাজ যে মানুষগুলোকে দূরে নিক্ষেপ করছে তাদের প্রতীক। আবার সমাজের কেন্দ্রকে উপেক্ষা করে প্রান্তীয়তাতেই নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করবার যে প্রক্রিয়া তার ব্যঞ্জনাঋদ্ধ এক সত্তার নামও ফেলানি। মৃত্যু যেমন সহজ তেমনি জীবনের প্রতি সুতীব্র ভালোবাসাও মৃত্যুর বিপরীতে উপস্থাপিত। জাতি-ধর্ম নয়, সুবিশাল মানবতার পরিচয়েই ফেলানির পরিচয়। ‘ফেলানি’র পৃথিবীতে অজস্র চরিত্র আর বিচিত্র ঘটনার মধ্য দিয়ে নিষ্করুণ সমাজ সত্য এবং বাস্তবের মুখোমুখি হয়ে পাঠক যাত্রা করবেন সামাজিক উপলব্ধির অন্য এক সীমান্তের দিকে।
টংলা মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক অরূপা ‘দামল’ নামের সাহিত্য-সংস্কৃতি মূলক অব্যবসায়িক সাময়িকীর সম্পাদনা সহযোগী। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলঃ
মৃগনাভি ( ১৯৮৭), মেপল হাবির রং ( ১৯৮৯), মরুযাত্রা আরু অন্যান্য ( ১৯৯২), অয়নান্ত ( ১৯৯৪), মরুভুমিত মেনকা আরূ অন্যান্য (১৯৯৫), কাঁইটত কেতেকী (১৯৯৯), পাছ চোতালর কথকতা (২০০০) , অরুণিমার স্বদ্বেশ (২০০০), মিলিনিয়ামর সপোন (২০০২) }
‘যে গাছে ফল ধরে না
তাকে বলে নিস্ফলা
কিন্তু কেউ কি পরীক্ষা করে দেখেছেন মাটি?
যে ডাল সহজে ভেঙ্গে যায়
তাকে বলে ঠুনকো।
কিন্তু তার উপর কি জমেনি অজস্র বরফ?’
---- বার্টল ব্রেখট
ফেলানি আমি অনুবাদ করছি দীর্ঘদিন ধরে আমার এক আলাদা ব্লগে। ভেবেছিলাম সপ্তাহে এক অধ্যায় করে করে ফেলব। সে হিসেবে এতো দিনে এটি সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু কাজে নেমে দেখি ততো সহজ কাজ ছিল না, অনেক সময় একেকতা শব্দের জন্যে বহুদিন অপেক্ষা করতে হয়। কখনো বা একবার এক অধ্যায় করে মনোমতো ভাষাটাকে দাঁড় করাতেও সময় নেয়। তার পর এই কাজ ও কাজের চাপতো আছেই । তবু আশায় আছি শীঘ্রই সেরে ফেলতে পারব। এ অব্দি ১৯ অধ্যায় অব্ধি করে ফেললাম, মানে আদ্ধেকটা হয়েই গেছে। আরো আছে ১৯ অধ্যায়। সব সেরে আবারও সবার পরামর্শ যা পাওয়া যাবে, তাই শীরোধার্য করে ঝাড়াই মোছাই করতে হবে। লেখিকাও মাঝে মধ্যে চোখ বুলিয়ে থাকেন এতে। আমার সৌভাগ্য যে তিনি ইতিমধ্যে উপন্যাসটির শেষ যে সংস্করণ বেরিয়েছে তাতেও এই অনুবাদের কথা উল্লেখ করে রেখেছেন। আমিই বরং তাঁকে আশাহত করছি। যাই হোক যেটুকুনি হলো তাই পড়তে এখানে আসতে পারেন।
২টি মন্তব্য:
অতি সুন্দৰ কাম হৈছে। অসমীয়া কিতাপখন মই পঢ়িছোঁ, উপযুক্ত বিষয়, সুন্দৰকৈ লিখা।
হয়, কিতাপখন পঢ়িহে মই মুগ্ধ হৈ এই কামটোৰ সিদ্ধান্ত লৈছিলো। আশা কৰিছোঁ বঙালী পঢ়ুৱৈয়ে কিতাপখন আদৰি ল'ব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন