(প্রবন্ধটি আমার নয়, পশ্চিম বাংলার কবি গৌতম চৌধুরীর। যিনি শুধু কবিতা লেখেনই না, যে সমাজ তাঁকে লেখায় তার সম্পর্কেও প্রবল সংবেদনশীল, তাই প্রতিবেশী দেশের শাহাবাগ যেমন তাঁকে উৎসাহী করে , তেমনি ব্যথিত করে স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সাহসী যোদ্ধা হুগো শাভেজর অকাল মৃত্যু। সেই দ্বৈত আবেগ মিশে তৈরি এই লেখা। আমাকে পড়িয়েছিলেন মেইলে। ভালো লাগল। ভাবলাম, সেই লেখাটি এখানে তুলেই কেন না, এই সাহসী বিপ্লবীকে সম্মান জানানো যাকঃ ==== সুশান্ত কর।)
চলে গেলেন হুগো শাভেজ।
আর্থরাজনৈতিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের বহমান
লড়াইএর এক অগ্রপথিক ছিলেন তিনি। তাঁর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। স্বৈরতন্ত্রী শাসনের অবসান ঘটানোর পর
জাতীয় সহমতের ভিত্তিতে এক নতুন গণতান্ত্রিক ভেনিজুয়েলার সংবিধান প্রণয়নে নেতৃত্ব
দেওয়া ছিল তাঁর একটি ঐতিহাসিক কাজ। সেখানে স্বীকার করা হ'ল দেশের স্বাধীনতার জন্য
আদিবাসী পূর্বপুরুষদের দীর্ঘ ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের কথা। আর সাংস্কৃতিক ও
জাতিসত্তাগত বহুত্বকে গুরুত্ব দিয়ে, অঙ্গীকার করা হ'ল একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ও
বিকেন্দ্রিত রাষ্ট্র গঠনের।
সেই সংবিধানের একটি
অনন্য বৈশিষ্ট্য হ'ল, স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকার
করা। ইতিপূর্বে ভেনিজুয়েলার
রাষ্ট্রধর্ম ছিল রোমান ক্যাথলিকতা। নতুন সংবিধান হ'ল ধর্মনিরপেক্ষ। তার মানে অবশ্য
এই নয় যে, রাষ্ট্র নাস্তিক্যকে রাষ্ট্রধর্ম বানালো। সংবিধানের প্রস্তাবনায় একবারের
জন্য হলেও ঈশ্বরের উল্লেখ রইল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের ভিতর আনুষ্ঠানিক ধর্মের উল্লেখ থাকল না -
Article 2: Venezuela constitutes itself as
a Democratic and Social State of Law and Justice, which
holds as superior values of its legal order and actions those of life,
liberty, justice, equality, solidarity, democracy, social responsibility
and, in general, the preeminence of human
rights, ethics and political pluralism.
অথচ ভাষিক বৈচিত্র্যের দিকটি সেই সংবিধানে উপেক্ষিত হ’ল না -
Article 9: Spanish is the official
language. The use of native languages also has official status for
native peoples, and must be respected throughout the territory of the
Republic, as constituting part of the cultural
heritage of the Nation and humanity.
নাগরিক সমানাধিকারের প্রশ্নেও বৈষম্যের সূচক
হিসাবে আলাদা ক'রে ধর্মের কোনও উল্লেখ নাই –
Article 21: Al persons are equal before the
law, and, consequently:
1.- No discrimination based on
race, sex, creed or social standing shall be permitted, nor, in
general, any discrimination with the intent or effect of nullifying or
encroaching upon the recognition, enjoyment or exercise, on equal
terms, of the rights and liberties
of every individual.
তাই বলে কি ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি
সেখানে উপেক্ষিত? না, শুধুমাত্র সংখ্যালঘু আদিবাসীদের অধিকার বর্ণনায় তার উল্লেখ
রয়েছে –
Article 119: The State recognizes the
existence of native peoples and communities, their social,
political and economic organization, their
cultures, practices and customs, languages and religions,
Article 121: Native peoples have the right
to maintain and develop their ethnical and cultural
entity, world view, values, spirituality and holy places and places of
cult. The State shall promote the appreciation and dissemination of the cultural
manifestations of the native peoples, who have the right to
their own education, and an education system of an intercultural and
bilingual nature, taking into account their
special social and cultural characteristics, values and traditions.
বৈশ্বিক
আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করার পূর্বশর্ত যে নাগরিক সমানাধিকারের ভিত্তিতে
জাতি-বর্ণ-ভাষা-ধর্ম-নিরপেক্ষ একটি সমাজ ও দেশ রচনা করা, সেটাই মনে হয় হুগো
শাভেজের প্রাথমিক শিক্ষা।এই
শিক্ষা গ্রহণ না করার স্বাধীনতা অবশ্যই আমাদের আছে। স্বাধীনতা আছে, শুধু
মুখের কথায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর। এমন কি তাঁকে স্বৈরতন্ত্রী বলে গালি
দেওয়ার স্বাধীনতাও আমাদের আছে। তবু মনে রাখতেই হয়, বিশ্বের আধ্যিপত্যবাদী
শক্তিগুলি তাকে সমঝে চলতেন। এবং হাত নিশপিশ করলেও, নানান খুচরো হামলা
চালালেও, দল পাকিয়ে ভেনিজুয়েলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেননি। শুধু রাগে গরগর
করতে করতে এইরকম সব কার্টুন এঁকেছেন-
http://www.toonpool.com/user/496/files/hugo_chavez_372375.jpg |
মৃত্যু ছাড়া কেউ তবু তাঁকে দমাতে পারেনি। কেন?
এই জিজ্ঞাসাটুকুই তাঁর প্রতি আমাদের সালাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন