“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

ঝিল

 ।। শৈলেন দাস ।।
(c) Picture:ছবি
         আজকের দিনটা বিজুর কাছে স্পেশাল্। ঘুম থেকে উঠেই শেভিং করে, স্নান সেরে বার বার ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের মুখটা দেখছে আর মনে করছে বড়দা‌র কথাটা- তোকে কিন্তু দেখতে বুম্বাদার মত লাগছে। বুম্বাদা কে?-জানতে চাইল বিজু। আরে বুম্বাদা মানে প্রসেনজিৎ, বাঙালির শেষ নায়ক--বড়দার উত্তর। হাসি পেল বিজুর, তাড়াতাড়ি শার্ট-পেন্ট পড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবল বড়দাকে জানিয়ে গেলে কেমন হয় যে সে আজ ঝিলমিলদের বাড়িতে যাচ্ছে এবং সম্ভবত আজই নিজের মনের কথাটি ঝিলকে বলবে। বড়দা মানে সুবোধ দাস হিন্দুত্ব বাদী রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। আগামীতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলকে জেতানোর দায়িত্ব সম্ভবত তার কাঁদেই পড়বে। সেদিন ঝিল বিজুদের বাড়িতে আসার পর কত গল্প করল। অথচ ঝিল যাওয়ার পর হঠাৎ বলে উঠলেন, ঝিল বোধহয় মুসলমান! বিজুর প্রতিক্রিয়া--- কী বলছ বড়দা! ঝিল ওরফে ঝিলমিল নাথ একজন হিন্দু। দেখিস সামনেই কিন্তু নির্বাচন।
             বড়দাকে একটু চিন্তিত দেখাল সেদিন। বড়দাকে আর জানানো হলনা। সাত সকালেই পার্টির কাজে কোথাও বেরিয়ে পড়েছেন, বিজু তাই ধীরে ধীরে খেয়া পার হয়ে ইণ্ডিয়াক্লাব পয়েন্ট থেকে রিক্সায় চড়ে রওয়ানা দিল ঝিলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। জেল রোডের আপ্ টা নামলেই অম্বিকাপট্টির মুখে একটি ছোট্ট দোতলায় ঝিল ও তার বাবা-মা থাকেন। রিক্সা থেকে নেমে বিজু দেখল, যে বাড়িটার ব্যালকনি থেকে ঝিল তার জন্য অপেক্ষা করছে। সেটি বেশ মনোরম, সামনে ফুলেরবাগান, ব্যালকনিতে টবে টবে বিভিন্ন জাতের ফুল, দেওয়াল বেয়ে উঠেছে একটি পাতা বাহার। গেইট খুলে বারান্দায় উঠতেই বিজুকে স্বাগত জানাতে এল ঝিল। সাথে বেশ সুন্দরী এক মহিলা। পরনে খুব দামী একখান তাঁতের শাড়ি, হাতে মাত্র একটি করে সোনার বালা, কানে ছোট টপ। লক্ষ্যণীয় হল, কপালে সিঁদুর নেই। 
                    ঝিল বলল,--- বিজু ইনি হলেন আমার মা, বাবা বাড়িতে নেই। বেরিয়েছেন কোথাও অফিসের কাজে। সেদিন বিজু ঝিলের বেড রুম থেকে একে একে বাড়ির প্রতিটি ঘর দেখল। নিজের নতুন কম্পুটারে ঝিল কিভাবে ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় তাও শিখল। তারপর অনেক্ষণ গল্প হল ঝিলের মায়ের সাথে। বিজু খুব মন দিয়ে শুনছিল ঝিলের মায়ের কথা, তার ছোট বেলা নাকি কেটেছে বিজুদেরই গ্রামে। বিজুর বড়দাকেও তিনি চেনেন ভালোভাবেই। তবে এখন আর কোন খবরই রাখেন না সেখানের। তার মা-বাবা নাকি চলে গেছেন অন্য গ্রামে ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে ঝিলের মায়ের পরিবেশন করা মুখরোচক খাবার খেয়ে বিজু খেয়ালই করেনি বেলা কখন গড়িয়েছে এগারটায়। এমন সময় মোবাইলে বড়দার মেসেজ,--- বারটায় বাড়িতে থাকিস্, যুবমোর্চার মিটিং আছে তোকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এদিকে ঝিলের মা বললেন,-- আজ প্রথম এসেছো বাড়িতে তাই খেয়ে যেতে হবে। বিজু তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল, আরেক দিন এসে খাব, বলেই ঝিলকে দেখাল বড়দার মেসেজ। ঝিল মাকে বুঝিয়ে বলে নীচে নেমে এল বিজুকে বিদায় জানাতে। 
            বিজু বলল,- তোমাকে কিছু বলার ছিল ঝিল এবং তা আজকেই বলল বলে ঠিক করে এসেছি। ঝিল বলল, তার আগে আমাকে কিছু জানাতে হবে তোমাকে আমার মায়ের সম্পর্কে। বিজু বলল, কী? তারপর ঝিল যা বলল তা শুনে বিজুর মাথায় শুধু বড়দার কথাগুলিই ঘুরপাক খাচ্ছিল- দেখিস সামনেই কিন্তু নির্বাচন.......... ঝিল বোধহয় ........। ঝিলকে বলল, আজ আসি আবার দেখা হবে। বারান্দায় অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল ঝিল। গ্লানি না অভিমান জাগল মনে বুঝা গেলনা। চেয়ে থকল দূর পথে যেখানে ক্রমশঃ ছোট হয়ে যাচ্ছে বিজুর অস্তিত্ব। জানতে চায়নি সে, তার মনের কথা বললনা কেন বিজু।

কোন মন্তব্য নেই: