“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৬

আমার শাড়ি বালিকারা

।। চিরশ্রী দেবনাথ ।।
.................................









মার শাড়িগুলো সব বেলাভূমির মত,
প্রত্যাখ্যান মেলে দিয়ে ছড়িয়ে যায়
আধবুড়ো জ্যোৎস্নায়।
যে শাড়ি মায়ের মৃত্যুদিনে পরেছিলাম,
তাকে সরিয়ে রেখেছি না দেখা কোণে।
থেমে থেমে ফুলে ফুলে উঠছে সেখানে
আরেকটি মৃত্যু প্রস্তুতি।
আনমনা গ্রাম পেরিয়ে যাওয়া ট্রেনের মত
প্রথম দেখার শাড়িটি, ফিরে দেখি না....
কত ঢেউ দিয়েছি তাকে,
এখন শ্যাওলা এসট্রে তে জমাচ্ছি স্বর্ণরেণু,
শাড়ির পাড়ে ঘাপটি মেরে  অম্লস্বাদ, ছুঁড়ি প্রেম।
মা হওয়ার দিন যে শাড়ি পড়া ছিলাম,
তাও আছে, সেখানে কিছু  'আমি' জারিত হচ্ছে,
বয়ঃসন্ধির সব রং গুলছি তাতে
রক্ত, শিরা, ধমনী, তাজা হরমোন ....
মেয়ের সামনে এ শাড়ি তেপান্তর হবে।
তোমার দেওয়া প্রথম শাড়ি,
সাত সমুদ্র তেরো নদীর
বংশীবালিকা অপেক্ষা তাতে ,
লুকিয়ে লুকিয়ে তার গন্ধ স্নান হয়
কদম, ভাসন্ত কদম হয়ে  প্রতিদিন
সঘন বৃষ্টিদিন আমার।
একটি শাড়ি আছে,
এক বিপ্লবীকে ভালোবেসেছিলাম কোনোদিন।
রঙমশাল জ্বলে থাকে ঐ শাড়িতে,
থেকে থেকে নিভে যায় ময়ূরকণ্ঠী শরৎ
তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি ....
কি অজস্র লজ্জাবতী গাছে ঢেকে গেছে
শখের মিছিলভাঙা ভোর রাস্তা।
একটি মাছরাঙা রঙের শাড়ি,
পড়া হয়নি এখনো .....
দীঘির জলে ডুবন্ত দুপুর, সরু লম্বা ঠোঁটে,
তুলে নিচ্ছে একটি একটি অবাধ্য মুহূর্ত,
ঐ শাড়িটি পবো সেদিন,
ছাই ছাই বিশুদ্ধ বিকেল হবো যেদিন।
আমার শাড়ি, এতো মেয়েলি কথা!
বলে নাকি কেউ?
শুধু একটু খানি ভাদ্র দুপুর দিয়েছি ঢেলে,
তাতেই আমার শাড়িবালিকারা
ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে আমায়,
জলে, ঘামে, প্রেমে, বিষাদে, ঋতুস্নানে,
প্রতিক্ষণে আমিই কি তাদের
পদ্মাবতী, সোহাগবতী, রাজকন্যেটি.....

কোন মন্তব্য নেই: