(৭-৮ এপ্রিল, ২০১২ গুয়াহাটিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিটিল ম্যাগাজিন সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা হয়ে এসছিলেন অধ্যাপক
তন্ময় বীর। তাঁর অভিজ্ঞতা সম্প্রতি লিখেছেন দৈনিক সকালবেলা কাগজে। সেটিই এখানে তুলে দিলাম)
শুরুটা শেষ দিয়ে করে যাক্। ১০ এপ্রিল, গুয়াহাটি ছেড়ে দীপর বিল ডানহাতে রেখে সরাইঘাট এক্সপ্রেস এগোচ্ছে; কলকাতায় থামবে সেই ভোরে। ঘনায়মান মেঘ দুপুরের প্রখরতাকে সহনীয় করেছে। দূর পাহাড়ের মাথায় মনখারাপ রঙের মেঘ বিষাদ বিছিয়ে রেখেছে। বৃষ্টি আসার পূর্বাভাস মিলছে। চলমান জানলায় চোখ রাখতে রাখতে কবিতা এলো মনে-
বৃষ্টি আসুক তোড়ে
ট্রেন থেমে যাক
সময় উল্টো হাঁটুক
অঘটন একটা ঘটুক
ঘোষণা হোক অকস্মাৎ
গাড়ী যেন গৌহাটিতে ফেরে
সাধারণত এরকম হয় না, এরকম ভাবালুতা ঠিক আমার ধাতসই নয়। দেখলাম খুব নীচে দিয়ে একটা প্লেন উড়ে গেল, ওই বুঝি বিশিষ্ট সব কলকাতার মানুষরা উড়ে গেলেন; জয় গোস্বামী, নবারুণ ভট্টাচার্য, সন্দীপ দত্ত, বিশ্বনাথ রায়, অরুণ বসু প্রমুখ। ওঁরাও কী আকাশপথে এভাবে নস্টালজিক প্রত্যাবর্তনের কথা ভাবছে। রণেন-’দা (মূকাভিনয় শিল্পী) পাশে থাকলে কথায় কথায় এড়িয়ে যাওয়া যেতো এই পরিস্থিতি, স্মৃতি পেড়ে ফেলতে পারতো না এরকম অক্টোপাসের মতন। তো তিনি বসে আছেন সেই স্লিপার বগির একেবারে শেষ সীমায়, আর আমার টিকিট আপগ্রেট হয়ে হয়েছে টু-এসিতে, একেবারে ট্রেনের মাথার দিকে। অগত্যা কী আর করা, আত্মনিয়ন্ত্রণ করে টেনে বার করলাম মার্কেজের বই, নিঃসঙ্গতার একশ বছর। আসার পথে কিছুটা পড়ে রেখেছিলাম ভেবেছি যাওয়ার পথেই শেষ করবো। ঢুকে গেলাম সেই মাকোন্দো গ্রামের আশ্চর্য সময়ে, যখন সবাই অনিদ্রা রোগের কারণে ভুলে যাচ্ছে সব, অতীত বর্তমান। বিস্মৃতির হাত থেকে বাঁচতে সব জিনিসের গায়ে কাগজ সেঁটে লিখে রাখছে তার বর্ণনা। এমন সময় বিস্মৃতির ওপার থেকে ফিরে আসে মেলকিয়াদেস, সঙ্গে নিয়ে আসে ক্যামেরা। তারই কল্যাণে সকলে ফিরে পায় স্মৃতির চাবিকাঠি। এই ম্যাজিকে যখন ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি তখনই মোবাইল জানান দিল বারতা (মেসেজ) এসেছে। সে লিখেছে- ‘সেফ জার্নি, টেক কেয়ার...’। তখনই বরষা এলো চরাচর ডুবিয়ে। জীবন্ত হয়ে উঠল মালিগাঁও-এর সন্ধ্যা, পথ হারানোর স্মৃতি...
মালিগাঁও কালীবাড়ি গেস্ট হাউস থেকে সিনিয়র রেলওয়ে ইন্সটিটিউসন খুব একটা দূর নয়। একবার চিনে নিলেই হলো। সব্জিবাজারের কাছে রেললাইনের নীচে দিয়ে একেবারে নাক বরাবর। বাম হাতে পাহাড় সঙ্গী থাকবে নাক উঁচিয়ে সর্বক্ষণ। রাস্তায় মানুষজনের দেখা মেলে কদাচিৎ। দু-পাশে মনোহারী পসরা সাজানো দোকান নেই, নেই দৃষ্টিরোধক বিজ্ঞাপনী আলোকোজ্জ্বলতা, গাড়ির মিছিল নেই। এই-পথটুকু যাঁরা ব্যবস্থাপকদের দেওয়া গাড়িতে যাওয়া-আসা করেছেন তাঁরা অনেক কিছুই মিস্ করেছেন। রাতের আঁধার বিদ্যুতের আলোয় সামান্য ম্লান। আর লোডশেডিং হলেই আদিম অন্ধকার ঝুপ করে নেমে আসে পাহাড় চুড়ো থেকে। সেই আঁধারেই পথ হারালাম ∑ তখনই বর্ষা এসেছিল...
এ-গলি সে-গলি ঘুরে অবশেষে জেনারেটরের আলোয় উজ্জ্বল সিনিয়র রেলওয়ে ইনস্টিটিউসন চিহ্নিত করা গেল...
1 টি মন্তব্য:
এটা পড়তে হবে
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন