“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

গুয়াহাটি পর্ব

                           (৭-৮ এপ্রিল, ২০১২ গুয়াহাটিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিটিল ম্যাগাজিন সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তা হয়ে এসছিলেন অধ্যাপক তন্ময় বীর। তাঁর অভিজ্ঞতা সম্প্রতি লিখেছেন দৈনিক সকালবেলা কাগজে। সেটিই এর আগে আমরা ঈশানের পুঞ্জমেঘে তুলে দিয়েছিলাম। পূর্বোত্তরের সাহিত্য নিয়ে যেমন তাঁর আন্তরিক অধ্যয়ন রয়েছে সুগভীর, তেমনি অঞ্চলটির প্রতি রয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার প্রকাশেই কয়েকটি কবিতা লিখে পাঠালেন যখন , আমরা ঈশানের পাঠকদের পড়াবার লোভ সামলাতে পারলাম না)
















১.

খানে এখন বৃষ্টি হচ্ছে জানো !
এখানে আমি পুড়ে যাচ্ছি খর
এখানে এখন বজ্র পড়ছে জোরে
এখানে আমি জ্বলে যচ্ছি জ্বরে

ওখানে এখন মেঘ করছে স্মৃতি ?
ওখানে তুমি কেমন আছো বলো
ওখানে এখন ভিজছো কোন্‌ জলে
ওখানে তাকে ঠেকাচ্ছো কোন্‌ ছলে

ওখানে এখন ভূমিকম্প হবে
ওখানে এখন ঘর ছাড়বার পালা
ওখানে তুমি কেমনে তিষ্ঠোবে
আগুন তুমি কী দিয়ে সামলাবে

এখানে এখন ফুল ফুটেছে দেখো
এখানে এখন রঙালি উৎসব
এখানে আমি একাকী ও একা
তুমি এলেই রাঙিয়ে দেবো সব

এখানে এখন কোকিল ডাকছে গাছে
এখানে এখন ছাপিয়ে যাচ্ছে নদী
তখন আমায় দোষ দেবে না বলো
হঠাৎ গিয়ে হাজির হই যদি

এখানে এখন বৃষ্টি হচ্ছে খুব
এখানে এখন বজ্র পড়ছে জোরে
এখানে আমার ভেঙে যাচ্ছে দ্বার
ভুল বুঝো না, তোমার মতো আমি
এখানে এখন পোড়াচ্ছি সংসার।





২.

বড়ো দেরি হয়ে গেলো
খুব অসময়ে বৃষ্টি
নির্জন একাকী দ্বীপ
ভালোবাসা মাখা...

কোনো ফেরি নেই, জল
শুধু জলীয় ব্যবধান
স্বপ্নের অশ্রু অবিরাম
বৃষ্টি ঝরে...

চারিদিকে ছলাত্‌ছল্‌
কাঁকুরে ছোবোল বাঁচানো
আলগোছে প্যান্ট গোটানো
আমৃত্যু পারে দাঁড়ানো
অপেক্ষমাণ খড়কুটো
স্পর্শকাতর দিগন্তমুখী
অবিবাদী চারু জীবন

সাক্ষীহীন সচিৎকারে বলবে —
এই আমি প্রেমের দাস
শুধু তার গৃহপালিত
ভুলে গেছি ফেরার শপথ

স্রোতশব্দময় একাকী ও দ্বীপে
একবার যেতে দাও নদী
জল — ব্রহ্মপুত্র






৩.

বাঘ নেমে আসে
পথ খুব শ্বাপদসংকুল
উজ্জ্বল মাংসাশী নামে
আদিম আঁধার থেকে
বহ্নিমান স্পষ্ট দিবালোকে

সম্পর্কের ভিতর
কিছুটা তমসা শ্রেয়
কিঞ্চিৎ গুহ্য আমিষ
ন্যূনাধিক চতুষ্পদী
অমার্জনীয় নয় খুব

নাদবিস্তারী মন্ত্রোচ্চার
পুণ্যলোভাতুর ধ্বজাপুজো
নিত্যযজ্ঞধুমে আলোকিত
স্পন্দিত নিভৃত গোপন

চূড়ায় চূড়ায় উদ্ধত পরুষ
বুক চেরা প্রশস্ত মসৃণ
আগ্রাসী সন্ধানী নজর
উন্মুক্ত করে দিচ্ছে
চুম্বন প্রসব আলিঙ্গন

এ প্রগলভ নিসর্গে
কীভাবে আরও একটু
লগ্ন হবে বাহুতে আমার
ভয়াতুর —

সড়কে নেমেছে
ত্রস্ত লাঙ্গুল কৃন্তক ছেদক

গোধূলি বীথিকায়
আমাদের আর কোনো রোমাঞ্চ নেই।


৪.

ফুল তুলছে লোক
পাহাড়তলির পদ্মবনে
মেঘ করেছে সূর্য যাবে পাটে

জাহাজ নামলো উড়ো
ঝুরো ঝুরো বৃষ্টি পড়ে
এখন আমি কোন্‌ দিকে যাই পড়েছি সংকটে

মেখলা ওড়ে গাছে
শুভেচ্ছাতে ভ’রে যাচ্ছে থলি
ফেরার টিকিট জানান দিচ্ছে তাড়া

চুল পড়েছে ঘাড়ে
ঈষৎ ঝুঁকে বাঁকিয়ে আছো গ্রীবা
উল্টো দিকে কে নাড়াচ্ছে কড়া

হৃদয়তলির পদ্মবনে
মেঘ করেছে রঙ ফুটেছে ঠোঁটে
যে যাই বলুক লোকে


ফিরে যাচ্ছি সত্যি যেমন
‘থেকে যাচ্ছি’একথাটা
একেবারে মিথ্যেও নয় বটে।
                                                          (C) Image; ছবি

কোন মন্তব্য নেই: