“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৯

ভাই

।। সুপ্রদীপ দত্তরায়।।
(C)Image:ছবি


















-- সুপ্রদীপদা, একটা কথা ছিল বলার,
-- বল্ ,  এখন বুঝি সময় হলো আসার?
-- আমি আর  আসতে পারলাম কোথায়?
ডিউটি ছিল, বিকেলবেলা রেডিওতে,
আজ কি মিটিং ছিল তোমার?
-- হ্যা, সামনেই তো গানমেলা প্রোগ্রাম ।
তারই পরিকল্পনা, তর্ক আর বিচার ।
-- আমার জন্য জায়গা আছে তো?
-- জানি না রে, ওসব তো ওরাই করে ঠিক
আমার শুধু থাকতে হয় তাই থাকা,
নইলে কোথায় আমার সময় আছে
দেখবো এসব দিক ।
-- তবু দাদা, তুমি যদি বলে দাও না --।
-- কি ?
না মানে তোমার কথাতো কেউ ফেলে না।
-- দুর পাগল,  ওসব কথার কথা,  বাজে কথা
আমার কথা কেউ শোনে না ।
-- তবু দাদা, বেশি না, দুটো গান, সন্ধ্যাবেলা ।
-- ওরে বাবা ! সন্ধ্যাবেলা ? হবে না, অসম্ভব ।
-- প্লিজ দাদা, তুমি বললে সব সম্ভব ।
-- কি মুস্কিল, বল দেখি ? আচ্ছা, দাঁড়া, দেখি।
-- দেখি না দাদা, প্লিজ ,  দেখি মানেই ফাঁকি। ........
----ফাঁকি তো তুই দিলি ভাই ।
নিঃশব্দে, নিজের যন্ত্রণাকে,
নিজের মধ্যে দুমরে মুচরে
অভিমানে চলে গেলি,
একটা সুযোগ দিলি না কাউকে ।
আমরা যখন খবর পেলাম
ততক্ষণে অনেক দেরি
তুই তখন অনেক দুরের যাত্রী।
তোর যাত্রাপথ ঘিরে অসংখ্য প্রহরী
পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, ডেনড্রোবিয়াম;
শিউলি, মাধবী ডালিয়াতো আছেই
স্বর্নচাঁপা সূর্যমুখীর বাহার বিচিত্রময় ।
আমাদের অভাব কি ওখানেতে অনুভব হয় ?
বল্ না রে ?
জানিস ভাই, তোর মৃত্যু নিয়ে এখন অনেক কথা
কেউ বলে আত্মহত্যা, কেউ বলে অসম্ভব ।
কেউ বলে হতেও পারে,
এ জগতে সবই সম্ভব ।
কথাটা হয়তো কাউকে বোঝানো যাবে না --
কতটা আগুন  জ্বললে বুকে  
শরীরে আগুন তুচ্ছ হয়,
আত্মহত্যাও আত্মসুখ হয়
অভাগা ছাড়া আর কেউ বোঝে না ওসব ।
তীব্র তুফান যখন সমুদ্র কাঁপায়
সৈকত কাঁদে তান্ডবতায় ,
পৃথিবী কি থেমে থাকে তখনো?
জীবনটাতো যুদ্ধক্ষেত্র
চারুকলা -- ছলাকলা-- চলচ্চিত্র ,
রক্তক্ষরণ ধৈর্য ধরে  নারে।
তোর মৃত্যু শুধু একটা মৃত্যু নয় রে
একটা স্বপ্নের মৃত্যু, একটা শিল্পীর মৃত্যু
একটা যুদ্ধের মৃত্যু, সংগ্রামের মৃত্যু
একটা ইচ্ছার মৃত্যু, আস্থার মৃত্যু,
তোর মৃত্যু আক্ষরিক অর্থে
একটা কবিতার অপমৃত্যু ।
তোর যে অনেক সাধ ছিল ভাই,
স্বপ্ন ছিল , অনেক কিছুরই প্রতিভা ছিল,
পূর্ণতা তোর অপূর্ণ রইল, পূর্ণ হলো না ।
তোকে ঘিরে অনেক স্মৃতি, টুকরো কথা
চায়ের কাপে অনেক আড্ডা,
হাস্যরস, গল্পগাঁথা।
চোখটা বারবার ঝাপসা হয়ে যায় ,
কেন যে বুঝতে পারি নারে।

কোন মন্তব্য নেই: