“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫

ঢেকিয়াখোয়া বর-নামঘর : ৫৫৪ বছরের অনির্বাণ দীপশিখা

।। আশু পাল।।

৪৬১ সাল। পরম বৈষ্ণব, আসামে নামধর্মের অন্যতম প্রচারক ও সমাজ সংস্কারক শ্রী শ্রী মাধবদেব তাঁর ধর্মপ্রচারের কাজে ঘুরে ঘুরে এসে পড়েছেন ব্রহ্মপুত্রের দক্ষিণ পাড়ে এক ছোট্ট গ্রামে। সন্ধ্যার আঁধার নেমে এসেছে অনেকক্ষণ আগেই। রাত কাটানোর আশ্রয়ের খোঁজে তিনি একটি ঘরের দরজায় কড়া নাড়লেন। বেরিয়ে এলেন এক বিধবা বৃদ্ধা। কা'কে চাই ? মাধবদেব করজোড়ে বললেন, মা, আমি ভিন গাঁয়ের লোক। আজকের রাতটা এখানে কাটাতে পারবো ? ভদ্রমহিলা দেখলেন, যজ্ঞোপবীতধারী এক ব্রাহ্মণ প্রৌঢ় তাঁর কাছে আশ্রয়প্রার্থী। বললেন, বাবা, আমি গরীব আহোম বিধবা, আমার বাড়িতে আপনার উপযুক্ত সেবা তো আমি করতে পারবো না। মাধবদেব মৃদু হাসলেন। বললেন, সে চিন্তা আপনার করতে হবে না, আপনার ঘরে চারটে ভাত আর একটু নুন হবে না ? আর রাতে শোওয়ার মত একটা তক্তপোশ ? বিধবা মহিলা তাঁকে আশ্রয় দিলেন। ঘরে অল্প ঢেঁকি শাক ছিল, মনে একটা পাপবোধ নিয়েও ভাত আর ঢেঁকি শাক রান্না করে ব্রাহ্মণভোজন করালেন। পরদিন সূর্যোদয়ের আগেই শয্যাত্যাগ করে মাধবদেব স্নান করে তুলসীতলায় পুজো করলেন। একটা মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে বললেন, মা, যদি পারেন, এটাকে প্রজ্বলিত রাখতে চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে শুধু গোটা গ্রামটিই নয়, পুরো রাজ্যের মানুষই সেই নামধর্মে দীক্ষিত হয়ে ওঠেন। মাধবদেবের নিজের হাত ধরেই গড়ে ওঠে এই শঙ্করীয়া সত্র। নাম হয়ে যায় "ঢেকিয়াখোয়া বর-নামঘর"। ভক্তেরা সেই প্রদীপ আজও অনির্বাণ রেখেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তেল দিয়ে দিয়ে। যোরহাট শহর থেকে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ডিব্রুগড়ের দিকে ১১ কিলোমিটার গিয়ে বাঁ-দিকে (উত্তর দিকে) রাস্তা ঢুকে গেছে আরও ৩.২ কিলোমিটার। সেখানেই রয়েছে মহাপুরুষ মাধবদেবের নিজের হাতে স্থাপিত "ঢেকিয়াখোয়া বর-নামঘর"। পুরো ভাদ্র মাস জুড়ে এখানে দলে দলে ভক্তরা এসে ভিড় করেন। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব এবং মহাপুরুষ মাধবদেব - দু-জনেরই প্রয়াণতিথি ওই ভাদ্রমাসেই। তখন বিশাল উৎসবও হয়। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন পৃথক।  নামঘরের ভিতরে ৫৫৪ বছর ধরে জ্বলতে থাকা সেই মাটির প্রদীপ দেখে এলাম। কিন্তু আমার কমদামী ক্যামেরার লেন্স এত দূর থেকে সেটাকে কব্জা করতে পারল না। উজান আসামে এলে কেউ সেটা দেখে যেতেই পারেন।








কোন মন্তব্য নেই: