।। জুবিন ঘোষ ।।
নীরবে নিঃশব্দেই বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিরকালীন ছড়াকার যোগীন্দ্রনাথ সরকার (১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দ ; ১২ কার্তিক ১২৭৩ বঙ্গাব্দ – ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ ; ১২ আষাঢ় ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) সার্ধ শতবর্ষে পড়লেন। আমাদের শিশুসাহিত্যের যে বিপুল সমৃদ্ধি, এই সমৃদ্ধির উইন্ড স্কিনের আড়ালে যে দুজনের নাম আসবে তাঁরা হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ও তাঁর পরিবার, এবং যোগীন্দ্রনাথ সরকার। মূলত
ছড়াকার হিসেবেই যোগীন্দ্রনাথ সরকার প্রসিদ্ধ এবং ছড়ার পরতে পরতে যে প্রীতি জাগিয়ে তুলেছিলেন শিশুমানসে, তা যেন পরবর্তীকালেও একের পর এক প্রজন্ম বাহিত হয়ে শৈশবের মনন তৈরি করতে সমানভাবে সজীব ও প্রজ্জ্বলিত থেকেছে। ১২৭৩
বঙ্গাব্দের (১৮৬৬) ১২ কার্তিক পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার ন্যাতড়ায় (জয়নগরে মাতুলালয়ে) তাঁর জন্ম। তাঁদের আদি নিবাস ছিল যশোরে। তাঁর বাবার নাম ছিল নন্দলাল দেব। লীলা মজুমদার যোগীন্দ্রনাথ শতবার্ষিকী স্মরণীতে ১৯৬৮সালে লিখছেন যে যোগীন্দ্রনাথ সরকারদের দেব-সরকার বংশের ও উপেন্দ্রকিশোর (দেব) রায় বংশের একই পূর্বপুরুষ। অর্থাৎ শোভাবাজারের মহারাজ নবকৃষ্ণ দেব ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সেই বংশেরই। আরও সূক্ষ্মভাবে বাংলার আরও এক সেরা ছড়াকার সুকুমার রায় ও যোগীন্দ্রনাথ সরকার-এর মধ্যে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। যোগীন্দ্রনাথ সরকারের জেষ্ঠ সহোদর মেজদা ছিলেন স্বনামধন্য চিকিৎসক স্যার নীলরতন সরকার যার নামে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ। লেখা পড়ার অনেকটা জয়নগরে ও দেওঘর স্কুলে। দেওঘর স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা সিটি কলেজে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন, কিন্তু শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে সিটি কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। পেশার কারণেই তিনি শিশুসাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং সখা, সখী, মুকুল, বালকবন্ধু, বালক, সন্দেশ প্রভৃতি পত্রিকায় শিশুতোষ ছড়া প্রকাশ করেন। তাছাড়া তিনি মুকুল পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের (১৯৩৭) ১২ আষাঢ় তাঁর মৃত্যু হয় সত্তর বছর বয়সে।
সংক্ষেপে যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সাহিত্য–কীর্তি
বাংলা শিশুসাহিত্যের সর্বাধিক বরণীয় লেখকদের মধ্যে যে যৎসামান্য ক’জনের নাম উল্লেখ করা যায় যোগীন্দ্রনাথ সরকার তাদের মধ্যে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য। মাত্র পঁচিশ বছরের টগবগে যুবক অবস্থাতেই, সিটি স্কুলের শিক্ষক যোগীন্দ্রনাথ ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত করেন প্রথম গ্রন্থ ‘হাসি ও খেলা’। ঊনিশ শতকের ভিক্টোরিয়ান আদবকায়দায় শিক্ষিত
‘গুডবয়’-এর পাঠপ্রস্তাব নির্মাণ উদ্দেশ্য থেকে সরে এসে সুস্পষ্টভাবেগ্রন্থের সূচনাপর্বেই লিখলেন, “আমাদের দেশে বালক-বালিকাদের উপযোগী স্কুলপাঠ্য পুস্তকের নিতান্ত অভাব না থাকিলেও গৃহপাঠ্য ও সচিত্র পুস্তক একখানিও দেখা যায় না। এই অভাব কিয়ৎ পরিমাণে দূর করিবার জন্য ‘হাসি ও খেলা’ প্রকাশিত হইল”। পরের বছরেই প্রকাশ করলেন ‘ছবি ও গল্প’। ভিন্নমার্গীয় ধারার শিশুসাহিত্যের স্বাদ পাওয়ায় পাঠক মহলেও যোগীন্দ্রনাথের চাহিদার পারদ তখন উত্তুঙ্গে শীর্ষদেশ ছুঁচ্ছে। এরপর স্বনির্মিত প্রেস ও প্রকাশন সংস্থা ‘সিটি বুক সোসাইটি’ থেকে তিনি পরস্পর প্রকাশিত করতে থাকলেন ‘রাঙ্গাছবি’ (১৮৯৬), ‘হাসি খুসি প্রথম ভাগ’ (১৮৯৭), ‘হাসি খুসি দ্বিতীয় ভাগ’(১৮৯৭), ‘খেলার সাথী প্রথম ভাগ’ (১৮৯৮), ‘খেলার সাথী দ্বিতীয় ভাগ’ (১৯০৪), ‘বন্দে মাতরম্’, (১৯০৫), ‘খুকুমণির ছড়া’ (১৮৯৯), ‘হাসি রাশি’ (১৮৯৯), ‘ছোটদের রামায়ণ’(১৯১০), ‘হিজিবিজি’ (১৯১৬), ‘বনেজঙ্গলে’ (১৯২১), ‘ছেলেদের কবিতা’ (১৯২২). ‘নূতন পাঠ প্রথম ভাগ’ (১৯২২), ‘নূতন পাঠ দ্বিতীয়ভাগ’ (১৯২২), ‘আদর্শ পাঠ প্রথম ভাগ’(১৯২৫), ‘সুশিক্ষা’ (১৯২৬), ‘জানোয়ারের কাণ্ড’, (১৯২৭), ‘জ্ঞানপ্রবেশ প্রথম ভাগ’(১৯২৯), ‘শিক্ষা প্রবেশ প্রথম
ভাগ’ (১৯২৯), ‘শিক্ষা প্রবেশ দ্বিতীয় ভাগ’ (১৯২৯), ‘সাহিত্য সঞ্চয়’ (১৯২৯), ‘ছোটদের মহাভারত’ (১৯২৯), ‘শিক্ষা সঞ্চয়’ (১৯৩০), ‘নূতন ছবি’ (১৯৩২) প্রভৃতি। সব কিছু মিলিয়ে রচনাপর্বের পরিসর ১৮৯১ থেকে ১৯৩৭ সালে জীবনের অন্তিম পর্ব পর্যন্ত। যোগীন্দ্রনাথের স্বরচিত ও সঙ্কলিত ত্রিশখানা শিশুতোষ গ্রন্থের ভিতর হাসিখুশি, খুকুমণির ছড়া, হাসি ও খেলা, ছড়া ও ছবি,
রাঙাছবি (১৮৯৬), পশু-পক্ষী (১৯১১), বনে-জঙ্গলে (১৯২৯), গল্পসঞ্চয়, শিশু চয়নিকা, হিজিবিজি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শিশু মনোপযোগী একুশটি পৌরাণিক গ্রন্থ এবং জ্ঞানমুকুল (১৮৯০), চারুপাঠ, শিক্ষাসঞ্চয় প্রভৃতি তেরো-চৌদ্দখানি স্কুলপাঠ্য বই রচনা করেছিলেন।
বাকিটা পড়তে চলে আসুন, কীর্তন খোলা ব্লগে। এখানে মূলে যেখানে লেখাটি আছে...
একটি ভালো লাগার থেকে এখানে তুলে জুড়ে দিলাম মাত্র আমরা ঈশানেঃ সুশান্ত কর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন