প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞরা ‘জ্যামিতিক প্রগতি’ অর্থাৎ জিওম্যাট্রিকেল প্রগ্রেশন সম্পর্কে কিছু অসাধারণ জিনিস অনুমান করেছিলেন যা তারা গল্পের মাধ্যমে প্রচার করেন। এই তথ্য আমি জানতে পেরেছি বিশ্বের একদা সবচাইতে জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক জর্জ গ্যামোর ‘One , Two, Three …infinity’ বইটি থেকে। গ্যামো তাঁর বইয়ে দুটি গল্পের উল্লেখ করেছেন যা এখানে ব্যক্ত করব। আশা করি আপনারা মজা পাবেন।
প্রথম গল্পটি এরকম, রাজা শিরহাম তার মন্ত্রী তথা সভাসদ সিসা বেন দাহিরকে দাবা খেলা আবিষ্কারের জন্য পুরস্কৃত করতে চান। এখানে বলে রাখি দাবা খেলা আবিষ্কারের সঙ্গে এই গল্পের মিল নেই। যাই হোক দাহির রাজাকে বললেন তাকে বেশি কিছু দিতে হবে না। দাবার বোর্ডে যে ৬৪টি ঘর আছে সেখানে প্রথম ঘরটির জন্য একটি গমের দানা, দ্বিতীয়টির জন্য দুটি দানা, তৃতীয়টির জন্য চারটি, চতুর্থটি জন্য আটটি, এইভাবে দ্বিগুণ করে করে ৬৪টি ঘরের জন্য গমের দানা দিলেই চলবে। রাজা ভাবলেন এ আর কি। এত বড় আবিষ্কারের জন্য মাত্র এটুকু গমের দানা নেহাতই কম। তাই রাজি হয়ে গেলেন। পরে দেখা গেল রাজ্যের সমস্ত গম দিয়েও এই পুরষ্কারের সামান্য অংশও দেওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত রাজাকে হার মেনে নিতে হলো।
এখন প্রশ্ন হলো এই পুরষ্কারের দাবি মেটাতে গেলে কতটা গম লাগবে। গ্যামো হিসেব করে দেখিয়েছেন এর জন্য ১,৮৪,৪৬,৭৪,৪০,৭৩,৭০,৯৫,৫১,৬১৫ টি গমের দানা লাগবে যা শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ভারতে উৎপাদন হয় নি। বিশ্বের মোট বার্ষিক গম উৎপাদনের যে হার এই হারে প্রায় দু’হাজার বছরে লাগবে সারা পৃথিবীতে এতটা গম উৎপন্ন হতে। তাই রাজা প্রথমে যা ভেবেছিলেন যে কয়েক ব্যাগ গম দিয়েই কাজ হাসিল হয়ে যাবে তা মোটেই বাস্তবের ধারে কাছেও যায় নি।
গ্যামোর বইয়ে আরেকটি গল্পের উল্লেখ আছে যা আরো বেশি চিত্তাকর্ষক। কথিত আছে বেনারসে একটি মন্দির হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল। যদিও গোলাকার বস্তুর উপরিভাগে কেন্দ্র বলে কিছু থাকতে পারে না। তবে পৃথিবীর আহ্নিক গতির হিসেবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দুটি বিন্দুকে দুটি কেন্দ্র বলা যেতে পারে। যাই হোক এই মন্দিরে আছে তিনটি হিরের দণ্ড যার একটির মধ্যে ভরা আছে ৬৪ টি গোলাকার সোনার ডিস্ক যার প্রত্যেকটির আকার নিচে থেকে ক্রমশ ছোট হয়ে হয়ে সব উপরের ডিস্কটি সবচাইতে ছোট। একজন পুরোহিত প্রথম দণ্ড থেকে এই ডিস্কগুলোকে দ্বিতীয় দণ্ডে পাচার করছেন এবং যেদিন এই পাচার করা শেষ হয়ে যাবে সেদিন এই ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে এই পাচার করার একটা সর্ত আছে। কোন সময়ই কোন ছোট ডিস্কের উপর কোন বড় ডিস্ক রাখা যাবে না। তাই তৃতীয় একটি দণ্ডের মাধ্যমে এই পাচার করতে হবে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই সর্ত মেনে পাচার করতে হলে তত বার এই ডিস্ক গুলোকে সরাতে হবে যতগুলো গমের দানার কথা আমরা আগের গল্পে বলেছি। কারণ প্রথম ডিস্ক সরাতে এক বার, দ্বিতীয়টি সরাতে দুবার, তৃতীয়টির জন্য চার বার, চতুর্থটির জন্য আট বার এই ভাবে সোনার ডিস্কগুলো সরাতে প্রত্যেকটির জন্য দ্বিগুণ হারে মুভ নিতে হবে।
মনে করা যাক এই পুরোহিত কোন বিশ্রাম না নিয়ে প্রতি এক সেকেন্ডে একটি করে ডিস্ক পাচার করছেন তাহলে এই কাজ সারতে উনার ১,৮৪,৪৬,৭৪,৪০,৭৩,৭০,৯৫,৫১,৬১৫ সেকেন্ড লাগবে। এখন এক দিনে হয় ৮৬৪০০ সেকেন্ড। ৩,১৫,৩৬,০০০ সেকেন্ডে হয় এক বছর। তাই দেখা যাচ্ছে এই সোনার ডিস্কগুলোকে প্রথম দণ্ড থেকে দ্বিতীয় দণ্ডে পাচার করতে ৫৮ লক্ষ কোটি বছর লাগবে। সত্যি বলতে কি বর্তমান বিজ্ঞান যে বিগ ক্র্যাঞ্চের মধ্যমে ব্রহ্মাণ্ড শেষ হয়ে যাবার হিসেব করেছে সেই হিসেবে ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হতে এর চাইতে অনেক অনেক কম সময় লাগবে। অর্থাৎ এই কাহিনীর মাধ্যমে ব্রহ্মাণ্ডের আয়ু হাজার হাজার গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। তা তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই কারণ সেই যুগে বিজ্ঞানের এতটা অগ্রগতি হয় নি তাই একটা আন্দাজ করা হয়েছে যা অনেক বেশি। কিন্তু এই গল্প গুলোর মজাটা হল এই যে প্রাথমিক ভাবে আমাদের যা নিতান্তই কম বলে মনে হয় তা যে মোটেই সত্যি নয় বরং সত্যের ধারে কাছেও যায় না তার একটা আভাস দেওয়া হয়েছে। ভারতে শূন্য আবিষ্কার হওয়ার পর সংখ্যাতত্ত্বে এই দেশ যে অনেকটাই উন্নতি করেছিল তা এইসব গল্পের মধ্য দিয়ে বুঝা যায়। যদিও এই ধারা কোন এক কারণে রুদ্ধ হয়ে পড়ে।
জেনো’স প্যারাডক্স
আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন এক ধরণের ঘড়ির অঙ্ক আমাদের করতে হতো। এই অঙ্কটা ছিল এরকম যে ৪টা ২০ মিনিটের পর কোন সময় ঘড়ির বড় কাটা ছোট কাটার সঙ্গে মিলে যাবে। আমরা এই ভাবে হিসেব করে পুরো নম্বর পেয়েছি। যেমন ঠিক ৪টার সময় ঘড়ির বড় কাটা ১২তে আর ছোট কাটা চারের ঘরে থাকে। এখন ১২ থেকে চারে যেতে বড় কাটার যতটা সময় লাগবে ততক্ষণে ছোট কাটা কিছুটা সরে যাবে। যতটা সরবে ততটা সময় ২০ মিনিটের সঙ্গে যোগ করে দিলেই উত্তর বেরিয়ে যায়। কিন্তু আমার সব সময়ই মনে হয়েছে এই উত্তরের মধ্যে কিছুটা ভুল আছে। কারণ ছোট কাটা যতটা সরবে বড় কাটা ততটা জায়গা যাওয়ার সময় ছোট কাটা আরো কিছুটা সরে যাবে। তাই সেটাকেও হিসেবে নিতে হবে। একটা সময় আমি শুদ্ধ ভাবে এই অঙ্ক মিলাতে গিয়ে দেখেছি বড় কাটা ছোট কাটার সঙ্গে কোন সময়ই মিলবে না। বহু চিন্তা করেও এর কোন হদিস পাই নি। তাই মনে হয়েছিল এই ধরণের অঙ্ক এই পদ্ধতিতে কোন দিনও মিলানো যাবে না। অথচ বাস্তবে তো মিলে যায়। এই ধাঁধাঁ আমার মনে বহুদিন ছিল কিন্তু কাউকে বলিনি। এমন কি বন্ধু-বান্ধবকেও না। বিলকুল চুপ মেরে গেছি। কিন্তু পরে জানলাম এটা একটা বিখ্যাত প্যারাডক্স যার সমাধান আজো হয় নি। অর্থাৎ আমি যা ভেবেছিলাম তা ঠিকই ছিল। হয়ত অনেক ছাত্রই আমার মত চিন্তা করেছে কিন্তু কিছু বলে নি। তাই ভাবছি এই নিয়েই লিখব।
অনুমানিক ৪৯০ থেকে ৪৩০ খ্রিস্টপূর্ব জুড়ে গ্রিসে এক দার্শনিক ছিলেন তিনি অনেকগুলো প্যারাডক্সের কথা বলেছিলেন যার কয়েকটি আজো প্যারাডক্স হয়েই আছে। এর মধ্যে আমি যে ঘড়ির কাটার কথা বললাম তাও আছে। তবে জেনো কিন্তু ঘড়ির কাটার কথা বলেন নি কিন্তু জিনিসটা অনুরূপ। এই প্যারাডক্স গণিতের ইতিহাসে Achilles and Tortoise Paradox নামে খ্যাত। প্যারাডক্সের শুদ্ধ বাংলা কি তা জানি না তবে সহজ কথায় বলতে গেলে ‘বিভ্রান্তি’। এখন এই বিভ্রান্তির কথাই বলব।
এসিলস মানে গ্রিক সৈন্য তা আমরা এসিলসের কথা ছেড়ে দিয়ে ইশপের গল্পে যে কচ্ছপ ও খরগোসের কথা বলা আছে তাই দিয়ে এই বিভ্রান্তির ব্যাখ্যা করব। কারণ এই গল্পটি আমাদের পরিচিত। মনে করা যাক একটি দৌড় প্রতিযোগিতায় কচ্ছপ আগেই দৌড়ে ১০০ মিটার এগিয়ে গেছে যখন খরগোস তার দৌড় শুরু করেছে। এখন খরগোসকে প্রথমে কচ্ছপকে ধরতে হবে তারপর কচ্ছপের থেকে এগিয়ে যেতে হবে। এখন কচ্ছপকে ধরতে হলে খরগোসকে ১০০ মিটার যেতে হবে কিন্তু ততক্ষণে কচ্ছপ কিছুটা এগিয়ে যাবে। মনে করলাম এই সময়ে কচ্ছপ ১০ মিটার এগিয়ে গেছে। এখন খরগোসকে আরো ১০ মিটার যেতে হবে কিন্তু যতক্ষণে সে এই ১০ মিটার যাবে ততক্ষণে কচ্ছপ আরো কিছুটা এগিয়ে যাবে। মনে করলাম ২ মিটার, তা খরগোস যতক্ষণে এই ২ মিটার যাবে ততক্ষণে কচ্ছপ আরো কিছুটা এগিয়ে যাবে। এই ভাবে যদি হিসেব করতে থাকি তাহলে দেখা যাবে যে খরগোস কোনদিনও কচ্ছপকে ধরতে পারবে না কারণ কচ্ছপ ও খরগোসের মধ্যবর্তী দূরত্ব কখনই শেষ হবে না। অথচ বাস্তবে দেখা যায় যে খরগোস কচ্ছপে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। এটা হলো জেনোর অন্যতম একটি প্যারাডক্স। কিন্তু যে পদ্ধতিতে আমরা হিসেব করে দেখালাম যে খরগোস কোনদিনও কচ্ছপের নাগাল পাবে না সেই পদ্ধতির মধ্যে গলদ কোথায় সেটা তো জানা যাচ্ছে না। এই জেনোর প্যারাডক্সের ব্যাখ্যা অনেকে অনেক রকম ভাবেই করতে চেয়েছেন কিন্তু কোনটাই সেরকম যুতসই হচ্ছে না। গণিতের জগতে এটাও একটা পাজল।
তবে কারো কারো মতে ক্যালকুলাস যেভাবে অসীম পর্যন্ত লিমিটের সাহায্যে হিসেব করা হয় তা এই জেনো’স প্যারাডক্সের ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু এই নিয়েও বিতর্ক আছে। মোটের উপর এই বিভ্রান্তিকে এখনও এমন ভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে আমার জানা নেই যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে আমি এশিয়ান এজ পত্রিকায় দেখেছিলাম জনৈক ব্যক্তি জেনো’স প্যারাডক্স ব্যাখ্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন কিন্তু গণিতজ্ঞরা তার এই দাবিকে খারিজ করে দেন।
আরেকটি জেনোর প্যারাডক্স
ও কিছু আবোল তাবোল চিন্তা।
এর আগে আমি জেনোর Achilles and the tortoise প্যারাডক্স নিয়ে লিখেছিলাম। এবারে উনার বর্শা ছোড়ার
প্যারাডক্স নিয়ে প্রথমে লিখব এবং এর পর কিছু আবোল তাবোল বকব।
জেনোর বর্শা ছোড়া প্যারাডক্স হল এই যে যদি কোন কিছু
স্থির কিংবা গতিশীল উভয় অবস্থায় সমান স্থান জুড়ে থাকে তাহলে কোন এক মূহুর্তে এটা স্থির।
তাই সবগুলো মূহুর্তকে জুড়ে দিলে দেখা যাবে যে জিনিসটিকে আমরা গতিশীল বলে ভাবছি তা আসলে
স্থির। অর্থাৎ একটি এসিলিস (গ্রিক সৈন্য) যখন একটি বর্শা ছুড়ে দিলেন তখন জেনো (Zeno) প্রমাণ করে দিলেন যে বর্শাটি আসলে স্থির। কিভাবে
এটাই এখন আমরা দেখব।
মনে করা যাক, একটি চলমান বর্শাকে আমরা যত কম সময় জুড়ে দেখব বর্শাটি
ততই কম জায়গা অতিক্রম করবে। এখন সময়ের বিভাজন করতে করতে আমরা যদি এক মূহুর্ত সময় ধরি
তখন বর্শাটি যদি ততটুকু জায়গা জুড়ে থাকে যতটা স্থির অবস্থায় ছিল তাহলে বলতে হবে বর্শাটি
স্থির। অনেকগুলো মূহুর্ত মিলে যখন কিছুটা সময় হচ্ছে তখন এর প্রতিটি মূহুর্তেই বর্শাটি
স্থির হয়ে আছে। কারণ গতিশীল হতে গেলে তার দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে। এখন প্রশ্ন হলো মূহুর্ত
বলতে কি জেনো শূন্য সময়কে ধরেছেন। অনেক গুলো শূন্য সময়কে জুড়ে কিছুটা সময় তো হবে না।
তবে আমি যা বুঝেছি জেনো এক মূহুর্তকে শূন্য সময় হিসেবে ধরে নিয়েই তার এই প্যারাডক্স
বানিয়েছেন। তাই প্রাথমিক ভাবে জেনোর এই প্যারাডক্স আমাকে আকৃষ্ট করে নি। তবে আমার মনের
মধ্যে অন্য কতকগুলো চিন্তার জন্ম দিয়েছে তা এখানে আমি ব্যক্ত করব। আপনারা আমাকে পাগল
বললে বলুন এতে আমার কিছুই যায় আসে না। এই বদনাম আমার এমনিতেই আছে।
এখন প্রশ্ন হলো যে সময়কে বিভাজন করতে করতে আমরা
কি কখনও শূন্য সময়ে পৌঁছে যাবো। গণিতের ভাষায় বলতে গেলে কোন কিছুকেই বিভাজন করতে করতে
শূন্যতায় পৌঁছানো যায় না। ১ সংখ্যাটিকে যত বড় সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা যাক না কেন তার
মান কখনো শূন্য হবে না। আমরা বলতে পারি অসীম দিয়ে ভাগ করি তাহলে এর মান শূন্যর দিকে
ধাবিত হবে কিন্তু কখনো শূন্য হবে না। কিছু একটা থেকেই যাবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ে লিখেছেন একটি পাতাকে আরো কাছ থেকে দেখলে দেখা
যাবে শিরা উপশিরা ইত্যাদি। আরো কাছে গিয়ে দেখলে দেখা যাবে অণু পরমাণু। আরো কাছে গিয়ে
দেখলে দেখা যাবে ইলেকট্রন প্রোটন। এই ভাবে আরো কাছে যেতে যেতে আমরা এক সময়ে দেখব কিছুই
নেই। দূর থেকে দেখছি বলে এই ‘কিছু নেই’কে পাতা দেখছি। এখানে
রবীন্দ্রনাথের উপনিষদীয় ভাবধারা কাজ করেছে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ কোন কিছু নিশ্চয়ই
আছে যা বিভাজ্য নয়। এই কোন কিছু এক সময়ে মনে হয়েছিল কোয়ার্ক তারপর স্ট্রিং, পরে মনে হলো অন্য কিছু। এই অন্য কিছুকে নাম দেওয়া
হয়েছে গড পার্টিক্যল। বাংলায় বললে ঈশ্বর কণা অর্থাৎ বস্তুর প্রাথমিক স্তর। আমার বিশ্বাস
একটি ঈশ্বর কণাকে শক্তিতে রূপান্তর করলে এক কোয়ান্টা শক্তি পাওয়া যাবে। তাই এক কোয়ান্টা
শক্তিকে যদি আইনস্টাইনের ফর্মুলা অনুযায়ী আলোর গতির বর্গফল দিয়ে ভাগ করা যায় তাহলে
এই ঈশ্বর কণার ভর কতটা তা যানা যাবে। তবে এসবই আমার অনুমান। বিজ্ঞানীরা কি বলেন তা
আমার জানা নেই। তবে আমার বিশ্বাস কোয়ান্টা কোয়ান্টা করে যদি শক্তি যদি ভরে রূপান্তরিত
হয়ে থাকে তাহলে ক্ষুদ্রতম বস্তু কণিকার ভর (mass) এক কোয়ান্টার সমান হবে যার বিভাজন করলে পরে এক কোয়ান্টা
শক্তি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ কোন বস্তুই অবিভাজ্য নয়। তবে একটি ক্ষুদ্রতম কণিকা আছে যার
পর এই কণিকা আর বস্তু নয়,
শক্তি।
এখন প্রশ্ন হলো কোয়ান্টা কি? ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ১৯০০ সালে দেখিয়েছেন শক্তির মধ্যেও
এক ধরণের অ্যাটোমিসিটি অথবা অবিভাজ্যতা আছে যার কোন বিভাজন হয় না। তাই শক্তির বিকিরণ
হয় এক কোয়ান্টা দুই কোয়ান্টার হিসেবে। এই এক কোয়ান্টা শক্তি এতটাই কম যে আমরা আমাদের
কল্পনা শক্তি দিয়ে এত কম পরিমাণ শক্তিকে আমাদের ধারণার মধ্যে আনতে পারব না। তবে খুব
বড় আকারে দেখলে দেখা যাবে এই যে আমার ঘরের ইলেকট্রিক ল্যাম্প থেকে যে আলো বেরিয়ে আসছে
তা হোশ পাইপের জলের ধারার মতো নয়। বরং মেশিন গান থেকে বেরোনো বুলেটের মতো অসংখ্য শক্তি
কণিকা এসে আমার গায়ে আছড়ে পড়ছে।
এখন প্রশ্ন হলো যে প্রকৃতিতে বস্তু ও শক্তির মধ্যে
কিছু আছে যাকে আমরা ক্ষুদ্রতম হিসেবে গ্রাহ্য করতে পারি যার বিভাজন হয় না। ঠিক তেমনি
স্পেস ও টাইমের মধ্যেও কি এমন কোন কিছু আছে যার বিভাজন হয় না। অর্থাৎ ক্ষুদ্রতম দূরত্ব
কিংবা ক্ষুদ্রতম সময় যা শূন্য নয় কিন্তু এর চেয়ে কম দূরত্ব কিংবা সময় বলে কিছু হয় না।
আমরা দূরত্ব কিংবা সময়ের যে একক নিয়েছি তা আমাদের সুবিধার জন্য। কিন্তু প্রকৃতিতেও
কি দূরত্ব কিংবা সময়ের এমন এক প্রাকৃতিক একক আছে যার চেয়ে কম দূরত্ব কিংবা সময় হয় না।
যাকে আমরা বলতে পারি ‘atomicity of space and time’.।
এই নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে ভাবেন নি তা নয়। যেমন ম্যাক্স
প্ল্যাঙ্ক এরকমই একটি দৈর্ঘ্যের কথা বলেছিলেন যাকে Planck’s
Length হিসেবে আখ্যা দেওয়া
হয়েছে। এর থেকে এসেছে Planck’s Time এর ধারণা। এই প্ল্যাঙ্ক’স লেংথের তিনি হিসেব দিয়েছিলে 1.6 x 10-35 m। তবে বিজ্ঞান জগতে
এই প্ল্যাঙ্ক’স লেংথ এখনও প্রমাণিত হয় নি তাই এটাকে গ্রাহ্য করা
হয় না। কেউ কেউ এই ধারণাকে বাতিল করে দিয়েছেন। তবে এটা যদি প্রমাণিত হয়ে যেতো তাহলে
জেনোর যে দুটো প্যারাডক্সের কথা বললাম তার ব্যাখ্যা পাওয়া যেত। এমন কি সমদ্বিবাহু সমকোণী
ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘ্যকেও পরিমাপ করা যেত বলে আমার বিশ্বাস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন