“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

'উজান সাহিত্য গোঠী' তিনসুকিয়াতে পালন করল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’




                     ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ শনিবার ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে এবারও উজান সাহিত্য গোষ্ঠী বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যদিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সাথে পালন করে।  বিকেল আড়াইটা থেকে  দুর্গাবাড়ি পূজা মণ্ডপে বহুভাষিক স্বরচিত কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা এবং সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান  পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে উজানের সভাপতি সুজয় রায় ভাষা শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন, সঙ্গে জীবন সরকার, বর্ণালী সেনগুপ্ত, বর্ণালী চৌধুরী এবং অন্যান্য উজানের সদস্যরা গেয়ে উঠেন ২১শের গান ‘আমার ভায়ের রক্ত রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’প্রদীপ জ্বালিয়ে মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন  তিনসুকিয়ার প্রবীণ কবি নিখিলেশ্বর চৌধুরীসভাতে তখন শিল্পী কামিনী গোঁহাই এবং তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা গাইছিলেন ‘অসম সঙ্গীত’ ‘চির চেনেহি মোর ভাষা জননী’  এই নিয়ে তৃতীয় বছর এই অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করল উজান। এবারে আমন্ত্রিত বক্তা দু’জনের একজন ছিলেন কটন মহাবিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক এবং নাইন্থ কলাম কাগজের সম্পাদক প্রসূন বর্মণ। তাঁর বললার বিষয় ছিল ‘প্রীতির বীজ অঙ্কুরণঃ উত্তর পূর্বের বাংলা সাহিত্য’। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন ‘প্রীতির বীজ অঙ্কুরণ’ কথাটা তিনি নিয়েছেন কোচবিহারের রাজার আহোম রাজাকে লেখা একটি চিঠি থেকে, যে চিঠির ভাষা ছিল বাংলা। অসমে বাংলা ভাষা সাহিত্য চর্চার শুরু ব্রিটিশ আসবার পরে থেকে এই বিশ্বাস থেকে তিনি সরে আসবার কথা বলেন, এবং যথোচিত তথ্য দিয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থিত করেন। প্রতিবেশী সমাজ চিত্রের উপস্থাপন এবং সেই সেই সমাজের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কের বৈচিত্র পূর্বোত্তরের বাংলা সাহিত্যকে এক স্বতন্ত্র চরিত্র দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। দ্বিতীয় বক্তা ছিলেন, তিনসুকিয়ারই বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি এবং লেখক, ‘পানচৈ’ কাগজের সম্পাদক কমল শর্মা। তাঁর বলবার বিষয় ছিল ‘অসমীয়া ভাষার প্রসার আরু সংকট’ । তিনি অসমিয়া ভাষার জন্ম লগ্ন থেকে ইতিহাসটা সংক্ষেপে টেনে ধরে ব্রিটিশ ভারতে তার প্রতিষ্ঠার সামনে উপস্থিত সংকট এবং সংকট মুক্তির কথা বলেন, সেই সংগে বাংলা ভাষা এবং বাঙালি সমাজের প্রতি প্রেম এবং দ্বন্দ্বের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে বিশ্বায়ন যে নতুন সমস্যা সমস্ত মাতৃভাষার সামনে এনে হাজির করেছে, তাই নিয়ে সবাইকে একত্রে ভাবনা  চিন্তা এবং কাজ করবারা আবেদন রাখেন। এই দুই বক্তা ছাড়াও এবারে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পূর্বোত্তরের বিশিষ্ট বাংলা কবি সঞ্জয় চক্রবর্তীকে। তিনি নিজের লেখা এক গুচ্ছ কবিতা পড়ে সভাকে সুরভিত করে তোলেন।  তাঁর কবিতার গুণমুগ্ধ ছিলেনই তিনসুকিয়ার কবিতা পাঠক এবং বাচিক শিল্পীরা। এই প্রথম কবিকে সামনে পেয়ে শ্রোতাদের উৎসাহ এক আলাদা মাত্রা পায়। আরেক কবি এবং যন্ত্র-সঙ্গীত শিল্পী অমিতাভ সেনগুপ্ত উজানের আমন্ত্রণে এসেছিলেন লামডিং থেকে । তাঁর মিনিট কয়েকের পরিবেশনা ‘তালের ভাষা’ দর্শকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়োয়।
         এই সব বিশেষ পরিবেশনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে অসমিয়া কবিতা পড়ে শোনান প্রবীণ অসমিয়া কবি এবং লেখিকা পারুল শর্মা, ভোজপুরি কবি এবং সাংবাদিক কৃষ্ণ উপাধ্যায়, বাংলা কবি নীলদীপ চক্রবর্তী, পার্থসারথি দত্ত এবং স্বস্তি স্বাধন চক্রবর্তী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন দুই কিশোরী শিল্পী পৌষালি কর এবং সুচয়িতা চক্রবর্তী।
            আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, রবিবার দুর্গাবাড়ি শিশু বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল প্রাচীর পত্র আঁকা প্রতিযোগিতার।  চারটি বিভাগে এই প্রতিযোগিতাতে অংশভাগীদের  ‘আমার ভাষা আমার মা’, ‘আমার ভাষা আমার পরিচয়’ এমন কিছু নির্দিষ্ট স্লোগান বাংলা অসমিয়া এবং হিন্দিতে লিখে  চিত্রিত করতে দেয়া হয়েছিল। ২১শের অনুষ্ঠানের শেষে বিজয়ী প্রতিযোগীদের পুরস্কার তুলে দেন ডাঃ নক্ষত্র বিজয় চৌধুরী, সুজয় রায় এবং সুশান্ত কর প্রমুখ। পুরস্কার হিসেবে তাদের দেয়া হয় একটি প্রমানপত্র, স্মারক এবং শিলচর থেকে প্রকাশিত চিত্র শিল্প বিষয়ের অসমের একমাত্র দ্বিভাষিক কাগক ‘আর্ট-ইকো’র একটি করে  সংখ্যা। এই প্রতিযোগিতার জন্যেই তাঁরা বিশেষ করে কিছু স্যা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তাঁদের প্রশিক্ষকদেরও  স্মারক দিয়ে  সম্মানিত করা হয়। সম্মান স্মারক প্রাপক প্রশিক্ষকেরা হলেন, সর্বশ্রী ভানু ভূষণ দাস, কঙ্কন দাস,  সিদ্ধার্থ গৌতম বসু, সত্যজিৎ লোধ,  রমা বারৈ, এবং অভিষেক রায়। বিজয়ী প্রতিযোগীরা হলো ক বিভাগে (২য় শ্রেণি অব্দি )প্রথম- দীক্ষা দাস, দ্বিতীয়- পরিণীতা ঘোষ, তৃতীয় সুমেধা দে; খ বিভাগে ( ৫ শ্রেণি অব্দি) প্রথম-অন্তরা দেব, দ্বিতীয়-শাশ্বতী গগৈ, তৃতীয়- তনিশা সাহা; গ বিভাগে ( ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত) প্রথম সাক্ষী দাস, দ্বিতীয়- ময়ূরতৃষ্ণা দাস, তৃতীয়- বেদান্তিকা দেব রায়; ঘ বিভাগে ( ৯ম থেকে উপরের শ্রেণি) প্রথম অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, দ্বিতীয় সুষমা কর্মকার,  তৃতীয় আয়েশা চন্দ।   

                    ০০০০০০~~~~~~~~~~~০০০০০০০
নিচে অনষ্ঠানের কিছু ভিডিও দেখতে পাবেন, বিশেষত কবি সঞ্জয় চক্রবর্তীর কবিতা পঠের অ বিশে
  

কোন মন্তব্য নেই: