(সঞ্জয় চক্রবর্তীর এই কবিতাটি পড়তে পেলাম ব্যাতিক্রম কাগজের শারদ সংখ্যা, ২০১২তে। ভালো লাগল, তুলে দিলাম.)
গৃহ হইতে
বাহির হইয়া যে যাত্রার
আরম্ভ
গন্তব্যহীন পথে, কিছুদূর চলিয়া গৃহে
ফিরিবার
পথটি আর খুঁজিয়া পাই নাকো।
কী করিয়া
ফিরি গৃহে, যেখানে আসিয়া দাঁড়াইলাম
সেই ভূমিশয্যাই
মোর নবগৃহ হউক তবে।
একদিন
বের হলাম ঘর হরতে বাহির।
যে পথ
আশৈশব ছিল না আমার
যে পথ
ছিল অযুত ভয়ের গেরস্থালি, সেই পথে।
এ আমারই
দেশ তো, ফুরিয়ে যাওয়ার মাটি আমারই?
এই
অরণ্যানী , পাহাড় শ্রেণি, বিস্তির্ণ খেত, সবুজের
ফোলা
ফোলা আদর, মানুষের জলচাহনি, বসতবাড়ি,
গান ,
ফসল , নদীর ভাটিয়ালি, আমারই তো নির্ভয়ের?
আমার পৃথিবীর
পথে পথে কার্তিকে হেমন্তে
আমি
শুনিয়াছি বাতাসে চা-গাছের মর্মর
নক্ষত্রের
রাতে পাহাড়ের কোলে ঘুমায়ে পড়িব একদিন
লোহিতের
জল এসে গান হয়ে ধুয়ে দেবে চোখ
যাইব
এখন, অঘ্রানের ঘ্রাণে, আসিব আবার ফিরে
নীল
পাহাড়ের দেশে, লাল নদীটির তীরে।
পেরিয়ে
যাই জাগিরোড , শুঁটকির গন্ধ অবিকল সিলেটের
শ্রীহট্টের
খোঁজ কেন অবিরাম, অপার বাংলায়?
এ
বাংলাতো শ্রীহট্টীয় নয় শুধু যাপনের রাজছত্রে
ঢাকার
রক্তের সঙ্গে বার্তালাপ সেরে নেয় ময়মন সিংহের ঘাম।
সোনাকুচি
ছাড়িয়ে ঐ যে জীর্ণ গ্রামটি দাঁড়িয়ে নিপাট, সহজ সরল
তার যে অবোধ
বালক, রুগ্ন বালিকা, শীর্ণ চাবিটি
তারা এই
পৃথিবীর কোন ভাষায় চোখের জলকে প্রবাহিত করে না।
ঘামের
কোন বর্ণমালা নেই দেশে দেশে একই লিপি তার,
নোনতাশোনিতশ্রম।
নৈঃশব্দ্যেই
প্রেম আসে বক্ষমাঝে
হেমন্তের
অরণ্যে অনন্ত নক্ষত্রবীথি তুমি
বন্দি
জেগে থাকে শহরে মিথ্যাচারে
কৃষ্ণচূড়ায়
ফোটেনা ফুল, স্খলিত পদ্মের মতো রাত
চারদিকে
খুলে গেছে দ্বার, ধর্ম আর নেই
স্পর্শ করিনি
তো চাঁদের করতল স্বচ্ছন্দ গানে
যেতে
পারি, যে কোন দিকে, চলে যাই দুর্বোধ্য স্বর্গের টানে
বুড়াপাহাড়ের
দিকে যাব, সে কী অশনি প্রেতটিলা কোনও
যেখানে
যুবকেরা টুপটাপ হারায়, হারায় রূপকথার গল্পগাছায়
পুর্বপুরুষেরা
এদিক মাড়ইয় নি কখনো, তাঁদের ছিল
নিজ
স্ববৃত্তে দিনযাপন, খুবই সংকোচের, দ্বিধার , ভয়ের,
শুধু
এদিকে কেন, কোনদিকেই তাঁরা মাড়াননি
ভীতেমাটির
বহির্ব্লয়ে যে নক্ষত্রগণ্ডিটি
তার
বাইরেই ছিল তাহাদের আঁধারের সংকেত
আনন্দজোছনা
যত, সবই ওই বলয়ে।
ভাণ্ড
খুলে দ্যাখ,
কী কান্ড
জগৎভূমে
চক্ষু
মেলে দ্যাখ
মুণ্ড
খাস না
কাঁচা
কাঁচাই
ধড়টি রাখ
তুলে
হৃদ ভেসে
যায় লোহিত জলে
দণ্ড
দিতে যাই ভুলে
এই যে
অগ্নিধারা লুপ্ত
তাকে
নিশিঘুম দাও
দাও জল
মাটি প্রণয়
আগুনকে নিওনা
শিরে
গোঁসাই,
নদে চিৎ হয়ে ভাসো
ছিদ্রহীন
জ্যান্ত শরীরে।
দিন
পাল্টায়, বাবা মারা যান, বড়পিসি থেকে ছোটপিসিও
সব ছড়ানো
নদী এখন গল্পগুজব করে একতি বইয়ের অন্দরে
সকল
অশ্রু আর রক্তকাহিনি পার করে চলে এলাম কোহরা
এই যে
কুয়াশা, জড়ায় , সে কোন বিহ্বল আকাশ থেকে?
আমাদেরই
আকাশ সে তো জটিলাবর্তে ছিল কি ছিল না
ছিলা ধরে
মারো টান আনন্দযজ্ঞ টান টান।
এই সহজ
সরল অরণ্যে কুয়াশালিপি লিখে ফ্যালে
জগতানন্দ
কাব্যের সকল অধ্যায়
ঠোঁটের
পাশের তিলটি কি গয়না হতে পারে?
হতে হতে
তার নামকরণটি একটি গভীর শ্বাস
শ্বাসের
সেই তরঙ্গ জীবনমুখী বেশ কয়েকফোটা।
দিক
নির্ণয়ে তার প্রেমিক বহুল প্রেমিকা বটে
তবে এখন
বর্ষণ নয়, নয় তার দণ্ডপ্রহার
জ্যোস্নার
ফোঁটা ফোঁটা কাম-আঙ্গিকে
এক নেশার
জল রাত্রিব্যাপী, শরীরের লণ্ঠন
জ্বালিয়ে
আনন্দ আকাশে এক সশব্দ কামড়।
খুব আদরে
সোহাগে শঙ্খ বাজে সুকল্যাণ
অতঃপর
গ্লাসের টুংটাং, রামপাখিটি তরলে ডুবিয়ে
চুমুকের
এক শব্দময় কামড়,
প্রত্যাখ্যান
নয়, সবই গ্রহণ এই তারামণ্ডলে
বিছানায়
সবুজ ঘাস, নরম,
শঙ্খ
লাগে রাত্রভর।
ভয় নেই আর,বালক
দুরু
দুরু বক্ষে আর
দাঁড়ানো
নেই কোন বৃক্ষের আড়ালে
যাও
তোমারই দেশ
যেখানে
খুশি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন