(তিনসুকিয়াতে রবিরাগিনীর রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী হয়ে গেল আজ, ২০মে, ২০১৩তে। অত্যন্ত ছিমছাম পরিপাটি। অনুষ্ঠান সাজানো, পরিবেশনও যে একটা শিল্প এই তারা দেখিয়ে দিলেন। সেখানে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করিয়ে কিছু বলতে হয়েছিল। লিখে নিয়ে গেছিলাম। সেটিই এখানে রইল।)
আপনারা অবশ্য, আমাকে স্বাধীনতা
দিয়েছেন আমি যা ইচ্ছে তাই বলতে পারি। সেখানে বিপদ ভীষণ। এই ভদ্রলোক জীবনে এতো বেশি
কিছু নিয়ে কথা লিখে গেছেন যে , আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তার সবটা পড়বার , জানবার
এবং শোনবার ধর্য রাখতে পারে না। এই যেমন
ধরুন তাঁকে বলা হয়, আধুনিক ভারতের প্রথম ভাষাবিজ্ঞানী। স্বয়ং সুনীতি চট্টোপাধ্যায়
লিখে গেছেন। বাংলাভাষাতে ণত্ববিধি, ষত্ববিধিকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে প্রচুর কথা লিখে
গেছেন । তার পরেও। কিন্তু সেই সব বিধিকথা কি আর আজকের এই সাঙ্গীতিক সন্ধ্যাতে কেউ
শুনতে চাইবেন? ফলে আমাকে ভাবতেই হয়েছে
আপনাদের কিসে ধৈর্য থাকতে পারে। তার উপর আমি চিরদিন দুষ্ট ছাত্র। শেষ বেঞ্চে বসা
ছাত্রের মতো। মাস্টার মশাই যা বলবেন, আমার কাজ তার উলটো করা। আমাকে তাই সামনের
আসনে মানায় না, কথাটা আমি জানি। আপনারা আমাকে শুধু সামনে এনে বসান নি, দিক পালটে
বসিয়েছেন। কী ভেবে জানি না, সে আপনাদের
সৌজন্য। তাই শুরুতেই ‘রবি রাগিনী’র সবাইকে আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তো, আমি কী করে বলবার বিষয় ঠিক
করেছি সেই নিয়ে বলি। রবীন্দ্রনাথ খুব উল্টোপাল্টা কথা বলতেন, আপনারা খেয়াল করেছেন?
তাঁর একটা গান আছে না? ‘আমার পরান যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই
গো’ আমরা হলে এর পরে কী লিখতাম? ‘এবারে তুমি যেন আর বলো না যাই
যাই গো।’ তিনি লিখলেন, “যদি আর-কারে ভালোবাস, যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও, আমি যত দুখ পাই গো” হলো কি না উলটো কথা? সে যাক, আমারও তেমনি উলটো কথা বলা অভ্যেস। তাঁর থেকেই শিখেছি। কেউ যদি ব্যথা পান, নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। এই যে আমার ‘পরান যাহা চায় তুমি তাই গো।’ এর অর্থটা কী? তুমি ঠিক সেরকমই আমি যেমনটি এদ্দিন ধরে বিয়ে করব বলে খুঁজছিলাম। আচ্ছা, এরকম হতে পারে না, যে এর অর্থ এই যে তুমি ঠিক সেরকমই আমি তোমাকে যেমনটি ভাবি। আসল তুমি আমাকে বিয়ে করো কি না করো, আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না!
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও, আমি যত দুখ পাই গো” হলো কি না উলটো কথা? সে যাক, আমারও তেমনি উলটো কথা বলা অভ্যেস। তাঁর থেকেই শিখেছি। কেউ যদি ব্যথা পান, নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন। এই যে আমার ‘পরান যাহা চায় তুমি তাই গো।’ এর অর্থটা কী? তুমি ঠিক সেরকমই আমি যেমনটি এদ্দিন ধরে বিয়ে করব বলে খুঁজছিলাম। আচ্ছা, এরকম হতে পারে না, যে এর অর্থ এই যে তুমি ঠিক সেরকমই আমি তোমাকে যেমনটি ভাবি। আসল তুমি আমাকে বিয়ে করো কি না করো, আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না!
আচ্ছা,
ধাঁধাটা রেখে আরো সহজ করে বলি। তাঁর একটি কবিতা আছে না? শ্যামলীতে আছে,
“আমারই চেতনার রঙে পান্না হল
সবুজ ,/ চুনি উঠল রাঙা হয়ে ।/ আমি
চোখ মেললুম আকাশে ,/ জ্বলে উঠল আলো/ পুবে পশ্চিমে ।/ গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর' ,/ সুন্দর হল সে ।/ তুমি বলবে , এ যে তত্ত্বকথা ,/ এ কবির বাণী নয় ।/ আমি বলব , এ সত্য ,/ তাই এ কাব্য ।” তো
আমাদের চোখচেতনা যদি বলে পান্না তো
পান্নাই , আর নইলে দুনিয়ার সব কিছুই কান্না কেবলই কান্না । এই নিয়ে বিজ্ঞানী
আইনষ্টাইনের সঙ্গে তার একটি বিতর্ক জগত বিখ্যাত হয়ে আছে। আইনষ্টাইন বলছিলেন, কেন,
আমাদের চেতনা নিরপেক্ষ ভাবে কি বস্তুর উপস্থিতি থাকতে পারে না? রবীন্দ্রনাথ
বলছিলেন, থাকলেই কী আর না থাকলেই কী?
মার্ক্সবাদের মতো বস্তুবাদী দর্শনও মনে করে মানুষের চেতনবিশ্বে অনুপস্থিতিতে
বস্তুবিশ্বের অস্তিত্বের কোন অর্থ নেই। প্রতিটি মানুষ যেমন তার স্থানে কালে একটা
বস্তুকে দেখে , প্রতিটি সমাজও তেমনি দেখে। বা বলতে পারেন প্রতিটি সমাজেরও আছে
দেখার স্থান-কাল। সমাজেরও আবার বিচিত্র সব অংশ আছে। তার সবার স্থান কাল এক নয়।
এসবে আমি যাচ্ছি না, আমি শুধু বলছি যে আমি যখন মানুষ বলছি, তখন জরুরি নয় যে সে
ব্যক্তি মানুষ, সমষ্টিমানুষও হতে পারে। তিনসুকিয়াকে সবুজনগরী বলা হবে কিনা, সেটি
ইতিহাসের এক নির্দিষ্ট কালে এই শহরের একাংশ মানুষ স্থির করছে। আর তাতে বড় বেশি দু’টো
পক্ষ থাকতে পারে। এক দল যারা সেটি বলছেন, আর দল যারা সেটি বলতে চাইছেন না। আরো
একটি দল থাকতেই পারেন, যারা এই বিতর্কের কথা জানেন না, কিন্তু জানলে এই আখ্যান
তৈরির প্রক্রিয়াতে প্রবেশ করে যাবেন। আমি ‘জানলে’ শব্দটি ভেবে চিন্তে ব্যবহার
করেছি। আপনারা যদি আমার বক্তব্য শুনে ভেবে বসেন এই অধ্যাপকটি বেশ জানেন, ইনি বেশ
জ্ঞানী মানুষ—আমি বড় লজ্জাতে পড়ে যাব। কারণ, জানাতে আমাদের যাত্রা শুরুও হয় না,
শেষও হয় না, শুরু হয় একটা বোধের জগত থেকে, বিশ্বাসের জগত থেকে শেষ হয় আরেক উন্নততর
বিশ্বাসের জগতে উত্তরিত হয়ে। এই বোধের জগতটি গুরুত্বপূর্ণ। জ্ঞান যদি সবটা হতো তবে
দুনিয়াতে প্রচুর জ্ঞানী লোক আছেন,তারা জগতটাকে এদ্দিনে বেশ সুন্দর বাসযোগ্য ভুমি
হয়ে উঠতে পারত। তা যে হয় না, বরং জ্ঞানী লোকের হাতেই দুনিয়াতে নাগিনিরা চারিদিকে
ফেলিতেছে নিঃশ্বাস দেখি তার কারণ, সেই
জ্ঞানীর স্থান আর কাল—যেখানে তার বিশ্বাস লালিত হয়। আমি তাই আপনাদের কিছু জানাতে
যাবো না, আমার এক বিশ্বাসের জগত আছে , সেখানে যদি আপনাদের ঢু মারবার আগ্রহ বাড়াতে
পারি, তবেই আমার আজকের সন্ধ্যা সার্থক।
তো এবারে আমি যখন তাঁকে নিয়ে বলতে যাবো, তখন আমাকে মাথাতে রাখতে হয়েছে
আপনারা কী শুনতে চাইবেন। একটা মোহতে পেয়ে বসল, যাতে আপনাদের চেতনাতে আমার বক্তব্য
হয় সহজ এবং সরস পান্না। তাই গান নিয়েই পড়লাম। আমি কিন্তু গানের গ জানি না। লাভ
হলো, এই প্রথম গান নিয়ে তিনি কী লিখেছিলেন তার কিছু কিছু পড়ে নিলাম। শিখলাম,
জানলাম। তার জন্যে আপনাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। তো, আগেই বলেছি আমি কিছু জানাতে
যাবো না, যা শিখেছি তা শেখাতেও যাবো না। আমার একজন চেনা রবীন্দ্রনাথ আছেন, যিনি
ছেলেবেলাতেই ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতাতে সমস্ত কবিদের ডেকে
লিখেছিলেন, স্বর্গ হতে নিয়ে এসো বিশ্বাসের ছবি।
গান নিয়ে তাঁর যে দুই একটি লেখা পড়লাম,
আমি খুঁজলাম আমার সেই চেনা রবিবাবুকে পাচ্ছি কিনা। রবি বাবু বলাতে আপনারা কিছু মনে
করেন নিতো? ভদ্রলোককে আমরা প্রায় ‘হিন্দুর ঠাকুরদেবতা’ করে তুলেছি। মুসলমানের
কিচ্ছু না। সেদিন, পাশেই এক শহরে মেয়েকে নিয়ে গেছিলাম, রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর
প্রতিযোগিতাতে। তো বেশ কিছু প্রতিযোগী মাঝপথে ভুলে যাচ্ছিল কবিতা। তো এক রাশভারি বৃদ্ধ
বিচারক, সেখানকারই লোক--- বারে বারে এই সব প্রতিযোগীদের ধমকে দিচ্ছিলেন। দুই
একজনতো প্রায় কেঁদেই ফেলছিল। কিন্তু রাশভারি সেই বিচারক মহোদয়ের তখন অন্য চিন্তা--
এতে বুঝি রবিঠাকুরের অবমাননা হয়। শুনে আমার মনে হচ্ছিল, ধুত্তুরি ছাই! এই সব রবি
ভক্তদের কথা মনে রেখেই সুনীল গাঙ্গুলী লিখেছিলেন, “তিন জোড়া লাথির ঘায়ে
রবীন্দ্ররচনাবলী লুটোয় পাপোশে” মার্কিন দেশে গিয়ে
ওদের ধনগর্বের মত্ততা দেখে যে রবীন্দ্রনাথ প্রবল যন্ত্রণায় আর বিদ্বেষে শিশু ভোলানাথদের ডেকে বলেছিলেন,
‘খেলেনা ভাঙার খেলা দে আমারে বলি’ সেই তাঁর বুঝি অপমান হয় তাঁর কবিতা ভুলে গেলে।
শিশু ভোলানাথের কবিতাগুলো স্মরণ করুন দেখি, কী সব দুষ্টুমী করতে শিখিয়েছেন
জন্মদাত্রী মায়ের সঙ্গে। আর তিনি বুঝি করবেন গোসা, তাঁর সঙ্গে দুষ্টুমী করলে! এমন
ঠাকুর দেবতা যান জানান্নমে।
তো আমি যখন
গান নিয়ে পড়লাম, দেখি এই তো আমার ইয়ার দোস্ত রবীন্দ্রনাথ। এখানেও তাঁর দুষ্টুমী।
খেলেনা ভাঙ্গার খেলা বলে বলে যাচ্ছেন। আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বলতে গেলে একটা
কথা বলে ফেলি, লোকে বলেন যে রবীন্দ্রনাথের কোন কথাতে ভরসা করতে নেই, তিনি আজ একটা
কথা লিখেছেন তো কাল ঠিক তার উলটো কথা লিখেছেন। আমি তাঁকে পুরো পড়িনি, কিন্তু আমার
আগ্রহ আছে দর্শনে, সমাজতত্বে, সাহিত্য তত্বে, রাজনীতিতে। আমি তাঁর সেই লেখাগুলোকে
নিবিড় পাঠে জেনেছি, হ্যা, ভদ্রলোক কাল যদি জেনেছেন আজ কিছু ভুল বলেছিলেন, তবে সেটি
স্বীকার করে নিয়ে নিজের অবস্থান পালটে দিতেন। এটা হতো ধারাবাহিক, ক্রমোন্নতির পথে।
তাছাড়া প্রসঙ্গ এবং স্থান-কাল বলেও একটা কথা আছে। এরই জন্যে যারা জ্ঞানগর্বী তাঁরা
বলেন রবীন্দ্রনাথ বড় স্ববিরোধপূর্ণ। কিন্তু যদি আপনি তাঁকে ধারাবাহিক পড়েন,দেখবেন
‘সামঞ্জস্য’ শব্দটি হচ্ছে সেই শব্দ যাকে দিয়ে গোটা রবীন্দ্রনাথকে বোঝে ফেলা যায়।
শব্দটি তিনি বহুবার বহুভাবে ব্যবহারও করেছেন। দুনিয়াময় অসামঞ্জস্যের ভিড়ে খানিক
সামঞ্জস্য পেলেই তাঁর মন গেয়ে উঠে, “আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে, আর কিছু নাহি চাই গো” এই যেমন ধরুন গোলাপ ফুল নিয়ে কীসব কথা বলছেন তিনি, “গোলাপ-ফুলে আমরা আনন্দ পাই। বর্ণে গন্ধে রূপে রেখায় এই ফুলে আমরা একের
সুষমা দেখি। এর মধ্যে আমাদের আত্মারূপী এক আপন আত্মীয়তা স্বীকার করে, তখন এর আর-কোনো মূল্যের দরকার হয় না। অন্তরের এক বাহিরের
একের মধ্যে আপনাকে পায় বলে এরই নাম দিই আনন্দরূপ। গোলাপের মধ্যে সুনিহিত সুবিহিত
সুষমাযুক্ত যে-ঐক্য নিখিলের অন্তরের মধ্যেও সেই ঐক্য। সমস্তের সংগীতের সঙ্গে এই
গোলাপের সুরটুকুর মিল আছে; নিখিল এই ফুলের সুষমাটিকে আপন বলে
গ্রহণ করেছে।”(তথ্য ও সত্য;সাহিত্যের পথে) বুঝতেই পারছেন এ শুধু গোলাপ নিয়ে বলবার কথা নয়, সমস্ত শিল্পরূপ মায়
গান নিয়েও তাঁর বলবার কথা এইটেই।
এই এককে ছেড়ে আপনি যতই কারিকুরি
গলাবাজি করুননা কেন, সবটাই অসার। নিরর্থক। তিনসুকিয়া শহরে আমি দীর্ঘদিন ধরে
সাংস্কৃতিক পরিবেশকে পাশে থেকে দেখছি, আর সেই ‘একের’ সন্ধানে কারা ফিরছেন চোখ
রাখছি, কিছু মনে করবেননা, আমি বড় বেশি উৎসাহীত হতে পারি নি। তাই শেষ বেঞ্চে বসে
থাকি। হতে পারে আমার দেখার বাইরে জগত আছে, কিন্তু যা দেখেছি তা এই-- এখানে গায়ক
আছেন, আঁকিয়ে আছেন, লিখিয়ে আছেন, নাচিয়ে আছেন এমন কি সাহিত্যের মাষ্টারও আছেন,
কিন্তু সেই একের সাধক নেই খুব একটা। আমি তাই আমার মাষ্টারদের ক্লাসে বেয়াড়া ছাত্র,
লাষ্ট বেঞ্চের দুষ্ট ।তাঁর একটি গান আছে এরকম,
আপনারা শুনে থাকবেন,
ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই–
গুণের মধ্যে
ওই আমাদের, গুণের মধ্যে ওই॥
দেশে দেশে নিন্দে রটে, পদে পদে বিপদ ঘটে–
পুঁথির কথা কই নে মোরা, উল্টো
কথা কই॥
জন্ম মোদের
ত্র্যহস্পর্শে, সকল অনাসৃষ্টি।
ছুটি নিলেন
বৃহস্পতি, রইল শনির দৃষ্টি।
অযাত্রাতে নৌকো ভাসা, রাখি নে, ভাই, ফলের আশা–
আমাদের আর নাই যে গতি ভেসেই
চলা বই॥
'আবেদন' বলে একটি কবিতা আছে, সেখানে ভৃত্যে রানিতে কথা হচ্ছে,
“ভৃত্য । জয় হোক মহারানী । রাজরাজেশ্বরী ,
দীন ভৃত্যে করো দয়া ।
রানী । সভা ভঙ্গ করি
সকলেই গেল চলি যথাযোগ্য কাজে
আমার সেবকবৃন্দ বিশ্বরাজ্যমাঝে ,
মোর আজ্ঞা মোর মান লয়ে শীর্ষদেশে
জয়শঙ্খ সগর্বে বাজায়ে । সভাশেষে
তুমি এলে নিশান্তের শশাঙ্ক-সমান
ভক্ত ভৃত্য মোর । কী প্রার্থনা ?
ভৃত্য । মোর স্থান
সর্বশেষে , আমি তব সর্বাধম দাস
মহোত্তমে । একে একে পরিতৃপ্ত-আশ
সবাই আনন্দে যবে ঘরে ফিরে যায়
সেইক্ষণে আমি আসি নির্জন সভায় ,
একাকী আসীনা তব চরণতলের
প্রান্তে বসে ভিক্ষা মাগি শুধু সকলের
সর্ব-অবশেষটুকু ।
রানী । অবোধ ভিক্ষুক ,
অসময়ে কী তোরে মিলিবে ।
ভৃত্য । হাসিমুখ
দেখে চলে যাব । আছে দেবী , আরো আছে —
নানা কর্ম নানা পদ নিল তোর কাছে
নানা জনে ; এক কর্ম কেহ চাহে নাই ,
ভৃত্য- ' পরে দয়া করে দেহো মোরে তাই
—
আমি তব মালঞ্চের হব মালাকর।”
দীর্ঘ এই কবিতার একেবারে শেষে ভৃত্যের
প্রার্থনা মঞ্জুর হচ্ছেঃ
ভৃত্য , আবেদন তব
করিনু গ্রহণ । আছে মোর বহু মন্ত্রী ,
বহু সৈন্য , বহু সেনাপতি — বহু যন্ত্রী
কর্মযন্ত্রে রত — তুই থাক্ চিরদিন
স্বেচ্ছাবন্দী দাস , খ্যাতিহীন , কর্মহীন ।
রাজসভা-বহিঃপ্রান্তে রবে তোর ঘর —
তুই মোর মালঞ্চের হবি মালাকর ।
আমরা কি রাজি আছি, প্রচারের আর প্রতিষ্ঠার
আর প্রতাপের বাইরে গিয়ে এমন ভৃত্য হতে? এমন মালাকর হতে? আপনারা সঙ্গত প্রশ্ন করতে
পারেন আমাদের শিল্পীদের প্রচার কই, প্রতিষ্ঠা কই আর প্রতাপই বা আমি দেখছি কোথায়?
বাংলা ভাষাতে কিছু করলে আর কলকাতার লোক না হলে কেউ দেখতে আসে ? আসে না। তাই আমরা
কলকাতার অনুগমন করি। কলকাতা করে বিলেতের। আমাদের শতাব্দী পুরোনো দীর্ঘ আশা, ঠিকঠাক
ওদের মতো হতে পারলেই হওয়া হলো, আমাদের মতো হলে লোকে হাসবে। যাই হই আমাদের মতোন হতে
নেই, সবই ওদের মতো হওয়া চাই। অথচ, একের সাধনার মূল কথাই হলো, হয়ে উঠা, ব্যক্তির
হয়ে উঠা, সমাজের হয়ে উঠা, সৃষ্টির হয়ে ওঠা, স্রষ্টার হয়ে উঠা। কার মতো? কারো না!
এই অরূপরতন একের মতো। এই একের মধ্যে আমাদের আত্মারূপী এক আপন আত্মীয়তা স্বীকার
করে, তখন এর আর-কোনো মূল্যের
দরকার হয় না। কিন্তু আমরা হয়ে উঠতে চাই
পশ্চিমের মতো, প্রতাপের মতো, প্রচারের মতো, প্রতিষ্ঠার মতো। মনে রাখবেন আমাদের এই
প্রতাপের কেন্দ্রগুলো সবই পশ্চিমে। সে হোক কলকাতা, মুম্বাই, প্যারিস কিম্বা হলিউড।
পশ্চিমে সূর্য অস্ত যায়। আমাদের প্রদেশে রোজ দিনের প্রথম সূর্য উঠে, তবু আমরা নতুন
দিনের স্বপ্ন দেখতে পারি না। আমাদের দিকে যদি আমরাই না তাকাই তবে লোকে তাকাবে কেন?
এই যে-- ‘কারো মতো হওয়া’-- এই নিয়ে রবীন্দ্রনাথ একবার ‘সংগীত ও ভাব’ নিয়ে লিখতে
গিয়ে বড় ভালো কথা লিখেছিলেন,
“এক ব্যক্তির নিকট হইতে একটি চিঠি পাইয়াছিলাম; স্বাক্ষরিত নাম কিছুতেই পড়িয়া উঠিতে পারি নাই, অথচ
সে চিঠির উত্তর দিতে হইবে। কী করি, সে যেরূপে তাহার নামটি
লিখিয়াছিল অতি ধীরে ধীরে আমি অবিকল সেইরূপ নকল করিয়া দিলাম। যদি নামটি বুঝিতে
পারিতাম, তবে সেই নামটি লিখিতাম অথচ নিজের হস্তাক্ষরে
লিখিতাম। অবিকল নকল দেখিলেই বুঝা যায় যে, অনুকরণকারী অনুকৃত
পদার্থের ভাব আয়ত্ত করিতে পারেন নাই। মনে করুন আমি সাহেব হইতে চাই, অথচ আমি সাহেবদিগের ভাব কিছুমাত্র জানি না, তখন আমি
কী করি? না, অ্যান্ড্রু-নামক একটি
বিশেষ সাহেবকে লক্ষ্য রাখিয়া অবিকল তাহার মতো কোর্তা ও পাজামা ব্যবহার করি,
তাহার কোর্তার যে দুই জায়গায় ছেঁড়া আছে যত্নপূর্বক আমার কোর্তার ঠিক
সেই দুই জায়গায় ছিঁড়ি, ও তাহার নাকে যে স্থানে তিনটি তিল আছে
আমার নাকের ঠিক সেইখানে কালি দিয়া তিনটি তিল চিত্রিত করি। ওই একই কারণ হইতে,
যাহাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা নাই তাহারা ভদ্র হইতে ইচ্ছা করিলে
আনুষ্ঠানিক ভদ্রতার কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে। আমাদের সংগীতশাস্ত্র নাকি মৃত
শাস্ত্র, সে শাস্ত্রের ভাবটা আমরা নাকি আয়ত্ত করিতে পারি না,
এইজন্য রাগরাগিণী বাদী ও বিসম্বাদী সুরের ব্যাকরণ লইয়াই মহা কোলাহল
করিয়া থাকি। যে ভাষার ব্যাকরণ সম্পূর্ণ হইয়াছে, সে ভাষার
পরলোকপ্রাপ্তি হইয়াছে। ব্যাকরণ ভাষাকে বাঁচাইতে পারে না, তা
প্রাচীন ইজিপ্ট্বাসীদের ন্যায় ভাষার একটা ‘মমী’ তৈরি করে মাত্র। যে সাহিত্যে অলংকারশাস্ত্রের রাজত্ব, সে সাহিত্যে কবিতাকে গঙ্গাযাত্রা করা হইয়াছে। অলংকারশাস্ত্রের পিঞ্জর হইতে
মুক্ত হওয়াতে সম্প্রতি কবিতার কণ্ঠ বাংলার আকাশে উঠিয়াছে; আমার
ইচ্ছা যে, কবিতার সহচর সংগীতকেও শাস্ত্রের লৌহকারা হইতে
মুক্ত করিয়া উভয়ের মধ্যে বিবাহ দেওয়া হউক।"
রবীন্দ্রনাথ রাগরাগিনীর অলঙ্কার
শাস্ত্রের কারা থেকে সঙ্গীতকে মুক্ত করবার কথা বলছিলেন। দেখলেন কিনা, শিশু ভোলানাথের
সেই ‘খেলেনা ভাঙার’ কথা। অথচ, আমরা জানি তাঁরই বিশ্বভারতী কী সব আজব কারাগার তৈরি
করে তাঁর সৃষ্টিকে বন্দি করে রেখেছিল দীর্ঘদিন। আজকাল সে কারা ভেঙ্গেছে ভালোই
হয়েছে, এখন হচ্ছে ‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে/ পাগল আমার মন জেগে ওঠে’
আপনারা শুনছেন। তাতে বহু কারারক্ষী এবং এদেশে ওদেশে তাদের সহকর্মীরা রেগে কাঁই।
কিন্তু তাদের খেলেনার দিন শেষ, খেলেনা ভেঙ্গে গেছে। যা হবার তা হবে রবীন্দ্রনাথই
যে লিখেছেন, “যা না
চাইবার তাই আজি চাই গো,/ যা
না পাইবার তাই কোথা পাই গো।/ পাব
না, পাবনা, মরি
অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে।”
এই হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। কে বললেন, যে
তিনি আলখেল্লা পরা রাশভারি গুরুদেবটি। যে
আলখেল্লাটি বুড়ো রবীন্দ্রনাথের ছবিতে দেখি সেও যে কেন বাউল ফকিরের মতো দেখায়,
বামুন ঠাকুরের মতোও নয়,সাহেবদের মতোও নয় ---এই সব প্রশ্নও আমরা করব না। কিন্তু মুস্কিল হলো, আরেকটি কারা হচ্ছে। সে হলো সেই পশ্চিমী কারা,
প্রতাপের কারা, বাজারের কারা। সেতো চিরদিনই ছিল। আর সেই বাজার যদিও বা তার স্থানে
কালে জিনিসটা কোনোভাবে ভালো রকম গড়েও তোলে আমাদের বাস্তবতাতো ভিন্ন, আমরা আগে
সুচিত্রা মিত্রের পেছনে ছুটতাম, জর্জবিশ্বাসের পেছনে ছুটতাম, এখন ছুটি নচিকেতার। এখন, আমরা যদি সত্যি আমাদের নিজেদের
মতো ভদ্রলোক হয়ে উঠবার যোগ্য নই বলে নিজেকে মনেই করি, তবে এই হবে, “যাহাদের স্বাভাবিক ভদ্রতা নাই তাহারা ভদ্র হইতে ইচ্ছা করিলে আনুষ্ঠানিক
ভদ্রতার কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া থাকে।” আমরা বাড়াবাড়ি করে ফেলব, আর চেনাজনকে
ডেকে বলব, তুমি কি জানো , যে আমিও রবিঠাকুরের গান গাই। শেষ পর্যন্ত যে এগুলো আমরই
গান, আমাদেরই গান হয়ে উঠতে হবে এই বোধই
আমার নেই। পাছে রবিঠাকুর পাপ দেন, সেই ভয়ে কথাটা ভাবতেও সাহস করব না। সেদিন,
রবীন্দ্র জয়ন্তীদিনে আমার মেয়ে এবং তার বন্ধুরা তিনসুকিয়ার এক টিভি চ্যানেলে
রবীন্দ্র কবিতা বলল। সঙ্গে তবলা বাজল, এবং পায়ের নিচে কবিতাকে পিসে মেরে ফেলল। তবলা
আগে বাজল, কবিতা তার পেছনে ছুটল, রবীন্দ্রনাথ হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন সবহারাদের নিচে
নিঃস্ব।আপনারা শুনে থাকবেন সেই অনুষ্ঠান , আমার ভালো লাগে নি। নজির দিয়ে বললে ভালো
বোঝা যায়, তাই বললাম, নইলে কারো নিন্দে করা আমার ইচ্ছে নেই। আমার শিশু কন্যারতো
নয়ই।
মনে হচ্ছে আমার বলবার কথা বলে ফেলেছি
এর বেশি বললে আপনাদের ধৈর্যের প্রতি সুবিচার করা হবে না। শুধু ঐ শুরুতে যে একটি
গানের কথা বলেছিলাম, ‘‘আমার পরান যাহা চায়,’ এটা এই হবে না হবে, “আমারো
পরানো যাহা চায়”। আপনারা কী গান করেন জানি না, আমি কিন্তু বহু জায়গাতে
দ্বিতীয়টি কেবল শুনিই নি, লেখাও দেখেছি। রবীন্দ্ররচনাবলীতে কিন্তু প্রথমটি আছে।
এটি মায়ার খেলা গীতিনাট্যের দ্বিতীয় দৃশ্যের গান। শান্তা গাইছে। দ্বিতীয়টির মানে
কী দাঁড়ালো? অন্য অনেকে তোমাকে চায়, সঙ্গে আমিও চাই আরকি, তাও কেবল আমার প্রাণ চায়
না, সেই প্রাণের সঙ্গে আর যা যা আছে এই যেমন আমার চুল, নাক, মুখ ঠোঁট সবাই মিলে
তোমাকে চাইছে । এবারে বলো তুমি যাও কই? রসিকতাটা আমার নয়, এক পশ্চিমা মানে কলকাতার
লেখকের। আমাদের এই অহৈতুকী ও-কার তথা কলকাত্তাই ঘটি উচ্চারণ প্রীতি আছে না! আমরা
এই নিয়ে নাজেহাল করে দিই শিল্পীকে অথচ কিছুতেই যেন আসে না সঠিক উচ্চারণ! আসবে কী
করে! আমার রক্তে মাংসে হুগলী-ভাগিরথীর জল নেই, আছে পদ্মা-মেঘনা-লুইতের পানি। কোথাও
আমাদের মতো করতে পারি কিনা, ভাবা যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন গান
শাস্ত্রের জিনিস নয় ভাবের জিনিস, যেমন আমি বললাম আমার বলাটা জ্ঞানের জিনিস নয়
বিশ্বাসের জিনিস। এই দেখুন তিনি লিখছেন,
“আমাদের সংগীত যখন জীবন্ত ছিল, তখন ভাবের প্রতি যেরূপ মনোযোগ দেওয়া হইত সেরূপ মনোযোগ আর কোনো দেশের
সংগীতে দেওয়া হয় কি না সন্দেহ। আমাদের দেশে যখন বিভিন্ন ঋতু ও বিভিন্ন সময়ের ভাবের
সহিত মিলাইয়া বিভিন্ন রাগরাগিণী রচনা করা হইত, যখন আমাদের
রাগরাগিণীর বিভিন্ন ভাবব্যঞ্জক চিত্র পর্যন্ত ছিল, তখন স্পষ্টই
বুঝা যাইতেছে যে, আমাদের দেশে রাগরাগিণী ভাবের সেবাতেই
নিযুক্ত ছিল। সে দিন গিয়াছে। কিন্তু আবার কি আসিবে না!”( সংগীত;সংগীত ও ভাব)
আমারও সেই প্রশ্ন, আবার কি আসবে না, ফ্যাসনকে ফেলে ভাবকে সেবা করবার দিন? ভাবের কথাতেই দেখুন দেশ কালের কথাটি আছে, তাদের চিনতে হবে জানতে হবে। আমরা যখন রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু বলি, কিছু লিখি বা আমরা যখন সাধারণ বক্তৃতা করি বা কবিতা লিখি তখনও আমাদের ধারণা, হয় আমাদের ভাষা হতে হবে তৎসম শব্দবহুল সাধু প্রায়, আর নইলে কলকাত্তাই ঘটি। কলকাত্তাই ঘটি কেন? না ঐটাই বুঝি রবিঠাকুরের ইচ্ছে। নইলে বুঝি-- গোটা বিশ্বের যে মিষ্টি ভাষা বাংলা, রবীন্দ্রনাথের ভাষা বাংলা ---তাকে অপমান করা হয়। তো রবিঠাকুরের এমন পংক্তি আপনারা পড়েন নি? “স্বপনে তার বয়সখানা/ বেবাক গেল ভুলে” । এই যে ‘বেবাক’ --একটি বিশুদ্ধ ঢাকাই শব্দ। আমাদের যে ভাষাটিকে শুধু শুধু সংস্কৃতের সন্তান ভেবে এককালে খুব তৎসম শব্দ বহুল করে তোলে নাম দিয়েছিলাম ‘সাধুবাংলা’ তারও বাপ- ঠাকুরদা আর যেই হোক মায়ের নাম কিন্তু নয় সংস্কৃত। কী সে জানেন? ঢাকাইয়া, বিক্রমপুরিয়া, সিলেটি, বরিশাইল্যা। তো এতো লজ্জা কিসের! সে ভাষারই কোন বামনাই ছিল না, আর থাকতে বুঝি হবে রবিঠাকুরের ! রবিঠাকুর বাংলাভাষার বামনাই ছাড়িয়েছিলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি শিল্পের অঙ্গনে সেই বামনাই কিম্বা সাহেবিয়ানা ছাড়তে পারি, তত বুক সটান করে নিজের মাথা তোলে দাঁড়াতে পারি, এই টুকু আমার বলবার কথা। ধন্যবাদ!
আমারও সেই প্রশ্ন, আবার কি আসবে না, ফ্যাসনকে ফেলে ভাবকে সেবা করবার দিন? ভাবের কথাতেই দেখুন দেশ কালের কথাটি আছে, তাদের চিনতে হবে জানতে হবে। আমরা যখন রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু বলি, কিছু লিখি বা আমরা যখন সাধারণ বক্তৃতা করি বা কবিতা লিখি তখনও আমাদের ধারণা, হয় আমাদের ভাষা হতে হবে তৎসম শব্দবহুল সাধু প্রায়, আর নইলে কলকাত্তাই ঘটি। কলকাত্তাই ঘটি কেন? না ঐটাই বুঝি রবিঠাকুরের ইচ্ছে। নইলে বুঝি-- গোটা বিশ্বের যে মিষ্টি ভাষা বাংলা, রবীন্দ্রনাথের ভাষা বাংলা ---তাকে অপমান করা হয়। তো রবিঠাকুরের এমন পংক্তি আপনারা পড়েন নি? “স্বপনে তার বয়সখানা/ বেবাক গেল ভুলে” । এই যে ‘বেবাক’ --একটি বিশুদ্ধ ঢাকাই শব্দ। আমাদের যে ভাষাটিকে শুধু শুধু সংস্কৃতের সন্তান ভেবে এককালে খুব তৎসম শব্দ বহুল করে তোলে নাম দিয়েছিলাম ‘সাধুবাংলা’ তারও বাপ- ঠাকুরদা আর যেই হোক মায়ের নাম কিন্তু নয় সংস্কৃত। কী সে জানেন? ঢাকাইয়া, বিক্রমপুরিয়া, সিলেটি, বরিশাইল্যা। তো এতো লজ্জা কিসের! সে ভাষারই কোন বামনাই ছিল না, আর থাকতে বুঝি হবে রবিঠাকুরের ! রবিঠাকুর বাংলাভাষার বামনাই ছাড়িয়েছিলেন, আমরা যত তাড়াতাড়ি শিল্পের অঙ্গনে সেই বামনাই কিম্বা সাহেবিয়ানা ছাড়তে পারি, তত বুক সটান করে নিজের মাথা তোলে দাঁড়াতে পারি, এই টুকু আমার বলবার কথা। ধন্যবাদ!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন