সুশান্ত করের পরিচালনায় এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায় কর্মশালাকে ।
প্রধান অতিথি সুশান্ত কর বলেন , গেল শতকের শেষ
দশকে বিশ্বায়নের শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এমন এক প্রচার হলো চারদিকে যে এখন তথ্য
প্রযুক্তির যুগ, সেই প্রযুক্তি ইংরেজি ছাড়া ভাষা জানে না। তাই সবাইকে ইংরেজি লিখতে
পড়তে এবং শিখতে হবে। সেই থেকে বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলোর শুরু হলো দুর্দিন। দু’দিন
বাংলার মতো ভারতীয় ভাষা-সাহিত্য গুলোর আগেও ছিল, এবারে তা আরো প্রবল হলো। অবস্থা
এতোটাই জটিল যে মাতৃভাষা মাধ্যমের স্কুলগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে দেখে
সরকারি স্কুল বাঁচাতেও সরকার ইংরেজি মাধ্যম চালু করবার কথা ভাবছেন, কিন্তু
ভাষা-সংস্কৃতির বিপন্নতা নিয়ে কেউ চিন্তিত নন। যে ভাষা আসলেই ধরে রাখে আমাদের
সন্মিলিত স্মৃতি তথা ঐতিহ্য-ইতিহাসকে। যার বিপন্নতা মানেই আমাদের সঙ্গে সেই
ঐতিহ্যের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ। আসলে বিশ্বায়ন এই নতুন কুসংস্কার ছড়াতে পেরেছে তার
অনেক কারণ নিশ্চয় আছে। তার মধ্যে একটি, অবশ্যই আমাদের যথাপ্রাপ্ত জগৎকে মেনে নেবার
প্রবণতা। নইলে সত্য হলো, তথ্যপ্রযুক্তি মাতৃভাষাকে আজ দুনিয়া জুড়েই
মুক্ত করেছে
বই বিপন্ন করে নি। আমরা জানি না বা জানতে
চাই না বলেই বলে বেড়াই, ‘আজকাল কম্পিউটার যুগ, ইংরেজী ভাষার’ যুগ। অথচ, সত্য হলো
আমাদের পাশের দেশে শাহাবাগে যে জনজাগরণ দেখা দিয়েছে সেটি আয়োজন করেছেন তারাই যারা
বাংলা ভাষাতে আন্তর্জালে লেখেন কবিতা , গল্প, নিবন্ধ। দেন আড্ডা। তারাই এখন সে দেশের
রাজনীতি পাল্টাতে পথে নেমেছেন। তাদের কথা দুনিয়ার কেউ বাংলার বাইরে ইংরেজিতে
খোঁজলে পাবেন না তেমন। আমদের শহরেও শাহাবাগের সমর্থনে সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু বাংলা
ভাষাতে লিখে যারা ব্লগার্স--- তাদের আসল পরিচয় নিয়েও কোন কৌতুহল দেখিনি। বাস্তব
হলো, আজকাল শুধু বাংলা নয়, দুনিয়ার যে কোন ভাষাতেই কম্পিঊটারে মোবাইলে বার্তালাপ
করা যায়। আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোতেতো বটেই, আমাদের দেশেও প্রতিবেশি প্রায় সমস্ত
ভাষাই এতে অভ্যস্ত, মায় অসমিয়াও। শুধু ১৯শে মে’র
উপত্যকা বরাক কিম্বা শহর শিলচর –এই নিয়ে আশ্চর্যরকম নীরব।আন্তর্জালে কী ভাবে বাংলা পড়তে বা লিখতে হয়
জানে না । তাই তাদের এই ব্যতিক্রমী প্রয়াস
যা বরাক উপত্যকায় প্রথম – - তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় বলে মত ব্যক্ত করেন অধ্যাপক কর ।
শিশুমন্দির স্কুলের অধ্যক্ষা জয়শ্রী কর এই ব্যতিক্রমী প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে
ভবিষ্যতে তাদের স্কুলেও আন্তর্জালে বাংলা লেখার চর্চা ছাত্রছাত্রীদের
মধ্যে করাবেন বলে তার সমাপ্তি ভাষণে আভাস দিয়েছেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন