“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

অরোভিল ওভারভিউ

।। জাহিদ রুদ্র ।।

'উনিভার্সাল টাউন' হিসেবে কল্পনা করা, অরোভিল হল একটি টাউনশিপ যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতিনীতির অন্তর্গত সারা বিশ্ব থেকে আসা ব্যক্তিরা মিলেমিশে বসবাস করে। অরোভিল পন্ডিচেরি শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। মিররা আলফাসা যিনি অরবিন্দের অনুসারী ছিলেন ১৯৬৮ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং শ্রী অরবিন্দ সোসাইটিতে সবাই তাকে "মা" বলে ডাকতেন।

 

যারা তাদের জীবনের কোলাহল থেকে বিরত থাকতে চায় এবং কিছুটা শান্তি পেতে চায় তারা অরোভিলে যান। এই স্থানটি সকলকে উন্মুক্ত করে স্বাগত জানায় এবং এটি অনেক ছোট সংগঠনের আবাসস্থল। এই সংস্থাগুলি আপনাকে অভ্যন্তরীণ আত্মার যুদ্ধে লড়াই করতে এবং ধ্যান, যোগব্যায়াম ইত্যাদির সাহায্যে আপনাকে শান্তি প্রদান করতে সহায়তা করে।

 

এগুলি ছাড়াও মাতৃমন্দিরকে অরোভিলের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই স্থানটি আপনার জীবনযাপনের পদ্ধতি এবং জীবনের প্রতি উপলব্ধি পরিবর্তন করবে। প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা মাতৃমন্দিরের চারপাশের সবুজ আপনাকে চাঙ্গা করে। আপনি এখানে অনুষ্ঠিত সেশনের অংশ হতে পারেন যা আপনাকে অরোভিলের উদ্দেশ্যগুলির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং আপনাকে জীবন সম্পর্কে আপনার উপলব্ধি প্রসারিত করতে সহায়তা করবে।

 

অরোভিলকে বলা হয় এক্সপেরিমেন্টাল গ্রাম। এই গ্রামে ৬০ টি দেশের প্রায় ৩০০০ মানুষ বাস করে। এই গ্রামে কোন ধর্ম নেই, গোত্র নেই, রেস নেই, রাজনীতি নেই, দেশ ও জাতীয়তা নেই। এই গ্রামের একমাত্র আদর্শ হিউম্যানিটি! মানুষ বড়-ছোট যে কাজই করুক তার বেতন একই, ১২০০০ টাকা। ডাক্তারের বেতনও ১২,০০০; চতুর্থ বর্গ থেকে শুরু করে আরও নিম্ন বর্গের বেতনও ১২,০০০। মানুষের বিলাসিতার জন্য অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা নেই, শান্তি ও সুরক্ষার এক আদর্শ জনপদ এই অরোভিল। গ্রামে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় নেই।এই গ্রামের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান সবই কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে। গ্রামটিতে জাতিসংঘ, ইউনেস্কো অনেক টেককেয়ার করে কারণ গ্রামটি এক্সপেরিমেন্টাল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই গ্রামে অপরাধ নেই, নেই মানে ০%, জিরো পার্সেন্ট। বাংলায় তেমন কোন প্রবন্ধ পাবেন না, তবে ইংরেজিতে Auroville লিখে সার্চ দিলে ইন্টারনেট ও ইউটিউবে অনেক রিসোর্স পাবেন।

শুধুমাত্র হিউম্যানিটির উপর বেস করে একটা গ্রাম কতটা সফল হতে পারে, পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকতে গেলে যে হিউম্যানিটি ও একতা ছাড়া কোন বিকল্প নেই তার একটা এক্সপেরিমেন্ট এই গ্রাম।

তথ্যসূত্রঃ
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Auroville
https://auroville.org/
https://www.holidify.com/places/auroville/


বুধবার, ২৫ মে, ২০২২

মা-ডাকে শব্দ নেই

  ।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।। 
(C)Image:ছবি















আমি যদি মা হতাম
তাহলে হয়ত হৃদ-ঘড়িটা বেজে চলত।
আজীবন সংগ্রামী রমণী
সেদিনও একক নেতৃত্বে সামনের সারিতে
পেশীর সংকোচন প্রসারণ মুদ্রায়
যুদ্ধরত।
মাথার ব্যথায় যখন বেসামাল
তখন সহজাত ছন্দে
মুষ্টিবদ্ধ হাতে
অস্ত্রোপচারের বৃথা চেষ্টায়
কপালে আঁচড়।
ঘেমো শরীরের সাথে একাত্ম বিছানা
স্মৃতিতে প্রতীকী নামায়
শরৎ সকালের কোমল শীতল
ভরা গ্রীষ্মের বিকেলে।
শরীরী যন্ত্রণার উপাখ্যান
আমার অনুভবে ধরা পড়েনি।
কারণ হয়ত-
আমি মাকে বড় হতে দেখিনি,
বা, আমি মাকে চিনতে চাইনি।
অসম যুদ্ধের পাশাপাশি,
নিরন্তর সাহস দিচ্ছিল
কথা কইতে না পারার অসহ্য মাঝে
আমার মা।
কারণ-
মা জানত আমার ইতিহাস।
মা চিনত প্রাপ্তবয়স্ক আমি-কে ।
আমি মা ছিলাম না !
তাই মায়ের যন্ত্রণার উপশম,
বা,জীবনে টিকে থাকার হদিশ
খুঁজে দিতে পারিনি।
বুকের শেষ উঠানামা
রাত ১০ টা ৫৫ মিঃ অবধি।
 
 
 
 
 
 
 
 

আমি

 ।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।

(C)Image:ছবি











সৌর করোনা তাপে

ঝলসানো আমি,

শীতলতা খুঁজি

হেমন্ত নদীতে।

বর্ষানদীর জলোচ্ছ্বাসে

হাত বাড়িয়ে দিই

ভেসে যাওয়ার আনন্দে।

বিপুলা নদীর বুকে

সভ্যতা বিলোয় যুগান্তর।

আমার বিশ্বাস, অহংকার,

আবেগ, নিশ্বাস যত

সব মিলায়

তোমারই জলে। 

 

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০২২

গর্বের রঙধনু















 

সাদা এবং ধূসরে এই বিশাল উদাসীনতার সাগর
জ্বলন্ত মস্তিষ্ক উপকূলে
যদিও শিশুর হৃদয় খেলতে বাধ্য হয়,
যুদ্ধের জন্ম আর হৃদয় ছিঁড়ে যাওয়া ঘৃণা-কল্পনার কাহিনী,
রসায়ন চলে প্যারাডক্সিকেল কথোপকথনে  ।
নিরপরাধ কটূক্তি - বিচ্ছেদের ট্যাগলাইনে
রক্ত ​​ঝরায় বিপথগামী পথে
এখানেই সে উদ্দীপ্ত করে আর আমি তাকে
সমান্তরাল ভালোবাসি, পুরুষতান্ত্রিক যুদ্ধ ছাড়া।

কিন্তু তারপর ........
বৈদ্যুতিক গান আর আত্মার চার্জ ভালোবাসা শেখায়,
কীভাবে গ্রহণ করবো কীভাবে কোমল হব
সবকিছু যাবতীয় বাস্তব আর স্নায়ুচরিত্রে।

আমার ক্লিভেজ শহর এখন বাধ্য চাষাবাদ ছেড়ে ধুতরোর বীজ চিবোতে।
কব্জি কেটে তার নাম ধরে ডাকলাম,
দেখি এই শহরে সূর্য ডুবে যাচ্ছে বয়সের দেয়ালে
শুধু গুগোল ম্যাপ স্ট্রিট লাইট জীবন কাটায়।

বসন্তের বিনিময়ে ভয়ের শহর নিক্ষিপ্ত আমাদের বন্দি জীবন
চোখ অশ্রুতে আমাকে কাছে রেখেছিল তার টান
 যার সাহসে ছিল স্ফুলিঙ্গ।
কিলিমাঞ্জারো পর্বত শহরকে রংধনুর রঙে রাঙিয়ে দেয় ইতিহাসের উত্তরসূরিরা।

সাহসীরা নিজেদের রক্ষা করে এবং লড়াই করে
কিন্তু আমি রেখেছিলাম
ক্ষমতাহীন ছোট অন্ধকারে নিজেকে বন্দী করে,
 বিচারের আযাবে গোনাহের ক্ষমতা থেকে,
 সাহস-হারা গোপন ভালবাসা 
ঘর থেকে বেরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে দেখে,
ভয়ের শহর আর নেই।

আমাদের শহর আর সাদা এবং ধূসরতা হারিয়ে
কিশোর উল্লাসে দৈনন্দিন জীবন 
দেয়ালে রঙধনু আঁকতে ব্যস্ত,
যেখানে আমি তাকে ভালবাসি এবং সে আমাকে,
যেখানে আমি গর্ব করতে শিখেছি,
বিপন্নতার তৃষ্ণা শরীর পেরিয়ে।

রবিবার, ২২ মে, ২০২২

আনন্দ নগর

।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।


(C)Image:ছবি














কবিতার কালিতে দেখা স্বপ্ন,
বইয়ের তাকে রাখা তোমার ভাষা,
আমার অত্যন্ত প্রিয় তুমি।
তোমার স্পষ্ট উচ্চারণ,
তোমার রচিত জীবনকথা,
আমায় নিয়ে যায়
আনন্দ নগর।
সেখানে ঝুলন হয়,
ঈদের নামাজ হয়,
দূর্গাপূজো হয় ভক্তিভরে।
আমি সেখানে তোমার সাথে,
শুধু তোমার সাথে
ঘর বাঁধতে চাই।



শেষ কলম


।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।

 






ভালোবাসি

তোমার সকল সত্তা জুড়ে।

মন্দবাসায়

প্রাপ্তি শূন্যতা।

হয়তো আছে নিশ্চয়।

কারণ তুমি মানবী। 

এখানেই আমি অসম্পূর্ণ।

অনেক রিক্ততার মাঝে তোমার অনুভূতি

অনন্য প্রাপ্তি।

তোমায় খুঁজে বের করার প্রয়াস

আমার আনন্দ যাপন।

হোক না

ভাষাহীন আদিম পৃথিবীর

আবেগিক অনুভব

লজ্জাবিহীন দিনান্তে।

 




অনুভূতির পাতা থেকে


।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।













ভালবাসার বৃষ্টি গড়ায়
চুল বেয়ে কপাল,
চিবুক ছুঁয়ে, শরীর মেখে
মাটির শেকড়ে।
এই জলে না ভেজা প্রাণ
মেরুপ্রদেশে রাতবিহীন সকাল।
আবার মেঘ ভেঙে
প্রবল তোড়ে
ধেয়ে আসা জলরাশি
ধুয়ে সাফ করে দেয়
জীবনের মায়া,
শুকিয়ে দেয় প্রেমের অনুভূতি।
শেষ বাঁচার রসদে মিলে
কাঁকরযুক্ত মাটি।
ডিমা হাসাওয়ের নিশ্চিহ্ন
হাফলং স্টেশন যেমন দুর্যোগ পরে।
তবু বাঁচে অদম্য মানুষ
নতুন প্রত্যাশায়।


বুধবার, ১৮ মে, ২০২২

চেতনায় উনিশ


আমি বাংলায় হাসি বাংলায় কাঁদি
করি বাংলায় প্রতিবাদ
যখনই করি ব্যথা অনুভব
আমি বাংলায় গাই গান।

 বাংলা আমার মাতৃভাষা
 বাংলা আমার প্রাণ.....
 বাংলা আমায় স্বপ্ন দেখায়
ভাইহারা উনিশ - একুশের গান।

 বাংলা আমার চোখের আলো
 বাঙালি আমার শক্তি
 বাংলা ভাষাকে সম্মান করি
 নেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বী।

বাংলা আমায় কথা শেখায়
জন্মের শুরুয়াতে
জন্মেছে কত রবি, নজরুল
এই বাংলার ধরা তলে।

বাঙালি তুমি উদীয়মান সূর্য 
গর্বিত ভালবাসা, 
রক্ত ​​এবং আত্মত্যাগে
 একষট্টির পরিভাষা।

বাংলা তুমি শুদ্ধ হয়েছ
প্রতিবাদে রাজপথে
জাতির রক্তে উনিশ মে'
চেতনার অনুভূতিতে।

বুদ্ধির দুর্যোগ

  ।।মিঠুন ভট্টাচার্য্য ।।

(C)Image:ছবি















উন্মাদ প্রকৃতি
শোধবোধ করতে উদ্যত।
সে ঠাই দিয়েছিল কীটপতঙ্গ থেকে
আধুনিক মানুষেরে একদিন।
চিনে নিতে শিখিয়েছিল তার নিয়ম,
আজও অবিরত চলছে
নিয়মের খোঁজ।
সেই ব্যবহার করতে দিয়েছিল
নিজের শরীরের ক্ষুদ্রতম উপাদানকে
বাঁচাতে ও বাঁচতে।
জানিয়েছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধায়
বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের তত্ত্ব।
কিন্তু কিছু লোক শিখল অন্য কিছু।
তারা চাইতে শুরু করল -
সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস
কেটে মাংস খাবে ও
যাবতীয় সোনার মালিকানা পাবে।






বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২

একটি আলোক এবং আমি


 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 ।। জাহিদ রুদ্র ।।
 
 
 
পৃথিবীটা...জীবের কাছে,
ঠিকানা-বিহীন ঠিকানা!
তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয়
একটা অভিলাষা কবিতার দেহে।
সে ক্ষত বিক্ষত, উষ্ণ সম্ভোগে নয় 
জমাট আধাঁরে বেড়ে ওঠা প্রগাঢ় আর্তনাদে।

এটা আসলে সাঁঝের নির্বিকার প্রদীপ 
বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়া
ব্যাবলিনের শূন্য মাজারে।
বুক চিরা স্বাধীনতা, নীতির দুর্নীতিতে
মাউথ অর্গান, রবীন্দ্র সংগীত বাদ দিয়ে
সঙ্গম সভায় ভাষণ দেয়
চে গুয়েভার বলিভিয়ার রাজপথে।
তবুও পরজীবীরা ক্ষুধার্ত অট্টালিকার 
 ফিসফিস হয়ে  ওঠে
অপূর্ণতার প্লাবিত প্রেমে।
আর সরাইখানা পরস্পরের বুকে টানছে
শর্তহীন দ্রাঘিমা রেখা।

সোমবার, ৯ মে, ২০২২

'হ্যান্ডেলাইটিস্‌' ও ডলু বাগানের চা শ্রমিক-কর্মীরা


 

।। সপ্তর্ষি বিশ্বাস ।।

 



 "কি বল্লে গা? হ্যান্ডেলাইটিস্‌? আহা! কি মিষ্টি নাম গো! অমন একটা রোগ আমার হতে পারেনা?"

"আরে হ্যান্ডে না। হ্যান্ডে না, স্পন্ডে ..."

 মনে আছে সেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে? তাঁর কৌতুক নক্সাগুলো কে? না'কি 'ভকত' সাজতে গিয়ে বাঙ্গালী এসবও ভুলেছে? ভুলবে?

         আহা! কি মিষ্টি শব্দ! কি নিদারুণ নাম 'মাওবাদী', 'আরবান নক্সাল', 'দেশ্‌দ্রোহী' ...। কি দারুণ ব্যবস্থা 'অপারেশন সমাধান'! আহা, 'ভকতেরা', জানেন তো, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত এঁরাও ছিলেন, না, 'ভকত' নয়। ভক্ত। মনে আসছে একটি শ্যামাগীতিঃ 'বল মা তারা দাঁড়াই কোথা'। সর্বত্র 'মাওবাদী' আমদানি করলে, এভাবে, হে 'ভকতেরা' দাঁড়াই কোথা আর আপনারাই বা কোথায় দাঁড়াবেন? আপনাদের চাল, চাতুরী, শঠতার পাশাপাশি আপনাদের মুর্খামিও জাহির হচ্ছে যে। সঙ্গে এ'ও কি হচ্ছেনা প্রমাণিত, যে, আপনারা আদতেই, অদ্যাপি, 'জুজু', 'কমিনিস্ট-জুজু' ভয়ে দেখছেন দুঃস্বপ্ন, দিবাস্বপ্ন, সঙ্গে বকছেন প্রলাপ? তবে এমনটা যে হবেই সে'ও তো জানাই ছিল। না, হস্তরেখা দেখে নয়, গ্রহ নক্ষত্র গণনা করে নয়, বাটি চালান দিয়ে বা থালাবাটির অর্কেস্ট্রা করে নয়, বৈজ্ঞানিক বিচার বিশ্লেষণের দ্বারা, সেই ১৮৪৭ সালেই: "A spectre is haunting Europe — the spectre of communism. All the powers of old Europe have entered into a holy alliance to exorcise this spectre: Pope and Tsar, Metternich and Guizot, French Radicals and German police-spies. " আহা, 'ভকতেরা', আপনাদের এই 'মাও' দেখা আর 'মাওবাদী' দেখা, সর্বত্র, এরই কি নামান্তর নয়?

তা 'মাওবাদী' কি জিনিস গা? 'আর্বান নক্সাল' কি বস্তু? মাও'এর অপরাধ টি বা গুলি ঠিক কি? কি কি? জানেন? জানবার দরকার আছে? না, নেই, নেতাদের নেই। গো বলয়ের নেই। কিন্তু আপনারা? যারা এদের ডুগডুগিতে নেচে চলেছেন, আপনাদেরও কি নেই? মনে আছে তো তথাকথিত 'চীন যুদ্ধ' আমলে যে সকল মার্জারেরা ললাটে তিলক কেটে 'নেহেরুপন্থি কমিউনিস্ট' সেজে সরকারের 'নীতি'র দাঁড়ি,কমা অব্দি সমর্থন করেছিল, তাদের হাল? ওই নেহেরুই, অব্যবহিত পরেই, তাদের ঢুকিয়েছিল জেলে। তা আপনারা কোন ছার? আজ এরা বাঙ্গালীকে বলছে 'ছারপোকা' এবং তাকে আড়াল দিতে বলছে 'বাংলাদেশীরা ছারপোকা', হে 'ভকতেরা', দিন গেলে, 'বাংলাদেশীরা' উঠে সমস্ত 'বাঙালিই হবে তাদের চোখে 'ছারপোকা' এবং অতঃপর দেশজোড়া সেই সমস্ত মানুষেরা যারা তাদের আদানী, আম্বানি তথা মার্কিনি প্রভুদের বণিকিতে অদরকারী। ঠিক যেমন এই মুহূর্তে ডলু চা বাগানের কর্মীরা, শ্রমিকরা। এই সকল দখলের পরে, হে ভকতেরা, তাদের খুনে হাত এসে বসবে তোমার কণ্ঠনালীতেই। আচ্ছা, সেই 'ভকত' করসেবকদের কি হল যারা এই অঞ্চল থেকে, ভক্তিতে আকুল হয়ে গিয়েছিল দাঙা বাধাতে? অন্তিমে কি পেলো তারা? আপনারা, হে পুঁজিবাবার প্রচারক, 'ভকতেরা', কি নিশ্চিত, যে, এন আর সি'তে এদের কারো নাম ওঠেনি? উঠবে না? -- উঠেছে। উঠবে। সবই দরকারের খেলা। কার দরকারের জানেন? ওই মার্ক্স, মাও, লেনিন যাঁকে বলেছেন 'পুঁজি', 'পুঁজিবাদ', তার। আর ওই 'পুঁজি'কে বাড়িয়ে তোলার খেলায় যারা নায়ক, অধিনায়ক, তারা এমনি, একটি একটি করে শ্রেণীকে এনে নামায় পথে। 'চিরস্থায়ী' বন্দোবস্তের প্রথম ধাক্কা কৃষক আর ক্ষেত মজুরদের যাপনে এসে আছড়ে পড়ে তাদের করে দিতে আরম্ভ করেছিল নিঃসম্বল মজুর। কিন্তু ওই ভূস্বামীরা? যারা ভেবেছিল 'যাক শালারা, এবারে আমাদের তো আর চিন্তা নেই', তাদের কি ঘটলো পরিণতি? জানেন? আমি নিশ্চিত জানেন না। আমিও জানব না। এখানে। বলবো জেনে নিন। নিজ প্রয়োজনে জেনে নিন। জানলেই দেখবেন 'মাও', 'মার্ক্স' 'জুজু'দের আর ভয় নয় ভরসা হচ্ছে আর ভয় করতে আরম্ভ করবেন এই সকল জুজুদের যারা সত্যই রক্তচোষা অথচ যাদের হয়ে আপনি চলেছেন তাঁবেদারি করে। কেন করছেন? না' 'আদর্শ' বলবেন না। আপনাদের কোনও আদর্শ নেই। যাদের জন্ম বিলাইতি সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছিষ্টে, হেগড়েকার, গোলওয়াকর, সাভারকার হেন রাজনৈতিক দেউলিয়াদের উদ্যোগে, শ্যামা প্রসাদ হেন বিষাক্তের পিঠে চেপে, অটল বিহারী-লালকৃষ্ণ আদবানির কোচিং', অমিত শা, নরেন্দ্র মুদীহেন ঘোষিত অপরাধীর 'নেতৃত্বে', তারা 'আদর্শ' বলতে ধান্ধান্ধাবাজি ভিন্ন আর বোঝে না কিছুই। 'তারা' মানে, 'গো বলয়'কৃপাধন্য নেতৃবর্গ। আর তাদের লেজুড়েরা?

হায়, 'লেজুড় ভকতেরা' আপনারা তো কিছুই বোঝেন না, জানেন না। আপনারা নিরীহ ভেড়া পাল। কিন্তু আপনাদের ওই 'নেতৃত্ব' জানে আপনার মাংস কতো সুস্বাদু। সুতরাং আপনাকে তারা পালন-পোষণ করছে। করছে সময় মতো মাংস আর লোম দুয়েরই সদ্ব্যবহারের নিমিত্ত। এখানে বলছে 'বাঙাল! ইনো বাঙালে সব খাইল', বিশুদ্ধ বাংলায় বলছে 'মুসলমান, মুসলমানই সব নষ্টের গোড়া'। বলছে 'প্রাইভেটাইজেশান হোক, তোমার তো ভালোই হবে হে, তোমার ছেলের চাকরির চিন্তা থাকবে না ( তুমি তো হিন্দু ভাই আমার --- ফিস্‌ ফিস্‌ ফিস্‌)', 'দেখছ না স্মার্ট সিটি হচ্ছে দিকে দিকে। তুমি কি চাওনা তেমন একটা স্মার্ট সিটিতে বাস করো তুমি?" ... হায়! আপনি গিলছেন। গিলছেন গঙাজলহেন।

হায়, স্মার্ট সিটি মানে ইন্টারনেট, ইস্টিশানে, বিমান বন্দরে। আর বিমান তো ছাড়ুন, রেলভাড়া যেখানে যাচ্ছে, তাতে আপনি আর কদিন রেলেও চাপতে পারবেন কে জানে। তায় ডলার আর রুমি'র মিশ্রিত ঝুলি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্রেতারা এই রেলকেও কিনে নিতে। নিলেই 'জিও' ইন্টারনেট আরও সস্তা হবে! হবেই, কেননা ইন্টারনেট সস্তা নাহলে কিভাবে তাদের 'আইটি সেল' নানান সিনেমার টুকরো কে এডিট করে, 'মুসলমানের সাহস দেখো' বলে ছড়াবে সর্বত্র? কিভাবে 'কাশ্মীর ফাইল' দেখাবে আপনাকে?

হায়, আমার যেখানে দেশবাড়ি, সেই করিমগঞ্জ শহরে 'ইন্টারনেট' আছে, সেখানে থেকে মাসাধিক কাল আমি, আমার বাবার অসুস্থতাকালে, চালিয়েছি 'ওয়ার্কিং ফ্রম হোম', প্রায় 'সমলেস্‌ লি' কিন্তু ওই শহরেই, সময় মতো, মানে আমার বাবার মৃত্যু শয্যায়, জোগাড় করতে পারিনি অক্সিজেন সিলিন্ডার! পারিনি অর্থাভাবে নয়। কেননা যেহেতু বর্ণহিন্দু, যেহেতু ধূর্ত মধ্যবিত্ত আমিও, তাই আমিও 'প্রাইভেট আন্তর্জাতিক সংস্থা'য় কাজ করি, দেশবাড়ি ছেড়ে, বাস করি সুমহান বাঙালোরে যা কর্ণাটকে এবং যে কর্ণাটক অধুনা বিজেপি'র সমূহ নাজি-উদ্ভাবনের নিরীক্ষা কেন্দ্র। অর্থাৎ আমার পকেটে টাকা থাকা সত্ত্বেও আমি পারিনি, করিমগঞ্জে, বাবার জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে, যথাসময়ে। এই হেতু আমার বাবার মৃত্যু অন্তত: ৪৮ ঘণ্টা হয়েছে ত্বরান্বিত। কিন্তু মুদীবাবার ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রয়েছে এখানেও!


লোক হটিয়ে বিমানবন্দর? উচ্ছেদ? নাহ, নতুন কিছু নয়। নীল চাষের আমলেও ব্রিটিশরা এমনই করেছিল। ধানজমি নিয়েছিল কেড়ে। ফলিয়েছিল নীল। 'আরে নীলও তো  ফসলই, ধান ফলাতে পারো আরও নীল পার না?" জানেন তো এর পরিণতি? কিভাবে নীলচাষীরা গেলো উচ্ছন্নে? অতঃপর 'জুটমিল'। আবার উচ্ছেদ। শরীক অনেক। মহামাতা ভিক্টোরিয়া, নানাবিধ বিলাইতি ও স্কটল্যান্ডীয় কোম্পানি, জমিদার স্বয়ং। 'মিলে তোমরা কাজ পাবে। তোমাদের ভর্তুকি দেওয়া হবে, দেওয়া হবে পুনর্বাসন'। কেন মিলে কাজ পাবে এই জম হারানো লোকেরা? 'জুট'এর, 'জুট মেশিনের' কি জানে তারা? কিছুই না। তবু ভাঁওতা দিয়ে হয়, দিতে হবে। দিতে হয়েছিল। কিন্তু কালে দেখা গেলো আঞ্চলিক চাষাদের পরবারের ১ থেকেও কম শতাংশ মানুষ পেলো 'জুট মিলে' কাজ। বড়জোর দারওয়ান, পাখাবরদার ইত্যাদি। বদলে মালিক এনে হাজির করলো 'স্কিলড লেবার', নানা স্থান থেকে। মোদ্দা, সামান্য ভূমি থাকা চাষিকেও হয়ে উঠতে হল শ্রমিকের মতো নিঃস্ব। সে'ও ঘুরে বেড়াতে লাগলো শহরে, গঞ্জে, বন্দরে তার কায়িক শ্রম কে যে কোনও মূল্যে বিক্রি করে বেঁধে থাকতে না নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।


বিমান বন্দরে কি কাজ করবে এই চা-ফলানো মানুষেরা? দারোয়ান, বড়জোর, বড়জোর সাফাইকার। কিন্তু তা'ও পাবে কজন? নতুন জমিতে চা লাগানোর কাজেও যে নিয়োগ করা হবে এদেরই, অর্থাৎ আপনাদেরই, তারই বা ভরসা কোথায়? বিশ্বাস করা কিভাবে ও কেন? দিল্লীতে কৃষকদের আন্দোলন চলাকালীন ও তার পরে কতোটুকু 'শপথ', ওই কৃষকদিগকে, নিয়েছে, মেনে নিয়েছে এই সরকার। সঙ্গে জুটেছে কিছু তথাকথিত', ভোট সর্বস্ব 'বামপন্থি।

'হ্যান্ডেলাইটিস্‌' নাম যতোই 'মিষ্টি' হোক, আদতে তা এক অসুখই, অসুস্থতাই।

 

          'চ্যালা ভকত'রা সম্ভব হলে 'ভেবে' দেখতে পারো কো কথা গুলি। 'হ্যান্ডেলাইটিস্‌' যতোই মিষ্টি নাম হোক আদতে তা এক অসুখই।