“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৯ মে, ২০১৫

উনিশের স্বপ্ন (গল্প না হলেও, প্রবন্ধ নয়)


।। অরূপ বৈশ্য ।।
            
        
(C)Image:ছবি
   
উনিশের স্বপ্ন
(গল্প না হলেও, প্রবন্ধ নয়)
অরূপ বৈশ্য
আমি এই কাহিনীর নায়ক। কিন্তু চারপাশের লোকরা তা মানতে রাজি নয়। কাছের ও দূরের কোন জনপদের মানুষই এই নায়ককে চেনে না। আমি কিংবা আমি নয় এ দুয়ের দ্বন্দ্ব সমাধান করার দায় আমার নেই। আমাকে জীবনের পথ চলতে হয়, তাই এগিয়ে যাই। লোকে কী বলে তা জানার আগ্রহ আমার নেই। তথাপি আমি জানি যে লোকে আমাকে এক অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ বলেই জানে। এই জানা পীড়াদায়ক বটে, কিন্তু তা আমাকে বদলে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। যথারীতি দিনের কাজকর্ম সেরে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরি। সন্ধ্যের দিকে যখন নিজের ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর জন্য বেড়িয়ে পড়ি, তখন সব অবসাদ কেটে যায়। সারা দিনের সবার হুকুম তামিল করার বিনিময়ে আদায় হয় জীবনের বিলাসী স্বাচ্ছন্দ্য। জীবনের এই ছন্দে বৈপরীত্য মাথা চাড়া দেয় না, এক অদৃশ্য শক্তি তাকে চেপে রাখে । একমাত্রিকতার ভারে ন্যুব্জ মন খোলা আকাশের সন্ধানে প্রবৃত্ত হয় না। এই কাহিনীর নায়ক সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে, এজন্যই কী লোকে আমার এই আমিকে চেনে না?

আগামীকাল ধর্মঘট, আজ সন্ধ্যে থেকেই ফুরফুরে মেজাজ। বিদেশে নাকি সপ্তাহের শেষ দু’দিন কাউকে কাজের কথা বলা যায় না, এই দু’দিন সবাই স্বাধীন। আমিও স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করার আয়েশে নিদ্রা যাই। ভোর হতেই বেরিয়ে পড়ি। হাটতে হাটতে চলে যাই শিলচর রেলস্টেশনের দিকে। এতো লোক সমাগম দেখে চমকে উঠি। বিকট আওয়াজ শুনে বুক ধড়ফড় করে উঠে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার হাত বা দিকে হেলে পড়ে। এক মোলায়েম মেয়েলি হাত আমার হাতকে চেপে ধরে। আমাকে নীচের দিকে টানতে থাকে, কাতর আর্তি শুনতে পাই। গোঙানির আওয়াজে ভয় পেয়ে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেই। সামনের দিকে দৌড়োতে থাকি। হঠাৎ আমাকে পাঁজাকোলে করে নিয়ে কে যেন হাওয়ায় ভাসতে থাকে। আমি কিছু বোঝার আগেই মেশিনের আওয়াজে কথা বলতে শুরু করে। সে যখন বলে আমিই নাকি কাজের লোক, আমি আহ্লাদিত হই। সেই সব অর্বাচীন, প্রগতি-বিরোধীদের অসংখ্য ভিড় ঠেলে আমি যখন প্রাণপণে পালানোর চেষ্টা করছিলাম, তখনই নাকি সে বুঝে যায় আমিই যোগ্য ব্যক্তি। ওর কথার দিকে আমার বিশেষ মনোযোগ ছিল না। ওর দৌলতে উড়তে পেরে আমার বেশ ভাল লাগছিল। আমরা উড়েই চলেছি। সূর্য অস্তমিত, আঁধার নেমে আসে।

নদীর গা ঘেঁষে সরু রাস্তা। ধু ধু মাঠ, ঝাড়-জঙ্গল, পাহাড়, শেয়াল-কুকুরের নিরবিচ্ছিন্ন ডাক সব মিলিয়ে নিসর্গ-প্রকৃতির এক রহস্যময় আবেশ। অজস্র জোনাকি ও মাঝেমাঝে প্রদীপের আলোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঁশ-বেতের দোচালা ঘরগুলো দেখা যাচ্ছে। পথচারীরা এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, কোথাও গুটিকয় গ্রামবাসী এক জায়গায় জড়ো হয়ে বসে আছে। পাহাড়ের গা ঘেঁসে এই বাসিন্দারাও যেন প্রকৃতিরই অঙ্গ। রোমান্টিক আবেশে সেখানে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। যতই লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করি, শক্তপোক্ত দুটো হাত আমাকে আরও জোরে চেপে ধরে। আমি হাঁপিয়ে উঠি, দম বন্ধ হয়ে আসে, পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ের জন্য গা এলিয়ে দেই। হঠাৎ আলোর রোশনাই দেখে চমকে উঠি। নীচে তাকাতেই মন আবার সজীব হয়ে উঠে। প্রশস্ত ঝাঁ চকচকে পথ, ব্যস্তসমস্ত পথচারী এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। সাঁ সাঁ শব্দে ছুটে চলছে রকমারি যান। বিভিন্ন ডিজাইনের সারি সারি গাড়ির শব্দ প্রশস্ত পথের দুদিকে বিশাল বিশাল অট্টালিকার গায়ে আছড়ে পড়া প্রতিধ্বনিত মূর্ছনা। অত্যাধুনিক শপিং মল, ডিস্কো থেক, বার ক্লাব থেকে দলে দলে মানুষ বেরিয়ে আসছে। রকমারি পোষাকে সজ্জিত ছেলে-মেয়েদের চেহারায় আমোদ-স্ফুর্তির লক্ষণ স্পষ্ট। এখানে আধুনিক সভ্যতা প্রকৃতিকে বাধ্য করেছে দূরে সরে যেতে। আমার অবসাদ কেটে যায়, মনে হয় একটু আগে ফেলে আসা প্রকৃতির নিস্তরঙ্গ জীবন থেকে এ ঢের ভাল। আমাকে বোধহয় এখানেই নামিয়ে দেবে, এই আশা নিয়ে নিশ্চিন্তে গা এলিয়ে দিই। কিন্তু একি, আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে সে এগিয়েই চলেছে। কোথায় যাওয়া হচ্ছে? কোনও উত্তর আসে না। একটা গোপন কথা জানানো হয়নি। আমার একটা অসুখ আছে, মানসিক অসুখ। কোথা থেকে হঠাৎ করে চেতনার এক লহর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, যন্ত্রণা অনুভূত হয়। ভেসে বেড়াতে বেড়াতে সেই অসুখ আবার আমাকে গ্রাস করে। প্রকৃতির আদিম রোমান্টিকতা ও সভ্যতার আধুনিক ভোগবিলাসের হাতছানি কোনকিছুই আমাকে স্বস্তি দেয় না। চাওয়া পাওয়ার এক অজানা রহস্য মনকে ভারাক্রান্ত করে তুলে। এ কোন চেতনা যা আমার এই অসুখের কারণ?  কিছু কথা আছে যা মানুষ তার আপনজন, এমনকি সে তার নিজেকেও বলতে পারে না। আমার অসুখের পেছনের এই রহস্যের কথা কাউকে বলা যায় না, আমার আমাকেও না। কিন্তু আমার মানসিক যন্ত্রণা যে বেড়েই চলেছে। এই লোকটি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

অবশেষে লোকটি আমাকে এই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে এক অজানা অচেনা পরিবেশে নিয়ে যায়। সম্ভবত কোন ভিন গ্রহে। এখানে সবাই মানুষের মত দেখতে, কিন্তু আচার আচরণ রহস্যময়। সবার মাথায় টুপির মত কি যেন রয়েছে, সেই টুপির চারদিক থেকে আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। আমাকেও সেরকম একটা টুপি পড়িয়ে দেওয়া হয়। কেউ কোনো কথা বলে না, কিন্তু তাদের নিজ নিজ কাজ করে যায়। মনে হয় যেন একে অপরের সাথে বার্তা বিনিময় করছে, এক নির্দেশাত্মক বার্তায় সবাই কাজ করে চলে। এমনকি জীবনধারণের জন্য যার যতটুকু প্রয়োজনীয় তা এক অলঙ্ঘ্য ও পূর্বনির্ধারিত নির্দেশে ব্যবস্থা হয়ে যায়। যে লোকটি আমাকে নিয়ে এসেছে সবাই যেন জেনে গেছে আমি তার অতিথি। লোকটি আমাকে এক বিশাল প্রাসাদোপম অট্টালিকায় নিয়ে যায়। সে রাজ-সিংহাসনের মত সুসজ্জিত একটি চেয়ারে বসে পড়ে। সেখানে বসার সাথে সাথেই প্রাসাদের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট যন্ত্রে একেকটি দল কাজ করতে শুরু করে। কে কী কাজ করবে তার নির্দেশ কোত্থেকে আসে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। কিন্তু সম্পূর্ণ শৃঙ্খলায় কাজগুলি পরিচালিত হয়। এসব দেখতে দেখতে আমার বিরক্তি লাগে। দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত শ্রান্ত আমি ক্ষুধার্ত বোধ করি। আমার এই অনুভূতির সাথে সাথেই আমার সামনে সুস্বাদু খাবারের রকমারি সামগ্রী ও বিশ্রামের জন্য উৎকৃষ্ট আরাম-কেদারা হাজির হয়ে যায়। বিশ্রাম নেওয়ার সময় যারা কাজ করছে তাদেরও খেতে দেখি, কিন্তু তাদের খাবার আমার তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের। আমি যার অতিথি তার মর্যাদা অনুসারেই আমার জন্য এই ব্যবস্থা। আরাম কেদারায় শুয়ে আছি, হঠাৎ দেখি কর্মরত একটি লোক কাঁপতে কাঁপতে মাটীতে শুয়ে পড়ে। আমি ওকে সাহায্য করার জন্য যাওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও আরাম-কেদারা থেকে উঠতে পারি না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মিলে ওকে একটি কোণে নিয়ে যায় এবং সেখানে ওকে নামিয়ে রাখার সাথে সাথেই ওই লোকটি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। সবাই আবার যে যার কাজে ফিরে আসে। এখানে সবাই একে অপরের প্রয়োজনীয় কথা বুঝতে পারে, কিন্তু আমাদের পৃথিবীর হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, ঈর্ষা-বিদ্বেষ, সংঘাত-সংঘর্ষ ইত্যাদি সব কিছু এখানে অপ্রয়োজনীয়, অপাংক্তেয়। সবাই এখানে শান্তিতে বাস করে, সবার কথা পূর্বনির্ধারিত ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করাই আছে। তাই সবাই সবার কথা বুঝতে পারে। কিন্তু নির্ধারিত সূচী মেনে অত্যন্ত শৃঙ্খলা মেনেই সবাইকে চলতে হয়। আমার আরাম-কেদারা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ও আমাকে উঠে দাঁড়াতে বাধ্য করে। অবশ্য ততক্ষণে আমার ক্লান্তি ঘুচে গেছে, বাইরে বেড়ানোর ইচ্ছে হয়। কোন নির্দেশ ছাড়াই কিছু করার একটাই পরিসর সম্ভবত এখানে রয়েছে, ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর। একে অভ্যাসে পরিচালিত হওয়ার ক্ষমতা বা স্বাধীনতাও বলতে পারেন।

আমি মাথার টুপিটা খুলে রেখে বাইরে বেরিয়ে পড়ি। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতেই একজন বৃদ্ধার দেখা মেলে, তিনি যেন আমাকে কিছু বলতে চান। তাঁর ভাষা আমি বুঝতে পারি না, কিন্তু কেউ কিছু বলার চেষ্টা করছে তাতেই যেন আমি কিছুটা স্বস্তি বোধ করি। বৃদ্ধা কী বলতে চাইছেন তা যে আমি বুঝতে পারছি না সেটা অনুমান করে আরেকজন বৃদ্ধকে তিনি ডেকে আনেন। বৃদ্ধ আমাকে জানান তিনি পৃথিবীর ভাষা বুঝতে পারেন, বৃদ্ধার সাথে কথোপকথনে তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার জন্য দোভাষীর কর্তব্য পালন করবেন। এখানে এসে এই প্রথম ভালবাসার কথা শুনে আমার কথা বলার উৎসাহ বেড়ে যায়। বৃদ্ধার কাছ থেকে জানতে পারি যে আমি যার অতিথি সে তাঁর সন্তান। কিন্তু সে তার মা ও বাবাকে আর চিনতে পারে না। প্রযুক্তির ভাষাই এখানে একমাত্র ভাষা। তাই বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পুরোনো জমানার লোক হিসেবে এখানে অপাঙক্তেয়। বৃদ্ধা বলে চলেন, আগে এরকম ছিল না, সবাই সবার সুখ দুঃখে সাথী হওয়ার রীতি ছিল, কলহ-বিবাদ-ঈর্ষা-দ্বেষ এসব যে ছিল না তা নয়। বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকেরা তাদের নিজেদের ভাষায় কথা বলত, কিন্তু অন্যদের সাথে কথা বলার এক সাধারণ ভাষাও ছিল। এখন আর এসব কিছুই নেই, তার প্রয়োজনও নেই। এক কঠোর নিয়মে সব বাঁধা। একদল লোক কাজ করে চলে, কিছু লোক বসে খায়। কিন্তু কারুর বিরুদ্ধে কারুর কোন ক্ষোভ নেই। কিন্তু আমরা যারা পুরোনো প্রজন্মের লোক তাদের জন্য এ এক দমবন্ধকর পরিবেশ। আমাদের কেউ অবজ্ঞা করে না, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমরা যথারীতি পেয়ে যাই। কিন্তু নিজ সন্তান, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের আচরণ আমাদের পীড়া দেয়। এই নিষ্ঠুর পরিবেশে বেঁচে থাকার আর কোন আগ্রহ অনুভব করি না। কথা বলতে বলতে বৃদ্ধা ডুকরে কেঁদে উঠেন। আমার অসুখ আবার চাগার দিয়ে উঠে।

 হঠাৎ মাথায় এক বুদ্ধি খেলে। পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতা জাত এই বুদ্ধি। আমি বৃদ্ধাকে বলি, আপনারা গোপনে নিভৃতে কেন দিনের পর দিন কেঁদে চলেছেন। আপনাদের মর্মবেদনা প্রকাশ করতে সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মিলে সর্বসমক্ষে কাঁদুন। তাতে কী হবে? বৃদ্ধা জানতে চান। করে দেখুন না কী হয় আমার এই প্রস্তাবে বৃদ্ধা রাজী হয়ে যান। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বেড়িয়ে পড়েন সবাইকে জড়ো করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মিলে চলে আসেন সেই প্রাসাদোপম অট্টালিকায়। সবাই একযোগে কান্না জুড়ে দেন। কর্মরত লোকগুলি কাজ বন্ধ করে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। খানিক পরই তাদের শরীর জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে কাঁপতে থাকে মাথা থেকে একে একে টুপি খসে পড়ে। সবাই দৌড়ে এসে সমবেত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সহ একে অপরকে আলিঙ্গন করতে আরম্ভ করে।

এদিকে সিংহাসনে বসে থাকা সেই লোকটি, আমি যার অতিথি, জোরে জোরে হাত-পা ছুড়তে থাকে। তার দুচোখ দিয়ে যেন আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে। হঠাৎ দৌড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে, যেন পিষে মেরে ফেলবে। আমাকে ঠেলতে ঠেলতে গ্রহের সীমানায় নিয়ে যায়, সজোরে ধাক্কা মেরে শূন্যে ফেলে দেয়। মৃত্যুর গহ্বরের দিকে ধাবমান আমি জেগে উঠে তড়াক করে বিছানায় বসে পড়ি। ঘামে ভেজা বিছানার চাদর দুমরে মোচড়ে এককোণে সরে গেছে। হতবিহ্বল আমার সম্বিত ফিরে আসে পাশের রাস্তা থেকে ভেসে আসা ‘মাতৃভাষা জিন্দাবাদ’ ধ্বনির সমবেত আওয়াজে। তারাপুর রেলস্টেশন চত্বরে যে মেয়েটির হাত ছেড়ে দিয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম, তার চেহারা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আমি তার কাছে অপরাধী হয়ে রইলাম, আত্মহননই কি এই অপরাধের শাস্তি?  না, এই শাস্তি থেকে আমি এখন মুক্ত। জীবনের চেয়ে জীবনের রহস্য জানাই যে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এই বোধ আমাকে স্বস্তি দেয়। সমবেত আওয়াজ কোন দিক থেকে আসছে তা ঠাহর করে সেদিকে এগিয়ে চলি। আমার আমিকে খোঁজার এ যাত্রার এখানেই সাময়িক বিরতি।                    

কোন মন্তব্য নেই: