“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪

দিনবদলের প্রলাপ

(C)Image:ছবি

।। পার্থ ঘোষ।।
       

          অকারণে মন খারাপের বিলাসিতা আমার ছিলনা কোন কালেই। ভারী শব্দের আযোজনে গোমট করবো পরিবেশ,তৈরি করবো থমথমে ভাব,এতটা শক্তিও কি আছে আমার ? না ছিল কখনো ? দেশ বিদেশের কত খবর, বিতর্কের ঝড় উঠে রোজ।মানুষ চিন -ভিয়েতনাম, ইরাক- আমেরিকায় ঘোরে প্রতি সন্ধ্যায়।
              "সাম্রাজ্যবাদী শক্তি" শব্দটার মানে নিয়ে আজো ধোঁয়াশা কাটেনি আমার,ছোট্ট বেলা থেকে শুনে শুনে শব্দটাকে বড়ই নিজের লাগে। রাশিয়ার কোন কিশোরী আত্মহননের পথ বেছে নিলে আমার কিছু যায় আসেনা,দিল্লীর মোমবাতি মিছিলে আমার কোন দায় নেই,ঢাকার ছাত্র আন্দোলনে আমার অবদান কতটুকু ? 
          শান্তির নোবেল "মালালা" না পেলেও, দুপুরের ভাত ঘুমে ব্যঘাত ঘটতোনা কোনো। কাঁটাতারের বেড়াতে আপত্তি করেও কি লাভ হতো কিছু ? বছর চৌদ্দের নাবালিকা স্কুল পালিয়ে স্বেচ্ছায় সতীত্ব হারালে,ভালবাসা জয়ী হয় কিনা,জানা নেই! আনপড় নেতার অযাচিত নীতিকথায় গা জ্বালা নেই আমার। 
         খুঁটিতে বাঁধা যুবতী বেবাক কিল চড় খেলে, পত্রিকার কাটতি ভাল হয়,মানুষ পড়ে। টাউন হলে ভারতনাট্যম, গাঁটের টাকায় শৈল্পিক হাততালি দিই। শিল্পের জন্যই শিল্প.....আমি আম জনতা। রোজকার বাজার সেরে ফেসবুকে সেল্ফি,কিংবা অচেনা সুন্দরীর এডিট করা ছবিতে পছন্দের মোহর লাগাই,প্রতিক্রিয়া না পেলেও তৃপ্তির ঢেকুর তুলি।কিছুই যায় আসেনা।
        বরং আমার কাছে অনেক বেশি গুরুত্ব পায়,লোকাল খবর,লোকাল বলতে নিতান্তই পাড়া-মহল্লার হাল
হকিকত। পরিচিত বাকি দোকানদারের চোখ এড়িয়ে অন্য ফুটে দ্রুত হেঁটে যাই।গত পরশুর কামরাঙা রঙের
গা ঢেকে রাখা, অন্যের সুন্দরী বউটিকে আর একবার দেখার আশায় অপেক্ষা করি।পাঁচ টাকার কাঁচা লঙ্কা কেনার অজুহাতে পুরো সন্ধ্যা ঘুরঘুর করি বাজারে। মাঝে বিনে পয়সার বহুব্যবহৃত পত্রিকায় রাখি চোখ,চায়ের দোকানে মাগনা চায়ের প্রত্যাশা। পরিচিত চা পিপাসুর এক কাপ ভালবাসার চা যদি জুটে যায়। D.A বৃদ্ধির কানাঘুষো তে জন্মের মনযোগী হই, শেষে অর্থমন্ত্রীর আদ্যশ্রাদ্ধ করে টেবিল চাপড়াই,বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের ঢং এ।দেশ বিদেশের খবর বলতে, এক ক্রিকেট। সেখানেও আমি তীব্র সমালোচক শ্রীনিবাসন নামক,অসাধারণ এক জোচ্চোর যোদ্ধার।
             নিজেকে আপ-ডেটেট প্রমাণের কোনো সুযোগই ছাড়িনা। অফিসে গিলে আসা চটকদার খবরে প্রকৃত
জ্ঞানীকেও চমকে দিই।নিজের ছেলের মিথ্যা টেলেন্টের গল্প শুনিয়ে,বিশুদ্ধ বাহবা কুড়াই,লক্ষ্য রাখি পাশের বাড়ির কেউ শুনেনা ফেলে।  রবিবারের সকাল থেকেই উথলে উঠে ভক্তি। সকালবেলা ইসের কাপড় ছেড়ে পূজার ফুল তুলি।  বিকেলে হাঁটা পথের মন্দির, পাঠ শুনতে টাকা খরচ নেই,উপরি পাওনা সুগন্ধি প্রসাদ আর
রকমারি সাজের নারী দর্শন।
           তবুও জীবন বয়ে চলে,জনমত তৈরি হয়। সমাজ পাল্টাতে থাকে সবার অলক্ষেই। কেউ থাকেনা চিরদিন,থাকে কিছু অসাধারণ চিন্তা আর কিছু প্রকৃত গঠনমূলক কাজ। সস্তা বাহবার জন্য কত কিছুই না করি। সব ব্যবসায় ডাহা ফেল মেরে, যে বাঙালি কলা বিক্রি করে মোড়ের মাথায়,সেও শিক্ষা দেয়।
প্রতিটি বাঙালি যুবার মত প্রথম যৌবনে একদিন কবিতা লিখেছি,একদিন শরীর চর্চা করেছি,একদিন সবার চোখ ছানাবড়া করে দিয়ে ঝাঁপিয়েছি জলে,সাঁতার না জানা ডুবন্ত শিশুর মা আজো কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়।এই
কীর্তির কথা বেমালুম ভুলেছে সবাই,মা' টিও ভুলে যাবে একদিন। কত রাজার মহারাজার কথাই বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে, ইতিহাস বড়ই নির্মম সাবজেক্ট ।
         রবিবাসরীয় একান্ত দুপুরের ভাত ঘুম কেড়ে নিয়েছে ফেইসবুক। ছিপ ফেলে প্রতিক্ষা,যদি মিলে যায়
চাটিং সখী কোন!! দিন বদলায়, বদলাতে থাকে নিরন্তর। শুনেছি ফেইসবুকচারীদের আত্মহননের ইচ্ছা কম হয়ে যায়।"স্বচ্ছ ভারতের" পোষ্ট মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।"ঝাড়ু হাতে" নেতার বউয়ের একান্ত সাক্ষাৎকার নিতে মন চায়। আজ হোক চুমু খুল্লামখুল্লা। এই চুমুতে তো আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। পশুদেরও নাকি চুমু খাওয়া আছে,অনাবিল। প্রতিবাদে না ভালবাসায় ঠিক বুঝিনা।তবু দিন বদলায়,বদলে যেতে থাকে নীরবে।
          প্রতিবাদ হয়,প্রতিরোধ গড়ে উঠে কিনা বুঝিনা। ধর্ষণের পরিসংখ্যান হতাশাই বাড়িয়ে দেয়। তবুও দিনবদলায় নোটিশ ছাড়াই। বদলাতে থাকে নিরন্তর। আমি আপনিই এই দিন বদলের কুশিলব। একটা চরম বদল হোক,আমূল বদলে যাক চারপাশ।ধর্মের ব্যাখ্যা, নকল সহানুভূতি,সংবেদনশীলতা,পাড়া মহল্লা,রাজপথ, নিদেনপক্ষে আমাদের অতিসাবধানী,ন্যকা ন্যাকা ভাবনার বদল হোক।বংশানুক্রমিক সযত্নে লালিত সংস্কার আর তথাকথিত আধুনিকতার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি, আমরা অনেকেই আজ দিশাহীন।পরবর্তী প্রজন্ম অপেক্ষায় এক স্বচ্ছ ভারত ও স্বচ্ছ ভাবনার। নাকি তাদের জন্যও রেখে যাব একরাশ ধোঁয়াশা আর অনন্ত দিশাহীনতা ???

কোন মন্তব্য নেই: