“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১২

দীনেশ চন্দ্র সেনের একটি প্রবন্ধ ' বঙ্গ ভাষার উপর মুসলমানের প্রভাব' প্রসঙ্গে

              মার কাছে দীনেশ চন্দ্র সেনের লেখা কোনো বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নেই। নেই কারণ, আমাদের পাঠ্যক্রমের ইতিহাসে জনপ্রিয় বই ছিল এবং আছে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত। কিন্তু ভদ্রলোককে প্রথম পাঠের দিন থেকেই আমার কোনোদিনই ভালো লাগেনি। দুটো কারণে, এক ইনি পাঠ্যক্রমের চাহিদা অনুযায়ী তাঁর বইয়ের খুদে থেকে বিশাল , বিচিত্র সংস্করণ করতে দিতেন প্রকাশকদের। তার মানে বাজার বুঝতেন ভালো। দুই, নানা জায়গাতে তাঁর এমন কিছু মন্তব্য থাকত যাতে করে যেকোনো চিন্তাশীল মানুষের মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে ইনি খুব রক্ষণশীল ছিলেন। আমি ক্ষেত্র গুপ্তের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়েছি। ভিন্ন কিছু মনে হয় নি , শুধু এক বামপন্থী পোচ ছাড়া তাতে নতুন কিছু পাইনি। তাই বোধহয় কোনো এক সময় আমার নজরে পড়েন  সুকুমার সেন। এবং আমি তাঁর পুরো পাঁচ খন্ড এবং আলাদা করে ইসলামী বাংলা সাহিত্য কিনে সুখে ছিলাম। 
              আজ হঠাৎ করে হুমায়ুন আজাদের সম্পাদিত দুই খন্ডে 'বাংলা ভাষা' বইতে ( ২য় খন্ডে) দীনেশ চন্দ্র সেনের একটি প্রবন্ধ পড়লাম। পড়ে আমি খুব উত্তেজিত। আমার দীর্ঘদিনের একটি আবছা ধারণা আর বিশ্বাসের সমর্থণ যে ইনি বহু আগেই করে বসে আছেন জানতামই না যে! তাঁর প্রবন্ধটির নাম ' বঙ্গ ভাষার উপর মুসলমানের প্রভাব'। এটি শুরু হয়েছে এই বাক্যে "মুসলমান আগমনের পূর্বে বঙ্গ ভাষা কোনো কৃষক-রমণীর ন্যায় দীনহীন বেশে পল্লীকুটিরে বাস করিতেছিল" মাঝে লিখছেন, " ...হীরা কয়লার খনির মধ্যে থাকিয়া যেমন জহুরীর আগমনের প্রতীক্ষা করে, শুক্তির ভিতর মুক্তা লুকাইয়া থাকিয়া যেরূপ ডুবারীর অপেক্ষা করিয়া থাকে, বঙ্গভাষা তেমনই কোনো শুভদিন, শুভক্ষণের জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। মুসলমান বিজয় বাঙ্গালা ভাষার সেই শুভদিন, শুভক্ষণের সুযোগ আনয়ন করিল।" দীর্ঘ প্রবন্ধ। প্রচুর তথ্য, এবং গল্প। অন্যথা আমি পুরো লেখাটাই ব্লগে তুলে দিতাম। একেবারে  শেষে লিখছেন, "একবার ধানকাটার পর বঙ্গদেশ -বিশেষ পূর্ববঙ্গ ঘুরিয়া আসুন দেখিবেন, মুসলমান কৃষকেরা দল বাঁধিয়া কত প্রকার গান গাহিয়া এদেশকে আনন্দ বিতরণ করিতেছে। কত তরজা বাউলের দেহতত্ব বিষয়ক গান, কত মাঝির ভাটিয়ালি গান , কত রূপ-কথা ও মনোহর কেচ্ছা ও গাজির গান তাহারা বাঙ্গালা দেশকে শুনাইয়া জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের সহায়তা করিতেছে। হিন্দুরা এ বিষয়ে কোনোক্রমেই মুসলমানের সমকক্ষ নহে। দুচারিজন শিক্ষিত লোক লইয়া এদেশ নহে। দু'চারিজন উপন্যাস পড়ূয়ার হাতে বঙ্গদেশটি নহে। বঙ্গদেশ বলিতে যে সপ্তকোটি লোক বোঝায় তাহার শতকরা ৯০ জনের বেশী আধুনিক শিক্ষার কোনো ধার ধারে না। এই সুবৃহৎ জনসাধারণের শিক্ষা মুসলমান কৃষকেরা তাহাদের ক্ষমতা অনুসারে দিতেছে , সে ক্ষমতাও বড় সাধারণ নহে। যাহারা পদ্মাবতের ন্যায় এরূপ পাণ্ডিত্য পূর্ণ কাব্য বুঝিতে পারে, দেহতত্ব বিষয়ক অতি সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক তত্ব আয়ত্ব করিতে পারে, তাহারা কি 'মূর্খ' অভিধান পাইবার যোগ্য? এই বিপুল জনসাধারণের ভাষা বাঙ্গালা, মুসলমানগণ এখনো এই ভাষার উপর পল্লিগ্রামে আধিপত্য বিস্তার করিয়া আছেন।"--এর পর আমার দীনেশ সেনের ইতিহাস বইখানা সংগ্রহের আগ্রহ বেড়ে গেল। কেন না বাড়বে, বলতে পারেন?

২টি মন্তব্য:

সোমনাথ রায় বলেছেন...

পুরো প্রবন্ধটার স্ক্যান দিলে কৃতজ্ঞ থাকব

সুশান্ত কর বলেছেন...

আপনার আগ্রহ বাড়ল বলে ধন্যবাদ! অনেক বড়োতো! স্ক্যান করতে সময় নেবে। দেখি, আমি এই নিয়ে একটা নিবন্ধ লিখতেই পারি।