“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১২

কবি বিমল দে-র তিনটি কবিতা


( কবি অধ্যাপক বিমল দে ছিলেন তিনসুকিয়ার এক বিরল প্রতিভা। একাধিক কাব্যগ্রন্থের জনক কবি বিমল দে’র কবিতাতে আশ্চর্যরকমের এক মাটির গন্ধ পাওয়া যাবে। ছন্দে তাঁর অনয়াস দখল ছিল, লিখেছেন গুটি কয় কবিতা। কিন্তু তাতেই ছন্দ নিয়ে দারুণ সব খেলা খেলেছেন। বেশ কটি সনেট এবং অনুকবিতাও লিখে গেছেন।বাংলা কবিতার উৎকট আধুনিকতার জোয়ারে গা ভাসাবেন না বলেই বোধহয় তিনি নিজেকে সরিয়ে  রাখতেন কবি সমাবেশের  থেকে। সম্প্রতি প্রয়াত এই কবি চিরদিন থেকে গেলেন  প্রচারের আলোর বাইরে। তিনসুকিয়ার থেকে তাঁর প্রকাশিত কাগজ ‘লুনা’ দিয়েই আধুনিক সাহিত্য চর্চা যাত্রা শুরু করেছিল। সেই কাগজও এখন হাতের কাছে পাওয়া যায় না। তাঁকে ভুলে না গিয়ে নতুন করে আবিষ্কার করার ভাবনা পৌঁছে দিতেই আমরা প্রকাশ করলাম তাঁর তিনটি কবিতা। কবিতাগুলো  বেরিয়েছিল ২০০২তে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘বিমল দের স্বনির্বাচিত কবিতা’তে।)



সত্য মারা গেছে

গাঁয়ে গঞ্জে হাটে বাজারে
কত খুঁজেছি ওকে,
জিজ্ঞেস করেছি জনে জনে,
হাওয়াই থেকে হাতিয়ালি অব্দি।
শেষ পর্যন্ত ভজুয়া পাগলার কাছেই,
সংবাদটা পাওয়া গেল—
‘সত্য মারা গেছে!’
********
~~~~~~~~
গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র

ওরা আমায় কেউ চেনে না
কেউ জানে না, হায়!
লুইত পারের রক্ত আমার
গঙ্গা মাটি গায়।

মনে পড়ে দূর পাহাড়ে
পরশুরামের মেলা,
নোটিশ ছাড়াই নীল আকাশে
মেঘ বিষ্টির খেলা।
মনে পড়ে জোর মাদলে
করম টুসুর নাচ,
জল কল –কল বষ্যাকালে
পলোয় ধরা মাছ।
এ’সব ছবি জীবন থেকে
হারিয়ে যেতে পারে?
আইতা, পেহী, ন-বৌ তোরা
বুঝিয়ে বল না-রে।

ভুলতে আমি পারিনা যে
আমার কারেঙ ঘর
সর্বনাশা কীর্তিনাশা
আড়িয়াল খাঁর চর।
পেঁপায় ঢোলে উখাল মাখাল
ব্যস্ত সারাক্ষণ,
ঐ বহাগী , ওই রঙালীর
দুরন্ত যৌবন।
মনে পড়ে দুগ্যা পূজোয়
ড্যাম –কুর কুর বোল,
ইষ্টিমারে পদ্মাপাড়ের
ইলিশ মাছের ঝোল।
এ’সব ছবি জীবন থেকে
 হারিয়ে যেতে পার?
মুখ্যু আমি, আমায় তোরা
বুঝিয়ে বল নারে।

আমার মনে ভিড় করে যে
বাবুই পাখীর ডিম,
আমার হাড়ে কাঁপন ধরায়
লাইমুখরার হিম।
মনে পরে শুয়ালকুচির
রাবণ বধের নাট।
নরসিংদির কায়েত পাড়ায়
শনিবারের হাট।
এ’সব ছবি জীবন থেকে
হারিয়ে যেতে পারে
মেঘলাবতীর কাজল কালো
অসীম পারাবারে?

তবু কেন সকাল সাঁঝে
তারায় তারায় দেখি—
রক্ত ঝরে ভালোবাসায়
রক্ত ঝরে, এ কি!
কিসের দোষে, কোন সাহসে
নেশায় কুটিল চোখ
তোমার ব্যথায় আমার ব্যাথায়
নিথর বীতশোক।
আগুন লাগে বন- শিমূলে
কাঁপে নাহর, ঝাউ—
আগুন খেলায় ভালোবাসা
জ্বলে যে দাউ দাউ।

ওরা  আমায় কেউ চেনে না
কেউ জানে না হায়,
লুইত পারের রক্ত আমার
গঙ্গা মাটি গায়।
গঙ্গা আমার মা-গো তুমি
ব্রহ্মপুত্র ভাই,
তোরাই আমার অন্ধকারের
পিদীমে রোশনাই।
************
~~~~~~~~~~~~~~











ভালোবাসার কি মিষ্টি নাম কুসুম

ফুলের গোছা তোমার হাতে তুলে দিতে
তুমি নিলে রঙিন মনে,
একটা ফুল খোঁপায় তোমার গেঁথে দিতে
তুমি বাঁধলে আলিঙ্গনে।

ভালোবাসার কি মিষ্টি নাম কুসুম
ভালোবাসার কি মিষ্টি নাম কুসুম!

কোন মন্তব্য নেই: