পৃথিবীর সবচাইতে ছোট নদী-দ্বীপ হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের বুকে অবস্থিত উমানন্দ। এই সত্যের ইতিহাস কে সম্ভবতঃ ম্লান করে দিতে চলেছে এক নতুন আবিষ্কার। আর সেটা হচ্ছে, বিশ্বের সবচাইতে ছোট নদী-দ্বীপ উমানন্দ নয়, সেটি আছে বরাকের বুকেই। কাছাড় জেলার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ফুলেরতল থেকে বরাকের উজানপথে মোটর- বোট চড়ে আনুমানিক এক ঘণ্টা এগোলেই পাওয়া যাবে নারায়ন ডহর (ডহর অর্থাৎ নদীর গভীর অঞ্চল)।
এই ডহরের অদূরেই রয়েছে ‘খৈরাকপা ইরেল’।
নদী চর উমানন্দএর এলাকা হল ২ লক্ষ ২১ হাজার ৩০০ বর্গ মিটার, বা ৭ লক্ষ ২৬ হাজার বর্গ ফুট; আর নারায়ন ডহরের এই নদী-দ্বীপ হল মাত্র ৭৬২ বর্গ মিটার বা ২৫০০ বর্গফুট ।
এই ডহরের অদূরেই রয়েছে ‘খৈরাকপা ইরেল’।
নদী চর উমানন্দএর এলাকা হল ২ লক্ষ ২১ হাজার ৩০০ বর্গ মিটার, বা ৭ লক্ষ ২৬ হাজার বর্গ ফুট; আর নারায়ন ডহরের এই নদী-দ্বীপ হল মাত্র ৭৬২ বর্গ মিটার বা ২৫০০ বর্গফুট ।
মণিপুরি লোককথা অনুযায়ী অনেক কাল আগে খৈরাকপা নামের এক বীরপুরুষ প্রনয় সুত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন লাইমা নামক এক যুবতীর সঙ্গে। খৈরাকপা নিবেদিত প্রেম অগ্রাহ্য করেছিলেন লাইমা, এবং আত্মগোপনের উদ্দ্যেশে পালিয়ে এসেছিলেন এই নারায়ণ ডহরে। খৈরাকপা কিন্তু নাছোড়বান্দা। লাইমার পিছু পিছু ধাওয়া করে এসে পৌঁছালেন ওই একই জায়গায়। গত্যন্তর নেই লাইমার, প্রেমিক-কে গ্রহণ করার অভিপ্রায় নেই, অথচ অন্য কোনও বিকল্পও নেই। শেষমেশ রাগে- দুঃখে-জেদে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন নারায়ণ ডহরের ওই জলেই। লাইমার নাম থেকেই নারায়ণ ডহরের মণিপুরি নাম ‘লাইমা-ইরেল’। আর প্রেয়সীর দুঃখে ওই নদী-চরেই বাকি জীবন সন্যাসীর মত কাটালেন খৈরাকপা। এ তো গেল এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। সেই থেকেই মাঘ মাসের (মনিপুরিতে ‘ওয়াকচিং’) নির্দিষ্ট এক রবিবার (প্রথম রবিবার-ই বিশেষতঃ) ওই খৈরাকপা ইরেল-এ দলবদ্ধ ভাবে মনিপুরি জনগোষ্ঠীর লোকেরা নৌকা যোগে ছুটে আসেন ওই নদী দ্বীপ নির্মিত শিব-মন্দিরে (মনিপুরিতে নংপক- নিথন- আপন –বা) তে পুজা দিতে।
ক্ষুদ্রতম এই নদী দ্বীপের উপরিভাগের সমতলভূমি রয়েছে আনুমানিক ২৫০০ বর্গ ফুট, আর নীচের ভাগ, যেখানে জল ছুঁই-ছুঁই, সেখানে রয়েছে আনুমানিক ৬৪০০ বর্গফুট। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই নদী চরের উচ্চতা আগে আরও অনেক বেশী ছিল, কিন্তু, ১৯৬৯ সালের বন্যায় বেনোজলে ভেসে আসা এক প্রকাণ্ড উদ্ভিদখন্ড এই চরের উপরিভাগের অংশটুকু ভেঙ্গে নিয়ে যায়। নদী-দ্বীপের উপরিভাগের অংশে প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন হিসেবে একটা পুরনো লৌহস্থম্ভও রয়েছে। আসাম বিস্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য তথা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক জয়ন্ত ভূষণ ভট্টাচার্যের কাছে এই নদী-চর সম্পর্কে আরও তথ্যাদি রয়েছে। প্রয়াত রাজমোহন নাথের ঐতিহাসিক রচনাতেও সম্ভবত এর উল্লেখ রয়েছে। এই নদী দ্বীপে বরাক উপত্যকার চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী কিছু তৃণ-জাতীয় উদ্ভিদও রয়েছে, কিন্তু গুল্ম বা বৃক্ষ জাতীয় গাছপালা নেই।
বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ ভ্রমন বা ইকো- টুঁরিজম বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, এবং এ সবের সাথে তাল মিলিয়ে এ রাজ্যে তথা বরাক উপত্যকায়ও বেশ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু এই নদী চরের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যপারে সরকারি উদাসীনতা স্থানীয় তথা উপত্যকার বাসিন্দাদের মনে যথেষ্ট উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। বিষয়টা আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করাটা নিতান্ত জরুরি। আর তা করতে পারলেই পরিবেশ, ঐতিহাসিক তথা প্রত্নতাত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নারায়নডহরের এই ‘খৈরাকপা ইরেল’ দেশ-বিদেশের ভ্রমন পিপাসুদের ঢল বরাক উপত্যকায় এসে নামাতে পারে, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। আর তার জন্য যেটা একান্ত প্রয়োজন, তা হল, রাজ্য তথা কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা-ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ। উপত্যকায় অবস্থিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ স্থানের রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন স্থানীয় মণিপুরি জনগোষ্ঠীর লোকেরা।
এ দিকে বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ ব্রহ্মপুত্রের মাজুলি। ক্ষুদ্রতম হিসেবে এযাবৎ গণ্য হত ব্রহ্মপুত্রেরই বুকে স্থিত উমানন্দ। এবার বিশ্বের ক্ষুদ্র তম নদী-দ্বীপ হিসেবে নারায়ন ডহরের 'খৈরাকপা ইরেল' স্বীকৃতি পায় কি না তা অঞ্চলের উদ্যোগ তথা সরকারি তৎপরতার উপরই নির্ভরশীল!!
৩টি মন্তব্য:
উমানন্দের এলাকা হবে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৩০০ বর্গ মিটার ( ২ লক্ষ ২১ হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার নয়)
অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।
উমানন্দের এলাকা হবে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৩০০ বর্গ মিটার ( ২ লক্ষ ২১ হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার নয়)
অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য দুঃখিত।
আপনার এই ত্রুটি শোধরানো হয়ে গেছে পার্থঙ্করদা। আপনি সব সময়েই ব্লগের আপনার যেকোনো লেখা সম্পাদনা করতে পারবেন। ড্যাসবোর্ডে দেখবেন edit post বিকল্প থাকে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন