“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০২০

বাবু মশাই

।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।।


(C)Image: ছবি


 
 
 
 
 
 
 
 
বাবু মশাই, এবার নাকি মায়ের পূজোয়
প্রতিমা গড়া হচ্ছে না ? সত্যি নাকি বাবুমশাই ?
আমার তো কিছুতেই বিশ্বাস হয় না।
লোকে কানা ঘুষা করে
               সবকিছুতে বাড়াবাড়ি ভীষণ,
সর্ষে ইলিশ খেতে খেতে বাড়তি কথা যা --
এবার নাকি বারোয়ারী পুজোআর্চা বন্ধ ।

মোড়ের পাশে চিলতে দোকান - হারুদা
সারাদিন ব্যস্ত থাকতো চায়ের যোগান দিতেই
সেই যে গো, আলাদা একটা স্বাদ ছিল চায়ে --
এখন তো আর সেইখানে ভীড় ভাট্টা নেই। 
                             মন্দা চলছে যে !
সেই হারুদা, এই প্রথমবার ফিরিয়ে দিল ভাঁড়,
বললে, আগের মতো খদ্দের নেই
                           বেচা কেনা কমে গেছে,
এবার বোধহয় বন্ধ করবে দোকান।
তার কাছেতেই শোনা,
    এবছরটার জন্যে নাকি প্রতিমা তৈরি বন্ধ।
ঘটেই নাকি এবছর পূজো সারা হবে।
একি কখনো হয় বাবু মশাই ?
লাগাতার আটাত্তর বছর পূজো ব‌লে কথা ,
            একটা ঐতিহ্যি আছে --
কি না কি এক রোগ এলো, বন্ধ হবে সব ?
একি কখনো হয় বাবু মশাই ?

নবদ্বীপের নিত্যানন্দ পাল
‌‌                        ফোন করেছিল গতকাল,
এবছর আর আসতে পারবে না।
ইন্টারস্টেট পারমিট, হোম কোয়ারেন্টাইন
                      নানান ঝক্কি ঝামেলা।
সরকার‌ও তো আজকাল নিয়ম করছে অনেক ।
এত শতর পর আবার ঝুঁকিটা তো র‌ইল
খুব একটা ভুল বলেনি নেতাই।
যদি বলেন আমিই একটা গড়ে দিই এবার।

বাবুল সাহা খুব দুঃখ করলে গো
কাম কাজ নাই, হাত এক্কেবারে খালি
তাও বলছিল, এবছর আর আসবে না শহর ।
খরচ আর টাকা দিয়ে পোষাবে না কাজ ।
তাছাড়া তেমন কাজ তো নেই।
শুধু শুধু মাল ভাড়া, অযথাই ঝুট ঝামেলা সব।
তবু বাবু দেখেন একটু চেষ্টা চরিত্রি করে,
ন‌ইলে আপনাদের সত্যেন তো আছেই,
দেবে কিছু একটা গড়ে, গরীবানা মতে।
বাঁচতে হবে তো। সবাইকে নিয়ে তবেই না বাঁচা।

ঢাকী, গনশাটা ব‌লছিল হাসতে হাসতে
 বাজাবে না পূজায়, সেও সেই গতবছর ।
এত কম টাকায় নাকি খরচা পোষায় না।
ভুল না কথাটা --
ছানি করতেই আজকাল কম টাকা লাগে ?
আপনি কন ? আপনি তো মুরুব্বি মানুষ ।
হাতে নাতে ফলটা পাইল এবার -
মায়ের গোঁসা দেখেন, একটা বায়নাও নাই।
আমাকে বলছিল, দাদা দ্যাও না একটা কাজ
                 পেটে ভাতে বেঁচে যাই তবে।
আমার নিজেরই চলা দায়, আমি হ‌ব সহায় ।
সময়টা সেই আগের মতো নেই, 
ঠিক কিনা বাবু মশাই ?

আচ্ছা বাবু মশাই, লোকে যে বলে,
         পূজা কি সত্যি সত্যি বন্ধ হ‌য়ে যাবে?
 না না টাকা পয়সার দোহাই দেবেন না আমাকে
যা দেখছি, টাকা পয়সার অভাব তো নেই।
আটশো টাকা পাঁঠা, ইলিশ একহাজার,
তাও চাইলেই পাবেন না।
সোনার দাম পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ এখন ভরি।
বিকি তো হ‌চ্ছে, খামতি আছে ?
পয়সা নাই কী ক‌রে বলি বলুন ?
কাপড়ের বাজার তো উঠবে জানি, 
                                    এক্কেবারে সিওর --
আপনার ছেলে মেয়ে কি কাপড় কিনবে না ?
মন মানবে বাবু মশাই ? আমি তো দেব না।
আমি আমার মেয়ে দুটোকে বলেছি
           এবছর আর কাপড় চেও না মা ।
যদি ডাল ভাতের ব্যবস্থা হয়ে যায়,
মনে করবে বেঁচে গেছি।
                   দিই বাবু ? এবছরটা বানিয়ে।

সাল পয়লা গেল, রথের বাজার গেল
মনসার‌ও তেমন তেমন বাজার হয় নি।
বিশ্বকর্মা ? না এটাও হ‌বে না।
পূজায় যদি মার খাই, ম‌রে যাবো এক্কেবারে।
ছোট্ট ক‌ইরা দেব, বেশি দাম নেব না।
কাজ দেখে পয়সা দেবেন,  ঠিক আছে,
অসুবিধা থাকলে আধা, 
            বাকিটা আগের বছর, তাও দিই ।
আপনারা বানালে তবেই না দশজনে বানাবে
আমাগো তো বাঁচতে লাগবো বাবু মশাই।
দোহাই আপনাদের, একটু ভেবে দেখবেন।


কোন মন্তব্য নেই: