।। সুনীতি
দেবনাথ।।
সে
তো বহুকাল আগে
বিরহী
শাপগ্রস্ত যক্ষ প্রিয়তমাকে
মেঘদূতের
হাতে পাঠায় প্রেমপত্র,
পৌঁছেনি
পত্র তবু চিরন্তন হয়ে
আষাঢ়স্য
প্রথম দিবসে বিরহী অন্তরে
মাতন
তুলেই যায়।
যক্ষ
আর যক্ষপ্রিয়া শাশ্বতের ঘরে
চিরায়ত
বিরহী যুগল স্থানু হয়ে আছে।
সুনীলবাবু
তোমার নীরার কথা বলছি --
বহুদিন
বাঙালি যুবক নীরাকে দিয়েছে প্রেমাঞ্জলি
আর বাংলার যুবতীরা মনে
মনে নিজেকে নীরা ভেবে
চমকে
এদিক ওদিক তাকিয়ে হয়েছে লাজুক।
আজ
তুমি অতীতের প্রান্তরে অতিকায় ক্যানভাসে
বর্ণিল
প্রস্তরখণ্ডে খোদাই করা আকাশ ছোঁয়া প্রতিমূর্তি!
বিস্ময়ে
মাথা উঁচু করে দেখে সেই সময়ের তোমাকে
আজকের
নিরিখে বহুমাত্রিক অতিমানব
মনে হয়।
তোমার
যৌবনবতী গহীনা নীরা বহু পথ হেঁটে
আজো
কোন রহস্য ছুঁয়ে রোমাঞ্চে উষ্ণতা ছড়ায়,
উঁচু
পর্বত শিখরবাসিনী চর্যাপদের শবর বালিকা
চুলে
গুঁজে ময়ূরপাখ গুঞ্জামালা গলায় নিরবধি
কালের
প্রাঙ্গণে যেমন করে রহস্যে ঘোরপাঁক খায়।
নাটোরের
বনলতা সেন এখনো বেতের ফলের মত
শান্ত
চোখে চেয়ে কাকে যেন বলে, এতদিন
কোথায় ছিলেন?
ফুল্লরার
বারমাস্যা বেহুলার ভেলা লহনা খুল্লনা
গীতিকার
মহুয়া মলুয়া আরো সব যুবতী কন্যা
আজো
যেন সুখ দুঃখ হাসি কান্না প্রেম নিয়ে
বাংলার
চিরন্তনী নারীরা সব আম কাঁঠাল শেওড়ার ছায়ায়
ছায়া
ছায়া মায়াবী বৃত্তে লঘু ছন্দে ধ্রুপদী ঝংকারে
হেলেদোলে
হেসেখেলে প্রেমে অপ্রেমে ভাসে শুধু।
সেই
সব মধুরা কন্যারা এপারে ওপারে সেপারে
কোনো
পারে আজ আর নেই, পাবে না খোঁজে
কোনদিন।
বেদরদী
এই কালে সেসব কন্যাদের মত যাপনের রীতি নীতি নেই,
দ্রৌপদীর
বস্ত্র আর কোন সংবেদী সখা বাড়ানোরও নেই —
দুঃশাসনেদের
সংখ্যা গেছে বেড়ে পথে ঘাটে ঘরে।
আজকের
কন্যারা রক্তাভ আকাশতলে প্রতিবাদী মিছিলে হাটে,
স্লোগানে
স্লোগানে আত্মার বিদ্রোহ ঘোষণা করে,
রক্ত
তাদের আলপনা আঁকে প্রকাশ্যে রাজপথে।
ইট
পাথর ভাঙ্গে, কলে কারখানায় স্বল্প
মূল্যে খিদমত খাটে,
তবু
সন্তানের অনন্ত ক্ষুধা, যাপনের
নিষ্ঠুর গ্লানি
সারাদিন
সারারাত সারাটি সময় দংশন করে শুধু।
গ্রামে
গঞ্জে আরো সব পুঁতিগন্ধময় নিরক্ত জীবন
কান্না
ভুলে জেনে গেছে এমনি হয়, এর
নাম বেঁচে থাকা।
ভিন্ন
চিত্রে বহুতলের খাঁচায় বন্দি সোনার ময়নারা
অদৃশ্য
শেকলের জ্বালায় জ্বলে ছটফট করে,
স্ট্যাটাস
বাঁচাতে স্বদেশী দেহে বিদেশী
পোশাক
হাই
স্পিডে ড্রাইভ ঝাঁ চকচকে শপিং মল স্যুইমিং পোল
সুরা
হাতে সাকি অন্তঃসারশূন্য আমদানির ভিন্নতর
জীবনালেখ্য!
আল্ট্রা
কনট্রাস্টের বিকট পাঞ্চিং একুশের প্রগতি!
স্বপ্নের
কন্যারা হারিয়ে যায় প্রেম কাঁদে নীরবে নিভৃতে।
দেখছি
শুনছি ভাবছি —
ক্রোধ
আমার চিৎকার করে আকাশ ফাটিয়ে বলতে চায় —
হেই,
হচ্ছেটা কি? থামাও এসব,
উপর
নিচের সব জঞ্জাল ঝেঁটিয়ে বিদেয় করো।
সমান
তালে একসাথে মেলাও পা, বাঁচার
জন্য জোরসে চলো!
© সুনীতি
দেবনাথ।