“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

'প্রবাসী নই, শুধুই বাঙালি' : বোধের না বুদ্ধির, জ্ঞানের না দৃষ্টির --প্রশ্নটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ



                                           ( দৈনিক যুগশঙ্খে পাঠকের মতামতে প্রকাশিত চিঠি)
মূল লেখাটি এখানে আছে
মি সাধারণত দৈনিক কাগজে নিয়মিত লিখিনা। এমন কি চিঠিও না। এর একটি কারণ এই যে এগুলো দ্রুত লিখতে হয়। এবং এই দ্রুতির ফলে বোধ এবং বুদ্ধির, জ্ঞান এবং দৃষ্টির খামতি বড় বেশি থেকে যায় । এ আমার ব্যক্তিগত ধারণা এবং অভিজ্ঞতাও বটে। কেউ অন্যমত পোষণ করতেই পারেন। তার উপরে আমাদের বাংলা দৈনিক কিম্বা সাময়িক কাগজগুলোর আমি মনোযোগী পাঠক। পারলে কোলকাতার দুটো কাগজ কম পড়েও, আমাদের পাঁচটা কাগজ বেশি পড়ি। যেগুলো আমার বোধ এবং বুদ্ধিকে নিত্য শান দেয়, কথা লিখতে উস্কেও দেয়। এর বেশি এগুই কম। মানে, লিখিনা এর জন্যে যে কুলোতে পারব না। সঞ্জয় চক্রবর্তীও গেল রোববার ( ৮ ডিসেম্বর, ১৩) রবিবারের বৈঠকে তাঁর লেখা প্রবাসী নই, শুধুই বাঙালিলেখাতে সেরকমই কুলোতে পারেন নি। সব তথ্য আঁটাতে পারেন নি। তাতেই অসংখ্য পাঠক নন্দিত এই লেখা নিয়ে নীলিমা চক্রবর্তী এক চিঠিতে কিছু প্রশ্ন তুললেন বুধবারের কাগজে তিনিও লেখাটির প্রশংসাই করেছেন। না করে উপায়ও নেই। কিন্তু কিছু নাম কেন বাদ পড়ল এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং সঞ্জয় চক্রবর্তীর বরাক উপত্যকার সাহিত্যে অজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চিঠিটি সামান্য। এমন আরো বহু চিঠি এলে আরো ভালো। বিতর্ক বিবাদ হলেও মন্দ নয়। সংলাপ যদি নাই হয় তবে আলাপ সমৃদ্ধ হবে কী করে!
                  তারপরেও, আমি যে চিঠি লিখিই না, হঠাৎ যে লিখতে বসলাম এর একটি কারণ আছে। একটি দীর্ঘদিন লালিত ভাবান্দোলন-- যেখানে আমি নিজেও বহুদিন ধরে এক নিষ্ঠাবান কর্মী তাঁর স্বার্থটি সুরক্ষিত করা। সঞ্জয়দার সঙ্গে কোন ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব রক্ষার দায়ে নয়। এই লেখাটি রবিবারের বৈঠকে বেরুনোতে বোধ করি এই প্রথম সেই ভাবান্দোলনের বার্তা খুব বড় করে পূর্বোত্তরের সাধারণ পাঠকের এবং সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মীদের কাছে পৌঁছুলো। নইলে এই নিয়ে এর আগেও অন্যান্য দৈনিক বা ছোট সাময়িক কাগজগুলোতে লেখা হয়েছে অনেক। সঞ্জয় চক্রবর্তীর নিজেরই সম্পাদিত মহাবাহুকাগজে লেখা দেবাশিস তরফদারের কবির স্বদেশআমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীদের জন্যে একট দলিল বিশেষ। বিজিৎ ভট্টাচার্যের সাহিত্যকাগজের দীর্ঘদিনের প্রাণান্তকর প্রয়াসের ফলে অসম-ত্রিপুরার সাহিত্যে অনেকের কাছেই তৃতীয় ভূবনের ধারণাটি এখন বহুল প্রচারিত এবং প্রচলিত ধারণা। তপোধীর ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে উষারঞ্জন ভট্টাচার্যকার কলমেই বা কথাগুলো নানা ভাবে উঠে আসে নি? উষারঞ্জন তো পূর্বোত্তরকে বিষয় না করে লেখনই না প্রায়। অসীমান্তিক গল্প সংকলনের সম্পাদক হাসান আজিজুল হকের সেই বিখ্যাত উচ্চারণ স্মরণ করুন, “ সংস্কৃতি ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক বিভাজন কার্যকর নয় একথা ভাবালুতা-আশ্রয়ী খানিকটা সত্য হলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু সত্য নয়... উত্তর পূর্ব ভারতের বাংলাভাষা চর্চা বা সাহিত্য-ফসল আলাদা করে চোখে পড়েনি, যেন তার অস্তিত্বই নেই, যা বা যতটুকু আছে তা বুঝি পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যের সঙ্গে মিশে গেছে। পরিতাপ করি আর ক্ষোভ জানাই বাস্তব পরিস্থিতি কিন্তু এই রকম।যে সংকলনে পশ্চিম বাংলারও বহু স্রোতদ্রোহী লেখকের গল্প রয়েছে, সেখানেই লেখাগুলো লিখেছিলেন হক সাহেব।


             সেখান থেকেও এক কদম এগিয়ে গিয়ে উচ্চারণ করেছেন কবির স্বদেশের লেখক। এ ঠিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে লিখতে গিয়ে বিচ্ছিন্ন উচ্চারণ নয়, রীতিমত পূর্বোত্তরের বাংলা সাহিত্য নিয়ে ইস্তাহার নির্মাণ। এমন আরো অনেকে আছেন অমিতাভ দেব চৌধুরী, প্রসুন বর্মণ, সৌমেন ভারতীয়া, জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত, অভিজিত চক্রবর্তী, কুমার অজিত দত্ত এমন আরো বহু নাম নিতে পারি। বহু ছোট কাগজের পাশে সৌমেন ভারতীয়ার সম্পাদিত রবিবারের বৈঠকআর অমিতাভ দেবচৌধুরীর সম্পাদিত রবিবারের প্রসঙ্গ-তো প্রায় সাপ্তাহিক মুখপত্রে পরিণত হয়েছে এই ভাবান্দোলনের। ত্রিপুরার নামগুলো আপাতত পরিসরের জন্যেই নিচ্ছি না। যারা আমাদের স্বাতন্ত্র্য আর আত্মমর্যাদার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দিতে প্রতিনিয়ত লিখে চলেছেন, লড়ে চলেছেন। সম্ভবত এমন পরিবেশেও আমাদের একটি সদ্য প্রকাশিত উপন্যাসের নাম হয়ে যায় সুরমা গাঙর পানি।পত্রলেখিকা যেন আবার অনুযোগ না জানান আমি ঔপন্যাসিকের নামটি কেন নিলাম না। নামোল্লেখটা কি খুব গুরুত্ব পূর্ণ? বরং গুরুত্বপূর্ণ এটি যে আর দশক কয় আগে বেরুলে এই নামের উপন্যাস নিষিদ্ধ করবার দাবি উঠত! সিলেটিরা মাতৃভাষা প্রকাশ্যে নিয়ে আসবার জন্যে অপমানিত বোধ করতেন! এমনটাই হয়েছে নির্মল চৌধুরীর ইন্দিরা ওভার ব্রিজের ক্ষেত্রে। স্রেফ ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাকের নিচে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন তাঁর সমকালীনরা।
              এই আমাদের এক ব্যামো, কেউ যদি আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির কথা কোথাও লিখলেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে আর দল অভিযোগ জানাতে শুরু করবেন, আপনি মশাই জানেন না কিছু! ঐ নামগুলো বাদ পড়ল কেন! বুঝিবা, আমাদের লেখাগুলোকে অবশ্যি হতে হবে আনন্দ পাবলিসার্সের বইএর ক্যাটালগ। আমার মনে পড়ে , আশির দশকে এক অসামান্য কাজ করেছিলেন আমাদের শিক্ষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য । তিনি আমাদের সাহিত্যের ঐতিহাসিক। সবাই জানেন। একেবারে চর্যার আমল থেকে বরাক উপত্যকার বাংলা সাহিত্যের একটি ইতিহাস লিখেছিলেন আশির দশকে। সেই দশকের কথাতে এসেই থেমেছিলেন। তাতে একেবারে সাম্প্রতিক অনেকের নাম বাদ পড়ে যাওয়াতে এমন ধুন্দুমার কাণ্ড বাঁধালেন আমাদের কিছু যশোলোভী লেখক-লেখিকা যে এমন আর দ্বিতীয় প্রয়াস কেউ আজ অব্দি করবার সাহস করেছেন বলে জানি না। আমাদের মাস্টার মশাইএর সেই বইটিও ভয়ে বিস্মৃতির অতলে লুকিয়ে গেছে। এখন আর বাজারে মেলে না।
              
           আমি দূর দূর অব্দি বিশ্বাস করিনা যে সঞ্জয় চক্রবর্তী তপোধীর ভট্টাচার্য বা রণবীর পুরকায়স্থের কথাগুলো জানেন না। আমাদের পূর্বোত্তরীয় ভাবান্দোলনের আজকাল একটি আড্ডা আছে। কোথায়? লিখব না আমরা প্রচার মোহাক্রান্ত নই। কফি হাউসের... থুড়ি... পানবাজারের কাডফার কিম্বা প্রেমতলার মহিমালয়ের সেই আড্ডাটা ( ‘ভারতী বা সেরকম আরো কিছু নামও মনে আছে)আজ আর থাকলেই কি, না থাকলেই কি! আমাদের আড্ডার পরিসর আজকাল অনেক বিশাল এবং বিস্তৃত। সেখানে অসম থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গেও রোজ কথা হয়। সঞ্জয় চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হয় রণবীর পুরকায়স্থের। দুই প্রতিভাবান কবি আর কথাকোবিদের। সুতরাং নামগুলো যদি বাদ পড়েছে তবে তাঁর কারণ সঞ্জয়দার অজ্ঞতা নয়, অন্য। শ্রীমতী চক্রবর্তীর চিঠিতেও কি বাদ পড়েনি বহু নাম? তিনিই বলুন, সে নামগুলো লিখে যেতে হলে তাঁকে কত খাটাখাটুনি করতে হতো, সময় লাগত এবং চিঠির পরিসর হতো অনেক বড়। সঞ্জয় চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও ঘটনা ঘটেছে এই।  
    
চিঠিটি এখানে আছে
           
                এখানেই প্রশ্ন উঠেঃ বোধের না বুদ্ধির, জ্ঞানের না দৃষ্টির --প্রশ্নটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে বোধ এবং দৃষ্টির। আমাদের সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে গড়ে উঠা বিলেতএবং কোলকাতা -মুখী ঔপনিবেশিক দৃষ্টির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন সঞ্জয়। এরই জন্যে লেখিকার মনে হয়েছে লেখাটি সময়োপযোগী। আমরা সেই দৃষ্টিকে কোনদিন প্রশ্নবিদ্ধ না করে কে কার থেকে বেশি জানেন অথবা জানেন না এই যুদ্ধে বৃথাশ্রমে অপচয় করেছি আগের পুরোটা শতক। আমাদের যারা জনগণের জন্যে শিল্পস্লোগান দিয়ে বিপ্লব নিয়ে আসবেন ভাবতেন, তাঁদের এই ব্যামোটি ছিল আরো বেশি। ইংরেজি পরিভাষা উচ্চারণ না করলেতো এরা নিজেদের তত্ত্বগুলোই স্পষ্ট করতে পারতেন না, ওদিকে আমাদের জনতা কিন্তু কথা বলেন সিলেটি কিম্বা সাদ্রিতে! আমার নিজেরই এমন অভিজ্ঞতা আছে। কোলকাতার অনীকেএক গুচ্ছ কবিতা বেরুলো বলে এক বন্ধু জানালো এই তুমি কবি হলে। আমি এর পরে 'ধুর ছাই!' বলে কবিতা লেখাই ছেড়ে দিলাম! আর আমাদের জ্ঞানেরও বালাই কি! কে কটা কলকাত্তার বই পড়লেন, বিলেতি বই পড়লেন, তার থেকে টুকে নিবন্ধ লিখলেন তিনি তত জবর লেখক! ওদিকে, আমাদের ঘাসের শিসের পরে শিশির বিন্দুটির দিকে তাকালেন কিনা এই নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আর জানতে চাইলেও কি সবাই সব জানতে পারে! না বুঝতে পারে! লেখিকা, যে অংশটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেই অংশটিতে ত্রুটি আছে। দ্রুত লেখার জন্যে এটা হয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্ন লেখিকা তুলেছেন, সেটি নয়। আমি তাঁর তোলা প্রসঙ্গেই কথা বলব, নইলে আমার নজরে বাকি ভারতের বাঙালি নিজেকে 'প্রবাসী' বলবেন কিনা, সেই নিয়ে আমরা কথা বলবার অধিকারী নই। বলে লাভও নেই। এও লেখাটির ত্রুটি। নিবন্ধের শেষ লাইনও তাই নিরর্থক। লেখিকা যে অংশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন, সেখানে সঞ্জয়দার লেখা উচিত ছিল এইভাবে যে আমাদের সাহিত্যের বিকাশ এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে পেয়েছে যে, যে কলকাতাকে আমরা মনে করছি সিদ্ধির আদর্শ ---সেও আর আমাদের অস্বীকার করতে পারছে না, বাধ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য করতে বা বই পত্তর প্রকাশ করতে। যদিও এখনো অতি সামান্যই। আমাদের দিকে তাকাচ্ছেন না শুধু আমাদেরই প্রবাসী বাঙালি লোকজন। এই বাধ্য হচ্ছেকথাটা না থাকাতে মনে হয় যেন বা ওরা ওদের পাঠ্যক্রমে নিচ্ছেন বা পুরস্কার দিচ্ছে্ন বলেই প্রমাণিত হচ্ছে আমরা বেশ ভালোটালো লিখছি আর কি। আসলে এই অংশটি এর আগে যে দৃষ্টিকে দাঁড় করালো, তার বিরুদ্ধে যায়।
            আমাদের কি কোন ক্ষোভ থাকা উচিত, কলকাতার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কার লেখা পাঠ্যক্রম থাকল বা না থাকল এই নিয়ে? বরং প্রশ্নতো এই উঠা উচিত, সেই কবে এক সুধীর সেনের কবিতা ছিল অসমেরই প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের বাংলা বইতে, এর পরে আর কারো নেই কেন? কী অপরাধ! দুটো অসমিয়া শব্দ যদি অনান্তরিক অর্থলোভী স্বল্প-শিক্ষিত বাঙালি শিক্ষকের দ্বারাই বাংলা বইতে ঢোকেও যায় তাতেই যারা অসমিয়া আগ্রাসননিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারাও কিন্তু এই নিয়ে কোথাও ভেবেছেন বলে দেখি না। আমাদের ছেলেমেয়ে বড় হয়, পশ্চিমের ( কোলকাতা কিম্বা ক্যালিফোর্নিয়াদুটোই কিন্তু পশ্চিম ) লেখা পড়ে। আর এটা জেনে যে আমাদের কোন প্রতিভা নেই, আমাদের কোন দেশ নেই। থাকতে নেই! আমাদেরতো দেশের মানুষ সুবোধ সরকার কিম্বা সুমন গুন! যাদের রোজ একবার নিয়ম করে মালা পরাতে হয়! প্রশ্নতো এও উঠা উচিত আমাদেরই ভিকি কিম্বা নতুন দিগন্ত কিম্বা ত্রিপুরার স্রোত কিম্বা অক্ষর কেন বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হবে না! হলে কবে হবে, এবং কী ভাবে! না কি আমরা ধরেই নিয়েছি, আমরা প্রবাসী বাঙালি’, 'খিলঞ্জিয়া' নই--- আমাদের এসব হতে নেই । অপরাধ! পাপ হবে! রবিঠাকুর রাগ করবেন! কিম্বা গোসা করবেন সমরেশ দাদা, তিলোত্তমা দিদি !
কথা আরো বেরুচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে একটা চিঠি এর চেয়ে বড় হওয়া উচিত নয়।
সুশান্ত কর
তিনসুকিয়া।



কোন মন্তব্য নেই: