“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

গোপন কথাটি রবে না গোপনে

                ।।  সুদীপ নাথ।।
(লেখাটি এখানেও আছে দেখুন।)
নেকেই বলেন, আমাদের মন নাকি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। উনবিংশ শতাব্দি অব্দি অনেকেই মনে করতেন, মন বলতে যা কিছু বোঝায়, তার সব কিছুই জন্মসূত্রে পাওয়া বিষয়। তখন তারা ধারণা করতেন, মনের কোন বিচার বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়।  তখনকার ধারণাগুলো সবই ছিল অনুমান নির্ভর। যুগে যুগে বহু মনিষী, মনের অস্তিত্ব ও তার কার্যকলাপ নিয়ে অক্লান্ত গবেষণা করেছেন। কিন্তু শারীর বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে, মানব মনের হদিশ করতে তারা বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। মানব শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকলাপের সাথে মানব মনের সম্পর্ক খুঁজে পেতে হয়রান হয়েছেন। বিশেষত প্রাণীর ঘিলু তথা মস্তিষ্কের জটিল ক্রিয়াকলাপ, তখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের করায়ত্ত না থাকার ফলে, শরীর ও মস্তিষ্ক ভিত্তিক মনোবিদ্যা তখনো গড়ে উঠতে পারেনি। তখনও মনোবিদ্যা আলাদা কোন বিষয় হিসেবে গণ্য হত না। দর্শন শাশ্ত্রেরই একটা উপশাখা হিসেবে গণ্য হত। সেই কারণে মনোবিদ্যার বিশেষ কোন গুরুত্ব ছিলনা। দর্শন শাশ্ত্রের গণ্ডির মধ্যেই আবদ্ধ থাকার কারণে, মানুষের মন নিয়ে সকলেই, যার যার নিজের মত করে, যা খুশি বলার রাস্তা খোলা ছিলো।

      তখন পর্যন্ত সকলেই, নিজের মন দিয়েই অন্যের মন বোঝার চেষ্টা করতেন । তখন দর্শন শাস্ত্রের উদ্দেশ্য ছিল, সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু বোঝা ও ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা। কবি সাহিত্যিকেরা, জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেই মনের দ্বন্দ্ব খুঁজে বেড়াতেন। তখন জার্মান দেশই ছিল মনোবিদ্যা চর্চার প্রাণকেন্দ্র।

  এদিকে, ১৯০৩ খৃষ্টাব্দে সিগমুন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Frayed), The Interpretation of Dreams এবং Psychopathology of Everyday Life নামে দুটি বই লিখে পরিচিত হন। এই বই দুটি থেকে জানা যায় যে তিনি মানসিক রোগগ্রস্ত মনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে স্বাভাবিক মনের ঠিকানা খুঁজতে প্রয়াসী হয়েছেন। ১৯০৫ সালে ফ্রয়েড যৌনমানস সম্পর্কে এক বইয়ে যৌনতার ক্রমবিবর্তন সম্পর্কিত এক তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই তত্ত্বের মূল কথাটি ছিল সর্বরতিবাদ। এই তত্ত্ব অনুসারে শৈশবের সবকিছু ইচ্ছা এবং আচরণই যৌনতা ভিত্তিক। ফ্রয়েডের এই তত্ত্ব লিবিডো তত্ত্ব নামে পরিচিত। তিনি আরও একটা তত্ত্ব খাড়া করে তার নাম দিয়েছিলেন ঈডিপাস কমপ্লেক্স। এই তত্ত্ব অনুসারে মাতার প্রতি পুত্রের মনে কামেচ্ছা জাগে এবং এই কামেচ্ছা নিবারনে পিতাকে সে তার পথের কাঁটা হিসেবে গন্য করে। একই ভাবে, কন্যারাও মাতাকে তাদের পথের অন্তরায় ভাবে। ফ্রয়েড ধারণা করেন এই সমস্ত তত্ত্ব দিয়েই সমাজ ও মানুষের জীবনের সমস্তকিছুই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তখন দার্শনিকদের বেশিরভাগই আমাদের মননক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে ভাববাদের আশ্রয় নিতেন, কল্পনার আশ্রয় নিতেন। ফ্রয়েড কিন্তু সেদিক থেকে একধাপ এগিয়ে নৃবিদ্যা, পৌরাণিক কাহিনী ইত্যাদির আশ্রয় নিয়েছেন। ফ্রয়েড প্রকৃতি-বিজ্ঞানের সাহায্য নেন নি। অথচ তখনই প্রকৃতি বিজ্ঞান অনেক কিছুই আবিষ্কার করে ফেলেছে। ফ্রয়েড মনে করতেন মানুষ সহজাত হিংস্র প্রবৃত্তি নিয়েই জন্মায় এবং তা সভ্যতার চাপে অবদমিত হয়ে থাকে। সময় সুযোগ মত তা মানুষকে হিংসাশ্রয়ী ধ্বংসাত্মক কাজ করতে উৎসাহিত করে।

                 তিনি আনস্টাইনকে এক চিঠিতে, এই তত্ত্ব জানিয়ে এক বিশাল চিঠি লিখেছিলেন । তিনি ঐ চিঠিতে আনস্টাইনকে লিখেছিলেন, এই তত্ত্ব অনুসারে, যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী, যুদ্ধ হবেই। এই তত্ত্ব, সাম্রাজ্যবাদীদের খুব মনপছন্দ্‌ হয়ে উঠেছিল। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আর ব্যক্তি চেতনার প্রসারে, সাম্রাজ্যবাদ যখন বুদ্ধিজীবীদের  সমালোচনায় কোণঠাসা, ঠিক তখনই ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে তারা লুফে নিয়েছিল। যুদ্ধ উদ্দেশ্য মাত্রই বাজার দখল – এই ধারণা থেকে জনসাধারণকে মুক্ত করে, সাম্রাজ্যবাদীরা ফ্রয়েডীয় তত্ত্বকে উর্ধ্বে তুলে ধরে, তার জয়গান শুরু করে দিল। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এই তত্ত্বকে চাপিয়ে দেয়া হল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, ভারতে এই তত্ত্ব বাধ্যতামূলক করে টেক্সট্‌ বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করে নিল।

            এখনো ভারতের সমস্ত  স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, এই তত্ত্ব বয়ে নিয়ে চলছে। কোনও বুদ্ধিজীবী টু শব্দটিও করছেন না, যা ভাবলে অবাক হতে হয়। অথচ ঐ সময়ের আগেই এই আজগুবি তত্ত্ব বিজ্ঞানের কষ্টি পাথরে যাচাই হয়ে বিজ্ঞানী মহল থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান এই তত্ত্বের উপর আর নির্ভর করে না।


                ক্ষুদ্র পরিসরে এখানে ফ্রয়েডিয় তত্ত্বের অসারত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বিস্তৃত আলোচনা এখানে সম্ভব নয়। মোটকথা, ফ্রয়েড যৌনতাকে আশ্রয় করে তত্ত্ব বানিয়েছিলেন, অথচ যৌনতার উৎস খুঁজতে সামান্যতম চেষ্টাও করেননি। যৌনতার এনাটমি ও ফিজিওলজি নিয়ে চিন্তাও করেননি। যৌনতাকে মনন ক্রিয়ার পশ্চাৎপট  (back ground) বিষয় হিসেবেই ধরে নিয়ে এগিয়ে গেছেন। মানসিক ক্রিয়ার অধঃস্তর (material substratum) অর্থাৎ মস্তিষ্ককেই বাদ দিয়ে, মনকে বুঝতে চেষ্টা করে গেছেন ফ্রয়েড সাহেব। ফ্রয়েডের কয়েকজন উত্তরসূরি, এই তত্ত্ব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলেও, বিশেষ কোন নূতন দিক নির্দেশ করতে পারেননি।

              এদিকে, বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকেই জারের সহায়তায়, রাশিয়ার একদল বিজ্ঞানী, গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে, কালজয়ী শর্তাধীন পরাবর্ত তত্ত্ব (Theory of Conditioned Reflex) আবিষ্কার করেন। এই বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে ছিলেন নোবেন জয়ী ইভান পেত্রোভিচ পাভলভ। ল্যাবরেটরিতে, হাতে কলমে পরিক্ষার পর পরীক্ষা চালিয়ে যান। শর্তাধীন পরাবর্ত ভিত্তিক মনোবিদ্যার শুরু তখন থেকেই। তারপর পাভলভের নেতৃত্বে একের পর এক, অজানা তথ্য আবিষ্কার হতে থাকে।

               সংবেদন, প্রত্যক্ষণ, স্মৃতি, চিন্তা, স্বপ্ন, প্রক্ষোভ(emotion), ঐচ্ছিক নির্বাচন ইত্যাদি মনন ক্রিয়ার, বস্তুনির্ভর অধঃস্তরের (material substratum) সন্ধান এইসব গবেষণা থেকেই পাওয়া যায়। মস্তিষ্কের বিদ্যুৎ তরঙ্গ ও জৈব রসায়নের, যেমন হরমোন ইত্যাদির ক্রমবর্ধমান আবিষ্কার, পাভলভের এই তত্ত্বকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যায়। অনুমান নির্ভর অন্তর্দর্শন ভিত্তিক মনস্তত্ত্বের দিন, তখনই ফুরিয়ে যায়।

               পাভলভই মনোবিদ্যাকে দর্শনের গণ্ডির বাইরে বের করে এনে, বিজ্ঞান নির্ভর মনোবিদ্যা চর্চার সোপানটি স্থাপন করেন। পাভলভের এই তত্ত্ব নির্ভর করে, প্রমাণিত হয়েছে মানুষের সবকিছু ধ্যানধারণার উদ্ভব ঘটে, মস্তিষ্কে বাইরের জগতের ঘটনা এবং বস্তুর ধর্ম ও পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিফলন থেকে। আর চেতনা হচ্ছে অতীব জটিল বস্তু-মস্তিস্কের বিশেষ প্রক্রিয়া। বাস্তব বহির্জগতের প্রতিফলনই, বাস্তব মস্তিষ্কে চেতনার প্রতিফলন ঘটায়।

                বহির্বাস্তবের সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্র এবং জ্ঞানেন্দ্রিয়ের মাধ্যমে [পাঁচটি ইন্দ্রিয় হচ্ছে, শ্রবণেন্দ্রিয় (কান), দর্শনেন্দ্রিয় (চোখ), ঘ্রাণেন্দ্রিয় (নাক), স্বাদেন্দ্রিয় (জিভ) আর স্পর্শেন্দ্রিয় (চামড়া)], সম্পর্ক রক্ষার কাজই হচ্ছে স্বজ্ঞান প্রক্রিয়া বা চেতনা । চেতনা সংবেদনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বহির্বাস্তবের প্রতিফলন। আর এ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে কালজয়ী ‘প্রতিফলন তত্ত্ব’ যা The Theory of Reflection নামে সমাদৃত।

           এই প্রতিফলন তত্ত্বের (Theory of Reflection) উপর নির্ভর করেই বিজ্ঞানীরা কয়েকটি মৌলিক সূত্রও উপস্থাপিত করেন। মানুষ যখন প্রথম সামাজিক জীবে রূপান্তরিত হয়, তখন মানুষের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটেছিল। সমাজ ব্যবস্থার  বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে, মানব মনে আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। সামাজিক ক্রিয়া-কান্ডের সাথে মানুষের মনেরও প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে। এখানেই ফ্রয়েডের মনগড়া তত্ত্ব দূরে হঠে গেছে। ফ্রয়েড ভেবেও দেখেননি যে, পরিবার প্রথার বিবর্তনের ধাপগুলো কিভাবে ঘটেছে। এ পর্যন্ত কয়েক ধরণের পরিবারের রূপ আমরা দেখেছি। আর তিনি বর্তমানের অতি প্রকট, এক-পতিপত্নী পারিবারিক রূপটির বাইরে কিছুই জানতেন না, বা দেখতে চেষ্টাও করেন নি। আর বর্তমানের এই এক পতিপত্নী পারিবারিক রূপটিও যে ইতিমধ্যেই ভাঙ্গতে শুরু করেছে, এটা সকলে দেখতেই পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে পিতার খোঁজ থাকবে কিনা কে বলতে পারে। আর যে পুত্রের পিতা, বর্তমান সমাজে বাইরে থাকে, পুত্রের জন্মের সময় থেকে, সেই পুত্র যখন কেবল মাত্র মা অথবা, মা ও প্রতিপালিকার সংস্পর্শে বড় হয়, কিংবা শুধুমাত্র প্রতিপালিকার সংস্পর্শে বা হোস্টেলে বড় হয়, তাদের ক্ষেত্রে লিবিডো তত্ত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আর যে শিশুর মা জন্মক্ষণে মারা যান বা পিতা সন্তানকে গর্ভে রেখে মারা যান, সেই শিশুদের কি হবে? অথবা এইসব শিশুরা, যখন তাদের দাদু দিদিমারা প্রতিপালকের স্থানে থাকেন, তাদেরই বা লিবিডো তত্ত্বের কি ঘটবে? সমাজের পরিবর্তন ফ্রয়েড সাহেব দেখেন নি। তিনি মনে করতেন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা আগেও ছিল, এবং তা সনাতন।


              বাস্তব জীবনের প্রত্যক্ষণ থেকে মানুষ ভাবনাচিন্তার বিষয় (content) যোগাড় করে। এসব প্রকৃতি আর সামাজিক ক্রিয়াকাণ্ডের সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আর আমাদের ক্ষেত্রে, সমস্ত প্রত্যক্ষণের সহায়তায় নূতন নূতন সংকেতের উপর একটা বিমূর্ত রূপ অনুভূত হতে থাকে। এইভাবেই গড়ে উঠে ধারণা। আর তাকে সাধারণীকরণ করার মাধ্যমে তা হয়ে উঠে বিমূর্ত। মস্তিস্ক, বাইরের পরিবর্তনের সাথে সক্রিয় এবং পরিবর্তনশীল সম্পর্ক স্থাপন করে, প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযোজনে সাহায্য করছে। তারই নাম স্বজ্ঞান ক্রিয়া।

             অতীতের কোন প্রত্যক্ষণ যখন আমাদের মস্তিষ্কে অনুভুতি জাগায়, তখন তাকে বলা হয় চিন্তা। তা যুক্ত হতে পারে চলমান প্রত্যক্ষণের সাথেও। অতীতের অনেকগুলো ধারণা থেকেও আমরা নতুন নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে পারি। এই পুরনো ধারণার উপর নির্ভর করে, নূতন ধারণা সৃষ্টি করাকে বলা হয় কল্পনা।

               মনের মধ্যে একবার ধারণা তৈরি হয়ে গেলে, খুশিমতো একটার সঙ্গে একটা জুড়ে দিয়ে কিম্ভূত কিমাকার অনেক ধারণা তৈরি করাও সম্ভব। জীন, পরী, দৈত্য, এমনকি ঈশ্বরও আমাদের মনে এভাবেই সৃষ্টি হয়, সম্পূর্ণ কল্পনার উপর দাঁড়িয়েই। উচ্চমার্গের মননক্রিয়া তথা ধারণা এবং চিন্তা (concept and thought) যেমন ভ্রান্তি দূর করতে পারে, ঠিক তেমনই আবার ভ্রান্তি তৈরিও করতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসবের মূলে আছে বস্তু।

           প্রত্যক্ষণ, ধারণা, চিন্তা এবং চেতনা আমাদের কার্যকলাপ এবং বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ থেকেই জন্মায়। আবার অতীতের  ধারণা, চিন্তা এবং চেতনা আমাদের কার্যকলাপ এবং জীবনক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে এবং সর্বোপরি জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহন করে।

                মনস্তত্ত্ব শুধুমাত্র জীববিদ্যার বিষয় নয়। তা সামজিক-ঐতিহাসিক বিদ্যার সাথেও সম্পর্কিত। মানবমন গুণগতভাবে পশুমন থেকে স্বতন্ত্র। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শুধুমাত্র আমাদের মানসিকতারই বিবর্তন ঘটে না, মনন ক্রিয়ার নিয়মেরও পরিবর্তন ঘটে চলে এবং তা সর্বদা একটা চলমান প্রক্রিয়া।

         শর্তাধীন পরাবর্ত তথা Conditioned Reflex-এর দৌলতেই আমরা আমাদের চৈতন্যের উন্মেষ ঘটাতে পেরেছি। এই শর্তাধীন পরাবর্ত আবার শর্তহীন পরাবর্ত অর্থাৎ জন্মগত রিফ্লেক্সের উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠে। নূতন নূতন শর্তাধীন পরাবর্ত যেমন গড়ে উঠে, আবার সেগুলো ভেঙ্গেও যেতে পারে। এই ভাঙ্গা গড়া সবসময় চলতে থাকে।

                তাই বলে, মানুষের আচরণের মূলে, নির্জ্ঞান বা ছোট বেলার অবদমিত কামনা বাসনার কোনও ভূমিকাই নেই। চেতনা অপরিস্ফুট থাকতে পারে, তার ব্যাপ্তি ও বিস্তার সম্বন্ধে সবকিছু জ্ঞান আমাদের না থাকতে পারে, কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রত্যক্ষনের সাহচর্যে, প্রয়োজনীয় চৈতন্যের সম্যক উন্মেষ ঘটানো সম্ভব।

কোন মন্তব্য নেই: