“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৩০ মে, ২০২০

একটু নিজের কথাই বলি


।। সাদিক মোহাম্মদ লস্কর ।।

    
(C)Image:ছবি
     পৃ
থিবীতে আমার আসাটাই এক দুর্ঘটনা মাত্র। এক অপ্রত্যাশিত অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপার। আমার জন্যে কেউ বুক বেঁধে অপেক্ষা করেনি, বরং এক আপদ হিসেবে দেখাটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ আমার জন্মের সময় আমার দাদার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। দাদার প্রাপ্য যত্ন, খাদ্য সবকিছুই আমার কারণে কমে গেল। বাঁশকান্দির অদুরে আলিপুরের বারোজ মেমোরিয়াল খ্রীস্টিয়ান হসপিটাল-এ আমার জন্ম। তারপর বড় হয়ে ওঠা বাঁশকান্দির পৈতৃক বাড়িটিতে। শিলচর-ইম্ফল জাতীয় সড়কটি আমাদের বাড়ি আর ১৯০৪ সালে স্থাপিত বাঁশকান্দি মধ্যবঙ্গ বিদ্যালয়ের সীমারেখার মত মাঝখান দিয়ে গেছে।

         আমার দান বা প্রাপ্তি কোনোটাই তেমন বড় নয়। এরকম মানুষের নিজের কথা লেখা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং হাস্যকর হতে পারে অনেকের কাছে। যদি তাই হয় তবে বুঝে নিতে হবে এই একটা কাজের কাজ হল আমার জীবনে, মানুষকে হাসানোর মত একটা বড় কাজ আমি করতে পেরেছি। কেউ আড়ালে বিদ্রূপ করলেও বুঝে নেব আমি কিছু কাজ করেছি। কেউ গালি দিলে বুঝব আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন।

             আমার জীবনে অনেক অনেক অভিজ্ঞতা আছে যা ঐতিহাসিক না হলেও কিছু ছবি তুলে ধরতে পারে। অনেক পারিপার্শ্বিক ব্যাপার হতে পারে সময়ের দলিল। আমার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পেশা, গ্রামের খুঁটিনাটি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির পরিচয় পর্যায়ক্রমে তুলে ধরতে চাই। আশা করি এসব আমার আত্মপরিচয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আর শুধু শুধু বড়লোকের কথাই শুনব কেন? আমাদের জীবনেও তো অনেক উত্থান পতন আছে। আমাদেরও তো কিছু না বলা কথা আছে।

         সমাজকে অনেক কিছুই দেয় একজন ব্যক্তি। তার লক্ষে অলক্ষে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে একজন সাধারণ ব্যক্তি পাওয়ার চাইতে দেয় বেশি। কারণ সে যে রোজগার করে তার একটা বড়ো অংশ সে এই সমাজের স্বার্থে ব্যয় করে। শুধু অর্থ নয়, তার সময়, শক্তি, সুখ, স্বাধীনতা অনেক কিছুই সে সমাজের জন্য বিসর্জন করে। সমাজ তার দায়িত্ব নেয় ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যায়। তো দাঁড়ালো এই যে প্রত্যেক ব্যক্তি সচেতনভাবে সমাজকে দেয় না। যারা দেয় না তারাই শীর্ষ আসনে বসে বাকিদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের দান প্রাপ্তির চাইতে অনেক কম। কিন্তু হিসেবের তালিকায় সেই নাম বড়ো হরফে লেখা থাকে। অথচ যারা নানা দ্বিধায় নিজের প্রাপ্তির রাশিকে বড়ো করতে পারে না তাদের দান তালিকায় বাদ পড়ে যায় এই বলে, যে ভিক্ষা তারা পেয়েছে এ তারই প্রতিদান মাত্র। অথচ মানুষ সমাজে বাস করে এই আশায় যে সমাজ তাকে সুরক্ষা দেবে প্রতি মুহুর্তে আর আপদকালে এই সুরক্ষা এতো বড়ো হবে যে তা দেখা যাবে সহজে। কিন্তু তা হয় না। হয় না বলেই বড়লোকদের বাড়ি ফেরাতে গিয়ে সারা দেশ তালা মারতে হল আর গরিব বাড়ি ফিরতে গিয়ে গাড়ি চাপা পড়ে, সরকারি লাঠির আঘাতে বা অনাহারে মারা পড়ে। বড়লোকের হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব হয় অনায়াসে আর কৃষক ঋণ খেলাপির দায়ে আত্মহত্যা করে।

            কিন্তু তারপরেও তো ছোটলোকের লাশের উপর পা রেখে বেশিদিন চলতে পারে না বড়লোক। ছোটলোক ঘরে বসে মরলে বড়লোকের গাড়ি চলে না, বাড়ি চলে না, কল-কারখানা চলে না। পিরামিডের নিচের সারিতে যারা আছি আমরা আমাদের কথাও কিছু বলি। এখানে কাদা আছে, জোঁক কামড়ায়, নোংরা ধুলা শরীরে লাগে। কিন্তু এই সব এক একটা দলিল।



একটু নিজের কথাই বলি – ১

          মার কাছে শুনলাম, জন্মের পর সুস্থই ছিলাম আমি। তিনি ঠাট্টা করে বলেন, বোধ হয় নজর লেগেছিল। চল্লিশ দিন পূর্ণ হতেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। স্থানীয় ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দেন। তখন যাতায়াত-যোগাযোগ ভালো ছিল না, শহরে নিতে গেলে হয়তো মৃত্যু হতে পারত। এমন সময় এগিয়ে এলেন খলিল মৌলবি নামের এক হোমিও চিকিৎসক। তাঁর ওষুধে অলৌকিক ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলাম। সেই থেকে শরীরের সঙ্গে আমার যুদ্ধ লেগেই আছে, প্রত্যেক বারই আমার জিত হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ মানেই হত বা আহত হওয়া। তাই প্রতিটি যুদ্ধে কম-বেশি আহত হয়েছি।

          বাবা আমাকে সাইকেলের বেবি সিটে বসিয়ে নিয়ে যেতেন আলিপুর। পুরাণ বাজার ছেড়েই রাস্তার দুপাশে ছিল বিস্তীর্ণ মাঠ – কখনও সবুজ, কখনও সোনালি। সেই নির্জন জায়গায় পৌঁছে বাবা কী বিড়বিড় করতেন আর ফুকফুক করে কাঁদতেন। চোখের জলের ছিটে এসে পড়ত আমার শরীরে। আমি বুঝতে পারতাম না, জিজ্ঞেস করে যে উত্তর পেতাম তা বোঝার বয়েস ছিল না আমার। বাড়িতে আমার বিছানা, থালা-বাটি সব আলাদা ছিল। খেলা-ধুলা করা নিষেধ ছিল। রোজ ডিম-মাংস খেতাম। একদিন সেই হাসপাতালে এলেন এক ডাক্তার – শাদা চামড়া, লম্বা শক্ত শরীর, বড় বড় আঙুল। বাবার কাছে জানলাম তাঁর নাম জীন বারোজ। আমাকে পরীক্ষা করে লাফ মেরে উঠে এত জোরে গর্জন করলেন যে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ‘লা মি না আ আ ....!’ এই আওয়াজে হাসপাতাল চত্বর যেন কেঁপে উঠল। ব্যস্ত হয়ে দরজার পাশে এসে হাজির হলেন ডা. লামিনা। তারপর দুজনে কী সব কথা হল। আবছা আবছা মনে পড়ে বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে হেসেছিলেন তখন। বড় হয়ে বাবার কাছে জানলাম ডা. জীন বারোজ সেদিন ডা. লামিনাকে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা কি টিবি রোগের লক্ষণ? চেহারা দেখে বোঝো না? এতদিন ধরে ছেলেটাকে কড়া ওষুধ দিয়েছ!!...’

            এর পর সর্দি কাশি লেগেই থাকত। শীত এলে বাবা আমাকে এমনভাবে কাপড়ে মুড়ে দিতেন যে লোকে আমাকে এস্কিমো বলে বিদ্রূপ করত। নয় বছর বয়সে আমার হয়ে গেল এগজিমা। দুটি পা ফেঁটে পুঁজ রক্ত বের হত শীত এলে। অনেক ওষুধের পর একজন কবিরাজের চিকিৎসায় সেও কমল প্রায় তিন বছর পর। কিন্তু তখন এল শ্বাসকষ্ট। ফলে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে খুব বাছ-বিচার চলত। মাস-দুমাস পর পর কী যন্ত্রণা। এরই মধ্যে একদিন ইসলামিক শিক্ষার এক প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষায় বসে ধরা পড়ল আমি চোখে কম দেখি। আমি দূরের বস্তু কম দেখতাম, কিন্তু ‘চালাকি’ করে কাউকে সেটা বুঝতে দিতাম না। ক্লাসে প্রথম বেঞ্চে বসতাম তাই কেউ বুঝতে পারত না। কিন্তু সেদিন হলের পেছন দিকে বসতে হয়েছিল। আমাদের মসজিদের ইমাম সেটা বুঝতে পেরে আমাকে আগে নিয়ে যান আর আমার বাড়িতে জানান। ধরা পড়ল আমার মায়োপিয়া ২.০। চশমা লাগাতে হল এগারো বছর বয়সে। আমার চশমা দেখে অনেকেই আঁতকে উঠতেন। ‘তুমি কি চশমা খুললে দেখতে পাও না?’ ‘কি হল চোখে?’ এ ধরণের অনেক প্রশ্ন আমাকে বড় কষ্ট দিত। এছাড়াও ঝগড়া হলে ছোট বড় অনেকেই গালি দিত ‘কানা’ বলে।

           তেরো বছর বয়সে হাতে আসে এক যোগ ব্যায়ামের বই। সেটা পড়ে শুরু করে দিলাম যোগচর্চা। বদলে দিলাম খাদ্যাভ্যাস। শ্বাসকষ্ট থেকে রেহাই পেয়ে গেলাম এক বছরের মধ্যে। জীবনটাকে একটু ভোগ করার ইচ্ছে জাগল। কিন্তু প্রায়ই সর্দি-কাশি লেগেই থাকত। ডা. সুব্রত পাল প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিক খাইয়েছেন। কমছে না দেখে আমি নিজে নিম-তুলসি-মধু মিশিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। অনেকটা কাজও হল। অনেক পরে জানলাম আমার এলার্জি আছে, ধুলো, বাক্সবন্দি কাপড়-কাগজ এসব নাকের কাছে গেলেই সমস্ত শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে এখনও। ব্যাপারটা আগে জানলে হয়তো এত কষ্ট পেতে হত না।

           ডা. চৌধুরীর কাছে আমার চোখের চিকিৎসা চলত। চশমার পাওয়ার বাড়তে থাকল। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বের হওয়ার কয়েকদিন আগে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়ে একটা ব্যাপার দেখে চিন্তায় পড়লাম। স্টাম্পগুলো মাঝখানে যেন ভাঙা মনে হল। এরপর যেদিকে তাকাই সব ভাঙা। বুঝলাম কিছু একটা সমস্যা আছে। পরদিন মনে হল সমস্যাটা নেই। আর কাউকে বললাম না। মাধ্যমিকের ফল যেদিন বের হল সেদিন আবার এই সমস্যা দেখা দিল। আমি জানতাম আমার রেজাল্ট কী হবে। তাই স্কুলে না গিয়ে ওরিয়েন্টাল হলে সিনেমা দেখতে গেলাম। দেখলাম পর্দাটা যেন ভাঙা। বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি তুলনামূলক ভালো ছিল। সেই চোখেই ভাঙা দেখছি। পরদিন ডা. চৌধুরির কাছে এলাম। কয়েকদিন পরীক্ষার পর তিনি বললেন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হয়েছে বাম চোখে। অপারেশন করতে হবে। যেতে হবে দূর মাদ্রাজে অবস্থিত শঙ্কর নেত্রালয়াতে। মাথায় যেন বাজ পড়ল সবার। কোন কলেজে কী বিষয় নিয়ে ভর্তি হবো এই পরিকল্পল্পনা নিয়ে সবাই যখন মশগুল, সবাই যখন আমাকে আর আব্বাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে সায়েন্স পড়লে ছেলে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে, ঠিক তখনই ডাক্তার বললেন আমার পক্ষে পড়াশোনা আর হবেই না।

            মাদ্রাজ যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল। আব্বার বাইরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই কৃষ্ণপুরের আমার আত্মীয় তথা আব্বার সহকর্মী ফইজুল মামা আমাদের সঙ্গে যাবেন বলে স্থির হল। রেলের টিকিট বুক করা হল। ডাক্তারের পরামর্শে কমপ্লিট বেডরেস্ট। এরই মধ্যে ডাক্তার জানালেন একটা উপায় আছে, রোগ কমে যেতে পারে। আশায় বুক বেঁধে বিছানা পত্তর নিয়ে ভর্তি হলাম শিলচর মেডিকেল কলেজের আই অয়ার্ডে। আমার চোখ বেঁধে রেখে দেওয়া হল বিছানায়। দিনে কয়েকবার মেডিকেলের পড়ুয়ারা এসে বন্ধন খুলে ওটিতে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করত। মেয়েরাই বেশি উৎপাত করত। কেউ কেউ অযথা ঘেঁষাঘেঁষি করত, আমি বড়ই বিরক্তি বোধ করতাম। অবশ্য কারো কারো স্পর্শে জীবন ফিরে পেতাম। হিফজুর চাচা, আদিমা আন্টি দিনরাত লেগে থাকতেন। দশদিন এভাবে রাখার পর জানিয়ে দেওয়া হল মাদ্রাজ যেতেই হবে। পরে জানলাম এই দশদিন আমার চিকিৎসা হয়নি, ছাত্রছাত্রীদের গিনিপিগ ছিলাম আমি।

           সেও এক অভিজ্ঞতা। চক্ষু বিভাগে তেমন গুরুতর রোগী নেই। বেশির ভাগ ছানির অপারেশন। করিমগঞ্জের এক রসিক বৃদ্ধ ছিলেন। জীবনের অপ্রাপ্তি নিয়ে এমন রসিকতা বোধ হয় সবাই করতে পারে না। আমাকে ডেকে বলতেন, ‘বুঝলায় নি নাতি, আমরার আর কদর নাই। সুন্দরী অখল তো পাল্লা, আমার বাড়ির এইনও আইন না। আইতাউ কিলা, পয়সা লাগে যেন।’ তিনি হাসপাতালের খাদ্য নিয়ে ব্যঙ্গ করতেন, ‘সরখারে সুয়াবি (সোয়াবিন) ইতা কিতা দি যেন বানাইল। অউ যেন গিলার রোজ। ভাতর লগে কামড় দিতে কচাৎ কচাৎ করে। গন লাগি গেছে।’ একদিন ভাত খেয়ে চরম তৃপ্তিতে ঘোষণা করলেন,’বুইচ্ছনিবা! আইজ এক কাম করছি। তলে নামিয়া হাগাই মরিছ লইয়া আইনছি। সরকারর ভাত আর সুয়াবি থালো লইয়া কান্দাবায় সাতগু হাগাই মরিছ থইছি। কামড়র লগে একোগু… হালার সুয়াবি… এবলাকু খাইতায় নায় আবার… ঝালে খালি ঠেলি ঠেলি হারার।‘ চক্ষু বিভাগের ওয়াশরুম তুলনামূলক ভাবে পরিষ্কার ছিল। আমার দাদা একদিন সেই ওয়াশরুম থেকে ফিরে বললেন, ‘এখানে পায়খানা করতে গেলে বমি করে ফিরতে হয়।’

          তারপর একদিন অজানা দেশের উদ্দেশে পাড়ি দিলাম। বাস থেকে দুচোখ ভরে মেঘালয়ের পাহাড়, ঝরণা দেখলাম। ভাবলাম, আর এই চোখ দিয়ে এই রূপ দেখা হবে না বোধ হয়। গুয়াহাটি দেখে বিস্মিত হলাম, এতো লোক, এতো গাড়ি, অট্টালিকা। দিসপুরের যে আত্মীয়বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম তা এখন আর চেনাই যায় না। তখন ছিল মাটির গলিপথ, কচুরিপানায় ভরা বিস্তীর্ণ জলাভূমি। তারপর আরেক যাত্রা। এই প্রথম রেলভ্রমণ কোচিন এক্সপ্রেস চড়ে। গান গেয়ে, গানের দল গড়ে কামরায় কামরায় নিমন্ত্রণ খেয়ে কেটে গেল ৬০ ঘন্টা। প্লেটফর্ম পেরিয়ে মাদ্রাজ নগরী দেখে হতভম্ব। উঠলাম এস এম লজিং হাউসে। আব্বার কোনও অসুবিধে হল না। ইডলি, দোসা, সাম্বার গোগ্রাসে গিলছেন। আমি তো ফাঁপরে পড়লাম। কিছুই খেতে পারি না। পরিচয় হলো সোনাইর মিলন মামার সঙ্গে, সিনেমায় কাজ করতেন। আরো অনেকের সঙ্গে দেখা হল। এত আদর যত্ন সহযোগিতা মানুষ পরের জন্য করতেও পারে এই ব্যস্ত নগরিতে!

             নেত্রালয়ে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করলাম। এক মহিলা জন্ম থেকে শুরু করে তখন পর্যন্ত অসুখ আর ওষুধের বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করলেন। অদ্ভুত সব যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা হল চোখ। ডাক্তার পি চাল্লা বললেন, দুচোখেই ডিটাচ হয়েছে কয়েক বছর আগে। বকাবকি করলেন, ‘দৃষ্টিশক্তি দ্রুত কমছে দেখেও তো ডাক্তারের বোঝা উচিত ছিল।’ যাই হোক বাম চোখ অপারেশন হল। ওটিতে যাওয়ার সময় গান গেয়ে গেয়ে ঢুকলাম। এক তামিল মহিলা হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন, কর্মীদের একজন আমার দিকে দেখিয়ে কী বলল মহিলাকে। বোধ হয় মহিলাকে সাহস দিল। আমি গর্বিত হয়ে একটু জোরে গান গাইলাম, ‘জিনা য়াহাঁ, মরনা য়াহাঁ’। বোধ হয় একটু আগে নেওয়া একটা ইঞ্জেকশনের প্রভাবও হতে পারে। তারপর একটা সেলাইন, ধীরে হাত থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত ঠাণ্ডা হয়ে সব শেষ। জ্ঞান ফিরে আসার পর টের পেলাম আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কী যন্ত্রণা আর অস্বস্তি। জানলাম আনেস্থেসিয়ার কারণে নাকি এসব হয়। তিনদিন পর চোখ খুলে দেওয়া হল। এলাম লজে, বেডরেস্ট। কিন্তু সেই ভাঙা দেখাটা থেকেই গেল। ডাক্তার বললেন, অপারেশন না হলে দৃষ্টিশক্তিই চলে যেত। আশ্বস্ত হলাম।

          তারপর হল ডান চোখের অপারেশন। এই চোখটি এখন ভালো, কারণ বাম চোখে তো আমি ভাঙা দেখি। অপারেশন করলেন ড। রবি। মনে পড়ে অপারেশন চলার সময় হঠাৎ আমার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। সবাই চিৎকার করে আমাকে ঝাপটে ধরেছিল। বাড়ি ফিরে আসার পর কয়েক মাস পর আবার সমস্যা দেখা দিল। ডান চোখটাতে কিছু জ্বালা যন্ত্রনা হয়। গেলাম ডা. চৌধুরির কাছে। তিনি পরীক্ষা করে বললেন, বাকলটাতে চোখের পাতার ঘষা লেগে ক্ষত হয়ে গেছে। আবার গেলাম মাদ্রাজ। এবার বাকল রিমুভ করার জন্য ডান চোখে আবার অপারেশন করলেন ডা. মুনা পি ভেন্ডে। তিন মাস পর আবার যেতে বললেন। এরই মধ্যে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ডা. চৌধুরির কাছে আবার গেলাম। তিনি শিলচর মেডিকেল কলেজের ওটিতে নিয়ে কীসব করলেন। পরে বললেন চোখের ক্ষতস্থানে একটা ফাঁক হয়ে গেছে, কিছুতেই জোড়া লাগছে না। নেত্রালয়াতে গেলে ডা. মুনা হেসে বললেন, এ আর জোড়া লাগবে না। প্লাস্টিক সার্জারি বা গ্যাস্প করা যেতে পারে। কিন্তু দরকার নেই। বছরে একবার পরীক্ষা করতে হবে। এবার এই চোখটাও আর ভালো রইল না। মনে হয় জ্ঞান ফিরে আসায় তড়িঘড়িতে কী একটা গণ্ডগোল হয়েছে, তবে সেটা আমার অনুমান মাত্র। এই কারণে লেন্স লাগানো সম্ভব নয়। লেজার তো আর সম্ভবই নয়।

              একবার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি ব্যায়াম করতে পারি? মাথা নেড়ে জানালেন পারব। আবার জিজ্ঞেস করলাম, খেলাঘুলা? পারবে। পড়াশোনা? তিনি একরকম রেগে গিয়ে বললেন, ‘ইউ ক্যান ডু এভরিথিং। হোয়াই আর ইউ আস্কিং? হু টল্ড ইউ দ্যাট?’ বললাম, আমাদের ওখানকার ডাক্তার বলেছেন। রেগে গিয়ে আমাকে ইংরাজিতে বললেন, ‘ওসব আজগুবি চিন্তা বন্ধ কর। কী হয়েছে তোমার যে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে? তাহলে অপারেশন কেন করা হল?’ বহুদিন পর যেন মুক্তির স্বাদ পেলাম। এখনও আমি চলছি জীবনের জঙ্গল কেটে। এখনও আমি পড়ি, পড়াই, ব্যায়াম করি, কাজ করি। তবে জীবনের চাকাটাকে আগের গতি দিতে যেন দ্বিগুণ শক্তি দিতে হয়। কারণ দুর্ঘটনার পর গাড়ি মেরামত করে নিলেও আর আগের মত চলতে পারে না।


আন্তর্জালে তৃণ-গুল্ম এবং বটবৃক্ষ...

 ।। সুশান্ত কর ।।


(C)Image:ছবি
  সেদিন শিলচরের এক শিক্ষিকা নিজের দেয়ালে দীর্ঘ গদ্য লিখলেন। বেশ শেয়ার হয়েছে। লাইকও পড়েছে প্রচুর। তাঁর প্রথম কথাগুলোই ছিল 'ফেসবুক বিপ্লবী'দের নিন্দে করে। তিনি ধরে নিয়েছেন যারা ফেসবুকে খুব প্রতিবাদটাদ করেন, তারা সবাই বাইরে কিছুই করেন না। যারা করেন বাইরে, তাদেরও অনেকের ধারণা আছে, তারাই করেন, আর কেউ কিছু করেন না। তা সেই লেখিকা লিখছিলেন, সেই সব 'বিপ্লবী'দের ফেসবুক লেখাতে বুঝি খুব একটা লাইক টাইক পড়ে না। শেয়ার টেয়ার হয় না। তাঁর নিজের দেয়ালে প্রচুর সাহিত্য শিল্প থাকে। যেন পরিপূর্ণ ম্যাগাজিন। তা তিনি প্রতিবাদটাদ করেন না। দেশে যখন লোকে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে, তিনি তখন নিজের কুকুরের জন্মদিন পালন করে,কেক কেটে ফেসবুকে ছবি দিয়ে পশুপ্রেমও দেখাতে পারেন। সেদিক থেকে নিজের কাছে সৎ। কিন্তু আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। আমাদেরও তবে সেরকম অসংবেদনশীল হওয়া দরকার? যাতে প্রচুর লাইক শেয়ার মেলে? অর্ণব গোস্বামীর খুব টি আর পি। আই টি সেলের যে কোনো পোষ্ট খুব ভাইরাল হয়---তাহলে ভক্ত হওয়াই মঙ্গল। কিছু দিন আগে দীপিকা পড়োকনের "ছপাক' ছবি সওদা ভালো করেনি, অজয় দেবগণের 'তানহাজি' করেছে। তা হলে ধরে নিতে হয় 'ছপাক' বাজে ছবি ছিল। এই মাত্র আমার দেয়ালে রাহুল বিশ্বদ্বীপ ভট্টাচার্য একটি পোষ্ট করে জানালেন, দশ বছর ধরে গাইছেন কৃষ্ণকলি ইসলাম। অথচ চিনতেন না। আমি নিশ্চিত শিলচরের সেই শিক্ষিকাও চেনেন না। তাহলে কৃষ্ণকলি মন্দ গান করেন। তাঁর থেকে বহু ভালো শিল্পী সম্প্রতি ভাইরাল নন্দী বোনেদের গান। কী বলেন? সেদিন দেবলীনা সেনগুপ্তর একটি গল্প পড়লাম। এক লেখক লকডাউনে ভাবলেন, সবাই গল্প লিখে লাইক পাচ্ছে ভেবে নিজেও ভাবলেন লিখে ফেলবেন... এটা সেই চরিত্রের কথা--- দেবলীনাদির না। লেখকটিকে তিনি "বিপ্লবী' বলুন, দেশদ্রোহী বলুন---সেরকম করেই এঁকেছেন। এবং এমন লোকেরও অভাব নেই---কথাটা আমাকে ভাবাচ্ছিল। সত্যিকার অর্থে 'ফেসবুক বিপ্লবী' বা "ফেসবুক লেখক চরিত্র' এরা। লাইক শেয়ার দেখে মান মাপেন। এই মোহে আজকাল ফেসবুকে হোয়াটস এপে বহুজন সক্রিয়। অনেকেই এতে বিরক্ত। আমি সেই দলেও নেই। আমি ভাবি, আন্তর্জাল এই সুযোগ করে দিয়েছে। সব্বাইকে লেখক বানিয়ে দিচ্ছে। যার লেখক শিল্পী হবার স্বপ্ন নেই---তিনিও দিনে পড়েন কম,লেখেন বেশি। এর ভালো দিক আছে। লেখা পড়ার থেকে সব সময়েই অগ্রপদক্ষেপ।বুদ্ধির বিকাশে এর ভালো অবদান দেখতে আমাদের আরেক দশক লাগবে। আমি এই সবকে হতাশ করি না। আমি বিশ্বাস করি বড় বটগাছকে কেউ আদর করে বাড়ির ব্যলকনিতে সাজায় না---মানে লাইক শেয়ার করে না। কোথাও গাছ গজালে ছেঁটে ফেলে। কিন্তু বট গাছ তো দরকার। আর বটগাছ সেখানেই সম্ভব যেখানে তৃণগুল্ম প্রচুর গজায়---যেগুলো খুব লাইক শেয়ার করা যায়। ফলে এই সব চলুক। জমি তৈরি হোক। সম্প্রতি যেমন লাইভের 'আমফান' ছুটছে। এও ভালো। প্রযুক্তিকে যারা এড়িয়ে যেতেন তারাই বেশি সক্রিয় হয়েছেন। এই সেদিন যিনি ঘোষণা দিলেন, ফেসবুক থেকে গেলাম! সেরকম ব্যক্তিও দেখছি, লাইভ সংগঠিত করছেন। তিনি করছেন না। তাঁকে দিয়ে পরিস্থিতি করাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মানুষ পরিস্থিতির দাস নন। মানুষ পরিস্থিতির প্রভুও। নিজের দেয়ালে বা গোষ্ঠীতে গুটিয়ে থাকলে আপনি করছেন বটে লাইক শেয়ারের জন্যে---আমরা ছোট বৃত্তের বাইরে তা ছড়াচ্ছে না। না স্থানে, না কালে। এমনিতেও আন্তর্জালের কাল ভ্রমণ নিয়ে একটি সমস্যা আছে। তবু কিছু জায়গা আছে কাল ভ্রমণ বেশি করবার ক্ষমতা রাখে স্থানের সঙ্গেও। যেমন ফেসবুকে ভিডিও করবার চাইতে ইউট্যুবে করা বা সেখানে রাখা ভালো। ফেসবুকে লেখার চাইতে ব্লগে লেখা ভালো... দশ বছর পরেও পাঠক দর্শক সহজে পেতে পারেন। সেই জন্যে দেখুন অসমিয়া নতুন অনুবাদ গোষ্ঠী তাদের একটি ব্লগও করে ফেলেছেন। এই সব অনেকে ভাবেন না। আপনি যে ভিড়ের মধ্যে বিশ্বভ্রমণ করছেন বলে কল্পনা করছেন, কিন্তু আসলে ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছেন---সেই ভাবনা আছে কি? ফলে আমার বলবার কথা অতি সামান্য--- পূর্বোত্তরের যারাই যেখানে লিখুন, অন্তত ঈশানেও আসুন। নিয়েও আসুন। নিজেও অন্যের ভালো জিনিস শেয়ার করুন। আর বাকি বাংলার কাছে যেতে হলে আমি বলব, একটি ভালো গোষ্ঠী আছে গুরুচণ্ডালী---আপনারাও সেরম কিছু ভেবে নিন। তাহলে কী হবে --- হাওয়া চলাচল বাড়বে। ব্যলকনি থেকে নেমে কখন বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে গেছেন টেরও পাবেন না। সামান্য লাইক শেয়ারের মদের নেশাতে সীমাবদ্ধ থাকলে সম্ভবত আপনার ক্ষতি কিছু হচ্ছে না, সামুহিক লাভ কিছুও হচ্ছে না।
      

শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০

চ ক্ষে আমার তৃ ষ্ণা

।। অশোকানন্দ রায়বর্ধন ।।


       মানুষ তার জাত্যাভিমানটাকে সরিয়ে ফেলতে পারলে তার হৃদয় প্রসারিত হয় ৷ ভাষা কোন বিষয়ই নয় ৷ অন্তরের ভাষা সবারই  এক ৷ এন আর সি, লিগ্যাসি কী করতে পারে ৷ কোনো ভাঙন ধরাতে পারে  অন্তরমহলে?  না পারে না?  এমনটাই মনে হয়েছে আমাদের এ যাত্রায় ৷ মানুষ ৷ মানুষই আমার সন্ধান ৷ মানুষের ভেতরের মানুষটাকে কোনদিনই খুঁজে পেলামনা ৷ খুঁজি সেই মানুষকে ৷ যে দূর করে দিতে পারে মনুষ্যনির্মিত ব্যবধান ৷ 'সেই মানুষে খুঁজে বেড়াই দেশ বিদেশে' ৷ দেখাও হয়ে যায় পথে পথে ৷
 উত্তরবঙ্গের ইসলামপুর সন্নিহিত আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশন থেকে ফেরার যাত্রা শুরুর কথা আটাশ তারিখ বিকেল চারটে কুড়িতে ৷ স্টেশনে এসে প্রথমেই শুনলাম অবধ-অসম এক্সপ্রেস দশ ঘণ্টা লেট ৷ আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি ভীষণ ৷ আমাকে নিয়ে গোবিন্দ, গোপাল দৌড়াল নার্সিং হোমে ৷ সেখানে চিকিৎসায় পেলাম এক মহা-মানবিকতার পরিচয় ৷ সেটা অল্প-কথায় বলার নয় ৷ তাই  আমার হৃদয়নিসৃত সেই অনুভব যত্ন সহযোগে তুলে ধরার আশায় এখন আর অবতারণা করছিনা ৷
           সময় যতো এগুচ্ছে ট্রেনের বিলম্বের মাত্রা ততো বাড়ছে ৷ শেষ পর্যন্ত ঊনত্রিশ তারিখ সকাল দশটায় যখন ট্রেনের নাগাল পেলাম তখন সে উনিশ ঘণ্টা পিছিয়ে চলছে ৷ আমরা পরবর্তী ট্রেনের সংযোগ পাব কী পাবনা দুশ্চিন্তার মধ্যে ট্রেনে চাপলাম ৷ দুপুরের মধ্যে এন জে পি পৌঁছুলাম ৷ খাওয়া দাওয়ার পর  গোবিন্দ ব্যাঙ্কের উপর শয়ান হল ৷ আমি,গোপাল, সঞ্জীব, অভীক নিচে ৷ এক অসমিয়া তরুণী আমাদের কামরায় এলেন ৷ যেহেতু আমরা চারজন নিচে ৷ ফাঁকা আসন দেখে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে আমাকে  বললেন,  ইয়াত বহি পারিম?  বললাম, বহক ৷ গোপাল সরে এসে আমার পাশে বসলেন ৷ মহিলাকে প্যাসেজের পাশে জায়গা ছেড়ে দিলেন ৷ কথায় কথায় জানা গেল তিনি দ্বাদশ স্তরের ভূগোলের শিক্ষিকা ৷ দু হাজার চৌদ্দতে টেট দিয়ে চাকরি পেয়েছেন ৷সপ্তম পে কমিশন বিন্যস্ত বেতন পাচ্ছেন ৷ নাম মইনু গগৈ ৷ বঙ্গাইগাঁওতে পোস্টেড ৷ তাঁর স্বামীও শিক্ষকতা করেন ৷  রঙ্গিয়াতে আছেন ৷ সেখানে যাচ্ছেন ৷ সাহিত্য ভালোবাসেন ৷ কথাবার্তার মধ্যে জানলাম আমাদের ত্রিপুরার অনেক খবর রাখেন ৷আমরা সপ্তম বঞ্চিত ৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী , বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী  উভয়ের সম্বন্ধেই ভালো খোঁজ খবর রাখেন ৷ অসমের সমকাল, সংকট, সমাজ সব নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে ৷ অসমের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষিক পরিবর্তন সম্বন্ধে আলোকপাত করলেন ৷ যতক্ষণ ছিলেন কবিতা শুনলেন আমাদের ৷ বাংলাকবিতা হলেও তিনি শুনছেন ৷ আমার সঙ্গীরা বাংলায় কথা বলছেন ৷ তিনি অসমিয়া ও হিন্দিতে বলছেন ৷ আমার সঙ্গে অসমিয়াতে ৷ একবারের জন্যেও আমাদের মনে হয়নি আমরা ভিন ভাষাভাষী মানুষ কথা বলছি এতোক্ষণ ৷ আমাদের কারো কথা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ৷ একটা আন্তরিক ঘরোয়া পরিবেশে যেন প্রতিবেশীর সুখদুঃখের কথা বলছি আমরা ৷ 
           রঙ্গিয়া স্টেশনে ট্রেন ঢোকার পর তরুণী উঠলেন ৷ বললেন, ময় যাম এতিয়া ৷ ভাল লাগিল আপুনালোকর লগতে ই সময়টো ৷ আমার সঙ্গীরা বিদায় জানালেন ৷ তরুণী আমাকে বললেন,  আহক স্যর ৷ আমিও বললাম, কেনেকা সময়টো শেষ হল ৷
         তরুণী মইনু গগৈ ট্রেন নেমে ছুটলেন তাঁর প্রিয়পুরুষের সান্নিধ্য লাভের তৃষ্ণায় ৷ সে প্রিয়জনটির নাম জানা হয়নি আমার ৷ ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে ৷ আমি চেয়ে আছি সেই তরুণীর গমনপথের দিকে ৷ যে কিছুক্ষণের জন্যে একটা আত্মীয়তার বাতাবরণ তৈরি করে গেল ৷যার খোঁজে থাকি আমরা ৷ যার তৃষ্ণায় আমাদের যাপন ৷

সোমবার, ২৫ মে, ২০২০

ঘটনা

।। এম রিয়াজুল আজহার লস্কর ।।

বনের ধারে বসেছিলাম বানর এলো কাছে,
শুধায় আমায়, তোমার কাছে টাকা কেমন আছে ?
বললাম আমি বেকার মানুষ পকেট থাকে খালি,
এই কথাটা শুনেই বানর দিলো আমায় গালি !
গালি দিয়ে আর থামেনি দৌড়ে উঠে গাছে।
থানায় গিয়ে নালিশ করি ওসি মামার কাছে !
বারো গাড়ি পুলিশ যখন অকুস্থলে এলো,
সঙ্গী ছেড়ে ভয়ে বানর বনের মধ্যে গেলো।
সঙ্গীরা তার বসে গাছে দেখে থানার গাড়ি,
ওসি বলে দুষ্ট বানর ভয় পেয়েছে ভারি।

শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

চেতনা প্রবাহ


কোয়ান্টাম মেকানিক্স , স্ট্রিং থিওরি গুলে খাওয়া সমসাময়িক পদার্থ বিজ্ঞানী Edward  Witten এর কথা দিয়ে এই লেখা শুরু করি,"I have much easier time imagining how we understand the Big Bang than I have imagining how we can understand consciouness."

      চেতনা যদি অনন্তপ্রবাহ হয় তবে চেতনার অনুপস্থিতি মৃত্যু ছাড়া সম্ভব কি ? কোমা আক্রান্ত মানুষ কি তবে চেতনারহিত নয় ? নিউরোসায়েন্টিস্টদের মতে চেতনাকে পর্যবেক্ষণ করার দুটো রাস্তা রয়েছে । এক , তার মেন্টাল স্ট্যাটাস এক্সামিনেশন বা মানসিক অবস্থানকে বিভিন্ন প্রশ্নাবলী ও পর্যবেক্ষণ দিয়ে পরিমাপ করা । যেমন কোন ব্যক্তি যদি তার নামধাম,  বর্তমান অবস্থান,  বর্তমান সময় তারিখ ও দিন ঠিকঠাক বলতে পারে , তার মনোযোগ স্মৃতি ইত্যাদি ঠিকভাবে কাজ করে তবে বলা যাবে ব্যক্তি 'Alert and Oriented times four' (A&Ox4) এবং তাকে পুরোপুরি চেতনা সম্পন্ন বলে পরিগণিত করা হবে । আর দ্বিতীয়টি হলো , হাসপাতাল সেটিং এ রেখে তার বিভিন্ন নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা,তার সংবেদীয় পেশীগত প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি বোঝা । Glasgow Coma Scale এর মাধ্যমে ব্যক্তির চেতনার পরিমাপ করা হয় , যা কোমা স্তর থেকে পুরোপুরি চেতন অবস্থা পর্যন্ত বিস্তৃত । অর্থাৎ এই স্কেলে ব্যক্তির স্কোর যত বেশি তাকে তত ' সচেতন ' বলে ধরা হবে ।

           চেতনার অনুপস্থিতি বোঝাতে কেউ কেউ বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে থাকেন । যেমন ঘুমন্ত অবস্থা । কারো কারো মতে NonRem Sleep স্তরে যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ব্যক্তি স্বপ্নহীন অবস্থায় থাকে তখন আসলে সে অচেতন অবস্থা অতিক্রান্ত করে । চেতনা বা awareness তখন থাকে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত । এছাড়াও আরো কিছু সময় যেমন দিবাস্বপ্ন শিশুর জন্মদান দীর্ঘসময় নিদ্রাহীনতা,  যৌন উত্তেজনা অথবা প্যানিক স্টেট অতিক্রম করার সময় চেতনপ্রবাহে ছেদ আসতে পারে । একে Altered State of Consciousness (ASC)বলেও আখ্যায়িত করা হয় । সচেতন জাগ্রত অবস্থা থেকে ASC অবস্থা সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা । ১৮৯২ সালে হিপ্নোসিসের স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এই শব্দটি প্রথম উত্থাপিত হয় । হিপ্নোসিস এবং এপিলেপ্সির ক্ষেত্রে চেতনার ব্যতয় পরিলক্ষিত হলেও ,এসকল অবস্থাই কিন্তু ক্ষনস্থায়ী । চেতনার পরিবর্তিত দশা হলো অভিজ্ঞতার এক বিকল্প প্যাটার্ন যা গুনগত ভাবে আমাদের মৌলিক মানসিক উপাদান থেকে ভিন্ন । অতিরিক্ত ড্রাগ বা অ্যালকোহলের নেশা আসক্ত অবস্থায় অথবা চিকিৎসার স্বার্থে কোন ওষুধ প্রয়োগের ফলেও এই ASC অবস্থা তৈরি হয় । Absence Seizure বলে একটি বিশেষ শারীরিক অসুখ রয়েছে যেখানে চেতনারহিত হয়ে ১০ সেকেন্ড বা তারও কম সময় ব্যক্তি থাকতে পারে এমনকি পূর্ব শারীরিক অবস্থান একটুও পরিবর্তন না করে ! শিশুদের ক্ষেত্রেই Absence Seizure  বেশি দেখা যায় ।
            আবার ফিরে আসি ঘুমের কথায় । ঘুম সাধারণত দুটি স্তরের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হয় । NonREM বা চোখ অনড়া ঘুম আর REM বা চোখ নড়া ঘুম । চোখের তারার নড়াচড়ার হার দিয়ে এর নির্ধারণ হয়েছে । NREM এ রয়েছে আবার তিনটি ভাগ । এই স্তরগুলি চক্রাকারে আসতে থাকে , প্রথম দ্বিতীয়, তৃতীয় আবার প্রথম ইত্যাদি । একটি নিদ্রাচক্রে গড়ে ৯০  থেকে ১১০ মিনিট সময় যায় , যার মধ্যে এক একটি স্তরের স্থায়িত্ব হলো ৫ থেকে ১৫ মিনিট । NREM  sleep এর একদম প্রথম স্তরে চোখ বন্ধ থাকবে , কিন্তু বাইরের জগতে কি ঘটছে তা সম্পর্কে প্রায় সম্পূর্ণ অ্যাওয়্যারনেস থাকবে । জাগ্রত ও সুপ্ত অবস্থার দোলাচলে আচ্ছন্ন এই স্তরের অভিজ্ঞতায় hynic myloclonia ঘটতে পারে । অর্থাৎ হঠাৎ করে শরীরের কোন পেশীতে ঝাঁকুনি , আকস্মিক হতচকিত (আমাদের ত্রিপুরার বাংলায় ' ছ্যাবড়া খাওয়া ' 😃) হয়ে আবছা ঘুমের মধ্যে চমকে ওঠা ইত্যাদি হতে পারে । অনেক ইনসমনিয়ার রুগীর এই ঘটনাটির জন্য ঘুমে অচেতন হওয়া হয়ে ওঠে না । ৯০ শতাংশ লোকই জীবনে কোন না কোন সময় এই অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হয়েছেন । আর বাকি ১০ শতাংশ রয়েছেন যাদের প্রতিদিনই এমন হয় । বিশেষত যারা উদ্বেগ ও স্ট্রেসে ভোগেন , যারা বেশি চা কফি খান বা ধূমপান করেন তাদের এই অভিজ্ঞতা বেশি হয় । আমরা অনেকেই বিশেষত অল্পবয়সে ঘুমের মধ্যে হাল্কা বায়ুর মতো উঠে ধপ করে পড়ে যাওয়ার ও ঘুম ভেঙে যাওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি । এই অভিজ্ঞতা এই স্তরেই ঘটে থাকে ! 

          ঘুমের দ্বিতীয় স্তরটিও NREM ঘুম স্তর । এখানে এসে মস্তিস্কের ওয়েভ ধীর হয়ে যায়, হৃদস্পন্দন ও শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পায় , পেশী রিল্যাক্সড হয়ে যায় । এসময় হাল্কা স্বপ্ন আসতে পারে, তবে ঠিক স্বপ্ন নয় যেন ভাবনা । কোন লোককে এসময় জাগিয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে , ' স্বপ্ন দেখছিলাম না , একটু ভাবছিলাম ! ' 
তৃতীয় NREM স্তরটি গভীর নিদ্রার স্তর । এই সময় রক্তচাপ আরো কমে যায় । নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নির্দিষ্ট ছন্দ অনুসরণ করে চলতে থাকে শরীরের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় , হজম ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনগুলি নিঃসরণ হতে থাকে । বাইরের জগতের সঙ্গে চেতনার সংযোগ সবচেয়ে কম থাকে এ ঘুম দশায় । Sleep Walking , বাচ্চাদের বিছানা ভিজানো , nightmare দেখা এসব অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার স্যাপার এই সময়ই ঘটে ।

           একদম শেষ স্তর হলো REM ঘুম বা চোখ নড়া ঘুম । চোখ নড়া ঘুমে যেন শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও পেশী অবশ হয়ে যায় । নিঃশ্বাস অনিয়মিত হয় , হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ আগের অবস্থা থেকে বেড়ে ওঠে । আর এ সময়ই স্বপ্নসমূহ আসে । পরীক্ষায় দেখা যায় আশি শতাংশ স্বপ্নই REM স্তরের । এই স্বপ্নসমূহ অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের এপিসোডিক মেমোরি বা জীবনকাহিনীর সঙ্গে যুক্ত স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত । সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাও এর বিষয়বস্তু ।

           REM ঘুম এর সঙ্গে সৃজনশীলতার সম্পর্ক রয়েছে । REM ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে উঠলে মানবমস্তিস্ক hyperassociative হয়ে ওঠে , ফলতঃ শব্দের সঙ্গে শব্দের সম্পর্ককরণ , সমস্যামূলক কাজের সমাধান , শব্দকে বিভিন্ন ফর্ম এ পুনর্বিন্যাস তার কাছে সহজ হয় । নিদ্রার প্রায় নব্বই মিনিট অতিবাহিত না হলে REM ঘুমে উপনীত হওয়া যায় না । যত বয়স বাড়ে , REM ঘুম কমে যায় । তাই বাচ্চারাই বেশি স্বপ্ন দেখে ! 
      কোন কোন মনোবিদ বলেছেন গভীর ঘুম চেতনাহীন । আবার অন্যদল বলেন স্বপ্নহীন ঘুমের মধ্যেও চেতনা অবলুপ্ত হয় না । তাঁরা বলেন , আসলে চেতনা কখনোই অবলুপ্ত হয় না । তার অবস্থার পরিবর্তন হয় মাত্র । গভীর ঘুমে চেতনা মূলতঃ তিনটি অবস্থানের যে কোন একটিতে থাকতে পারে :
১) কোন অনুভূতিহীন , নিমজ্জনহীন হাল্কা চিন্তাস্রোতের ও অভিজ্ঞতা স্রোতের মধ্য দিয়ে ভেসে চলা । 
২)শারীরিক সংবেদন বা প্রত্যক্ষণসমূহের অভিজ্ঞতা অর্জন -সেটা অভ্যন্তরীন বা বাহ্যিক দুইই হতে পারে । যেমন ঘুমের মধ্যেও অ্যালার্ম বেজে উঠলে সেই শব্দ শুনতে পাওয়া । 
৩) স্বপ্নহীন গভীর ঘুম , তবুও তার সঙ্গে এই চেতন অভিজ্ঞতা (awareness) যে ' আমি এখন নিদ্রামগ্ন ' আছি । 

         সোমনামবিউলিজ্ম বা sleep walking এর ক্ষেত্রে সাধারনতঃ আমরা বলে থাকি , ব্যক্তি চেতনাহীন ছিল । যদি এ অবস্থায় সে কোন অপরাধ করে ( হরর ফিল্মে যেমন দেখা যায় ) তবে মনে করা হয় সম্পূর্ণ অচেতন ভাবে সে কাজটি করেছে । কিন্তু এই ' সম্পূর্ণ অচেতন ' কথাটার মধ্যে একটা fallacy রয়েছে ! আসলে সেই অবস্থায়ও তার মধ্যে চেতনা সক্রিয় ছিল । আর তা ছিল বলেই সে হাঁটতে পেরেছে , পথঘাট ঠিক রেখে চলাচল করেছে, ভিক্টিমকে চিণ্হায়িত করেছে, অস্ত্র প্রয়োগ করেছে !
 তবে অবশ্যই এই চেতনা জাগ্রত স্বাভাবিক চেতনা নয় । Altered State of Consciousness 

মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

বাংলা কবিতা:--উনিশ, তুমি রবে অবিস্মৃত!






















 

।। সিক্তা বিশ্বাস ।।

১৯শে মে আমার ভাষা দিবস 
উনিশ আমার জ্বলন্ত শ্বাস! 
উনিশ আমার ঘুম কেড়ে নেওয়া
উনিশ যে শহীদের রক্তে বওয়া!

রাখতে মাতৃভাষার মান
এগারো শহীদের প্রাণের দান! 
অক্ষয় হলো বাংলা ভাষা---
বাংলায় বলা আর বাংলায় হাসা।

কতো বছর গেল পেড়িয়ে 
আজও দিনটি জ্বলন্ত স্মৃতি! 
ভুলিনি! ভুলবো না! এই প্রাণাঞ্জলি
যতই ঘটুক দিন-বছরের বিস্মৃতি!

বাঙালির হৃদয়ে চির অধিষ্ঠিত
বাংলাভাষা যে বাঙালীর সুধামৃত.... 
ভাষাই জাতির মুখ্য পরিচিতি! 
উনিশ, তাই তুমি রবে চির অবিস্মৃত!!

সোমবার, ১৮ মে, ২০২০

মোমবাতির সলতে


      ।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।         


(C) Image--ছবি







শুকনো থালায়
খাদে উপচানো সাদা ভাত,
মিছিমিছি কালো চামড়ায়
পোড়া বার্নিশ।
ফিরতি ভাটায়-
ঘাম শুষে
পিচমোড়া রাস্তা,
পোড়া-কালো রক্ত চুষে
রেললাইনের পাথর।
তবু তারা এগিয়ে যায়
কাতারে কাতারে।
কিছুমুহুর্ত আগে ওরা এগিয়েছিলো
আবাসনের সিড়ি ভেঙে
অসীমের খোঁজে
তাদের গুটিকয়েক স্বজন
গুপ্তধনের সন্ধানে
এগিয়েছিলো মেনহোলে।
তাদের অন্বেষণ
অবিরাম, অবিরত।
অতীতে সামান্য পিছিয়েছিল
যেদিন
বৃষ্টিভেজা ধান
মাটির গন্ধ শুকেছিলো,
টমেটো সস্
হাটের নর্দমার গলিতে ভেসেছিল।
তারপর আবার,
ওদের না যাওয়া স্কুলে
ভূগোল ইতিহাসের পাতায় কান পেতে জেনেছিল মৌসুমি বৃষ্টি সংবাদ।
সেই থেকেই মেঘবিহীন দিনে
সূর্যঘড়ির ছায়ায়
পা ফেলা শুরুর রচনা   ।
যেতে যেতে শেষে হয়তো
স্বর্গের বন্ধ দুয়ারে
আলো জ্বেলে ঠায় বসে
প্রভুদের অপেক্ষায়।

৮ মে,২০২০








রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

লিমেরিক


।।  এম রিয়াজুল আজহার লস্কর ।।

(C)Image:ছবি















বনের মাঝে ঘুরছি যখন বলল এসে হাতি,
বালিশ কাঁথা সঙ্গে রেখো শীতের এখন রাতি !
শুধাই তাকে, মামা ;-
কোথায় তোমার জামা ?
বলল উঠে, ভুল করেছি ! দুষ্ট মানব জাতি !

রবিবার, ৩ মে, ২০২০

খণ্ডিত ধারাবিবরণী


।। মিঠুন ভট্টাচার্য ।।
(C)Imageঃছবি

রুরী কাজে বেরিয়ে বিষুদার পান দোকানের ঢাকাটা খোলা দেখে জিজ্ঞেস করলাম,"লকডাউন খোলার আগেই যে খুলে দিলে, পুলিশ ধরবে তো !'
বিষুদা বললো, "ভাই, উনাকে দুটো দিয়েছি, পেটে একটু অম্বল হয়েছে তাই গতকাল থেকে ভয়ে ভয়ে খুলছি। আর ২৩ তারিখ পর পুরো খুলে যাবে।'
আমি বললাম, '২৩ তারিখ কি ?'
          দাদা বললো,"সেদিন ওরা আবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করতে পারে তো, তাই এরপর লকডাউন উঠবে ।'
       বাড়ি ফিরে কেলেন্ডারে চোখ বুলিয়ে কিছুই পেলাম না, তবে পাশেই এক কোঠা লাফিয়ে লেখা আছে ঈদ-উল-ফিতর ।

##২৭ এপ্রিল, করিমগঞ্জ 

শুক্রবার, ১ মে, ২০২০

সুখের হাওয়া পালিয়ে গেছে



।। এম রিয়াজুল আজহার লস্কর ।।



(C)Image:ছবি















হাট বাজার আর শহরগুলো আছে নীরব হয়ে,
মানুষ এখন মানুষ থেকে থাকছে দূরে ভয়ে।
বিশ্ব যেনো চুপটি মেরে করছে বসে ধ্যান,
কেউ দেখিনা গাইতে আসে ধ্যান ভাঙ্গানোর গান।

করোনা যে নিঠুর ভারি গ্রাস করে এ বিশ্ব,
কাল দেখি যে বিশ্বশক্তি আজ দেখি সে নিঃস্ব।
মুখ জুড়ে যে দেখছি ভীতি ছাপ পড়ে তার অঙ্গে,
হারছে মানুষ যুদ্ধ করে ছুট্ট কণার সঙ্গে।

সব আপনজন রাখছি দূরে যায়না করা স্পর্শ,
স্বপ্নসৌধ পড়ল ধসে নেই মনে সেই হর্ষ।
সুখ সবই যে হলো হাওয়া, আসলো সর্বনাশা,
ঘোর বিপদে চাইছে মানুষ  প্রভুর ভালোবাসা।