“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৯

হেইতি থাকতো হারবনি অডা

।। অভীককুমার দে।।



(C)Imageঃছবি












বনবাসীর গন্ধ শুঁকে লঙ্কায় ফিরে এলেই বিভীষণ।

পূর্বোত্তরের পাহাড় বলে
বাংলা থেকে আটক শিবিরের দূরত্ব বেশি নয়।

যে জাতের রক্তে স্বাধীনতা
সে জাত আটক শিবিরে, জীবিত !

কে তিনি বলেছিলেন, 'যেইতি বিয়াইছে... '

যে আকাশের নিচে প্রথম আলো
ঠিক তার নিচে মানুষ খোয়ারে, ঘাস খাবে এই জাত
গরুগুলো পাহারা দেবে
চামড়ার ব্যবসা করবে অমানুষের দল।

ঠিক তারপর বন্ধ ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রেখো জাতের ছবি।
যদি প্রতিটি জীবিত ছবির ভেতর জাতের লাশ
তবে অনিবার্য মৃত্যু মিছিল...

কে তিনি বলেছিলেন, 'হেইতি থাকতো হারবনি অডা'
কেউ শুনেও শোনেনি, বেশ...
জাতের অজাত চুপ করে থাক
এ দেশ গোলামের জন্য নয়।


শিলাছড়ির শিলাগুহা

।। অভীককুমার দে।।


(C)Imageঃছবি


হঠাৎ, জয়ের ফোন আসলো দিন পাঁচেক আগে। বিজনদার সাথেও কথা হয়েছিল।সৌমেন হরিণা আসবে, শিলাগুহা যেতে চায়। আমাকেও যেতে বলেছেন। শিলাগুহার কথা এর আগে অনেকবার শুনেছি। গবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধনও এই গুহার কথা বলেছিলেন আমাকে। সঙ্গী ও সুযোগের জন্য যাওয়া হয়নি এর আগে, তাই আমিও না করিনি।

আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছি। ন'টার আগে যেতে বলেছিল জয়। আসলে যখন খুব তাড়াতাড়ি, দরজাও আঁচল টেনে ধরে; তা নাহলে চরকবাই থেকে হরিণা যেতে তিনবার গাড়ি বদলাতে হলো ! তবুও সময় মত গিয়ে পৌঁছেছি। বিজনদার দোকানে অন্যদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জয় বাজারেই, কাছাকাছি কোথাও। সৌমেন আর সঞ্জীবদা এসে পৌঁছেছে। এগারোটা নাগাদ মোটরসাইকেলে রওনা হলাম শিলাছড়ির উদ্দেশ্যে। হরিণা ও রূপাইছড়ির ঠিক মাঝামাঝি জয়ের বাড়ি। আনুমানিক চার পাঁচ কিলোমিটার গেলে সোনাই বাজার। বাজার থেকে বনকুল অভিমুখে সামান্য এগিয়ে গেলেই সঞ্জীবদার বাড়ি। এ পথে এখনও শহরের দূষণ লাগেনি। পাহাড়, বন, গ্রাম একসাথে মিলেমিশে আছে। পরপর গ্রামগুলোকে যুক্ত করে একটি পাথুরে রাস্তা জীবনের ছন্দ মেখে এগিয়ে গেছে।

আঁকাবাঁকা পথ উঁচুনিচু পাহাড়ের ঢালে ঝুলছে।পাহাড়ের কাছে প্রকৃতির মায়ামেয়ে। পুরুষের মতো প্রহরী শরীর, নারীর মতো সবুজ মন। পায়ে লতানো গাছের নূপুর। নূপুরে ঢেঁকিশাকের কারুকাজ। মাঝে মাঝে বনফুলের মুক্তো।
বাঁদরঝোলা রাস্তা কোথাও পাহাড়ের কোমর জড়িয়ে, কোথাও চুমু খায় পায়ে। এসব দেখে সূর্যটা হেসে উঠলে কুয়াশা চাদরে জড়িয়ে নেয় শরীর এবং নীরবতার বাদ্যযন্ত্রে প্রকৃতির সুর নিজস্ব ধারায়। শুনতে শুনতে এগিয়ে চলেছি আমরা পাঁচজন। পাহাড়ের বাড়ি এলে মনের খোকাবাবুর আবদারও বেড়ে যায়। তা নাহলে একটু পরপরই ছবি তোলার নামে দাঁড়িয়ে পড়বে কেন ? কেনইবা জয়ের মতো ধীরস্থির ছেলে পাহাড়ের ঢালে একটি ফুল দেখে অস্থির হয়ে উঠবে ? শৃঙ্খলা বাহিনীর মানুষ হয়েও সৌমেনইবা অন্য কেউ কেন ! যার গলা ছেড়ে বেড়িয়ে আসছিল গানের কলি। আনন্দে আত্মহারা সঞ্জীবদার মুখেও পুনমের হাসি প্রজাপতির মতো ভাসতে দেখেছি। অনবরত কথা ফুটতে শুনেছি বিজনদার মুখে। আসলে পাহাড়ের কাছে এলে মানুষের ভেতর আর কোনও জড়তা থাকে না।

তোমাদের মতোই আমার প্রিয় বন্ধু পাহাড়, বন, নদী। মনের সাথে তর্ক করে যখন আমি হেরে যেতে যেতে চুপ হয়ে যাই, তুমি ঠিক বুঝতে পারো। কাছে আসো, সঙ্গ দাও। ভুলগুলো বেছে বেছে সরিয়ে দিতে পারো মন থেকে। ঠিক তেমনই, পাহাড়ের কাছে গেলে ঘন সবুজ বন আমার সব জড়তা সরিয়ে দেয়। খুশির ঝর্ণা ছলাৎ করে ওঠে। মনের ভেতর একটি চঞ্চল নদী ঢেউ ছড়িয়ে বয়ে যায়। তৃপ্তির অভিমুখে অদ্ভুত স্বচ্ছতায় সাঁতার কাটি। পাহাড়ি বন আমার অবয়বের দু'পিঠ দেখে হাসে।

হরিণা থেকে শিলাছড়ির দূরত্ব পঁয়তাল্লিশ পঞ্চাশ কিলোমিটারের বেশি হবে না। অথচ যখন শিলাছড়ি পৌঁছলাম তখন প্রায় পৌনে একটা। মাথার উপর দুপুর ভাঙছে। খোঁজখবর নিয়ে আমরা শিলাগুহার পথে রওনা হয়েছি। মোটরসাইকেলে আরও কিছুদূর যাওয়ার পর হাঁটা পথ। জলাশয়ের পাশে পাশে গুহাটা সরু খাঁজে পা গলিয়ে পাহাড়ের দিকে হাঁটছি। গভীর জঙ্গলের ভেতর মুখ লুকিয়ে একটি ছড়ি অজগরের মতো শুয়ে আছে। তিনবার ছড়িটির ছায়াশরীর আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করার পর আকাশ ছোটো হয়ে দূরে সরে যাচ্ছে। জলের শব্দ বাড়ছে। এখান থেকে ছড়ির গা বেয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। এই জলপথ ছাড়া শিলা-গুহায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। যতই এগিয়ে যাচ্ছি ছড়িটি ঝর্ণা হয়ে উঠছে। ঘুঙুর পায়ে তাল ঠুকছে পাথরে। পিচ্ছিল পাথরে গড়িয়ে নেচে ওঠা ঝর্ণার মুখ থেকে চোখ ফেরানো যায় না। যতই এগিয়ে যাচ্ছি, ছোটো হয়ে আসছে আকাশ। ছড়ির উপর মুগলীলতা, পাশে কাঁটাঝোপ, উঁচু পাহাড়িঢাল। অদ্ভুতুড়ে আলো আঁধারে পাহাড়কে ভয়াল করে তুলেছে।

আনুমানিক দুই কিলোমিটার হাঁটার পর সামান্য একটু খোলা জায়গা। সামনেই পাহাড়ের গায়ে হা করে আছে একটি গুহা। ছড়িটি সামান্য বেঁকে বাঁদিকে সরে গেছে। আমরা যখন গুহামুখে এসে পৌঁছেছি তখন ঘড়িতে দুটো। অথচ মনে হচ্ছে, গুহামুখ দিয়ে ভেতর থেকে কেউ অন্ধকার ঢেলে দিচ্ছে সামনে। পাহাড়ের শরীর ভেদ করে সেই অন্ধকার মুছে দেবার ক্ষমতা আকাশের আলোতে নেই।

একে একে সবাই মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে ঢুকে পড়লাম গুহার ভেতর। ঢোকার সময় গুহামুখে মোমবাতি জ্বালিয়ে পাহাড়ি প্রাণীগুলোকে আমাদের অস্তিত্বের কথা জানিয়ে গেলাম। বিজনদার খানিকটা ভয় হচ্ছিল কিনা বুঝতে পারিনি। সৌমেনকে পথ দেখানোর জন্য সামনে যেতে বললেন। গুহামুখ থেকে তিন চার হাত যেতেই পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকার জমে এখানে চিররাত্রি। মোবাইলের আলোকে চেপে ধরছে অন্ধকার। সীমাবদ্ধ গণ্ডির ভেতর বাঁধা পড়ে ছটফট করছে আলো।ভেতর দেয়ালে গুহামুখের দরজাটি কবে কারা হেলান দিয়ে রেখেছে। দরজাটি ছুঁয়ে অনুভব করলাম, এমনই সব গুহায় ডাকাতরা রেখে যেতো লুটের সম্পদ। এমনই কোনও গুহার সামনে এসে দরজা খোলার জন্য নাকি বলতে হতো 'খুল যা সিমসিম'। যদিও এই গুহা সেই গুহা নয়। এটি সমশের গাজীর গুহা। এখন ভেতরে চামচিকা আর বাদুড়ের নিরাপদ বসবাস।

গুহার ভেতরের পথ অত্যন্ত সুকৌশলে তৈরি হয়েছে। খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ধৈর্যশীল ও প্রচুর শ্রমশক্তি না থাকলে এমন একটি অসাধারণ সৃষ্টি অসম্ভব। কেননা, গুহার ভেতর চলতে চলতেই টের পাওয়া যায় বাহ্যিক চাপ, গতি ও প্রভাব বিস্তারের কোনও সম্ভাবনা নেই। এখানে অবস্থানরত কাউকে আক্রমণ করা বা গুহাতে বন্দী আছে এমন কাউকে উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। কোথাও কোথাও রাস্তা অত্যন্ত সরু। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হয়। হামাগুড়ি দিয়ে কিছুটা ঢোকার পর মাথা সোজা করার জায়গা আছে। আবার বেঁকে গেছে পথ। একদম ভিতরে ঢুকলে ইগলুর মতোই প্রায় গোলাকার জায়গা। পাশ দিয়ে পাহাড় ঘামানো জল নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা আছে। অনন্ত তৃষ্ণায় বুক ফেটে মৃত্যু হবে না।

সমশের গাজীকে ছুঁয়ে দেখার এর থেকে ভালো কোনও জায়গা হতে পারে কিনা আমার জানা নেই। এখানে না এলে ত্রিপুরার ইতিহাসের একটি বৃহৎ অধ্যায় অদেখাই থেকে যাবে।

 

গল্পের যাত্রী

।। অভীককুমার দে।।


(C)Image:ছবি










ফুটপাতে ঘুমাতে এসে দেখলাম, আমি
রাতের কোলে মাথা রাখতেই শহর কেমন মায়াবী !

দুপাশেই পাথর, জেগে আছে কুকুর,
সংস্কৃতির জামা খুলে রেখেছে নির্জন রাস্তা
মাঝে জাতীয় সড়কে আমদানি করা শীত
আমি শরীর ছুঁয়ে মানুষ খুঁজি একা।

ঘুমের নৌকায় গল্পের যাত্রী
স্বপ্ন দেখি, আসলে কেউ ভিটেহারা নয়,
হারিয়ে যাচ্ছে মানুষ।

জলোচ্ছ্বাস

।। অভীককুমার দে।।


(C)Imageঃছবি










নদীটির কাছে গেলে বুঝতে পারি
মাটি কামড়ে পড়ে থাকাই সার,
পাতা ডুবিয়ে পাড়ের গাছ...
কেঁপে ওঠে নদী, বেঁকে যায়।

নদীর নিজস্ব গতি নেই !
মাটির জরিপ,
বিবেচনার পথ উঁচু থেকে নিচু...
একদিকে উজান, প্রকৃত সুখ,
অন্যদিকে সমাবেশের জল, হৈচৈ,
পাশে পরাধীনতার দেয়াল জেগে
মাঝে জন্মের ধারাবাহিক-- মৃত্যু।

নদীর বাঁকা শরীর দেখে ফুঁসে ওঠে ঋতু
সুতরাং অনিবার্য জলোচ্ছ্বাস।

জীবন ও জয়

।। অভীককুমার দে।।


(C)Image:ছবি


জয়, জন্মের পর প্রতিটি জন্মদিন অনেকটা দেশরাই পাড়ার গাছতলায় বুড়ো দোকানদারের চায়ের মতো। পুরনো কৌটার চিনি, দুধ, চা পাতা মিশে পুরনো কেটলিতেই সেদ্ধ হয়, অথচ হুঁকো টানতে আসে লোক।

এক পেয়ালা দিনটি মনে করিয়ে দেবে সময় পুড়ে সবুজ পথে রঙিন হয় মন এবং বেলা হেঁটে যায় সান্ধ্য প্রদীপের দিকে।

প্রতিটি রাত এলে বোঝা যায়, প্রদীপ বলে কিছু নেই। জড়িয়ে থাকা অন্ধকার ঠেলতে ঠেকাতে অস্তিত্বহীন জীবন, পড়ে থাকে আপেক্ষিক আলোর স্মৃতি।

স্মৃতিগুলো কেটলির বিক্রি না হওয়া ঠান্ডা চায়ের মতো। দোকানের বাইরে ঢেলে ফেলে দেওয়া চা, স্তূপের ভেতর পথ খুঁজে নেয় প্রতিদিন ! তবুও পরদিন জ্বলে ওঠে চুলা।

আমি মনে করি, জয়ের কোনও জন্মদিন পালন করা ঠিক নয়। জন্ম যদি কোনও অশরীর থেকে শরীর, যদি ছোট থেকে বড় আবার বড় থেকে ছোট'র দিকে এবং পুনরায় অশরীরের পথে হাঁটে, তবে জয় কোনও জয় নয়।

জয় আমার নিরিবিলি ভেতরের তুফান। ঝিরঝির বৃষ্টি হলেই মনে হয়, এই বুঝি দেখা হবার কথা। সামনে বহুদূর, সবুজের দিকে পথ ঘুরে যাবে। দ্বিচক্র চালে কাকতালীয় বৃষ্টি ধুয়ে নিয়ে যায় পথের ধুলো।

সঙ্গম

।। অভীককুমার দে।।

ছয় পাড় থেকে চেয়ে আছে চোখ,
দেও মনু একাকার হলো বলে
ধারাজলে আকাশের আলো
সাঁতার কাটে, রঙিন মেঘ অথবা দূরদেশী পাখি
ছায়া রেখে যায় বুকে।

দুদিকের দুটি নদী এক হয়ে একদিকে
ভেতর জলে অন্য কোনও ধারাপাত
বয়ে যায় নদী
বাঁকে বাঁকে জীবনের খোঁজ।

মায়ের সোনা বাছুর

।। অভীককুমার দে।।

গরু পালন করছি ঘরে
ঘর নিজের করে নিয়েছে গরু।

আমার ঘরের গাভী মা হয়েছে, দেখি
দামড়ারাও মায়ের মতই চেয়ে...
যদিও সব মা গরু নয়।
সব গরু মা হতে পারে না,
দুধ খাওয়াতে পারে না বলে
কিছু গরু হালের কাছে বন্ধক রাখে ঘাড়।

গাভী দুধ দেয়
সোনা ফলে
সোনা বাছুর মায়ের, অথচ
দামড়া মনে করে দুধের ভেতর সোনা;
অতঃপর খুঁড়তে থাকে মাটি।

রবিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৯

ভোলে বাবা কি চেলা


ভোলে বাবা কি চেলা হমলোগ
শিবজী মহারাজ কি জয়
গর্বসে কহো হাম হিন্দু হ্যায় সব
ঝান্ডা উঁচা লেহরায়।
জয় বলো ভোলে নাথ কি জয়
কি বলো ভৃঙ্গী ভাইয়া জয়
কি বলো নন্দী ভাইয়া কি জয়।।

যানজটেতে ক্লান্ত শহর
ছড়িয়ে ছিটিয়ে কুষ্ট দাগ
মিছিল চলুক সদর্পেতে
আনন্দ হোক একশ ভাগ ।
একটি মূর্তি তিনটে ট্রাক
সবার আগে দশটি ঢাক
একটিতে মা যেমন তেমন
নেই যে উলু নেইকো শাঁখ।
মাঝের ট্রাকে জেনারেটর
শেষের ট্রাকেই আসল খেল্।
ডিজের আওয়াজ ঘূর্ণি আলোয়
একটু গো মা  হুইস্কি গেল্ ।
দাঁড়িয়ে পড়ুক গাড়ির সারি
যতই উঠুক বিরক্তি রাগ
মিছিল চলুক বীরদর্পে
আনন্দ হোক একশ ভাগ ।

এমব্যুলেন্সটা ভীষণ বোকা
ওটার এত তাড়া কিসের ?
দেখছে বাপু আসছে মিছিল
তবুও আবার ঘ্যানোর ঘ্যার।
একটুখানি সবুর করো
মিছিল তো আর থামছে না,
কষ্টেতে প্রাণ ওষ্ঠে এলেও
পেশেন্ট তো আর মরছে না ।
কি বলছিস আওয়াজ কম ?
বুকের ব্যেমো ? এইতো দম !
আনন্দে যে খরচ অনেক
জোরসে বল্ , ভোলে ব্যোম।
চলছে মিছিল গায়ের জোরে
রাস্তা জুড়ে সদর্পেতে
গিন্নী বাবু সামলে দাঁড়াও
জ্বলবে কাপড় পটকাতে ।
এই যে শালা একটু দাঁড়া
রাস্তা কি তোর বাপের বে
মিছলটাই যে আগে যাবে
সাধ্যি থাকে বাগরা দে।
মিছিল আমার মিছিল তোমার
মিছিল ঘিরেই ব্যস্ততা
মিছিল হচ্ছে স্ট্যাটাস সিম্বল
অর্থবলের সুস্থতা।
নাচরে বাবু নাচ্ সুশীলা
নাচছে বৌদি আর মাসীমা
দুপাশ জুড়ে হাভাগা সব
গিলছে দেহ, তুলছে দোলা ।
গায়ে গায়ে রগরবাজী
নেশার সাথে অনুরাগ
মিছিল চলুক বীরদর্পে
আনন্দ হোক একশ ভাগ ।
জয় বলো ভোলে নাথ কি জয়
কি বলো ভৃঙ্গী ভাইয়া জয়
কি বলো নন্দী ভাইয়া কি জয়।।

###

বন্ধ কর বন্ধ কর, বন্ধ কর সব।
ধর্ম নিয়ে আদিখ্যেতা মিথ্যে প্রহসন,
আর কত ? ছেলেখেলা ?
বিকৃতি আর বেলাল্লাপনা ?
বন্ধ কর, আর কত ?
টাকার জোরে দাদাগিরি --
বিশাল বিশাল বাজেট নিয়ে
পুজোর ছলে পুতুল খেলা ?
আসল পুজোয় যৎসামান্য
ডেকোরেশন -- আলোর মেলা
আর কত ?
কোথায় লিখা শাস্ত্রমতে
এমনতর মিছিল  ?
বিকট শব্দে হিন্দি গান
আলোর সাথে অঙ্গভঙ্গি
মদের স্রোতে কৃষ্টি ভাষাণ ?
আর কত ?
পথঘাট সব বন্ধ করে
সহস্রকে বিপাক ঠেলে
কিসের জৌলুস ?
এমব্যুলেন্স যে দাঁড়িয়ে যায় !
একটা যদি মৃত্যু হয়, একটা যদি মানুষ  ?
কে নেবে তার দায়ভারটি ?
প্রশাসন ? ডাক্তার  ?
নাকি উন্মাদের‌ই দল ?
উত্তরটা কে দেবে তার ?
একটা কিছু বল্ ।
আর কত ? বন্ধ হোক।
বন্ধ হোক এই বিকৃতি সব,
আওয়াজ তোল।
লজ্জা হয়, নুইয়ে আসে মাথা,
যখন কেউ আঙ্গুল তুলে বলে,
এই তাহলে, প্রাচীনতম ধর্ম ?
এই তাহলে ? লজ্জা হয়।

এ লজ্জা আমার একার নয় ।
আমায় যারা ঘিরে আছেন, গোটা সম্প্রদায় ।
এই লজ্জা সনাতনী গোটা ধর্মটার
যত পূর্বপুরুষ আর বুদ্ধিজীবী জন
এই লজ্জা ওদের‌ও।
আমার ,আপনার, আমাদের সবার।
তাই বন্ধ হোক মিছিলবাজি-- অবিলম্বে,
বন্ধ হোক অনাসৃষ্টি, অন্যায় অনাচার।

শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

যেহেতু আপনি পর্দার আড়ালে

।। অভীককুমার দে।।

সবার যেমন, আপনারও আছে দুটি চোখ।
চোখে কালো চশমা !
যাবতীয় ব্যক্তিসুখ, নিজের মতোই
আত্মকেন্দ্রিক হতে পেরেছেন নির্দ্বিধায়;
অথচ কেউ বন্ধক দিচ্ছে জীবন !

যদিও জীবন মরণ কিছুই বোঝে না চশমা
অনিয়মের ছবিও ঢেলে দেয় চোখে,
যেহেতু আপনি পর্দার আড়ালে
না দেখার ভান করা শিখে নিয়েছেন সহজেই।

কোথাও এক পশলা বৃষ্টির ঝমঝম, তবু
ভেতর জ্বলছে কেন ?
পোড়া ছাই ধুয়ে একটি নদী দুভাগ হচ্ছে
ভাসিয়ে নেবে মানবতার মরা লাশ।

হয়তো দুচোখ ঝাপসা এখন,
নিস্প্রভ আলোর কাছে মাথা নত হলে
মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে অন্ধকার,
সবার যেমন, আপনারও আছে দুটি চোখ, দেখবেন--
অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে আসবে আলো।

সময় পেলে

।। অভীককুমার দে।।

একবার জিজ্ঞেস করবেন মহোদয়
কেমন আছি
কেমন আছে মানুষ
মানুষের জন্য...

জানি, আপনারা ব্যস্ত
ভীষণ ব্যস্ত করে রেখেছি আপনাদের
পরিযায়ীদের ভিড় ঠেলে আকাশ খোঁজেন
দুমুঠো ভাত মুখে তুলে দেবেন বলে

যদিও আপনারা বেরিয়ে যেতে পারেন আকাশ ফুঁড়ে
শূন্যতায় ভরে ওঠে আমাদের আকাশ।

এমন আহ্নিক গতির মাঝেই আমাদের চোখের জল
পঞ্চবার্ষিকী জমির আলে,
কান্নায় ভেঙে পড়ি,
শিশিরের মতোই গোছানো ভাষণ শুনি নীরবে।

সময় পেলে একবার দেখে নেবেন চোখ
মানুষের জন্য।

কেমন আছে মানুষ ?

সর্বনাশের পথ

।। অভীককুমার দে।।

ভাতের নামে রাজনীতি করতে আসে প্রেমিক !
তলপেট চাপ দিয়ে দেখে
কেমন উত্তাপ জমে এক সমুদ্র চিৎকার

তোলপাড় করে নিদারুণ শিরশির
নাভিমূল ঘোরে।
প্রেমিকের হাত আরও নিচে নেমে এলে
নির্ভেজাল থালায় শূন্য প্রস্তাবনা
আকুতির বিছানা।

সোহাগের নামে অধিকার হারানো শরীর
নিস্তেজ...
খুলে যায় সর্বনাশের পথ,
সরে যায় বুকের আঁচল।

উদোম পাহাড় চষে বেড়ায় অস্ত্রের হাত,
আঘাতে আঘাতে প্রেমের সংজ্ঞা ভুলে গেলে
নিঃশব্দ রক্তনদী
ভাতের থালায় মান চিত্র আঁকে।

এ বুক পতাকা জড়িয়ে থাকার কথা ছিল, অথচ
প্রেমিকের আঙুল জোৎস্না রাতের তারা গোণে !

শিশিরের সুখ

।। অভীককুমার দে।।

কবিতা আমার শিউলি ফুল
ঝরে যায় আপনার পাঠ শেষে,

মাটির উদোম বুকে লেপ্টে যায়
খসখসে পাতায় গাছ আমি
প্রভাতের মতো চেয়ে থাকি
তুমি সন্ধ্যার মতোই লুটিয়ে পড়ো!
ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে শিশিরের সুখ।

আমার দিনগুলো ভাটিয়ালী গায়
রাতের গল্প লিখে রাখে কোরক।

পাখি যদি বসে

।। অভীককুমার দে।।

আমার যত গল্প পাতার মতই
সবুজ
প্রতিনিয়তই ঝরে।

একদিন সব পাতা ঝরে যাবে
মচমচে শব্দও থেমে যাবে জানি,
মাটি হবে অবশেষে।
নিঃস্ব ডাল একা হবে,
বহুদূর উড়ে কোনও পাখি যদি বসে
ছবি হবে আকাশের ক্যানভাসে।

পারো যদি কেউ গল্প খুঁজে নিও
শূন্যতার নীলের মতো।

নির্লজ্জ

।। অভীককুমার দে।।

অবাঞ্ছিত ভিড়ের বাইরে উড়তে জানে শকুন

ভিড়ে থেকে মাথা উঁচু করো, দেখো--
শকুনের ঠোঁটে লেগে আছে অবাঞ্ছিত লোম,
কার লোম, কী লোম, কেমন লোম
এসব ভাববার সময় নয় এখন;

দেখো, তেলে ঝিকমিক করছে ডানা,
দূরে থাকো, ভিড়ে থাকো,
ভিড় মিথ্যে বলে না--
যে আমাদের বেশ্যা বানায়
সে আর কি এমন মাগী !
দুগ্গা তো হবে না, দুগ্গা হতে এ পাড়ার মাটি চাই।
এ পাড়ায় অবাঞ্ছিত ভিড়, মাটি নেই
কিছুই খাঁটি নেই।

বাইরে সংখ্যা শকুন, দূর থেকে মুখ দেখে
উড়ে এলেই খুলে নেবে গোপনাঙ্গের কাপড়,
ইজ্জত যাবে কার ?