“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

কাব্যচর্চায় ভাব ও বিষয়ঘটিত সমমেল ঘটে যাওয়া পুরাতন


( আমরা পূর্বোত্তরের  ৩১জন লেখক /পাঠক  মিলে চিঠিটা লিখেছিলাম। আজ প্রকাশ পেয়েছে দৈনিক যুগশঙ্খে। তিনটা সংস্করণেই। তার জন্যে সম্পাদককে ধন্যবাদ। কিন্তু আমাদের তালিকা অধিকাংশকে বাদ দেয়াতে গুরুত্ব কিছুটা কমল বলে আমার অভিমত। তবু প্রকাশিত চিঠি, এবং  যে কবিতা দু'টিকে  নিয়ে বিতর্ক  সেগুলো  এবং প্রাসঙ্গিক আরো একটি এখানে রইলঃ --সুশান্ত কর  )

প্রতি
সম্পাদক
দৈনিক যুগশঙ্খ                                        তারিখঃ ১০-০৮-১৩
মহাশয়,
দৈনিক যুগশঙ্খ
দৈনিক যুগশঙ্খ অসম থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক। গত ১৪ জুলাই, ২০১৩ রবিবারের বৈঠকে ত্রিপুরা তথা পুর্বোত্তরের সুপরিচিত প্রবীণ কবি পীযূষ রাউতের একটি কবিতা ‘কবিতা তোর জন্যে’ আমরা অনেকেই মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। সবাই তখনো  পড়িনি, কেননা হয় আমরা অসম নিবাসী হয়েও প্রবাসী অথবা পূর্বোত্তরের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা। সাহিত্য সেবা করি। কেউ লিখি, কেউ পড়ি। এবং সবাই পূর্বোত্তরের বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের জন্যে নিবেদিতপ্রাণ। আমরা বাকিরা কবিতা পড়তে পেলাম যখন ২রা আগস্ট পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে গুয়াহাটির মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায় সেই কবিতাকে নকল কবিতা বলে, কবির বিরুদ্ধে কুম্ভিলক বৃত্তির অভিযোগ আনলেন। প্রথমে চিঠিটি গুয়াহাটি এবং ডিব্রুগড় সংস্করণে প্রকাশ পায়, দিন দুই পরে শিলচর সংস্করণে। এই চিঠির নায্যতা নিয়ে তখন প্রশ্ন তোলেন ফেসবুকের পূর্বোত্তরসংক্রান্ত একটি গোষ্ঠীতে (যেটি বিশেষ করেই পূর্বোত্তরের বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যেরপ্রচার প্রসার এবং বিকাশের কথা মাথায় রেখে পরিচালিত হয়) এক সদস্য। আমরা যারা ব্যক্তি  কবি পীযূষ রাউত এবং তাঁর  কবিতার সঙ্গে বহুদিন ধরে পরিচিত আমাদের কাছে শুরুতেই এই অভিযোগ অবিশ্বাস্য ঠেকছিল। মূল কবিতাটি যখন বাকিরাও সেখানে পড়লেন  সবাই এক বাক্যে শ্রীমতী  মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগের বিরোধিতা  করলেন,  তাঁর কাব্য পাঠের নিষ্ঠার মাত্রা এবং পরিসীমা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, কিন্তু সবশেষ বাক্যটির ব্যবহারের ধরণে সবাই অপমানিত এবং আহত বোধ         করলেন আমরা ‘রবিবারের বৈঠকে’র বর্তমান সম্পাদক সৌমেন ভারতীয়ার কাছেও কৃতজ্ঞ যে তিনিও আমাদের সেখানকার আলোচনাতে যোগ দিয়ে একই প্রশ্ন তুলেছেন। সেখানকার আলোচনার সূত্রেই আমাদের এই সম্মিলিত প্রতিবাদ পত্র। আশা করছি আপনি প্রকাশ করে বাধিত করবেন।
                একজন কবির কবিতা নিয়ে যেকোনো পাঠক বা পাঠিকা প্রশ্ন তুলতেই পারেন। অসম তথা পূর্বোত্তরের কাগজগুলোতে যেখানে সাহিত্য সংক্রান্ত চিঠি পত্র বেরোয়ই না বা আলোচনা হয়ই না—সেখানে এমন এক চিঠি এবং সেই সূত্র ধরে কোনো আলোচনা এগোলে আমাদের উৎসাহিত বোধ করাই উচিৎ ছিল। আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি পীযূষ রাউতের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র কুম্ভিলকবৃত্তির অভিযোগ উত্থাপন করলেও আমরা হয়তো কাকে বলে সাহিত্যের চুরি, কাকে নয় –এই নিয়েও এক সুস্থ বৌদ্ধিক বিতর্কে  যোগ দিতেই পারতাম। কিন্তু আমাদের সামূহিক অনুভূতিকে আঘাত দিয়েছে চিঠির একটি বাক্য, যেখানে তিনি  শ্রীরাউতকে উপদেশ দিয়েছেন এই বলে যে, ‘ সব কাজই সাবধানে করতে হয় কারণ সুনীলপাগলরা সারা বিশ্বেই তো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন’
           এই নীতিবাক্যটি উচ্চারিত না হলে এই চিঠি নিয়ে বলার কিছুই থাকত না। শ্রী পীযূষ রাউত একজন কবি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিছুকাল কবি থাকার পর আরও বহু কিছু হয়েছেন। ফলে তাঁর উপাসকের সংখ্যাও বিপুল। উপাসিকারও। শ্রীরাউত  এত কিছু হননি, তিনি ত্রিপুরার ধর্মনগর  ও অসমের শিলচরে বসে অর্ধশতাব্দীকাল শুধু কাব্যরচনাই করেছেন। উপাসক-উপাসিকা কম হলেও আমাদের মতো গুণগ্রাহীর সংখ্যা কম নয়, যারা পীযূষ রাউতকে কাব্যসূত্রে জানেন, এবং ভালোবাসেন। এযাবৎকালে আমাদের কখনো মনে হয়নি, অপর কোনও কবির বিশ্বব্যাপী ফ্যানফেয়ারের কথা মাথায় রেখে তাঁর কোনও সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার। তার উপর ‘সুনীল পাগল’ হতে গেলে খুব একটা যে কবিতা পড়তে হবে তাও নয়।
            শ্রীমতী মুখোপাধ্যায়ের এই চিঠিটি, কো্নো একক ব্যক্তির  রচিত নয় বলে মনে হয়। আমাদের পূর্বোত্তরের বাঙালিদের একটি হীন মানসিকতা শুধু প্রকট হয়েছে তাঁর পত্রমাধ্যমে। মিডিয়াবাহিত সুনীলপাগলামো জাতীয় কিছু উন্মার্গ ধারণাকে তাঁরা শ্লাঘনীয় মনে করেন। আপন কাব্যপাঠকে কবিবিশেষের আরাধনাকার্য হিসেবে প্রচার করতে আহ্লাদিত হন। এবং এই সবই পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে। এদিকে নিজের ভূমিতে যে উৎকৃষ্ট কাব্যচর্চা হয়, তাঁরা তার খবরও রাখেন না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়েদের একটি পরিকাঠামোগত সুবিধে রয়েছে যার দৌলতে আমরা বিশ্বজুড়েই  কবিতাপরিচয়হীনদের মধ্যেও বহু ‘সুনীল পাগল’ পেয়েই যাই , আমাদের বহু নিষ্ঠাবান কবি লেখক সেই একই পরিকাঠামোগত অসুবিধের জন্যেই বহু নিষ্ঠাবান পাঠকের কাছেও ঠিক সময়মতো গিয়ে পৌঁছুতে পারেন না। বাংলা ভাষার এ এক দারুণ সংকটশ্রীমতী মুখোপাধ্যায় শুধু তাতে আক্রান্ত।  যিনি পীযূষ রাউতকে ‘সুনীল পাগলামো’র দোহাই দিয়ে এহেন উপদেশ দিতে পারেন, তিনি আমাদের যে কোনো লেখক সম্পর্কে একই কাজ করতে পারেন। বস্তুত যে সামাজিক সংযোগ-গোষ্ঠীতে আমরা আলোচনাটি করছিলাম, সেখানেই এক ‘বোদ্ধা’কে দেখলাম শ্রীমতী মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে কলম ধরে পিযূষ রাউৎকে ‘নবীন কবি’ বলে ঠাউরালেন। সেই বোদ্ধা এবং শ্রীমতী মুখোপাধ্যায় কিন্তু দু’জনেই পীযূষ রাউতেরই  স্বভূমির পাঠক। মনে হয় তাঁরা মনে করেন এখানে সবাই ‘নবীন’ এবং  ‘নকলনবীস’ কেউ লেখালেখি কাকে বলে জানেন না, তাদের উপদেশ দেয়া চলে।
            কাব্যচর্চায় ভাব ও বিষয়ঘটিত সমমেল ঘটে যাওয়া পুরাতন। একই ভাবনায় জারিত হয়ে বিজ্ঞান গবেষণাতেও প্রায় একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে বহু বিজ্ঞানীদের মৈত্রেয়ী দেবীদের বালখিল্যের শিকার হতে হয়েছে। এতে তেমন কিছু হয় না, তাঁদের কৃতির সম্মানহ্রাস হয় নারবি ঠাকুরের ‘গোরা’ হোক, কি জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’, শক্তি চট্টপাধ্যায়ের ‘অবনী বাড়ি আছো’ আজও পাঠককে মোহিত করে। শুধু সেইসব পক্ব সমালোচকেরা, যারা এইসব সৃষ্টিতে অন্যের কৃতিচ্ছায়া আবিষ্কার করেছিলেন, হাস্যকর সমালোচনা করেছিলেন, তারা আজ অপ্রাসঙ্গিক। কাল এমনই শক্তিধর। অসম তথা পূর্বোত্তরের আরো একজন স্বনামখ্যাত প্রবীণ কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাস আরো বহু আগেই তাঁর ‘শরশয্যা’ কাব্যগ্রন্থেহুবহু ‘শুধু কবিতার জন্যে’ এই নামে আরো একটি অসাধারণ দীর্ঘ কবিতা লিখে রেখেছেন , অনেকেই আমরা পড়ে মুগ্ধ হয়ে বসেও আছি। আমরা নিশ্চিত  শ্রীমতি মুখোপাধ্যায় ঊর্ধ্বেন্দু দাসের নাম এই চিঠি পড়ে প্রথম জানবেনতিনি এবং তাঁর মতো বহু পাঠক ‘একটি ঘাসের শিষের ‘পরে একটি শিশির বিন্দু’  এখনো ভালো করে দেখেন নি। তাঁরা যাতে দেখেন, আমাদের সাহিত্যের খবর নেন, এবং সম্মানের সঙ্গে কথা বলেন এই চিঠি তাই লেখা হলো।  
          সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবি পীযূষ রাউতের বিশেষ বন্ধু বলে জানি। তাঁর বিখ্যাত সৌজন্যের কথাও শোনা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জীবিত থাকলে শ্রীমতী মৈত্রেয়ী মুখোপাধ্যায়দের সুনীলপাগলামো থেকে বরখাস্ত করতেন, কেন যেন মনে হয়, সেটা নিশ্চিত।
ইতি।  

পল্লব ভট্টাচার্য, আগরতলা; অশোক দেব, উদয়পুর; প্রবুদ্ধ সুন্দর কর, আগরতলা; রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, আগরতলা; স্বাতী ইন্দু, আগরতলা;  সঞ্জয় চক্রবর্তী, গুয়াহাটি; জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত, গুয়াহাটি; সঞ্জয় ভট্টাচার্য, গুয়াহাটি; রণবীর পুরকায়স্থ, কলকাতা; জাকির হুসেন, কলকাতা; শ্যামল ভট্টাচার্য, কলকাতা;দেবোপম পুরকায়স্থ, কলকাতা;প্রীতিভাজন ব্যক্তি কলকাতা;   মৃন্ময় দেব , করিমগঞ্জ; সর্বজিৎ দাস, করিমগঞ্জ; পঙ্কজ ভট্টাচার্য , পাথারকান্দি; অমিতাভ দেবচৌধুরী, শিলচর; দেবাশিস ভট্টাচার্য, শিলচর, রূপরাজ ভট্টাচার্য , শিলচর; চন্দ্রানী পুরকায়স্থ, শিলচর; শৈলেন দাস,শিলচর;  শেখোয়াৎ মজুমদার, শিলচর; শতদল আচার্য, শিলচর; রাজেশ শর্মা, শিলচর; তিলক পুরকায়স্থ,শিলচর; সুব্রতা মজুমদার, দেওয়ান; অমিতাভ সেনগুপ্ত, লামডিং; মিফতাহ-উদ্দীন ,চেন্নাই; প্রণত কুমার নাথ, পেকানবারু, ইন্দোনশিয়া; মধুমিতা সেনগুপ্ত, তিনসুকিয়া এবং সুশান্ত কর, তিনসুকিয়া।

 ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~


পীযুষ রাউতের মূল কবিতাঃ 





















সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মূল কবিতাঃ 

শুধু কবিতার জন্য
 
শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার
জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভূবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য
অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু
কবিতার জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, মুধু কবিতার
জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।


শুধু কবিতার জন্যে
তিনটি স্লোগান কারা গেঁথে দিয়ে গেল, কাল
মধ্যরাতে দেয়ালে আমারঃ
‘শুধু কবিতার জন্যে বেঁচে থাকা সম্ভব।’—

‘শুধু কবিতার জন্যে তোমার অস্তিত্ব অর্থবহ।’
‘শুধু কবিতার জন্যে দেহের পতনও তুমি
হেলায় নস্যাৎ করতে পারো।’—

এবার দেয়াল ভেঙে ফেলাটুকু বাকি-ই যা---
তাবৎ ভাষ্য আর তত্ত্বের পচন থেকে ভালোভাবে বাঁচতে হলে,
এবং বাঁচাতে হলে সবটুকু স্বকীয়তা---
কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ এবং মাৎসর্যের তাপ,
স্বপ্নাতুর অস্তিত্বের স্পর্ধিত বিলাস,--
কবিতার উৎসে এসে স্থির-চিত্তে বসতে হবে,
নগ্ন পদ; নতশির---
রক্তছোপ বাস ছেড়ে জন্মের পথম ত্রিবেণীতে।

শুধু কবিতার জন্যে বেঁচে থাকা চলতে পারে শতেক জীবন---
শুধু কবিতার জন্যে হত্যা করা যেতে পারে সহস্র জীবন---
শুধু কবিতার জন্যে কেড়ে নেওয়া চলে রোজ ভিখিরির উঞ্ছ-রোজগার,-
কবিতার জন্যে ফের মায়ের হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে, প্রেমিকার পদতলে
দেওয়া যেতে পারে উপহার।---

কবিতার জন্যে আজো শেয়ার বাজারে রোদ ধুলোর চেয়েও কমদামি,
কবিতার জন্যে আজো বিশ্বাসঘাতিনী নারী সোনার থেকেও লোভনীয়,
কবিতার জন্যে, দেখো , ঈশ্বরবিহীন দেউলে অভিজাত মাতামাতি চলে—
শুধু কবিতার জন্যে রক্তাক্ত ললাট মুছে , অশ্রু চেটে, প্রিয়াকেও
প্রতিপক্ষ প্রেমিকের হাতে সঁপা চলে।–

কবিতার জন্যে কেউ চেয়েছে সবৎসা ধেনু, রমণী ও ভূমি;
কবিতার জন্যে কেউ চেয়েছে অক্ষয় কীর্তি, অনন্ত জীবন;
শুধু কবিতার জন্যে স্বচ্ছা-নির্বাসনে কেউ হয়েছে শহীদ,-
কবিতার জন্যে ফের অস্তিত্বের দৃপ্ত ঘোষণায়
যৌবন-বাউল কেউ অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছে।...

কবিতার জন্যে আজো মধুময় মরুৎ , সলিল—
কবিতার জন্যে আজো মধুময় অস্তোদয়-সূর্যের অয়ন;
শুধু কবিতার জন্যে মধুময় এ ধরণী, এ –জীবন এবং মরণ, --
শুধু কবিতার জন্যে সাগরে স্তম্ভন, মেঘে অশনি –দহন। ...
কবিতার জন্যে শুধু শিশুর মুখের হাসি এত অনুপম,
কবিতার জন্যে শুধু নারীর দুচোখ জুড়ে রহস্য অপার---
কবিতা হয়েছে, তাই সৃষ্টি হলো স্বর্গ ও নরক;
কবিতা হয়েছে তাই জন্ম নিল দেবতা , দানব;--
শুধু কবিতার জন্যে ঈশ্বরের ভাবমূর্তি এত জ্যোতির্ময়ঃ
কবিতার জন্যে ফের প্লাবনের তোরে বসে যুগে যুগে ঈশ্বরের
স্খলনকে ক্ষমা করে এসেছে মানব। ...

কবিতা লিখেছি আমি ঘাম, রক্ত, পাপ, ব্যাধি, পতন ও মৃত্যুর ছায়ায়;
কবিতা লিখেছি আমি অর্ধাশন –উপবাস-অপমান-নির্যাতন সয়ে;--
মাতাল-দাঁতাল হয়ে , উন্মত্ত ধীমান শান্ত তীব্র উদাসীন
সম্ভ্রান্ত ক্ষুধার্ত ক্রুদ্ধ অতৃপ্ত ধার্মিক সৎ মগ্নও চতুর
ভূতগ্রস্ত ভয়ংকর আত্মনাশী একদল স্বপ্ন-বিলাসীর
সাগ্নিক মিছিলে মিশে , নারীর স্ফুরিত ওষ্ঠ,
স্তনাগ্র, সরোম ঊরু,
যোনি খুঁড়ে খুঁড়ে
কবিতার ধমনিতে এনেছি লোহিত ঊষ্ণ –শোনিতের সফেন প্রবাহ। ...

শুধু কবিতার জন্যে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয় অপার –জীবন,--
শুধু কবিতার জন্যে আটকে রাখতে ইচ্ছে হয় আসন্ন –মরণঃ

মেষ –পালকের গানে বহুরাত পৃথিবী জেগেছে---

মেষ-পালকের গানে বহুদিন পৃথিবী ঘুমোবে।

( কাব্য গ্রন্থঃ শরসয্যা)
 

এবং যে মূল চিঠি নিয়ে এই প্রতিবাদঃ

 

কোন মন্তব্য নেই: