“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

জীবন যখন একটাই!



জীবন যখন একটাই! ধুত্তেরি! এটা আবার একটা কথা হল? জীবন-টা যখন গিরগিটির, হাঁ, তার তো সেই একটাই জীবন, রঙ পাল্টানোর অধিকার থেকে সে নিজেকে বঞ্চিত করবে কেন? আবার যদি সেটা যখন কোনও বিষধরের জীবন, তাহলে ছোবল মারার জন্মগত অধিকার থেকে কে তাকে সরিয়ে আনবে? যতই পোষা হোক, দুধ-কলা খাওয়াক না কেন সাপুড়ে; যে তাকে পুলে-পুসে রাখছে – সে ব্যটাও তো ঐ এক্তিয়ারের বাইরে থাকছে না। এটাই তো নিয়ম। একটাই জীবন বলেই কি অর্থনীতির পাঠ নেওয়া মাস্টার মশাই-ও বিশ্বময় গ্রামের বাজারে নিজেকে ভোগ্য-পণ্য (Commodity) বানিয়ে  বাজার-জাত করবে? এটাও তো স্বাভাবিক?
         আসলে ইতর-প্রাণীদের দিয়ে শুরু করেছি বলে, তাদের নিয়েই পুরোটা লিখব, তেমনটা তো আর হয় না। ইতর-রা তো ইতর-ই। মানুষ হয়েও মনুষ্যেতর, ( বরং পড়ুন, 'মনুষ্য-ইতর')! ঐ সমস্ত নীচ বর্গের প্রাণীরা তো আর  মানবিক সংস্কার বা মূল্যবোধের ধার ধারে না!  মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব!  তাদের কাছে এটা তো 'কেতাবি' শব্দ মাত্র!
       জীবন তো একটাই। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ তো সেটাকে ধরে রাখতে হবেই। আর সেই তাগিদে রুটিরুজির সংগ্রামে নিজেকে সামিল করতে যে পেশাটা বেছে নিয়েছেন ভদ্রলোক, সেটা দুর্দান্ত! ফার্মাসি থেকে মেয়াদ ফুরানো ওষুধের ব্যবসা। ভয়ানক জীবিকা! রোজগারের মারাত্মক পন্থা! অন্যকে তিল তিল করে মৃত্যুর খাদে ঠেলে দিয়ে বেশ ভালই এগোচ্ছেন তিনি। একেবারে ডাহা বাস্তব।
       'মান' আর 'হুস', এ দুয়ের সাযুজ্যে বুঝি মানুষ! মান হচ্ছে তাঁর স্বাভিমান, স্বজাতভিমান, যে সংস্কার, যে শিক্ষা পারিবারিক এবং সামাজিক পূর্বজদের কাছ থেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে আহরন করেছে এবং করছে-ও, শিরদাঁড়া-টাকে সোজা রেখে জীবনের পথে চলার জন্য।
      শিরদাঁড়া-টাকে সোজা রাখার সংগ্রামে সামিল হয়েছেন যারা, তাদের সংখ্যা এদেশে ভুরি ভুরি। বিপরীত মেরুর বাসিন্দাদের সংখ্যাও তো আজকের জমানায় অপ্রতুল নয়। এই  প্রতুল-অপ্রতুল এর দ্বন্দ্বে, ভাল-মন্দের সংঘাতে, ন্যায়-অন্যায়ের দোলাচলে ভবিতব্যের পথিকেরা আজ দিশেহারা হওয়ার শামিল! ‘আদর্শ’ বলে যাঁকে ধরে রেখেছিল, তিনিই যে মনে হচ্ছে পথভ্রষ্ট!
        আবার মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যে দেশটার জাতীয় জীবন, যে দেশটাতে  আত্মত্যাগ আর আত্মোৎসর্গের ছড়াছড়ি, তাঁর পুরোধা-রাও তো আজকাল কালো রঙটার সাথে আলিঙ্গনে মগ্ন। মসনদের আধিকারিকেরা তো সমস্ত জীবন আর শক্তি দিয়ে মূল্যবোধের আন্দোলনকে হাজার টুকরো করে দিতে যতটা তৎপর, ঠিক ততটাই নিস্প্রভ  কালো রঙের প্রলেপ টাকে মুছে দিতে!
             এটাও তো আবার সেই একমাত্র জীবন ধারী-দেরই মহিমা।
         আসলে কাজের পরিধিটা ছোট কিম্বা বড়, যে মাপেরই হোক না কেন, আখেরে সেটা করতে গিয়ে “তাতে আখেরে লাভ কি হবে?” এই ব্যক্তি কেন্দ্রিক একমাত্র জিজ্ঞাস্য বিষয়টাই যেখানে নির্ণায়কের ভুমিকা হয়ে দাঁড়ায়, তখন ব্যক্তি,  তথা সমাজের আদর্শ এবং নীতি বলে কি আর কিছু থাকতে পারে?
         'ছা-পো-ষা লো-ক' অর্থাৎ 'আম-জনতা' এই করতে করতে নিজের অজান্তে কবেই যে দেওয়ালে পিঠ  ঠেকে গেছে, সেটা আঁচ করতে পারেন নি...!
        মাথার ওপর যেমন অনন্ত আকাশ, পায়ের নিচেও তেমনি অন্য এক  অপার মহাশূন্য...!
       ছোঁ মেরে এক এক করে সবাইকে যে মহাসমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলার  'নীল-নক্সা'  তৈরি হয়েছে, রঙ বদলের প্রক্রিয়া দিয়ে তো অন্ততপক্ষে এ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়?
         ব-র্ণ-চো-রা-রা কিছু আঁচ করতে পারছেন কি  ??     তাহলে......??

কোন মন্তব্য নেই: