“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২

হারাধন রংমন কথা

   ( ৯৬০এ রাজ্যভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অসমিয়া বাঙালিদের মধ্যে যে সংঘাতময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল।সেই সময় হেমাঙ্গ বিশ্বাস ভূপেন হাজারিকাকে সঙ্গে নিয়ে নানা ভাষা সম্প্রদায় থেকে শিল্পী নিয়ে শিলং থেকে যাত্রা শুরু করেন। দু’জনেই তখন গণনাট্যরে সদস্য হলেও কৌশলগত অবস্থান থেকে সেবারে গণনাট্যের নাম ব্যবহৃত হলো না। ‘Let us meet cultural troupe’ ছিল নতুন স্কোয়াডের নাম।   ভাতৃঘাতি রক্তপাতে উষ্ণ এবং লাল হচ্ছে জল এবং উপত্যকা। সুতরাং তাদের অভিযান ছিল অনেক বেশি সাহসী এবং ঝুঁকি পূর্ণ। এই বিখ্যাত ‘হারাধন –রংমনে’র গীতি আলেখ্যটি তখন লেখেন দু’জনে মিলে। এটি  সহ আরো প্রচুর গান, কবিতা, নাটক নিয়ে দু’ই তাঁরা যেন সংগ্রামী ঐক্যের যুদ্ধ জয় করলেন। বাংলা অসমিয়াতে  ভূপেন হাজারিকার সাগর সঙ্গমে গানটিও ছিল সেই অভিযানের অন্যতম জনপ্রিয় গান।  যে দিকে গেলেন, গানের সুরেই দাঙ্গাবাজদের প্রতিহত করতে করতেই এগুলেন তাঁরা।মূল পাঠটি নেয়া হয়েছে অসম প্রকাশন পরিষদ প্রকাশিত, পরমানন্দ মজুমদার সম্পাদিত 'হেমাঙ্গ বিশ্বাস রচনাবলী' ; পৃঃ ৯৬৫ থেকে। ---সুশান্ত কর)

                                                                                              হেমাঙ্গ বিশ্বাস
                                                                                             ভূপেন হাজরিকা

রংমনঃ      মনরে বননি চেনেহর নিজরার
                 পানীকে এটুপি পিওঁ।
                 পোরাকৈ ভেঁটিতে তুমি ঘর বান্ধা
                 আমি টঙাল তুলাই দিওঁ।
হারাধনঃ   আবার আমি বান্ধমু ঘর
                আবার গাইমু গান
                দুঃখে যদি পাষান গলে
                গলবে কি পরাণ।
রংমনঃ      লুইতর চাপরিতে চাকৈয়ে কান্দিলে
                 মানুহর নাওখন চাই
                 মানুহর দুখতে মানুহ বুরিব
                আনকচোন দুষিবর নাই।
হারাধনঃ  পদ্মার তুফান উড়াইয়া নিল
                আমার সুখের ঘর
                উজান ঠেইল্যা আইলাম আমি
                লুইতের চর।
               আবার ভাঙা নাওয়ে বন্ধু
               তুমি দিলায় পাল
               আমি ধরলাম বৈঠা বন্ধু
               তুমি ধরলায় হাল।
              এ’ মিলন গাঙে আনলো বলে
               কে বিভেদের বান
              চর ভাঙিল, ঘর ভাঙিল
              ডুবলো সোনার ধান।
              আমার দেহে বৃষ্টি শুকায়
              রক্তকণায় সুরুয ঘুমায়
              হালের খুটি মুঠিতে শোভায়
              তবু কেন উপবাসী
              নিজ দেশে পরবাসী
              সমনীয়া, বলো না আমায়।

রংমনঃ   ভাষা নুবুজিও যুগে যুগে আহে
              মানুহ মানুহর পিনে
              মরমর ভাষারে আখর নাইকিয়া
             বুজিব খুজিলেই চিনে।
             গঙ্গার চাপরিরে তলিতে দেখিবা
             লুইতর পলসো আছে
             তোমার মোরে আয়ে কান্দিলে
            একেই চকুপানী মচে।
            তুমিয়ে ময়ে দেশখন গঢ়োতে
            যদিহে কেঁচাঘাম সরে
            দুয়োরে ঘামরে মিলনে দেখিবা
            বুরঞ্জী রচনা করে।
রংমন-হারাধনঃ (দুঃখে দ্বৈত কণ্ঠে)
            এনেনো দুখ লাগে বান্ধৈ
            এনেনো দুখ লাগে
            এমন দুঃখ লাগেরে বন্ধু
            এমন দুঃখ লাগে
            অতীত দিনর মিলন স্মৃতি
            যখন মনে জাগে।
            তুমি ছড়ালে বীজ বন্ধু
            আমি কাটলাম আলি
           একেই সঙ্গে ঘরে আনলাম
           সোনালী রূপশালি।
           এনেনো ভাল লাগে বান্ধৈ
দ্বৈতকণ্ঠে আনন্দেঃ
           এনেনো ভাল লাগে
           এমন ভালো লাগেরে বন্ধু
           এমন ভালো লাগে
           তুমি নাচো বিহুনাচ আমি দিব তালি
           ঐকতানে মিলে যাব বিহুভাটিয়ালি
           দেশকে আবার গড়বো মোরা
           বুকের মরম ঢালি।।



কোন মন্তব্য নেই: