(C)Imageঃছবি |
আপনি গাড়ির মালিক। তাই কিন্তু আপনার খুশি মতো গাড়ি চালানোর অধিকার হয়ে যায় না। কারণ যে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন, সেটি আপনার ব্যক্তিগত নয়, বরং সার্বজনীন।
ঠিক সেভাবেই, শরীর আপনার। তাই এই শরীর নিয়ে যেমন খুশি সাজ পোশাক পরে আপনি সমাজে চলাফেরা করতে পারেন না। কেননা আপনি এক সার্বজনীন সমাজের সদস্য।
আপনার ব্যক্তিগত পরিসরে আপনার গাড়ি যেমন খুশি চালান, তাতে কারো আপত্তির কিছু নেই। একইভাবে নিজের পরিসরে যা খুশি পরে থাকুন- চাইলে অর্ধনগ্ন ও! কিন্তু যখনই সার্বজনীন রোডে বা স্থানে অবস্থান করবেন, সামাজিক ব্যবস্থাপনা আপনাকে মেনে চলতেই হবে।
এভাবে খাবার আপনি কেবল নিজের জন্য তৈরি করছেন, যা খুশি বানিয়ে খেয়ে নিন, কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু যখন তা পুরো পরিবারের জন্য তৈরি হচ্ছে, আবশ্যক মতো নিজের রুচির সাথে আপোষ করতেই হবে। সকলের সাধারণ রুচিকে তখন মান্যতা দেওয়া নিতান্তই এক সামাজিক দায়বদ্ধতা।
প্রাসঙ্গিকভাবে বলি, ছেলেদের হোক অথবা মেয়েদের, পোশাক আশাকের শালীনতা, রুচিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলা বা আলোচনা করা তেমনি আবশ্যক, যেমন তাদের আচরণ, সামাজিক সৌজন্য বোধ তথা জীবনের মাধুর্য অর্জনের ক্ষেত্রে করে থাকা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের শালীনতা আর ছেলেদের ড্রিঙ্ক করে গাড়ি চালানোর অভ্যাস একই পর্যায়ের। কেননা উভয় ক্ষেত্রেই এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা রয়েছে।
নিজের একান্ত ব্যক্তিগত রুচি অভিরুচি ব্যক্তিগত পরিসরে নিবদ্ধ থাকাই কাম্য। কিন্তু যখনই আপনি আমি, উঠতি ছেলে মেয়ে- যে ই হইনা কেন, সমাজের মধ্যে চলাফেরার সময় সামাজিক সৌজন্য এবং কাঙ্ক্ষিত শালীনতার কথা মাথায় রেখেই চলতে হবে।
বিশেষ করে যেসব ঘর থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা উগ্র পোশাক, আধুনিকতার নামে ফাটা কাপড় পরিধান করে বেরোয়, অথবা যে ঘরে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মুখে উগ্র দুর্গন্ধ নিয়ে প্রবেশাধিকার পায়, সেই সব পরিবারের সামাজিক স্তর যাই হোক না কেন, ধরে নিতে হবে সেই সকল পরিবার সমাজ ব্যবস্থায় বিষাক্ত আগাছা উৎপাদনে ব্রতী হয়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে আপনি যদি নীরব দর্শক, তাহলে মনে রাখতে হবে যে সেই বিষাক্ত আগাছার লতিকা শীঘ্রই আপনার গৃহের ফোঁকর দিয়ে ঢুকে পড়বেই ! তখন সেই বিষ-বাষ্পে আপনার মানমর্যাদা, আপনার সুদীর্ঘ জীবনের লালিত কৌলীন্য ক্রমশ নিঃশেষিত হতে সময় লাগবে না !
একটি বাহন নিয়ে যদি চলা আপনার আবশ্যক, তার অন্তত দুটি সুষ্ঠু চাকা থাকতেই হবে। তার একটি চাকা পাংচার হয়ে গেলে সেই বহুমূল্য যানটি একেবারে বেকার। শালীনতা ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্যই অত্যাবশ্যক। তাদের একটি যদি পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে, তাহলে সমাজ ব্যবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্য বিরাজমান থাকতে পারে না।
পোশাকের স্বল্পতা বা পোশাক হীনতা যদি মডার্নিটির পরিচায়ক হয়, তাহলে জন্তু জানোয়ারেরা সবচাইতে মডার্ন। কেননা তাদের সংস্কৃতিতে পোশাক আশাকের বালাই নেই। সুতরাং ভাবনার আবশ্যকতা রয়েছে- পোশাকের স্বল্পতার দিকে ধাবিত হওয়া মানে কি জানোয়ারের সাথে প্রতিযোগিতায় নামার নামান্তর নয় ? প্রকৃত মানবিকতা হলো আলোকিত মানুষদের আদর্শ ও বৈশিষ্ট্যের দিকে অগ্রগামী হওয়ার নিরন্তর প্রয়াস করা- পশুত্বের দিকে কোনোও ক্রমেই নয় ! উদগ্র নগ্নতা একটি পশুর স্বতঃস্ফূর্ত কালচার, যা কখনও সুসভ্য মনুষ্য সমাজ সদস্যদের কালচার হতে পারে না! সুতরাং সামাজিক জীবনে সামাজিক সৌজন্য লালন এবং পালনে আমাদের হতে হবে যত্নশীল। বেঁচে থাকতে হবে সবধরনের অভব্যতা, অশালীনতা এবং অনাচার থেকে।
স্বাতন্ত্র্য সামাজিক জীবনের এক আবশ্যক চাহিদা। কিন্তু সেই স্বাতন্ত্র্য হতে হবে বিচারধারার, স্বাতন্ত্র্য দেশের অম্লান স্বাধীনতার । স্বাতন্ত্র্য নিজের পরিবার, নিজের আস্থা তথা সমাজ হিতৈষণার।
পতনোন্মুখ ধারার সাথে যারা আপোষ করে নেয়, তারা আখেরে নিজেদের পতন ডেকে আনে। টিকে থাকে তারা, যারা উদগ্র স্রোতের উজান বেয়ে চলতে জানে!
০৮-০১-২০২১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন