“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৯

কবিতা

আকাশ - মাটি
- - - - - - - বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ।

আরোও একটু মিশে যেতে হবে
মাটির সাথে -
রণপা চড়ে সবাই চলতে পারে না।
রূপোর চামচ মুখে নিয়ে
ক্ষণজন্মার মাটিতে পা পড়ে না।
আরোও কিছুটা পথ চলার বাকি
আরোও একাগ্রতা, সংযত পদক্ষেপে
এবার বশীকরণ মন্ত্র শেখার পালা।
পথের পাশে চালা ঘরের
একফালি বারান্দায় দাঁড়িয়ে
বৃষ্টি ধারায় মন খারাপের ঢল নামে।
কারণবিহীন কান্না এসে ভেজায় দুচোখ।
আকাশপানে যেতে যেতে
খুঁজে নিতে হবে পায়ের তলায় -
আরোও খানিকটা শক্ত মাটি।
        - - - - - - - - - - - - 

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯

দৃষ্টিভঙ্গি

।। অভীককুমার দে।।

ঘরে বসে আছেন গুরু। বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না। দেখারও সুযোগ নেই। শুনেছি, ঘরের ভেতর একটি প্রদীপ জ্বলছে। গুরু একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন শিখা।

বাইরে শিষ্য সমাবেশ। মনমতো আয়োজনের পর চোখের জল ঢেলে বিদায় হচ্ছে একে একে। অন্যত্র আবার, বদলে নিচ্ছে গুরুমুখ এবং অমাবস্যায় জড়িয়ে পড়ছে গুরুমস্তিষ্ক।

ভেতর দেয়ালে গুরুর ছায়া গুরুর পিঠ দেখছে; অথচ বুকে পূর্ণিমার আলো নিয়ে গুরু গম্ভীর।

কবি অপাংশু দেবনাথ শুনুন

।। অভীককুমার দে।।

আপনার লাগানো গাছগুলোর দিকে দেখুন,
দেখুন, করাতের ধারালো জিহ্বায় প্রতিনিয়তই কেমন কাঁপছে,
চোখের উপর চোখের পোড়া দৃষ্টি এসময়,
তাই প্রায়ান্ধকার স্বপ্নগুলো মুছে ফেলতে পারেন বরং;
কত আর খোলা রাখবেন চোখ !

আপনার লালিত গাছের মতই প্রতিটি নতুন চারা
একেকটি শিশু
মানুষের জন্য
নারী হতে চায় অথবা পুরুষ,
অথচ দেখুন, মানুষগুলোই নির্বাক গাছ হয়ে উঠছে !
এমন মানুষগাছে কেবল স্বার্থই ফলে।
কাণ্ডজ্ঞানহীন কাণ্ডের ভেতর চোর থেকে ধর্ষকের আঠালো কষ
মাটি শরীরের ছেঁড়া অন্তর্বাসের অভ্যন্তর দেখছে, অথচ
এই ভাঙা বুকে কেঁদে ওঠা ভায়োলিনের সুর কেউ শোনে না !

সব গাছ কাটা হয়ে গেলে
উপড়ে ফেলার মত জীবনই তো থাকবে শুধু,
শিকড়ের সাথে ভাষণের দড়ি বেঁধে নিতে দিন, ফাঁস হবে।
কত আর খোলা রাখবেন চোখ ?
মরুযন্ত্রণা নিয়েই প্রায়শ্চিত্ত হোক পৃথিবীর
মানুষ নামক অমানুষ গড়েছে বলে।

ছবি

।। অভীককুমার দে।।

প্রতিদিনের যা আঁকাজোঁকা ছবি তা-ই।
ছবি যা আঁকে ছবি তা-ই।

এক পৃথিবী ছবি মানুষের চোখে
এক পৃথিবীর ছবি কেউ দেখে না
শিশুটি নির্বাক, চেয়ে থাকে...

শিশুটি অবাক হয়ে চেয়ে আছে
ছবি জ্বলছে,
রঙ গলছে,
পৃথিবী অচেনা;
ভিন্ন পৃথিবী, অন্য পৃথিবীর।

প্রতিদিনের যা আঁকা, চোখে চোখে...
ছবিতে নিজের চোখ দেখে না শিশু, তাই
এক পৃথিবী নদী উজান বায়,

ভবিষ্যৎ দেখে না শিশু
বেরঙের পৃথিবী, ছবির মতই।

কবি দিলীপ দাসের প্রতি

।। অভীককুমার দে।।

কবি, আপনি লিখুন, ওরা পড়বে, নিশ্চিত পড়বে।
কেননা, ওরা ভয় পায়, ওদের অনুভূতি আছে, ওরা এখনও পাথর হয়ে যায়নি।

যদি ভয় না পেত, এপর্যায়ে বিবেক বহন করার কথা নয়,
বুঝে নে'য়া যেত-- ওরা মৃত, ভ্যাম্পায়ার।

মূল্যবোধ বেচে বেঁচে,
পৃথিবীকে অমানুষের সমুদ্রে পরিণত করছে !
মানুষ বিসর্জনের উপকরণ সব...
ভয় কাটিয়ে ওঠার অনুশীলনও জারি রেখেছে ওরা।

যদি এখনও পাথর না হয়, তবে পথ দেখাতে পারে কবিতা।
কবি, আপনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নন, দায়বদ্ধ।
সুতরাং লিখুন, ওরা ভয় পাবে এবং পড়বে।

মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০১৯

নতুনত্ব

    রফিক উদ্দিন লস্কর

জীবনটাকে ঘিরিয়ে আছে
নিত্য নতুন নতুন যন্ত্রে,
মানুষ এই যুগে ও বিশ্বাসী
ঝাঁড় ফুঁক আর মন্ত্রে।

সবখানে সবকাজে প্রযুক্তি
কৃষি, শিক্ষায় ও যুক্ত,
পুরো দুনিয়া হাতের মুঠোয়
সব মানুষেরই ভুক্ত।

দূর হয়েছে অতি কাছে-ই
পাশের বাড়ি-ই বিশ্ব,
যাদের কাছে নেই প্রযুক্তি
তারাই হলেন নি:স্ব।

সোমবার, ৮ জুলাই, ২০১৯

আমার শহর

                 রফিক উদ্দিন লস্কর
মাঝে মাঝে অঝোর বৃষ্টি নামে আমার শহরে
বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়ায় এখানে মেঘ হয়।
এখানেও অভাব নেই ফোপর-দালালের
বিড়বিড় করে ওরা আস্ত শহর পরিক্রমা করে।
গাড়ির আওয়াজটা যেনো মৃত্যুর পাশাপাশি
উন-পাঁজুরে চালকের প্রতিবাদ কে আর শুনে!
যানজট তো আছেই হামেশা অন্তঃপুরের পুকুরে।
এই শহরে বছর বছর পাগলিরাও পোয়াতি হয়,
জন্ম হয় এখানে হুবহু মানুষের বাচ্ছার মতো।
সাক্ষী!  ব্রীজের নীচ, বাজারের পেছন দিকটা
কখনো ফুটপাত বা বন্ধ দোকানের বারান্দা ।
এই শহরের বস্তির মাঝখানে কোনো শান্ত গলিতে
প্রেমিক প্রেমিকা ঢুকে পড়ে চোরাগোপ্তা দুপুরে।
পাতিকাক ঘাড় বেঁকিয়ে চায়, মাঝেমধ্যে হল্লা করে।
মাঝে মাঝে গলির ফটকে পাহারা দেয় পান্থ কুকুর,
এই শহরে তো নেশাখোর বনেদি ঘরের ছেলেমেয়ে।
সন্ধে হলে শুনা যায় আজান আর শঙ্খধ্বনি
তারপরও এখানে চলে কতরকম রংবাজি।
সুযোগ পেলে খুলে ফেলে ছোট্ট মেয়েটির জামা
এমনকি জামা তলায় থাকা ছোটো জামাটিও।
কানের ময়লা ঝাড়তে খুঁচিয়ে কি আনন্দ!
আমার শহর বদলেনি, বদলেছে মানুষ ও স্বভাব।

বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই, ২০১৯

প্রতিটি রাতের পর

।। অভীককুমার দে।।

প্রতিটি রাতের পর ভোরের শরীর।
শরীরে ভোর।
সামনে গত রাতের মত আরেকটি রাত, পেরিয়ে তো যেতেই হয়,
পাখিটি নরম বাতাসে ডানা ভাসালো বলে
লাল হয়ে ওঠে পূবের আকাশ।

ঠিক এখান থেকে আলো ফেলে দেখছি--
রক্তনালির গরম প্রবাহে বিবর্তন এসেছে,
উচ্চচাপ আর নিম্নচাপের গলি পেরিয়ে জ্বলন্ত হৃৎপিন্ড,
রোগাক্রান্ত শরীর,
গত দিনের শিশুটি আর শিশু নেই;
জন্মের পর থেকেই খুঁজে চলেছে মৃত্যু !

ভদ্রাসন থেকে পদ্মাসনে
বন্ধ চোখ,
দীর্ঘ শ্বাস...

পেটের ভেতর চিনচিন ব্যথা,
খালি পেটের আসনগুলো শাসন করছে;
পূবের আলো পশ্চিমে হারালেই পাখিটি উড়ে যায় দক্ষিণে।

নির্মাণ

।। অভীককুমার দে।।

এই মাটি শরীর ছুঁয়ে বর্ণেরা আকাশ সাজায় বলেই
ডুবন্ত সূর্যের রঙিন ডানায় তুলো মেঘের মত ভেসে বেড়াই,
তুমি দূর থেকে চেয়ে থাকো নির্মাণ।

ডুবে যাওয়া রশ্মির পিছুপিছু যেতে দেখি সন্ধ্যাকে,
বড়ো অবেলার মেয়ে সে,
বৃদ্ধ দিনের সব আপদ এসে জড়িয়ে ধরে যুবতী শরীর,
মনে হয়, একলা শূন্য ঘর, আলো নেই,
মুখোমুখি একা বসে আমি
ছায়াপথের তারার মতই ধোঁয়াশায় আছি ঝুলে;
তবে কি তোমারই অনুপস্থিতি অনুভব করি ?
বুঝতে পারি, নিঃশব্দ আমি শব্দের ভিখারি।

অনুভবের দরজা খুলে গেলেই বুকের কোথাও জ্বলে আগুন,
শব্দ সব ছোটাছুটি করে,
চিৎকার করে,
পুড়ে পুড়ে গলতে থাকে ভাবনার মেঘ।

আমার চারপাশে এক অজানা নিরবতা !
আমিও নীরব, বুকের ভেতর ডুবে যাই শান্ত শিশুর মত,
সন্ধ্যা তখন রাতের বিছানায়, নির্বাক...
রাতের শেষে ওকে ঝরে পড়তে দেখি পরাজিত শিউলির মত;
তবুও আমি আছি, একা
হেরে গিয়ে বেঁচে আছি কবিতার কাছে।

উপন্যাসের সারাংশ

।। অভীককুমার দে।।

সারাংশ থেকে উঠে আসছে বিষাদ।
বহুদূর হেঁটে আবার বেঁকে যাচ্ছে লাইন !

এমন বাঁকেই বাণিজ্যিক জাহাজ থেমেছিল ঘাটে
বাণিজ্যে লাভ ক্ষতির হিসাব শেষে রাজা যিনি প্রজা
কত যুগের নীল চাষি আকাশের মত,
নীল থেকে রঙের নেশা এবং
চাকা ঘুরতেই সম্রাট তিনি ইতিহাসের !

বৈচিত্র্যের পুরো শরীর জুড়ে ভালোবাসার ক্ষত
ঐক্যের কথা বলে বলেই সংগ্রামী যত ঠিকানাবিহীন
শেষ চিঠি রেখে যায় প্রজন্মের কাছে।
প্রতিদানে বিয়োগ ব্যথা, মানুষের
ভারত ইন্ডিয়া ঘুরে ভারতবর্ষ হিন্দুস্তানের দিকে !

উপন্যাসের শেষ পর্বে এসে দেখো--
অস্থির শরীর, লাশ তুলে নিচ্ছে ইতিহাস।

স্বাধীনতার খাঁচা

।। অভীককুমার দে।।

যে ভাতের থালা সামনে, আপনি আমি খেতে বসি,
সে থালা কোনও জাত বোঝে না,
সে ভাতের ধর্ম কেবল খিদে মেটানো;
অথচ স্বাধীনতার খাঁচায় জাত- ধর্মের অভ্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়া
খাবারের বদলে ঘন্টাধ্বনি শুনি !

চেনা মানুষ অচেনা লাগছে ভারি,
বুকে আগুন
মুখে রঙ
প্যাভলভীয় আচরণের পর
ভারত এর র অদৃশ্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত এবং
রাজনীতির শিকার ভাত,
থালায় ওঠার আগেই কেড়ে নিচ্ছে কেউ !

রোজ পড়ে থাকে শূন্য থালা
ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে ভাতের বদলে মান- চিত্র
অসহায়, মৃত্যু দেখছে...