“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বুধবার, ৪ মার্চ, ২০১৫

নয়া সক্রেটিস অভিজিৎ রায়

 // সুদীপ নাথ //

            

            ক্রেটিস আর তার হেমলক পানের কথা কে না জানে। এথেনীয় সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতার যুগ থেকে পেলোনেশিয় যুদ্ধে  স্পার্টা ও তার মিত্রবাহিনীর কাছে হেরে যাওয়া পর্যন্ত পুরো সময়টাই সক্রেটিস বেঁচে ছিলেন। পরাজয়ের গ্লানি ভুলে এথেন্স যখন পুনরায় স্থিত হওয়ার চেষ্টা করছিল তখনই সেখানকার জনগণ সেখানকার গণতন্ত্রের সঠিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছিল। সক্রেটিসও সেই তথাকথিত গণতন্ত্রের একজন সমালোচক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এথেনীয় সরকার সক্রেটিসকে এমন দোষে দোষী বলে সাব্যস্ত করেছিল যাতে তার মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হতে পারে। কিন্তু তার গুণাবলী ও সত্যের প্রতি অটল মনোভাব সত্যিকার অর্থেই তৎকালীন সরকারী নীতি ও সমাজের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টিতে সমর্থ হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সমাজের চোখে তার সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল সামাজিক ও নৈতিক ক্ষেত্রসমূহ নিয়ে তার তীব্র সমালোচনা। প্লেটোর মতে সক্রেটিস সরকারের জন্য একটি বিষফোঁড়ার কাজ করেছিলেন যার মূলে ছিল বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা ও ভাল কিছুর উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচনা। এথেনীয়দের সুবিচারের প্রতি নিষ্ঠা বাড়ানোর চেষ্টাকেই তার শাস্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তৎকালীন শাসকদের সাজানো বিচারে খ্রীষ্টপূর্ব ৩৯৯ সালে তাঁকে হেমলক বিষ খেতে বাধ্য করে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
        
(আগরতলার দৈনিক সংবাদে লেখাটি বেরিয়েছে, ৪মার্চ,১৪)



১৬০০ শতাব্দির ১৭ই ফেব্রুয়ারি  একজন ইতালিয় দার্শনিক, ধর্মযাজক ও বিশ্বতত্ত্ব বিশারদ জিয়োনার্দো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। ব্রুনোর দোষ ছিল তিনি কোপার্নিকাসের তত্ব সমর্থন করেছিলেন। পৃথিবী যে সূর্যের চারদিকে ঘোরছে সেই বক্তব্য সমর্থন করে প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ধর্মীয় যাজকেরা তার এই কাজ মেনে নিতে পারেনি। প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধিতার  অপরাধে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়।

 তার জন্মের সময়টা এমন ছিল যে, মধ্যযুগের ধর্মীয় ও দার্শনিক প্রতিক্রিয়াশীলতাও শেষ হয়নি আবার যুক্তিভিত্তিক আধুনিক যুগেরও সূচনা ঘটেনি। সে হিসেবে তার জন্ম এক মহা সন্ধিক্ষণে। সে সময়ের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটেনি। সে সময় রাজার সাথে গীর্জার বিরোধ খুব একটা জমে উঠেনি এবং পার্লামেন্টের সাথে রাজার বিরোধের সূচনাই হয়নি। প্রোটেষ্টান্ট ধর্মের উত্থান ঘটছিল এবং ক্যাথলিক  চার্চ সমাজে নিজেদের প্রভাব রক্ষার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ব্রুনো বিজ্ঞান, দর্শন এবং যুক্তিবাদ নিয়ে এমন সব চিন্তা করেছিলেন যা বিংশ শতাব্দীতে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

                   আলেকজান্দ্রিয়ায় বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ইতিপিয়াকে প্রকাশ্য রাজপথে টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করা হয়েছিল, কারণ তিনি মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেননি। তিনি তার বৈজ্ঞানিক সত্যকে চাপের মুখে গ্যালিলিওর মত মিথ্যা ঘোষনা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী ও মহিলা শহিদ।

                   রোমান দার্শনিক সেনেকাও সম্রাট নিরোর আদেশে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এমন শত শত মুক্তচিন্তার ও সত্যের সাধককে যুগে যুগে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, প্রচলিত ধ্যান ধারণার সমালোচনা করার জন্যে। অগণিত সাধককে বন্দি করে রাখা হয়েছে যুগে যুগে। নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছে অপ্রিয় সত্যি কথা বলার জন্যে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ঠিক একই কারণে শহীদ হতে হয়েছে প্রগতিশীল সাহিত্যিক তথা মুক্ত চিন্তার অগ্রদূত ডঃ অভিজিৎ রায়কে।

                  অভিজিৎ রায় ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ জন্ম গ্রহণ করেন। একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী-মার্কিন প্রকৌশলী, লেখক ও ব্লগার। তিনি বাংলাদেশের মুক্ত চিন্তার আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে সরকারের সেন্সরশিপ এবং ব্লগারদের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের সমন্বয়কারক ছিলেন। তিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু তিনি ইন্টারনেটে তার প্রতিষ্ঠিত ব্লগ তথা সাইট  'মুক্তমনা'-য় লেখালেখির জন্যই বিশেষভাবে পরিচিত। বইমেলা থেকে বের হওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে আহত করে।

                অভিজিৎ রায়ের পিতা একুশে পুরস্কার বিজয়ী  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. অজয় রায়।  প্রয়াত অভিজিৎ রায় পেশায় ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। অভিজিৎ রায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রী এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশ ছাড়ার আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর  থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি অর্জন করেন। সেখান থেকে তিনি আটলান্টা, জর্জিয়ায় যান। সেখানে তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতেন।

                 তিনি ২০০১ সালে কয়েকজন প্রগতিশীল লেখককে নিয়ে তৈরি করেন 'মুক্তমনা' ব্লগটি। ২০০৭ সালে মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার আর মানবাধিকার ও সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্যক অবদান রাখার জন্যে তার মুক্তমনা সাইট অর্জন করেছে “শহীদ জননী জাহানারা ইমাম” স্মৃতি পদক। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই ব্লগটিকে জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক দিয়ে ভুষিত করে। এই পদকে লেখা রয়েছে – “বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মুক্তচিন্তার আন্দোলনে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পাশাপাশি  গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে 'মুক্তমনা' ওয়েব সাইট। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে ও বিদেশে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সেক্যুলার মানবিক চেতনায় উদবুদ্ধকরণের পাশাপাশি তাদের বিজ্ঞানমনষ্ক করবার ক্ষেত্রে 'মুক্তমনা' ওয়েব সাইটের জগতে এক বিপ্লবের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট  মানবাধিকার কর্মী নেতা ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক অজয় রায়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের তরুণ মানবাধিকার কর্মীরা এই ওয়েব সাইটে তাদের লেখা ও তথ্যের মাধ্যমে সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করছেন। ২০০১ সালে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, “মুক্তমনা” তখন নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠনের পাশাপাশি আর্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছিল।

               বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে এবং ধর্ম-বর্ণ-বিত্ত নির্বিশেষে মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিশেষ অবদানের জন্য “মুক্তমনা” ওয়েব সাইটকে “জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক ২০০৭” প্রদান করা হল”।
            তবে ধর্মের অসারতা, মৌলবাদিতা ও ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে তিনি যথেষ্ট সমালোচিতও হয়েছেন ভাববাদিদের থেকে। তিনি ব্লগে মোট ১০৬ টি লেখা পোস্ট করেছেন। ১৪/২/২০০৯ তারিখ থেকে মুক্তমনাতে নিয়মিত লিখতেন। সমালোচনার জবাব দিয়েছেন বা মন্তব্য করেছেন ৩৪৯৪ টি । মুক্তমনায় প্রায় ৩০০ জন লেখক আছেন। মুক্তমনা ব্লগ ২০০৪ সালে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্লগ হিসেবে জার্মান ইন্টারনেশন্যাল সার্ভিস থেকে The BOBs (Best of the Blogs) নির্বাচিত হয়েছে।

                গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮:৩০ নাগাদ ঢাকায় একুশে বইমেলায় তার দুইটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের উল্টো দিকের সোহরাওয়ার্দি লনের নিকটের রাস্তায় তিনি হামলার শিকার হন। তাঁর মাথা ও গলায় কোপ মারা হয়। তার স্ত্রী বন্যা বাধা দিতে গেলে তাঁকেও এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। তার পর অস্ত্রগুলি ফেলে রেখেই দুষ্কৃতীরা উধাও হয়ে যায়। অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান অভিজিৎ রায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চাপাতির ঘায়ে তাঁর মাথা ঘাড় থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের তোড়জোড় করতে করতেই সব শেষ হয়ে যায়।

               এই ঘটনায় সারা বিশ্বের প্রগতিশীল মানুষ ভীষণভাবে মর্মাহত হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ থেকে এক বার্তায় এই ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে তুলনা করে নিন্দা করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ১ মার্চ অভিজিৎ রায়কে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্ত ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আগরতলায় ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়েছে এবং আরো কিছূ করার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যানা গেছে কমলপুরেও মিছিল হবে।

                এই “মুক্তমনা” ব্লগের একমাত্র ত্রিপুরার লেখক সুমিত দেবনাথ এক ফেইসবুক বার্তায় লিখেছেনঃ- “২০০৯ এর শেষের দিকে নিয়মিত ইন্টারনেট করা শুরু করি, প্রথমই যে বাংলা ব্লগের সাথে পরিচয় সেটির নাম "মুক্তমনা", সেখানে লেখা পড়তাম, কমেন্ট করতাম। বিশেষ করে আকর্ষণ ছিল অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞান প্রবন্ধ, উনার কোন লেখা আসলে যত বড় লেখাই হোক্ বিনা বিরক্তিতে পড়তাম, বিজ্ঞান লেখা হলে কি হবে ? বিরাট একটা রসবোধ থাকত এতে।  ২০১০এর দিকে একদিন মেইল খুলে পেলাম মুক্তমনায় লগ-ইন করার আইডি পাসওয়ার্ড। ফেসবুকে অভিজিৎদার মেসেজ পেলাম “মুক্তমনায় লিখুন প্রথম ভূল-ভ্রান্তি হবে সমালোচনা হবে সেখান থেকে শিখতে পারবেন। আজ পুরানো ফেসবুক আইডিটা খুলে অভিজিৎ দার মেসেজগুলি দেখছি আর মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হচ্ছিল। তিনি দুই বাংলার মুক্তমনাদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন করতে চেয়েছিলেন। সেই হিসাবে উনার বাবা যখন কলকাতা এসেছিলেন অভিজিৎদা আমাকে এবং এখানকার মুক্তমনাদের সাক্ষাত করতে বলেছিলেন, সময় সুযোগের অভাবে সেই ইচ্ছা আর পূরণ করতে পারি নি।
             আমরা যখন ত্রিপুরার কমলপুরে শাহবাগ সংহতি সমাবেশ করেছিলাম তখন উনাকে আমন্ত্রন করেছিলাম , কিন্তু তখন তিনি দেশের বাইরে”। 

            মুক্তমানার অপর এক লেখক সুব্রত শুভ লিখেছেনঃ- “ব্লগার মাত্রই নাস্তিক নয়, টুপি মানেই জামাত নয়, নাস্তিক দেখলে জবাই নয়, ধার্মিক দেখলে ঘৃণা নয়”।

       উত্তর পূররাঞ্চলের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী মৃন্ময় দেব এক ফেইস বুক বার্তায় লিখেছেনঃ- “অভিজিৎ রায়ের 'মুক্তমনা' স্বচ্ছ আয়নায় ঘাতকেরা প্রত্যক্ষ করেছে নিজেদের জঘন্য ও বীভৎস মুখ। সহ্য করতে পারেনি, আর তাই আয়নাটাকেই ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। এদের যে বা যারা আয়না দেখাবে তাদেরই শেষ করে ফেলার জন্য আঘাত করবে এরা। আর ভাঙা আয়নার টুকরোয় ছড়ানো নিজেদের টুকরো-টুকরো কুৎসিত মুখগুলো দেখে একে অপরকে আঘাত করতে উদ্যত হবে, যতদিন না সবংশে নিঃশেষ হয়। আয়না দেখানোর কাজটা তাই সবাইকে একযোগে ভাগ করে নিতে হবে”।

           জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন এক বার্তায় লিখেছেঃ- “মুক্তমত প্রকাশের সাহসী যোদ্ধা অভিজিৎ রায় অনেক আগেই মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করে সর্বশেষ মানব কল্যাণকর কুসংস্কারমুক্ত বিজ্ঞানমনস্ক কাজে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। যে কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ জীবদ্দশায় যেমন তেমনি মৃত্যুর পরও এভাবে মানব কল্যাণে অভিজিতের মতন অবদান রাখতে পারেন। মরণোত্তর দেহ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে দান করে এই কল্যাণকর কর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। মৃত্যুর ছয় ঘন্টার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজ বা হাসপাতালে দেহ পৌঁছালে ১৪টি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায় । অর্থাৎ একটি প্রানহীন দেহ ১৪ জন বা ততোধিক বিকলাঙ্গকে সচল করতে পারে।
              আমাদের প্রিয় সহযোদ্ধা, অগ্রসর বন্ধু, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ডঃ অভিজিৎ রায়ের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে আমরাও মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকারে শামিল হই। এতে ধর্মীয় জঙ্গিদের হাতে অকাল প্রয়াত সহযোদ্ধার প্রতি কিঞ্চিত প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা যাবে”।

মুক্তচিন্তার কবি অরূপ বাউল লিখেছেনঃ-

“শক্ত হাতে কাঁপিয়ে দেবো মৌলবাদের ভিত
ঘরে ঘরে জন্মেছে আজ হাজার অভিজিৎ”।

অভিজিৎ রায় এর লেখা এপর্যন্ত ১০ খানা বই প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোর নাম নীচে দেয়া গেলঃ-

১। আলো হাতে চলছে আঁধারের যাত্রী
২। মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে
৩। সতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি
৪। অবিশ্বাসের দর্শন
৫ বিশ্বাসের ভাইরাস
৬। ভালোবাসা কারে কয়
৭। সমকামিতা: বৈজ্ঞানিক সমাজ-মনস্তাত্তিক অনুসন্ধান
৮। শুন্য থেকে মহাবিশ্ব
৯। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো : এক রবি বিদেশিনীর খোঁজে
১০। বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (সংকলন)

(সূত্রঃ ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্লগ ও সাইট)

কোন মন্তব্য নেই: