“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৫

সুরমা গাঙর পানি - ভাটি পর্ব ৩

(দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ছেপে বের করেছে দিন হলো। ভালো লাগা এই উপন্যাস পুরোটা টাইপ করে তুলে আমার প্রিয় কথা শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আশা করছি আপনাদের সবার এটি পড়তে ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সংলাপ ভাগটি সিলেটিতে -সে সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক। আপনাদের পড়বার সুবিধে করে দিতে, ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার তৃতীয়  অধ্যায় ---সুব্রতা মজুমদার।)
   
                 তিন
    

          মা খেতে দেয় সিদল পোড়া পান্তাভাত আর মরিচবাটা । লাল রঙের লঙ্কাবাটা দেখলেই বাপের চোখ খুশিতে চকচক করে । বলে,
--- পুটকিপুড়া ঝাল না অইলে আর কিওর হিদলপুড়া ।
বৈতল এত ঝাল পছন্দ করে না ! মাকে বারণ করে । বলে,
--- অত মরিচবাটা দিও না , না করছি নানি ।
মা বলে দেয় নি। বলে,
--- দিছি না বে, যে কুনু  কিরা ।
চোখের সামনে লাল রঙের সত্যকে মা কিরা কেটে মিথ্যে করে দেয় ।  বৈতলও তখন মুচকি হাসিতে লুকিয়ে ফেলে লাল রং । অবাক চোখে চেয়ে চেয়ে দেখে তার পাতের অফুরন্ত শিউলি ফুলের হাসি । মায়ের হাতের অমৃতপরশে বাসি ভাত পান্তা থেকে উঠে ফুলের মহিমায় ছড়িয়ে পড়ে পাতে । খিলখিলিয়ে ওঠে মায়ের হাতের চাঁপার কলি । তখন আর মাকে এক দরিদ্র মৎসজীবী পরিবারের গৃহবধূ মনে হয় না । পাগলার দামবাড়ির জমিদারনির সোনালেপা শরীরের কথা মনে পড়ে । বাউরবাগে মা অন্নপূর্ণার সামনে জোড় হাতে বসেছিল বলে বৈতল সোনায় হাত দেয় নি । ‘এই সর’ বলে অবজ্ঞা করা বাবুর বাড়ির বৌকে মাপ করে
নি বৈতল । ছিনতাইবাজের প্রথম অপবাদ লাগে গায়ে । তবে বৈতল জানে সেদিন জ্ঞানত সে কোনও অপরাধ করেনি । বরং, অন্যায়ের একটা উপযুক্ত শাস্তির প্রতিবিধান করেছে দেবী মাকে সাক্ষী রেখে । দেবী মায়ের  প্রতিমামুখের হাসিটুকুই বৈতলকে সাহস যুগিয়েছে । নিজের মাটির বাড়ির মায়ের মুখের সঙ্গে যে মিলে গেছে অবিকল । তাই খেতে বসলেই  বৈতলের মাকে দেবী মায়ের মতো লাগে । ঘোর লাগা চোখে দেখে মাকে, দেখতে দেখতে শরীর অবশ হয়ে যায় । বন্ধু লুলাকে বলে,
  --- দেখ দেখ বেটা, জমিদারণিও দেখ আমার মার কাছে ভিক্ষা চায় ।
কয়েকদিনেই বন্ধুর মনের কথা পড়তে শিখে গেছে লুলা । বলে,
 --- অয়বে , এইন একেবারে গুটাটিকরর ভৈরবী মা !
 --- ধুর বেটা, আমার মা, আমার মা ।
এরকম কিছু হিংসা আছে  বৈতলের । কিছুই নেই যার , সে যা আছে তার ভাগ দিতে চায় না কাউকে । কিন্তু  বৈতল দেয় । মুখে আমার মা আমার মা করলেও মায়ের ভাগ দেয় মাতৃহীন বান্ধবকে । বৈতলেরও এক সুহৃদ হয়েছে দেখে মাও খুব খুশি । বলে,
 --- রাম জন্মাইতে রইম আর লুলা জন্মাইতে  বৈতল । ছাড়াছাড়ি অইছ না বেটা ।
   দশ বছর বয়সেই মাতৃহারা শিশু পায়ে সর্ষে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে গান গাইতে । বাপ কটু মিয়া হিন্দুস্থানি রমণীকে নিকে করে দেশান্তরী হয়ে  যায় । ছেলের খোঁজ নেয় না । লুলা শুনেছে বাপ সাপের বিষ সাপ্লাই করে কলকাতায় আর হাটে হাটে বহরের ননী বিক্রি করে । কোনও গুণ নেই লুলার, মায়ের জন্য কাঁদে, ক্ষিদে পেলে চুরি করে । লুলা গান শোনে, গান গায় । শারি গানের চটুল কথায় মজে লুলা । গানের পাকা কথা বেশিদিন ভাল লাগেনি বলে ওস্তাদের খুতি নিয়ে পালায়
। ঘাটুর পুয়া হয়ে হিন্দুবাড়িতেও কিছুদিন কাটিয়ে দেয় লুলা দাস হয়ে । লুলার কী বেজ কী দাস । কী হিন্দু কী মুসলমান । ভাল লাগলে থাকে । ভাল না লাগলে চুরি করে পালায় ।
    বৈতল নতুন কেরামতি শুনে প্রমাদ গোনে । বলে,
   --- আমারে বালা না লাগলে চুরি করিছ না । এমনেউ লই যাইছ আমার হক্কলতা ।
লুলা লজ্জা পায় বন্ধুর কথায় । বলে,
--- তর লগে ইতা অইত নায় । অইলে ত হিদিন অউ অই গেল নে ইস্পার উস্পার । মারি লিলাম নে হিদিন । আমিও খিত্তার বাঙাল । আমারও নাকর আগাত জুলফুকার ।
--- আমিও অলাখান । মাল পাইলেউ ঝাড়ি দেই । আমি কিতা কেউ জানে না । যে যেলা পারে কয় । বৈতল দাস ,  বৈতল পাটনি, বৈতল উঝা, কছ না বেটা বৈতল মিয়া । আমার কিতা ।
  যেদিনের কথা বলে লুলা সে এক ভয়ঙ্কর দিন । খুনোখিনির সকাল । মামার বাড়ি থেকে গজর গজর করতে করতে বেরিয়েছিল বৈতল । সকালবেলা পেটভরা খাবার না পেলে বৈতলের গুসা ওঠে নাকের ডগায় । বিশ্বব্রহ্মাণ্ড  তখন ধংস করলেও দুঃখ যায় না । খাওয়া কম হলেও বৈতলের মার কথা মনে পড়ে । মা কখনও কম দেয় না । মা বলে,
--- পেট ভরি খাইলা সকালবেলার মুঠি সারাদিনের খুটি ।
  দাদিও পেট ভরা খেতে দেয় । খুদের ঝাউ করে দেয় সঙ্গে ঘি ভাঙা বচুড়ি । আর মামি , কড়কড়া এক মুঠো ভাতে তার পেটের কোণাও ভড়ে না । মামির উপর রাগে গর গর করতে করতে তার একাকীর টিল্লায় গিয়ে গিয়ে দেখে এক 
বাঙাল পুয়া । বৈতলের রাগ ওঠে মাথায়, বিড় বিড় করতে থাকে ,
--- সুনামগঞ্জি পুয়ার লগে নি দিল্লাগি । এমনেউ মামিয়ে না খাওয়াইয়া মারি লাইত । অখন নি বাঙালে মারত । তুই কিগুরে ?
    অতর্কিত লাথি মেরে ফেলে দেয় পাহাড় থেকে । আসলে বৈতলের রাগ অন্য কারণে । পাটপাথরের রাজা  বৈতলের সঙ্গে গোস্তাকির শাস্তি । তার রাজ্যে তার পাথরে বসার সাহস করেছে ভিনদেশি ছেলে । যে পাথরে বৈতল তার মাকে বসিয়েছে ওখানে কেন বসবে। ওখানে, ওই পাথরে মাকে বসিয়ে বৈতল বলেছে,
--- চউখ মুজো । একতা দেখাইমু তুমারে ।
মা হাসিমুখে চোখ বুজে ছিল । বৈতল বলেছে,
--- চউখ খুলো ।
চোখ খুলে মা বলেছে,
--- ওমা ই দেখি পাগলা রাজার সৈন্যসামন্ত । কিস্কিন্দার রাজা সুগ্রীব । 
এক দঙ্গল বাঁদর কিচির মিচির করে কড়া কড়া পেয়ারার ভোজ লাগিয়েছে বৈতলকে ঘিরে । আর বৈতলও একে একে পরিচয় করিয়ে দেয় মায়ের সঙ্গে । বলে,
--- অউ অইল অমূল্য অগু পসন্ন অউ চটই কটই । সব আমার বন্ধু ।
--- এর মাঝে নল কে ?
--- নল আবার কিতা?
--- এ বান্দরর কত সুন্দর সুন্দর নাম আছে। নল, নীল, জাম্বুবান , হনুমান আর তারার রাজা সুগ্রীব , ডাক্তর সুষেণ ।
--- কও না মা কিস্কিন্দার গপ ।  দাদুয়ে কিলা গাইতা রামায়ণ গান । আমিও
বড় অইলে রামায়ণ গাইমু । তুমি যে কইসলায় হিদিন আমি শিখিলাইছি । যুড়িয়া আকাশভুমি কপি ঝাঁকে ঝাঁকে ...
--- আইচ্ছা অখন সেতুবন্দর কথা হুন। বান্দরর রাজা সুগ্রীবর এক প্রজা আসলা নল। নলে বর পাইছলা ব্রহ্মার কাছে। তাইন ছইলেউ শিলা ভাসব পানিত , গাছ পাত্থর যেতউ ফালাইব পানিত সব যুড়া লাগব । নলে রামরে কইল এক মাসে সেতুবন্দ বানাই দিব সাগরো । লঙ্কাত যাওয়ার পথ । এর মাঝেও এক মজা । সবে ত পাত্থর আনি দেয় নলরে, নলে লয় আর যুড়া লাগায় । ডাইন দিকর পাত্থর ডাইন হাতে, বাউ দিকর পাত্থর বাউ দিকে । হনুমানে দেয় বাউদিকে হে লয় বাউ হাতে , তাইন ত আবার আলিম পণ্ডিত । তান হয় গুসা , বেটায় তানে অপমান করের বাউ হাতদি, হনুমানে গুসার চুটে গন্ধমাদন উদন সব পাহাড় পর্বত লইয়া আইল নলর উপরে ফালানির লাগি । নলে রামরে কইল গিয়া । রাম গিয়া উবাইলা তান ভক্তর সামনে , কইলা , কামর সময় ডাইন বাউ হয় না রে বা । কামর সুবিধাত যেমনে পারে লইব , এর লাগি কিওর গুসা । রামে তারার মিল করাই দিলা । কীর্তিবাসেও কইলা
‘কুলাকুলি দুই জনে             করে হরষিত মনে,
জাঙ্গালে উঠিয়া গিয়া নল
কীর্তিবাস কহে রাম             জপিব তোমার নাম
এই ভক্তি হউক অচল।।’
   পাগলার মাছুয়া বৈতলের রাজত্ব ঐ উচ্চভূমিতে । বৈতলের মা বলেছে এই পাহাড়ের নাম ঋষ্যমুখ। এখানে এসে বৈতল খোঁজে মনের শান্তি , মায়ের জন্য শান্তি খুঁজে নিয়ে যায় । পাখপাখালিকে ডেকে এনে খাওয়ায় খুদকুড়া। পাথরের এই মন্ত্রণাসভায় বসেই শিশু বৈতল খোঁজে মায়ের দুঃখের সমাধান । হাওর জলের পোকা বৈতলের সিংহাসন ঐ পাটপাথর । তার আসনে অন্যকে বসতে  দেখে বৈতল রাগে আগুন হয়ে  মারে লাথি । অচেনা বালক গিয়ে পড়ে নীচে শনখলায় ।
    তারপরের কাণ্ডটাও করে সজ্ঞানে। সেও লাফ দিয়ে পড়ে গিয়ে শনের বনে । এত উপর থেকে পড়ে কেউ বাঁচে না । কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার দুজনেই থাকে অক্ষত , একজন আর একজনের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব। দুজনেই প্রাণ পেয়ে বোকার হাসি হাসে । হাসতে হাসতে দুজনে দুজনের কাঁধে হাত দেয়। বৈতল বলে,
--- তর মা নাই ।
--- না নাই ।
--- তে চল আমার লগে । আমার বাড়ি ।
--- কৈ তর বাড়ি ।
--- পাগলা ।
--- তুইন সুনামগঞ্জি ।
--- তেউ, সুনামগইঞ্জো মানুষ থাকইন নানি ।
--- আমিও ত যাইতাম ।
--- কৈ যাইতে ।
--- লক্ষণছিরি তর বাড়ি থাকি কতদূর ।
--- ধারউ , অউত্ত মাধবগঞ্জ, জাউয়া, সুনামগঞ্জ । গেছিনা। কেনে যাইতে?
--- গান শিখতাম ।
--- ও বুঝছি দেওয়ান বাড়ির কথা কইরে । হাছন রাজা । তাইন ত নাই ।
--- তে কিতা , তান ত গান আছে
হাছন রাজা নাচেরে নাচে
প্রানবন্ধে আমারে দেওয়ানা করিয়াছে...
--- বা বেটা বালাউ গাছ। আর কিতা হিকতে ।
--- রাজার বাড়ির সড়কো গিয়া গান গাইতাম !
--- ইতা আবার কিলাখান মাত ।
--- আমি অলাখান । বছরে একবার খিত্তাত যাই । মার কয়বরও যাই না । গাউত গেলেউ বুঝি আমার মা আছিল এক বেটি । মারে দেখি না , তেও জানি মা আছিল ।
--- বইয়াখাউরিতও মা আছে । চল, তুই হিদল ভর্তা খাছনি ।
--- ভর্তা উর্তা কে বানাই খাওয়াইত । পুড়িয়া খাই লাই এক বর্তন ভাত ।
--- আমার মার আতর খাইবে। অমৃত লাগব । চাটবে ।
--- যাইতাম তো ।
--- তে আবার কিতা । ও বুজছি ।
--- কিতা বুঝছচ ।
--- তুই বাঙাল, অউত্ত !
--- অয়!
--- ধুর বেটা কৈবর্ত মাইমল কামলার কুনু ইতা থাকে নি । আমার মা ইলাখান নায় ।
      লুলা যায় বইয়াখাউরি । বৈতল তাকে নিয়ে যায় হাওরে। বলে,
--- অউ দেখ আমার হাওর, দেখার হাওর । অউ দেখ রাজা ছলিমর মাজার , ছালাম কর । আমরার হাওরর বিল হকল তুই গনিয়া শেষ করতে পারতে নায়, এগুর লাগা আর এগু, হাওরর পরে হাওর । ই হাওর শেষ অইলেউ চেপ্টি, টেংগুয়া, শনির হাওর । ইতা শেষ হইত নায় ।
--- আমরার সিলেটও আছে। হাওরর রাজা হাকালুকি ।
--- হি ত বুজছি । মাছ মারতে পারছ নি ।
--- মারছি না । পারমু ।
      লুলা পারে নি । দশ দিনে ঝাঁকিজাল একবার গোল করে ফেলতে পেরেছে । হুরাজাল টেনে পুঁটি মকা ধরেছে দুই বন্ধু । বড় মাছ ধরার কেরামতি শেখাতে বাপকে বলেছে বৈতল। বাপ নিয়ে গেছে হাওরে । হাওরের মাঝখানে গিয়ে লুলাকে বলে,
--- হেই লুলা, পানিত লাম ।
     জল থেকে উঠে অনেকদিন আর বাড়ি মুখো হয়নি লুলা । চলে গেছে খিত্তা । আবার এসেছে বৈতলের মার কাছে । বলেছে,
--- হিদল ভর্তা খাওয়াইবায় নি মাই ।
--- খাওয়াইমু । রোজ খাওয়াইমু, বৈতলের ছাড়িয়া যাইছ না বাপ ।
--- আমার পানিত ডর লাগে ।
--- ধুর বেটা সিলেটি পুয়ায় নি পানিরে ডরায় । ডরাইছ না ।
     মায়ের আশ্বাসে লুলা ঘুরে ফিরেই আসে বৈতল বাড়ি । বৈতল লুলাকে বলে মায়ের দুঃখ  কথা । লুলা বলে,
--- চল, এক ফকিরর কাছে যাই । তান পানিয়ে বউত কাম অয় । হজরত শাহজালালর লগে আইছলা যে ৩৬০ জন আউলিয়া , খাদিম নগরর হজরত শাহপরাণর বংশত তান জন্ম । হুনতে নি পরাণশাহর গান। হুন ,
কৈতর উড়িল রে দুই পাংখা মেলিয়া
পালকেতে ফু দিলা শাহ পরাণ আউলিয়া
বিছমিল্লার বরকতে পায়রার দেহ পাইল জান
শাহজালালরে পায়রা দিলা নিজামুদ্দিন পির
সেই পায়রাগণ ছিলটেতে বান্ধে সুখের নীর ।
   এমনিতেই দুই বন্ধুর পায়ের তলায় সর্ষে । তার উপর লুলার গানে কৌতূহল বাড়ে । চল বলতেই চল । লুলা অনেক ওঝা ফকিরের খবর জানে । সাপ ধরতে পারে খালি হাতে । বৈতলকেও শিখিয়ে দেয় কেরামত ।
   সুরমার উজান বেয়ে ওরা পৌঁছে যায় সতেরসতি । সাধুহাটির বাজারে লুলাই খুঁজে বের করে পিরের মাজার । পিরতলার খাদিম ও এক পির । নাম মামুদ শেখ । পিরের কাছে গিয়ে বিপাকেই পড়ে দুই বন্ধু। কানা পির দারোগার মতো জেরা করে লুলাকে । বলে,
--- লুলা আবার কিতা নাম ।
--- আমার নাম লুলা। ছোটবেলা ল কইতাম পারতাম না । লুল আমিন বেজ ।
--- লুলা, অ বুঝছি রুলা । তুইত অখনও র কইতে পারছ না। রুলা নায় রুহল । রুহ কারে কয় জানছ নি ।
--- জানি । ফুকন লাগে ।
--- লগর ইগু কিগু ।
--- বৈতল ।
--- বৈতল ত গাইল ।
--- অয় গাইল । গাইল্লাইয়াউ আমার মার লাগি পানি দেও ।
--- চুপ যা বেটা তর বাড়ি কই ক চাইন।
--- পরগনা পাগলা, গাউ বইয়াখাউরি ।
--- উবা উবা তরে ত আমি চিনি । তর ত আর এক বাপ আছিল ।
    হা করে তাকিয়ে থাকে দুই বন্ধু । এত বোঝার বয়স হয়নি, তাই শুধু রাগে গজর গজর করে বৈতল। বলে,
--- আজারি মাত মাতিও না পির । পানি দেও! একটু মিঠা করি দিও । কত পয়সা লাগব কও ।
   পির চিনি গোলা পানি দেয় এক শিশি । দুই পয়সা দিয়েই দুই বন্ধু ছোটে বইয়াখাউরি । ফিরে গিয়ে বৈতল মাকে বলে অন্য এক কিচ্ছা । বলে,
---  জাননি মা, সুরমা গাঙর পারো এক দরগা দেখি আইলাম শাহজালাল পিরর । কী মিঠা পানি গো মা দরগা মহল্লার ইন্দারার । তুমার লাগি এক বুতল আনছি । খাইয়া দেখ ।
     মা মুচকি হেসে খায় জল । শেখের চিনি গোলা জলের গুনে একদিন শান্তিতে কাটে । বাপ আর মাকে দগ্ধায় নি ।

                                      

                              
চলবে
< ভাটি পর্ব ২ পড়ুন                                                                      ভাটি পর্ব ৪ পড়ুন >
                                          

কোন মন্তব্য নেই: