“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ২ জুন, ২০১৪

ফেসবুকের মতো না হলেও ব্লগেরও আছে নিজস্ব টাইম লাইন

কী আর করা যাবে, আজকাল খানিক ডিস্কো করে  না গাইতে পারলে রবীন্দ্র সঙ্গীতও শোনেনা অনেকে। তাই উহ লা লা-র টান দিয়ে তবে সে গাইতে হয় "পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে" । আমরাও ফেসবুক মোহাচ্ছন্নদের দৃষ্টি টানতে 'উহ লা লা' দিয়ে শুরু করলাম। উদ্দেশ্য ব্লগ নিয়ে আগ্রহ ধরে রাখবার, শিরোনামের শুরুতে নিলাম ফেসবুকের নাম। 
                      ফেসবুক টুইটারের বয়সও কম কিছু নয়, এক দশক হতে চলল। কিন্তু এই ২০১০ অব্দি সেগুলোর এতো জনপ্রিয়তা ছিল না, যতটা অরকুটের ছিল। পাশাপাশি পারফস্পট, নিং, লিঙ্কড ইন আরো কতো কী ? বিচিত্র পেশা এবং নেশার লোকেদের ধরে রাখবার জন্যে বিচিত্র সামাজিক মাধ্যম। এই সমস্ত বৈচিত্রকে হজম করে ফেলে ফেসবুক টুইটার শুধু জনপ্রিয় হতে শুরু করল এই সেদিন। তার আগে কলেজ পড়ুয়াদেরতো ধরে বেঁধেও ফেসবুকে আনা যেতো না। মনে হতো বুঝিবা, এই গুরু গম্ভীর পণ্ডিত মন্যদের সামাজিক মাধ্যম। প্রেম করবার ভালো মাধ্যম অরকুটই। এখন পর্ণ দেখবারও ভালো মাধ্যম ফেসবুক। 
         তা যা বলতে, থুড়ি , লিখতে যাচ্ছিলাম, ব্লগের জনপ্রিয়তা কিন্তু এদের সবার চাইতে প্রাচীন। মোটামোটি গেল শতকের শেষ বছর কয় যাত্রা শুরু করে ২০০৯ অব্দি ব্লগ চুটিয়ে রাজত্ব করেছে। যাদেরই মনে হয়েছে, মনের দুটো কথা কাউকে খুলে বলতে পারছেন না , বলা উচিত তাঁরা ব্লগ লিখতে শুরু করলেন। কেউ দিনিলিপি লেখেন, তো কেউ কাল্পনিক প্রেয়সীকে চিঠি। কেউ বা শুধুই গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনি লিখে লিখে লেখক হয়ে উঠতে শুরু করলেন। আমাদের নজরের সামনে এমন অনেক ব্লগারের এখন ছাপা বইর সংখ্যাও কম কিছু নয়।  কেউ বা আরো দুই এক কদম এগিয়ে গিয়ে নিজের সব গবেষণা কর্মও ব্লগেই তুলে রাখতে শুরু করলেন। দেখতে দেখতে, ব্লগারদের বন্ধুত্ব  হলো, আড্ডা হলো, সংঘ হলো, সংগঠন গড়ে উঠল বিশ্ব জুড়েই। অনেকে সম্মিলিত ব্লগও শুরু করলেন ছোট সাময়িক কাগজের মতো, অথবা সেভাবেও নয়। এখানে সবাই রাজা ব্লগের এই রাজার রাজত্বে। সম্পাদক বলে ব্যক্তিটির কাজ হলো, শুধু যুদ্ধ সামাল দেয়া। দুষ্ট লোকের নষ্ট ফন্দি ফাঁদে ধরা। অন্যথা , লিখুন যে খুশি, যেমন খুশি। আপনিই লেখক, সম্পাদক, প্রকাশক, পাঠক। সবই, আপনি আর আপনার নতুন পুরোনো বন্ধুরা। কাউকে তোষামোদ নেই, তেল নেই, সম্পাদকের হুমকি বা অনুগ্রহ নেই, পাঠকের উপেক্ষা বা অবজ্ঞা নেই। 
              ব্লগের জনপ্রিয়তা দেখে বহু সাময়িক কাগজ যেমন শুরুতে তাদের আন্তর্জালিক সংস্করণ করতে শুরু করল, তেমনি অনেকে আন্তর্জালেই নতুন সাময়িক কাগজ করতে শুরু করলেন আনকোরা নতুন। এই না দেখে উঠল বাই, বাণিজ্যিক পরিকাগুলোও নিজেদের ব্লগ করতে শুরু করল। দেখবেন বাংলা আনন্দবাজারেরও উন্নাসিক অভিজাত (যেকারো প্রবেশাধিকার নেই, তাই শব্দ দুটোর ব্যবহার )লেখকদের নিজেদের ব্লগ আছে, বাংলাদেশের কথাতো বলেই লাভ নেই। অগুনতি।
             এখনো ফেসবুক জনপ্রিয়তার যুগেও দেখবেন বাণিজ্যিক কাগজ বা চ্যানেল প্রায় সব ক'টার --তা যেকোনো ভাষার হোক, ফেসবুক পেজ আছে, টুইটারে বা গোগোল প্লাসে এরাও এসে গেছেন। কাগজে বা টিভিতে বিজ্ঞাপনও দেন।  কিন্তু ব্লগ থেকে সরে যাবার নাম করছেন না। ফেসবুকে টুইটারে আসলে সেই ব্লগ বা সাইটের ইউ আর এল বা লিঙ্ক ছড়ান শুধু। সেখানে আপনি সংবাদ বা প্রতিবেদন পড়তে পারবেন না। পড়তে হলে ব্লগে আসতে হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর পাতা যাকে আমরা ওয়েব সাইট বলে জানি, আসলে এগুলো ব্লগই। ওয়েব সাইটে রোজ তথ্য যোগ হয় না।  রোজ যেখানে তথ্যের নবীকরণ বা সংযোজন ঘটে, যে গুলোর সচলতা অত্যন্ত দ্রুত সেই সাইট গুলোই আসলে ব্লগ। যা কিনা কোটি টাকার বাণিজ্যিক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানও চালাতে পারে, আর হাজার টাকা মাসে আন্তর্জাল সেবা যোগান দাতাকে যুগিয়ে দিয়ে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত ব্যক্তিগত ভাবেও খুলে বসতে পারেন। যেমন করেন, বর্তমান ব্লগার। আমার নিজেরই একাধিক বিষয়ভিত্তিক ব্লগ আছে। আর ফেসবুক জমানাতেও আমাকে এখান থেকে কেঊ সরিয়ে ফেলতে পারেন না। কারণ, ফেসবুকে কাউকে হাজার খানিক পাঠক পেতে দেখিনি, আমার ব্লগে জোটে। অথচ, যারা জানেন তারা জানেন যে ফেসবুকেও আমার কোনো লাইকের নেশা নেই। নেই এই নিয়ে কোনো মান অভিমান। অনেকেতো লাইক কমতে শুরু করলেই ফেসবুক থেকেও পালিয়ে বেড়ান। 
            ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দেয়া কঠিন। এটা ব্লগ পারবে না। আজকাল মোবাইল কোম্পানিগুলোও আন্তর্জালের আর কোনো সুবিধে নাদিলেও ফেসবুকের লোভ দেখিয়ে গ্রাহক টানছে। তাই, অনেকর ধারণা আন্তর্জাল মানেই ফেসবুক। যেমন পুরাণ সাহিত্যের লেখকেরা জানতেন আরকি রাজা মানেই সসাগরা পৃথিবীর রাজা।  যেমন পঞ্জিকার বাজারকে টেক্কা দিতে পারে নি রবীন্দ্র রচনাবলী, তেমনি ব্লগ পারবে না ফেসবুককে টেক্কা দিতে । কিন্তু সৃজনশীল মানুষের মধ্যে ব্লগ টিকে থাকবে বলেই আমাদের এখনো আশা। উকিপেডিয়া জানাচ্ছে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৭তে যাত্রা শুরু করে ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১১তে দুনিয়া জুড়ে ব্লগার সংখ্যা বেড়ে ১৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়টাই ফেসবুক টুইটারের জনপ্রিয়তার যুগ। অনেকে এই সময় সহজ প্রচারের আশাতে ফেসবুকের নোট লেখার সুবিধের টানে চলে গেছেন। বৃদ্ধির হার কমে গেছে। কিন্তু তার পরেও ব্লগারের সংখ্যা বেড়ে ১৭ কোটি ছাড়িয়েছে। ব্লগ লিখবার বহু মঞ্চ আছে। কিন্তু আমরা যেখানে লিখি, সেই 'ব্লগার্সে'র ব্যবহারকারীই সব চাইতে বেশি। এখানে পড়ুনঃ
On 16 February 2011, there were over 156 million public blogs in existence.[4] On 20 February 2014, there were around 172 million Tumblr[5] and 75.8 million WordPress[6] blogs in existence worldwide. According to critics and other bloggers, Blogger is the most popular blogging service used today, however Blogger does not offer public statistics.[7][8] Technorati has 1.3 million blogs as of February 22, 2014[9]

           দুনিয়া জুড়ে ব্লগ শুধু দর্শনে বিজ্ঞানে শিক্ষাতে সাহিত্যে মতবিনিময় সহজ করে যেমন ভাবনা এবং কাজের দ্রুতি এনেছে, তেমনি দেশে দেশে রাজনৈতিক চালচরিত্রের বদলেও নিয়েছে বিশাল ভূমিকা। সে মার্কিন নির্বাচন থেকে শুরু করে আমাদের দেশের সংসদীয় নির্বাচন হোক। কিম্বা আরব বসন্ত থেকে শুরু করে ওয়াল স্ট্রীট দখলের লড়াই কিম্বা শাহাবাগের লড়াই হোক কিম্বা লোকপালের আন্দোলন।  
            ভারতীয় সব ভাষাতেই ব্লগ এখনো বেশ জনপ্রিয়। হিন্দি তামিল বাংলা ইত্যাদি ভাষাতে ব্লগ সমূদ্রে মুক্তো বাছাই করাই এক কঠিন কম্ম। ইংরেজিতেতো কথাই নেই। যারা নিয়মিত ইণ্ডিব্লগারের মতো সম্মিলিত ব্লগ দেখেন তাঁরা অনুমান করতে পারবেন, ভারতে ব্লগারদের আড্ডাটা কতটা বিশাল, বাণিজ্যও কম নয়, বিশেষ করে ইংরেজিতে।
         আমরা বললাম বটে ভারতের সব ক'টা ভাষাতে ব্লগ সমানে জনপ্রিয়। আসলে বাংলার কথাটি খুবই লজ্জা জনক। বাংলাতে ব্লগ লিখে দুনিয়া জুড়ে লেখকদের মঞ্চ যোগানোর দায় গেল দেড় দশক ধরে একা সামাল দিচ্ছেন বলতে গেলে বাংলাদেশের বন্ধুরা। ভারতে ২০১০ অব্দিও গুটি কয় মাত্র বাংলা ব্লগ ছিল। অরকুট জমানাতে অনেকেই সেখানে কবিতা ইত্যাদির গ্রুপ চালাতে লিখতেন রোমান হরফেই। বলে কয়েও অধিকাংশকেই বাংলাতে নিয়ে আসা যেত না। ফেসবুক সেই কাজটি সহজ করেছে ২০১০এর পরে। কিন্তু তার পরেও অসমিয়াতে বিচিত্র স্বাদের এবং বিষয়ের ব্লগ বা সাময়িক 'আলোচনী'র সংখ্যা বাড়লেও বাংলাতে অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয় নি। যা সামান্য হয়েছে তার দায় কেবল কবিদের। এখনো গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ সেভাবে বাংলা ভাষাতে ভারতে অন্তত লেখা হচ্ছে না। এই প্রশ্ন বাহুল্য মাত্র যে গুড নাইট গুড ডে'র ফেসবুকীয় সংস্কৃতি অতিক্রম করে তারা বাংলাতে এখানে গণিত বা কৃষি চর্চা করছেন কিনা।
         আর আমাদের অসমের বন্ধুদের কথা তো বলেই লাভ নেই। কিছু কিছু মা -বাবা যেমন সগৌরবে ঘোষণা করেন, আমার সন্তান বাংলা এক্কেবারে বলতে লিখতে পারে না , জানো! তেমনি, বহু বঙ্গীয় বিদগ্ধজন বন্ধুদের আড্ডাতে সগৌরবে ঘোষণা করনে, আন্তর্জাল বাংলা লিখবার পড়বার জায়গা মোটেও নয়। কী বিচ্ছিরি রে বাবা অক্ষর গুলো ,আর কী ছোট! চোখেই দেখা যায় না। এই সব বিদগ্ধ জনেরা অনেকে নিজের প্রকাশিত বইতে ঢোল পিটিয়ে ফেসবুক ইমেল ঠিকানা দেন। আমাদের এমন রসের অভিজ্ঞতাও হয়েছিল যে একটি কাগজ 'আমাদের ফেসবুক ঠিকানা' লিখে পরে লিখেছেন আসলে ই-মেল আই ডি। সম্প্রতি এক ঔপন্যাসিক জীবনে প্রথম উপন্যাস লিখে বন্ধুদের বলে বেড়াচ্ছেন তিনি প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হয়ে গেছেন। লোকে পুরস্কার দিচ্ছে , সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। (না নিলে কি আর নিরাপদে থাকতে দিচ্ছেন?) । ফেসবুক ঠিকানা জানিয়ে আসলে নিজের নামটাই বাংলা বইতে ইংরেজিতে লিখে দিয়েছেন। ইউ আর এল---তুলে দিতে পারেন নি। বলাই বাহুল্য এসব কী জিনিস-- জানবার ন্যুনতম চেষ্টাও করেন নি। দরকারই বা কি, যদি অর্ধশিক্ষিত পাঠকদের রোমান হরফে নিজের  নাম লিখে ফেসবুক ঠিকানা বলে গেলানো যায়। এক 'মহান' লেখকতো নিত্য প্রবন্ধ লিখে জানান দেন, তিনি কবে রাজমোহন গান্ধিকে বা রামচন্দ্র গুহকে তাঁদের প্রবন্ধ পড়ে মন্তব্যের জায়গাতে ইংরেজিতে তীব্র সমালোচনা করে এসেছেন। লেখাই বাহুল্য তিনি সাইবার-হিন্দু। ভাবেন, আন্তর্জালের দুনিয়া চষে বেড়ান , মন্তব্য করতে জানেন জানাতে পারলে পাঠক ভিরমি খাবে। 
            তো এহেন পূর্বোত্তরীয় দুনিয়াতে ব্লগের জনপ্রিয়তা বাড়ানো, এবং এখানকার ভাষা সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রচার এবং প্রসারে আন্তর্জালকে কাজে লাগানো মোটামোটি সৌরজগত নিয়ে কেপলার গ্যালিলিওদের জ্ঞানার্জন এবং গবেষণার সংগ্রামের সঙ্গে সবটা না হলেও অনেকটাই তুলনীয়। সাধে কি আর এভারেস্ট বিজইয় করেছিলেন এডমণ্ড হিলারি? আমরা তো ভগবান বলে দূর থেকে প্রণাম করেই তুষ্ট ছিলাম। ফেসবুকের প্রাথমিক উচ্ছ্বাসে অনেকেই যদিও বা এসেছিলেন , বাংলাটা রপ্ত করেছিলেন এখন লাইক কমে টমে যাওয়াতে, বা সুজন বন্ধুদের পাশে বহু দুর্জনের সঙ্গেও একই দ্রুততায় দেখা সাক্ষাৎ হয়ে যাওয়াতে  অনেকে সেখান থেকেও সরে পড়েছেন বা পড়ছেন। যদিও তার পরেও অনেকে লিখছেন , নতুন যোগ দিচ্ছেন বলে ঈশানের পুঞ্জমেঘের মতো ব্লগ চালিয়ে যাওয়া যাচ্ছে, একই নামের ফেসবুক গ্রুপে ধীর লয়ে হলেও সদস্য বেড়ে চলেছে।  স্বপ্ন আছে একটি সাময়িক পত্রিকা ধাঁচের করবার। কবে সে হবে এখনি জানি না। ফেসবুক আর রোমান হরফের মোহ না কাটলে অদূর ভবিষ্যতে হবার নয়।
           যাই হোক, অনেকেই আছেন ফেসবুকের অপদেবতাদের ভয়ে দূরে সরে যাচ্ছেন। অথচ এসেছিলেন কিছু সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত হতে, সমভাবাপন্নদের বা সহকর্মীদের সঙ্গে জুড়তে। সরে যাচ্ছেন। অনেকেই আছেন সহজ কিম্বা সস্তা যশোপ্রার্থী নন, স্থায়ী কিছু কাজ করে দাগ রেখে জীবনে-- যে যেদিন সময় হবে বিদেয় জানাতে চান। তাদের জন্যে দরকারি নির্জনতার যোগান যদি কেউ এখনো যোগাতে পারে, তবে সে ব্লগ।  ফেসবুকের মতো এখানেও সহ ব্লগারদের সংগে বন্ধুত্ব বাড়াতে পারেন। পছন্দের ব্লগের সংগে জুড়তে পারেন। সেগুলো পড়তে এবং মতবিনিময় করতে পারেন।  কী করে, সেই নিয়েই একটি ছোট প্রায়োগিক প্রতিবেদন এখানে রাখছি। আপনার গোগোল মেইল থাকলে সুবিধে। না থাকলেও কথা নেই। যে মেইল আই ডি-ই  থাকুক যদি
           ইতিমধ্যে একটি ব্লগার একাউণ্ট খুলে রেখেছেন ভালো। নইলে খুলে নিন। আমরা ধরে নিচ্ছি আপনার ব্লগার একাউন্ট আছে। এবারে গোগোল হোম পেজ থেকে কী করে ব্লগার 'টাইম লাইনে' আসবেন দেখাচ্ছি।
ছবিটি দেখুনঃ




গোগোল হোম পেজের ডান দিকে একেবারে উপরে দেখবেন ৯টা ছোট বাস্ক মিলিয়ে একটা রুবিক কিউবের মতো বাক্স দেখাচ্ছে। সেটি আসলে গোগোলের বাকি সব প্রডাক্টের সংগ্রহশালা। ক্লিক করলেই আপনি লাল বৃত্তের ভেতরে যেভাবে দেখছেন ব্লগারের আইকন দেখবেন। ক্লিক করুন। আপনার ব্লগার ড্যাসবোর্ড খুলে যাবে নিচের ছবির মতোঃ


আপনার সব ক'টা ব্লগ দেখাবে শুরুতে। আমার অনেক গুলো ব্লগ দেখাচ্ছে, আর যেগুলো আছে সেগুলো view more কথার নিচে চাপা পড়ে গেছে। ক্লিক করলে খুলবে। একেবারে নিচে বামে দেখুন Reading list দেখাচ্ছে। আমি অসংখ্য ব্লগের সঙ্গে জুড়ে আছি । গেল ছ' সাত বছরে সেই সংখ্যা কত, আমি নিজেও মাঝে মধ্যে গুনতে ভুলে যাই। সেই লিস্টে ক্লিক করুন। লিস্ট দেখাবে নিচের ছবির মতো। বস্তুত এসব এমনি দেখায়, স্ক্রল করে খানিক নিচে গেলেই হলো। 




দেখুন বামে অনেকগুলো ব্লগের নাম দেখাচ্ছে। আরো বহু দেখাচ্ছেও না এই ছবিতে। সেগুলো আছে। এসব হচ্ছে সেই সব ব্লগ যাদের সঙ্গে আমি জুড়ে আছি। অনেকটা আপনার ফেসবুক বন্ধু তালিকার মতো। আর ফেসবুক হোম পেজে যেমন বন্ধুরা কেমন স্টেটাস দিলেন দেখিয়ে থাকে, ব্লগার্স তেমনি শুরু থেকেই দেখাতো আপনার ব্লগার বন্ধুদের কে কী লিখলেন তার প্রিভিউ। এই যেমন এক বন্ধু আমার বাংলাতে মহাভারত লিখছেন। নীরবে লিখে যাচ্ছেন তিনি বহুদিন ধরে। এই ব্লগে গেলেই বুঝবেন তিনি সস্তা যশোপ্রার্থী নন, আড়ম্বর ভালো বাসেন না। কাজটা ভালো বেসেই করে যাচ্ছেন। তো সেখানে ঐ নিচের more লেখাতে ক্লিক করে বা তার লেখার শিরোনামে ক্লিক করে আপনি তার ব্লগে পৌঁছে যেতেই পারেন এবং পড়তে পারেন। এভাবে যেকোনো ভালো লাগা পোষ্ট আপনি বিস্তৃত পড়তে পারেন, নিচে মন্তব্য করে ব্লগারকে উৎসাহী বা নিরুৎসাহী করতে পারেন। এভাবে একে একে পড়ে যান। আপনার রুচির সঙ্গে মিলে এমন ব্লগার বন্ধু বাড়িয়ে যান। 



এবারে , কারো সঙ্গে জুড়ে থাকবেন কী করে? আপনার ব্লগার ড্যাসবোর্ডে তার পোষ্ট প্রিভিউ দেখবেন কী করে? ফলোয়ার গ্যাজেটে ক্লিক করে। এখানে দেখুন এই ব্লগে যেমন আমিও জুড়ে আছি। 


এই ব্লগে ফলোয়ার খুবই কম। কিন্তু কোনো কোনো ব্লগে এই সংখ্যা শ বা হাজারও অতিক্রম করে। সেটি নির্ভর করবে আপনি কতটা জুড়তে জানেন এবং পারেন তার উপরে। এই যেমন এই হিন্দি কবির ব্লগে দেখুন, সংখ্যাটা ৩৭০ ঃ





এই, এমন ফলোয়ার গ্যাজেট আপনার ব্লগেও জুড়তে পারেন। তার জন্যে আপনাকে ব্লগার্স ড্যাসবোর্ড থেকে লে আউটের পাতাতে যেতে হবে, সেখানে Add a gadget এ ক্লিক করে এই গ্যাজেট এবং আরো অনেক দরকারি গ্যাজেট পেয়ে যাবেন। তার মধ্যে ব্লগ লিস্ট এবং লিংক লিস্ট খুব দরকারি। নিচের ছবিতে দেখুন। এই দুই গ্যাজেট নিয়ে নিন। ব্লগার্স বন্ধু হলে আপনি ব্লগ লিঙ্কে জুড়ে যেতে পারেন। যাকেই আপনি তাঁর ব্লগে গিয়ে ফলো করবেন, তাঁকেই তখন এই তালিকাতে দেখাবে। রিডিং লিস্টে দেখাবে তার লেখার প্রিভিউ। বাকি যেকোনো ব্লগ বা দরকারি সাইটের লিংক আপনি লিঙ্ক লিস্টে জুড়ে রাখবেন। আমাদের ঈশানের পুঞ্জমেঘ ব্লগ বা কাঠের নৌকা দেখুন। এমন অনেক বাংলা বা অন্য ভাষার কাজের ব্লগ তালিকা পেয়ে যাবেন। এখানে সেরকম তালিকা সংখ্যা কম , কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ব্লগগুলোতে সেই তালিকা অনেক দীর্ঘ।


আশা করছি, আপনার আগ্রহ বাড়াবার জন্যে এই টুকু যথেষ্ট। এর পরেও কৌতুহল আপনার থাকতেই পারে। যেকোনো প্রশ্ন রাখুন মন্তব্যের জায়গাতে। এখন এখানে মন্তব্য করবার সুবিধে হলো, সেগুলো সরাসরি গোগোল প্লাসের সামাজিক সাইটেও চলে যায়। ফলে, আলাপ দু'জনার হয়েও অন্যের নজর এড়াবে না। নির্জনতা পছন্দ করেন এমন অনেকে ফেসবুকে ভিড় করেন না তেমন, একা একা এখানে ঘুরে বেড়ান। শুনছি, গোগোল এই প্লাস জিনিসটি তুলে দেবে। যখন দেবে তখন  দেখা যাবে। আগেও বিকল্প ছিল পরেও থাকবে। কিন্তু আপাতত ব্লগার্স তুলে দেবার কোনো সংবাদ নেই।

কোন মন্তব্য নেই: