(অভিনয় ত্রিপুরা জানুয়ারি'২০১৩-জুন'২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত)
।। জয়শ্রী ভূষণ ।।
.
........রবিবারের দুপুর বেলা, চারতলার উপর থেকে দেখছিলাম, সামনেই আরেকটি এপার্টমেন্ট এর সামনে নীচে কিছু মানুষ সবাই প্রায় আমার চেনাশোনা দাড়িয়ে আছেন , হয়তো কিছু কথা বলছেন, কিরকম জানি একটু খটকা লাগলো, মনের ভেতরে একটু অস্বস্তি ও হতে লাগলো, কেউ আবার মারা গেলো না তো? যদি যায়ই তো আবার কার ঘর খালি হল, এসব শত প্রশ্ন উত্তর আমার মনের ভেতর আনা গোনা করছিল, তবুও শুধু থেকে থেকে আমার ওই এপার্টমেন্ট এর চারতলার আমার এক পাড়াতুতো দিদির প্রায় নব্বই ছুঁই ছুঁই শ্বশুর মহাশয়ের কথাই মনে হচ্ছিল। আমার নয় বছরের দুরন্ত ছেলেকেও অনেক বার অনুনয় বিনয় করলাম, বাবা একটু দেখনা কী হোল কার? আমার ছেলের কাছে আবার সময় বাড়ন্ত, একে ছুটির দিন রবিবার, বলল ম্মাম্মা , আমার কাছে সময় নেই, ম্যাচ শুরু হয়ে যাচ্ছে, বলেই কোন মতে ব্যাট কাঁধে ছুটল, তার মাঝেই একবার হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বলে গেলো , হ্যাঁ ম্মাম্মা, তুমি সত্যি বলেছ, ওই ফ্ল্যাটে কে জানি মারা গেছে, তুমি একবার ফোন করে নাও কাউকে।
আমার কেন জানি না বুকের ধুকধুকানি আরও বেড়ে গেলো, আমি তো তখন থেকে অনেককেই ফোন করেই চলেছি, কাউকেই পাচ্ছি না, তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিল, এখন তো আর সেটাই সত্যি হল। ঠিক তক্ষুনি একজনকে ফোনে পেয়ে গেলাম, জিগ্যেস করতেই যে নামটি বলল, আমার মনে হল এই কি আমাদের নিয়তি, যে দিদির শ্বশুরের কথা ভাবছিলাম , উনি নন, উনার ছেলে অর্থাৎ সেই দিদির বর, মাত্র ৪৬ বৎসর বয়স, তিনি মারা গেছেন।
উফফ্ আবার প্রকৃতির সেই উদ্ভট খেলা, আমাদের কোন কিছুই করার নেই, আমার বুক ফেটে যাচ্ছিল, যে চলে গেলো তাকে নিয়ে ভাবছিলাম না, আমি ভাবছিলাম সেই দিদির কথা, কত হবে খুব বেশী হলে ৩৫/৩৬, ছেলেমেয়ে ও নেই, শুধু নব্বই বৎসর বয়সের ভারে নুব্জ এক বৃদ্ধকে নিয়ে একা ফ্ল্যাটে কি করে দিন কাটাবে।
এই হচ্ছে আমাদের পরিণতি,আমি আবার জীবনের চূড়ান্ত সত্য মৃত্যু কে কেন জানি না খুব সম্ভ্রম করি, এর ভয়ংকর রূপ সবার জানা নেই, আর যে জানে , বোঝে, সে জীবনের চরম মর্ম উপলব্ধি করতে পারে......। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ছুটে গেলাম নিচে, কিন্ত কিছু করার নেই আমার। পরে একদিন দিদির সাথে দেখা করতে গেছিলাম...যাওয়ার আগে নিজেকে তৈরি করছিলাম মনে মনে আসলে বলতে পারেন নিজের মনে মনে ওর সামনে দাঁড়ানোর সাহস যোগাচ্ছিলাম...সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার ছিল না,…..ও যখন ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সেই রোজকার পরা লাল কালো একটি মাক্সিতে…...গিয়ে যা বলবো ভেবেছিলাম আর বললাম না,….. শুধু বললাম একমাত্র সময়ই তোমার এই ব্যথা কমাতে পারবে।...আমি নিজে ও একটু স্বস্তি পেলাম, যাক্ একেই সব হারানোর ব্যথা...তার উপর সাদা শাড়ি পরা আরও নানা কিছু না খাওয়া না বলা না পরা থেকে বোধহয় এই দিদি রেহাই পাবে। বলল কিচ্ছু ভালো লাগে না । আমি বললাম, এই হচ্ছে জীবনের আসল ছবি, আসল রূপ, সবার অজানা, কিন্তু সবাইকে একদিন না হয় একদিন জানতেই হবে। বলল আমি কি নিয়ে বাঁচব, আমার আর ঘরে থাকতে ভালো লাগে না, এই ফ্ল্যাটে দমবন্ধ হয়ে আসে, রাতে ঘুম আসে না, আমার ভেতরে তোলপাড় হচ্ছিল, খুব কষ্ট হচ্ছিল, বললাম তোমাকে এবার ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে, গৃহবধূ থেকে এবার তুমি একজন সম্পূর্ণ মানুষের মত বাঁচার যুদ্ধ শুরু করো, মনে মনে বললাম আসলে তো ভালো থাকার, ভালো লাগার অভিনয় শুরু করতে হবে, আর এই অভিনয় করতে করতে হয়ত সময়ের দৌলতে একদিন ভালো লাগাতে সক্ষম হবে।
এমনিতেই আমার…….কিছুদিন ধরেই কেন জানি না কিচ্ছু ভালো লাগছে না, ভালো না লাগার কারণটাও খুঁজে পাচ্ছি না..........আমার অবশ্য প্রায়ই মানে অনেকটা ঋতু পরিবর্তনের মতো ভালো না লাগার অসুখটা হয়, ডাক্তারীটাও আমিই করি, নিজেকে বোঝাবার,যুক্তি দিয়ে , অনুভব দিয়ে, সবার ভালো মন্দে মিশিয়ে নিজেকে ভালো লাগার মরশুমে নিতে নিতে মনে হয় আমাদের সবার মধ্যেই বোধহয় কিছুটা হলেও অল্প বিস্তর বোধের,গুণীর, ধ্যান-ধারণা বিরাজমান। না হলে রবিঠাকুরের জ্ঞানের কথা উনার গানের কলির মাধ্যমে যখন আমি গুনগুন করি... “অন্তর গ্লানি সংসার ভার, পলক ফেলিতে কোথা হাহাকার”......কেন যে চোখের কোল বেয়ে শ্রাবণের ধারার মত জলের ধারা বইতেই থাকতে, আর সবথেকে মজার কথা হল এই ধারাই আমাকে আমার মনের সমস্ত গ্লানিকে ধুইয়ে দেয়, আবার নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। মনে হয় সত্যি তো, এই পলকের পরের পলকে আমার কিছু আমাদের কতকিছু হারিয়ে যাবে চিরদিনের মত কেন অবুঝের মত মন খারাপ করা, এই পৃথিবীতে আমাদের সবার এত কম সময় তবু আমরা প্রায় কিছু না করেই জীবনটা বৃথা নষ্ট করি। আমার আজকাল মনে হয় জীবনে আমাদের একমাত্র কাম্য শুধুই আমাদের “ভালো লাগা” এবং “ভালো থাকা”। কিন্তু ভালো লাগা ও ভালো থাকা একা একা হয় না , সবাই মিলে ভালো থাকলেই, সবার ভালো লাগলেই নিজের ভালো লাগে, নিজেও ভালো থাকা যায়। আর নিজে ও সবাই ভালো থাকতে হলে , সবাইকে ভালো লাগাতে হবে। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য ভালো লাগাটা খুব জরুরী। ভালো না লাগাটা ও একপ্রকারের ভয়ংকর ছোঁয়াচে অসুখ, আর একেই বলে বিষণ্ণতা। শুধু কি আমার…. না আমার মত সবার,… ঠিক এরকম সময় বা এধরনের মুহূর্ত গুলিতেই এই ধরণের অনুভূতি হয়, এর সদুত্তর পাঠকরাই বেশী জানবেন। তাই সবাইকে ভালো লাগা তে হলে আমাদের “সমাজের থিয়েটার” ও “নারী” দুজনকে ভালো থাকতে হবে।
আমার স্বল্প জ্ঞানে, --- থিয়েটার হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখানে অভিনেতা ও অভিনেত্রীরা অভিনয় করেন ও দর্শক হচ্ছেন ...যারা, সেই থিয়েটারের খুব পাশে অবস্থান করেন ও সেই ঘটনা ও দৃশ্যাবলী সচক্ষে অবলোকন করেন । আমার মতে থিয়েটারের অনেক রকম আছে, কিন্তু মূল যে থিয়েটারের ধারণাটা গ্রহণ করা হয়েছে তা নেওয়া হয়েছে, আমাদের সমাজ নামক থিয়েটার থেকে , এমনকি যে ঘটনাবলী ও নাট্যরূপ আমরা মঞ্চে উপস্থাপন করি তা ও কিন্তু সরাসরি আমরা আমাদের দৈনন্দিন সমাজ থিয়েটারের থেকে প্রভাবিত হয়েই করে থাকি। সময়ের সাথে সাথে , সভ্যতা, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশের সাথে সাথে থিয়েটার ও মঞ্চের অনেক “রকম” ও বেড়ে গেছে। মানব সভ্যতার বিকাশের আগে আদিম যুগে, যখন অক্ষর আবিষ্কার হয়নি, আগুন ও কৃষি ব্যবহারের ও আগে, মানুষ নিজের জীবনের ঘটনাবলী, আশেপাশের দেখা, কাল্পনিক ঘটনাবলী ইত্যাদি , বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করার একমাত্র পন্থা ছিল মানবিক অঙ্গ ভঙ্গি, পরে আস্তে আস্তে যখন ভাষার উৎপত্তি হল, অক্ষর, পুঁথি ইত্যাদির পর , বিদ্যুৎ, দূরভাষ, বেতার, টেলিভিশন, ও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও বিকাশের ফলে, নাটক , মঞ্চ, অভিনয়ের সংজ্ঞা অনেকটাই বদলে গেছে। কিন্তু বদল হয়নি নাটকের, নাটকের বিষয়বস্তুর, এবং সবথেকে জরুরী হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের নাটক, মঞ্চ, সবকিছুই এই সমাজ থিয়েটার ও এই সমাজ থিয়েটারের মানুষের জন্য কেন্দ্রীভূত , হতে পারে তা বিনোদনমূলক, শিক্ষামূলক, সমাজসংস্কার মূলক ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের। আর এই সমাজ থিয়েটারের উৎপত্তি, ব্যুৎপত্তি, ও বিকাশের শেকড় হচ্ছে নারী। তাই সমাজ থিয়েটার ও নারী এবং আজকের যুগের প্রজন্ম , সামাজিক বিকাশ , বিনোদন, আমাদের মূল্যবোধ, ও তার অবক্ষয় এবং আমাদের ভবিষ্যৎ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।
ছোটবেলায় দেখেছি, নিয়মিত নাটক ও কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে স্থায়ী বা অস্থায়ী মঞ্চের প্রয়োজন হত এবং সবাই মিলে সেই অনুষ্ঠান গুলি আমরা দেখতে যেতাম, উপভোগ করতাম। রেডিও নাটকে ও ঠিক একই রকম, জনে জনে সবার তো ছিল না, এক রেডিও তে প্রায় অনেকে মিলে সবাই রেডিও নাটক শুনতাম। যে কোন অনুষ্ঠান , পূজা , পার্বণ এলেই সেই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গান,বাজনা, নাটক ইত্যাদির আয়োজন করা হত। কিন্তু নাটকের বিষয় বস্তু বা প্রেক্ষাপট আজকালকার টিভি সিরিয়েল গুলির মত বেশীরভাগই নারী কেন্দ্রিক ছিল না বলেই আমার মনে হয়। সব ধরণের ঘটনাবলী তাতে প্রাধান্য পেত।
বেশ কয়েক বৎসর আগেও আজকালের মত এত টিভি চ্যানেলের ছড়াছড়ি ছিল না, আর টিভি সিরিয়েলের ও রমরমা ছিল না।
আমার এখনও বেশ মনে আছে, যখন আমি শিলচরে আসি , ১৯৯৭/১৯৯৮ হবে, অফিসে বিশেষ করে মহিলা সহকর্মীরা টিভি সিরিয়েল নিয়ে আলোচনা করতো। আমি যদিও খুব বুঝতাম না, বা বোঝার চেষ্টাও করিনি বললেই সত্যি হবে, কিন্তু পরে স্টার প্লাস এ নীনা গুপ্তার অভিনীত সিরিয়েল “শ্বাস” এর জনপ্রিয়তার ব্যাপ্তি দেখেছিলাম, পড়েছিলাম, এবং কয়েকটি এপিসোড ও আমি দেখার চেষ্টা করেছিলাম , যদিও ইচ্ছা ও সময়াভাবে তেমন করে দেখা হয়ে উঠেনি। ভালো লেগেছিল নীনা গুপ্তা অভিনীত চরিত্রটি, সেখানে দেখানো হয়েছিল, যে একজন পুরুষ কিভাবে চট করে তার ভালো লাগা বা ভালোবাসাটুকু আহরণ করতে পারে, দায়দায়িত্ব বোধকে, ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে। সমাজ তা মেনে ও নেয় কিন্তু মেয়ে বা কারো বিবাহিত স্ত্রীরও কি সেরকম মানসিক চাহিদা থাকতে পারে না, আর যদি থাকেও তা কি অস্বাভাবিক? এরকম কিছু সম্পর্কের টানা পোড়েন নিয়েই ছিল নাটকটি। তার পরে চ্যানেলের সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গেছে ও সেই সাথে সিরিয়েল ও টেলি নাটক, এবং সাথে সাথে টিভির দৌলতে ভালো ভালো আর্ট ফিল্ম গুলি ও বানিজ্যিক সিনেমার সাথে সাথে ভালো সিনেমা দেখার ও সুযোগ টিভি জনসাধারনের জন্য করে দিচ্ছে। আজ এত বৎসর পরে যখন বাংলা সিরিয়েলের রমরমা দেখি, আমার মার... আমার সাথে কথা বলার সময় নেই , কারণ সিরিয়েল শুরুর সময় হয়ে গেছে, মাঝে মাঝে রাগারাগি করি, বকাঝকা করলেও, মনে মনে ভাবি, থাক না আমার মার এই ভালো লাগাটুকু। মাত্র ৩২ বৎসর বয়সে বিধবা হয়েছেন। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই মার মনের খুশীর, আনন্দের রঙ ফেরাতে যদিও আমি আপ্রান চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেই সময়ের সামাজিক , পারিবারিক ও মানসিক পরিস্থিতি আরও অনেকের মত আমার মায়ের মন কেও উদাসি বৈধব্যের রঙেই রাঙিয়ে ছিল। কালারস চ্যানলের “বাল বহু” সিরিয়েলটি শুরুতে মাঝে মাঝে দেখতাম, যারা অভিনয় করছেন, অনেকেই মঞ্চের মানুষ, অন্যরকম এবং একটি সামাজিক কুপ্রথা যা মেয়েদের নিয়ে, তাই আমি সময় পেলেই একটু চোখ রাখতাম, আস্তে আস্তে বাস্তব পরিণতি এবং পরে আনন্দির ডিভোর্স, এবং ডিভোর্সের পরেও মেয়ের মত শ্বশুর বাড়িতে স্থান পাওয়া, একটু অতিনাটকীয় হলেও আমি অপেক্ষা করছিলাম, এই ধারাবাহিকের লেখক কতটা সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারেন, আনন্দিকে কি সারাজীবন ওভাবেই ব্রাত্য হয়ে জীবন কাটাতে হবে, যা আজকের দিনেও বেশীরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারে অল্প বয়স্কা তরুনীরা স্বামী হারা , স্বামী পরিত্যক্তা হয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়, কিন্তু হঠাৎ একদিন দেখলাম, “বাল বহু” সিরিয়েলে আনন্দির শ্বশুর বাড়ির সবাই ওর ভবিষ্যৎ ওর বিয়ে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন। আপনাদের জানাতে কুণ্ঠা বোধ হলেও সত্যি সেদিন রাতে ওই এপিসোডের অংশটি দেখার পর কেন জানি না, আমি ভীষণ খুশী হয়েছিলাম বললে ভুল হবে, যাকে বলে আমি রীতিমত খুশীতে টগবগ করছিলাম। পরে যখন আমি আমার এধরনের আভিব্যক্তি নিয়ে চিন্তা করছিলাম, আমার মনে হয়েছে, যে এই ধরণের টিভি জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক , সমাজ সংস্কারে এক বিশাল পদক্ষেপ যা বিপুল সংখ্যক জনসাধারণকে প্রভাবিত করতে পারবে।
যদিও ও আমি টিভি খুবই কম দেখি, তবুও আমার বিগত কয়েক বৎসরের পরিসংখ্যান বলে, যে বেশীর ভাগ চ্যানেলের ধারাবাহিক নাটক গুলি কিন্তু বিশেষ ভাবেই নারী কেন্দ্রিক এবং টিভি হচ্ছে এখনকার সময়ের সবথেকে বড় মঞ্চ যেখানে সমস্ত নাটক বা সিরিয়েল বা নাটকের ঘটনাবলী, এমনকি নাট্য চরিত্রগুলির পোশাক আশাক সমস্ত কিছুই বহুল ভাবে অনুকরণ হচ্ছে আমাদের সমাজের সর্ব স্তরের দর্শকদের মধ্যে। কয়েক মাস আগে সম্ভবত সেই “কালারস” চ্যানেলেই অন্য একটু নাটকের অংশ দেখছিলাম, পরে আরও কয়েকদিন দেখে আমার খুব ভালো লাগলো মনে হল হ্যাঁ, এই নাটকটিও আমার মনে হয় একটু অন্যরকম হতে পারে, একজন অল্প বয়সের বিধবা মহিলা না বলে মেয়েও বলা যায়, এক ছেলে ও মেয়ে কে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন, এবং ওদের দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট নিয়েই নাটকের শুরু, মনে মনে ভাবছিলাম,এখানেও কি নাট্যকার সাহসী হচ্ছেন, পরে দেখেছিলাম ও ভালো লেগেছিল, যে এই নাটকের নাট্যকার একটি সাংবাদিক ছেলে সমাজ ও তাঁর পরিবারকে বোঝাতে পেরেছিল, বৈধব্য মেয়েটির জন্যই শুধু কেন আসবে শাস্তি রূপে, সারা জীবনের সমস্ত রঙ, হাসি, কেন ভুলে যাবে সে, এই নাটকের ছোট্ট মেয়েটির মাধ্যমে সাংবাদিক ছেলে ও সেই মহিলা উনার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন সত্যি করে দেখিয়েছিল।
অনেক অনেক বৎসর আগে প্রায় ২৫/৩০ বৎসর হবে, তখন আমি সীমান্ত শহর করিমগঞ্জে থাকি, লিখতে লিখতে হঠাৎ করে মনে পরে গেল “OSHIN” নামের মেয়েটির কথা। বাংলাদেশ টিভির দৌলতে এই “OSHIN” নামক ধারাবাহিক নাটকটি আমি নিয়মিত দেখতাম । ঐ নাটকটির মাধ্যমে জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের মেয়েদের সামাজিক এবং তার ফল স্বরূপ মেয়েদের মানসিক উত্তান পতন ও জীবন সংগ্রামের জটিল ও তৎকালীন পরিস্থিতির একটি পূর্ণ ছবি আমি দেখেছিলাম। সেই ধারাবাহিক নাটকে ছোট্ট ওশীণ ছোটবেলা থেকেই মা বাবা ছোট ভাই বোন, পরে যেখানে কাজ করত সেখানে মালিক ও পরে স্বামীর সাথে সমস্ত ঘটনাবলী একজনকে নাতিও হতে পারে, যে বৃদ্ধা বয়সে ওশীণকে দেখভাল করতো তাকে বলছে, ওশীণ নাটকটির সাথে সাথে ওশীণের সাথে সাথে আমিও বড় হয়ে গেলাম,শেষটা আর দেখা হয়নি, কিন্তু আজ মনে হয় শুধু জাপান নয়, পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই মেয়েদের সামগ্রিক অবস্থান একই । এত অপ্রতিকূলতার মধ্যে ও ওশীণ কিন্তু ভালো থাকতে আজীবন চেষ্টা করেছিল সবাইকে নিয়ে। টেলিভিশনের থিয়েটারের মঞ্চের মত বিশাল ব্যপ্তির মঞ্চের জন্যই ওশীনের মত বলিষ্ঠ চরিত্রকে জানতে পেরেছিলাম। নাটক বা থিয়েটার আমাদের সমাজের আয়না, আর টেলিভিশন হচ্ছে যেখানে অনেক রকমের আয়না লাগানো আছে, আমরা একই সাথে বিভিন্ন আয়নায় আমাদের সমাজের বিভিন্ন রূপ দেখতে পাই।
কোন আয়নায় আমরা নিজেকে দেখবো তা আমাদের জানতে হবে, আর সেই জানার মত শিক্ষার জন্য সমাজ থিয়েটার ও নারীকে ভালো থাকতেই হবে, কারণ নারী হচ্ছে এই সমাজের জীয়ণকাঠী। নারীরা শুধুমাত্র পুরুষের মন ভালো লাগার বস্তু নয়, ভোগ্য পণ্য নয়, মেয়েদের ও মন আছে, দুঃখ কষ্ট, ব্যথা বেদনা আছে, এই পৃথিবীতে যত প্রাণ আছে, সব এ সমাজ থিয়েটারের নারীর অবদান, এ সত্য গুলি আমাদের বারবার বিভিন্ন মঞ্চের মাধ্যমে, নাট্যকারদের নাটকের কথায়, বিভিন্ন আয়না সমাজ থিয়েটারের দর্শকদের দেখাতে হবে,বোঝাতে হবে, তবেই আমরা সবাই ভালো থাকবো। আমার এতসব লেখালিখি আপনাদের ভালো লাগলো কি না জানি না,এ মুহূর্তে কবিগুরুর কথায় বলতে ইচ্ছে করছে, ...... “আমার কীসের ব্যথা, যদি জানতেম তোমায় জানাতাম”... তবে লক্ষ্মণ ঘটক বাবু কে আবার ও ধন্যবাদ, যে উনি আমাকে আপনি লিখুন বলে যে আমার ভালো থাকার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন , কারণ লিখতে লিখতে আমার ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে, এত সব সমস্যা সঙ্কুল ব্যবস্থা, পরিবেশ, অপরিণত মানসিকতা , এবং চতুর্দিকে হায়নার দঙ্গলের মধ্যে সমাজের নারীরা বেঁচে থাকলেও , মঞ্চ , নাটক , নাট্যকার ও আমরা যারা সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই, তারা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ও যাবো। সবাই ভালো থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন