গোটা অনুষ্ঠানের ছবিগুলো দেখুনঃ
অনেক গুলো আবৃত্তি, বিশেষ করে পূর্বোত্তরের কবিদের, সহ প্রায় চল্লিশটি ভিডিওর সংগ্রহ দেখুন একের পর এক। দেখার আগে বিনম্র অনুরোধ ব্লগের মূল ভিডিও যেটি রয়েছে উপরে বামে সাইড বারে , সেটি বোতাম টিপে বন্ধ করে দিন। ইংরেজি প্লে লিস্ট লেখাতে টিপুন। ভিডিওর সারি দেখাবে।পছন্দের ভিডিও বেছে নিন।
***********০০০***********
২৯ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তিনসুকিয়া, দুর্গাবাড়ি রঙ্গ মঞ্চে 'উজান সাহিত্য গোষ্ঠী'র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দু'দিনের উজান অসম বাংলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা -- ‘শুধু কবিতার জন্যে’ । যোরহাট থেকে ডিগবয় এই বিস্তির্ণ অঞ্চল থেকে প্রায় আশিজন প্রতিযোগী, সকাল থেকে রাত নটা অব্দি হল ভর্তি দর্শক নিয়ে উৎসবের চেহারা নিয়েছিল অনুষ্ঠান। তারই উদ্বোধনী সঙ্গীত প্রথম দিন সকালে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে দু'ভাগে হলো, দু'ভাগে নিতে হলো।
‘উজান’ গেল সাত বছর ধরে তিনসুকিয়া থেকে প্রকাশিত একটি ছোট কাগজ। কাগজটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে সংগঠন ‘উজান সাহিত্য গোষ্ঠী’। সংগঠন কাগজ বের করা ছাড়াও নিয়ম করে ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং ১৯শে মেতে ভাষা শহীদ দিবস পালন করে থাকে, সাহিত্য আসরের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও এটা ওটা করে থাকে। এবারে সেপ্টেম্বরের শেষ দু’দিন আয়োজন করল উজান অসম আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। এতো বড় অনুষ্ঠান করবার জন্যে উজানের শুভানুধ্যায়ীদের নিয়ে একতা পরিচালন সমিতি গঠিত হয়েছিল। পৃষ্টপোষক এবং উপদেষ্টাদের নিয়ে ডাঃ নক্ষত্র বিজয় চৌধুরী এবং সৌমেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে যথাক্রমে সভাপতি এবং সম্পাদক করে প্রায় বাহান্নজনের এক পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়। সেই পরিচালন সমিতি দু’মাসের টানা শ্রমে এক সুন্দর আর সফল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফেলেন। গোটা অনুষ্ঠানকে নাম দেয়া হয়েছিল, ‘শুধু কবিতার জন্যে’ । সত্যি বলতে এতো সুশৃঙ্খল বাংলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অতি অল্পই হয়েছে এই শহরে।
২৯শে সকালে সংগঠনের সভাপতি সুজয় রায় সংগঠনের পতাকা তুলে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। গণ শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্মশতবর্ষের কথা মনে রেখে অনুষ্ঠান মঞ্চটি তাঁর নামে উৎসর্গ করা হয়েছিল। সেই হেমাঙ্গ বিশ্বাস স্মৃতি মঞ্চ উন্মোচন করেন অসম সাহিত্য সভার তিনসুকিয়া শাখার সভাপতি আব্দুল রৌফ। তিনি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জীবন এবং কর্মের উপর আলোকপাত করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। এবং প্রস্তাব করেন, অন্য বছর ২১ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান যেখানে উজান একা আয়োজন করে, এবারে তা সবাই মিলে করা হোক, আরো বড় করে। এর পরেই জীবন কৃষ্ণ সরকার এবং রূপা পালের নেতৃত্বে সমবেত দলের উদ্বোধনী গণসংগীত পরিবেশিত হয়। তিনসুকিয়ার প্রবীণ বিজ্ঞান শিক্ষক এবং কর্মী, প্রাচীন আবৃত্তি শিল্পী ধুর্জটি প্রসাদ মজুমদার প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন। তিনি তাঁর আবৃত্তি জীবন সেই সঙ্গে তিনসুকিয়ার সাংস্কৃতিক জীবন নিয়ে ছোট এক বক্তৃতা করে নিজে এক আবৃত্তি করে শোনান। এর পরেই বিচারকদ্বয়কে বরণ করে সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেয়া হয়। হাওড়া থেকে আমন্ত্রিত হয়ে এসছিলেন রবীন ভট্টাচার্য আর দেবাশিস রায়। রবীন ভট্টাচার্য ‘উজান’ কাগজের সপ্তম সংখ্যাটিও উন্মোচন করেন। কথা ছিল গুয়াহা্টি থেকে গৌতম ভট্টাচার্যও আসবেন। কিন্তু তাঁর মায়ের স্বাস্থ্যচিন্তা তাঁকে আটকে দেয়াতে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়েছিল। তেমনি হবার কথা ছিল বইমেলা। আসবার কথা ছিল গুয়াহাটির ভিকি পাব্লিশার্সের পূর্বোত্তরের প্রকাশনা নিয়ে। রওয়ানা দিয়েও পথের বিভ্রাটের জন্যে নওঁগা থেকে ফিরে যেতে হলো। তাতে প্রত্যাশা অনেকটাই অপূর্ণ হয়ে রইল।
প্রথম দিনের প্রতিযোগিতা শুরু হয় ক বিভাগের প্রথম পর্ব দিয়ে। পুরো প্রতিযোগিতাকে সাজানো হয়েছিল এই ভাবে। দুটো বিভাগ ছিল ক এবং খ। দশম শ্রেণি থেকে উপরে সবাই ক, আর পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি খ। দুই বিভাগের তিনটি পর্ব। প্রথম পর্বে নিজের পছন্দের রবীন্দ্র কবিতা আবৃত্তি করতে হয়েছিল। সেখান থেকে ক বিভাগে পঁচিশ জন, খ বিভাগে কুড়িজনকে দ্বিতীয় পর্বে তুলে নেয়া হয়। এই পর্বে পূর্বোত্তরের কবিদের কবিতা আবৃত্তি করতে হয়। কবিরা ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস, অশোক বিজয় রাহা, অমলেন্দু গুহ, ঊর্ধ্বেন্দু দাশ, শক্তিপদ ব্রহ্মচারী, সঞ্জয় চক্রবর্তী, অমিতাভ দেব চৌধুরী, স্বর্ণালী বিশ্বাস ভট্টাচার্য। ক বিভাগ থেকে পনের জনকে এবং খ বিভাগ থেকে দশজনকে চূড়ান্ত পর্বে তুলে নেয়া হয়। প্রথম দিনে ক বিভাগের দুটো পর্বের প্রতিযগিতা হয়। ডিগবয় থেকে যোরহাট –এই বিস্তৃত এলাকা থেকে চল্লিশজন প্রতিযোগী যোগ দেন এতে। পরদিন খ বিভাগের সব ক’টা এবং ক বিভাগের চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চূড়ান্ত পর্বে বাংলাবিশ্বের আধুনিক কবিদের কবিতা বেছে নেয়া হয়েছিল। এদিনও সেই একই এলাকাগুলো থেকে আটত্রিশজন প্রতিযোগী যোগ দেন।
খ বিভাগে পঞ্চম পুরস্কার বিজয়ী নিকিতা ভট্টাচার্য |
৩০শে সন্ধ্যেবেলা এক সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জীবন কৃষ্ণ সরকার এবং রূপা পালের নেতৃত্বে সমবেত সঙ্গীতের দল গণ সঙ্গীত পরিবেশন করেন, একক রবীন্দ্র সঙ্গীত গান করেন বর্ণালী চৌধুরী এবং ধ্রূপদী সত্রীয়া নৃত্য পরিবেশন করেন শর্মিষ্ঠা গুহ। রবীন ভট্টাচার্য এবং দেবাশিস রায় বেশ কিছু অনবদ্য আবৃত্তি করেছিলেন আগেরদিনও । চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতার পরের অনুষ্ঠানেও এঁরা বেশ কিছু কবিতা যৌথকণ্ঠে আবৃত্তি করে উপস্থিত স্রোতাকে মুগ্ধ করেন। অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত এবং সুশৃঙ্খল ছিল সেই অনুষ্ঠান।
ক বিভাগে প্রথম পুরস্কার বিজয়ী সুপ্রতিম পুরকায়স্থ |
ক বিভাগে দ্বিতীয় পুরস্কার বিজয়ী মোহনা বনিক |
ক বিভাগে তৃতীয় পুরস্কার বিজয়ী উমা ভাওয়াল |
ক বিভাগে চতুর্থ পুরস্কার বিজয়ী নমিতা ঘোষ |
ক বিভাগে পঞ্চম পুরস্কার বিজয়ী সুদীপ ঘোষ |
পুরস্কার হিসেবে প্রতিযোগীদের হাতে তুলে দেয়া হয় একটি ফলক, প্রমাণ পত্র এবং নগদ অর্থমূল্যের চে ক। পুরস্কারগুলোর অর্থমূল্য ছিল যথাক্রমে ৫০০০, ৩০০০, ২০০০, ১০০০ এবং ৫০০টাকা। এই অর্থমূল্য সর্বশ্রী বাবুল পুরকায়স্থ( পরিচালক, সঞ্চালক ইউনিশন চেনেল, তিনসুকিয়া), নিখিলেশ্বর চৌধুরী, ডাঃ কীর্তি রঞ্জন দে, অনুপ গোস্বামী, পরিমল ভট্টাচার্য, সুজন ভট্টচার্য, অনুপ রায়, বাণীব্রত রায় এবং ভাষ্কর দত্তের সৌজন্যে দেয়া হয়। ফলকগুলো দেয়া হয় যথক্রমে সোমনাথ ব্যানার্জীর পিতা হরনাথ ব্যানার্জীর স্মরণে, ইণ্ডিয়ান স্পোর্সের শঙ্কর ব্যানার্জীর পিতামহ মন্মথ নাথ ব্যানার্জী এবং বাবন ঘোষের সৌজন্যে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন