“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১২

কলাবউ



জ ষষ্ঠী।
স্নান শেষে মণ্ডপে ফিরেছে কলাবউ। এবার শুরু হবে পুজা। ঘিয়ের প্রদীপ, ধূপ ধুনোর গন্ধে আজ মাতোয়ারা এই পট্টি। কাশর বাদ্যির শব্দে খুনসুটি আর অশ্লীল  গালাগাল আজ অনেকটাই কানে আসে না।
সবাই আজও সেজেছে। অন্ধকারের থেকে কালী নিয়ে চোখে পড়েছে কাজল।
কলাবউ স্নান শেষে লাল পাড়ের আটপৌরে শাড়ীটায় জড়িয়ে নিল নিজেকে কোনমতে। হাটের রদ্দি মাল। কলাবউয়ের শরীরে বেড় পায়না। শায়া নেই, শেমিজ নেই, ব্লাউজ নেই।

কাল সপ্তমী।
আজ এই পট্টিতেও কাপড়ের অভাব নেই। ক্ষণে ক্ষণে লাইন ধরিয়ে দিনভর চলছে বস্ত্র বিতরণের পালা। সৌজন্যে লাল বাবু, সবুজ বাবু, তার বাবু, পাড়ার বাবু, কর্পোরেশনের বাবু, সব বাবুর ফিনফিনে আদ্দির সাদা পাজামা পাঞ্জাবী আজ পতপত করে উড়ছে। ফ্ল্যাশের ঝলকানি, ক্যামেরা, ক্লিক।
ক্যামেরার চোখও মেয়েমানুষের শরীর দেখলে তিড়িং করে বেড়িয়ে যায়। স্পীড কন্ট্রোল হয়না। আর যা হবার তাই হয়। ছবি সব ঘোলাটে, আর নাহয় ঝাপসা।

কলাবউয়ের পুজো শুরু হয়েছে।
এই পট্টির পুজোয় ভিড়ও হয়। মানুষেরা ঠাকুর দেখতে আসেনা। শরীর দেখতে আসে।
এই পাড়া দেখে ঠাকুর। কলাবউয়ের অস্বস্তি আরও বাড়ে। রাত আরও বাড়ছে।
লাল পট্টির মানুষেরা সব যে যার ঘরে। যে বাবু বস্ত্র বিতরণ করছিল এতক্ষণ এখন সে নাঙ্গা। ইস।

কাল সপ্তমী সকাল।
নবমীনিশিতে কে বলি হবে কে জানে! ভালো করে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নেয় কলাবউ। নীলকণ্ঠের লতাতেই জড়িয়ে নিল নিটোল সবুজ শরীর তার। লাল সিঁদুরে অন্তর্জলী যাত্রা আজ সাঙ্গ হলো।

আজ ষষ্টি।
আসছে বছর এই পট্টির কলাবউয়ের কাপড় হবে কমপক্ষে দশহাতি। শরীর দেখা যাবে না কোন বউয়ের। এটাই পুজোর থিম হোক না আসছে বছর!

আর্টিকেলটা এখুনি পাঠাতে হবে প্রেসে। নাহলে খাবে না ঠিকঠাক।

শুভষষ্ঠী বন্ধুরা।

কোন মন্তব্য নেই: