“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১২

হাসির কবিতা

                                                      



                                                
                                                        ১  

           কাঁচি হাতে তাড়া করে বাস্তবের দত্যি ঘ্যাঁচ করে কেটে দ্যায় আমার স্বপ্নের প্যানোরামিক দৃশ্যমালা। চুকেবুকে যায় আমার বিস্ময়ের পালা। শিল্পসন্ধানী চোখ হারিয়ে যায় বিকিকিনির ভীড়ে, হাইটেকের চাপ, দড়ি টানাটানিতে ক্লান্ত আমি বুঁদ থাকি প্রতিবেশীর ঈর্ষায়। আজ আমি এক মজুর, খাটনি খাটতে কারখানায় চলে যাই। দিনশেষে সস্তা আমোদ স্বপ্নের কফিনে শেষ পেরেক ঠুঁকে, আমার আমির শেষকৃত্য নিশ্চিত করে।


আবার আরেক সন্ধ্যেবেলায়, লকলকে জিভ নিয়ে বিপণনতন্ত্রের আনাচে-কানাচে লালা ঝরাই। নাগরিক জঞ্জালে এঁটোকাঁটা কুড়িয়ে গৃহকোণ সাজাই। অব্যবহারে পেনসিলটা ভোঁতা, কোথায় স্কেচ, কোথায় বলিষ্ঠ হাতের টান? অপুষ্টিতে ধুঁকতে ধুঁকতে শুকিয়ে কাঠ আমার আখর বাগান। যে যার বাক্সে সেঁধিয়ে পড়ে, এ যুগে এটাই সংসার। আমি সিঁধেল চোর, সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ইচ্ছে করব পাচার।

হর্মোনের মাত্রায় বেজায় গরমিল, এলাকাজুড়ে দেখতে পাচ্ছি জোম্বিদের মিছিল। খুবলে নেওয়া মাংস, লালা ঝরানো না-মানুষি প্রেমের পথ বেজায় পিচ্ছিল। ছবির মৃত বুড়ো চোখ রাঙান,"শৃঙ্খল ছাড়া তোর কিছুই হারাবার নেই!" হ্যালোজেনে ঝলসে যায় চোখ, বিড়বিড় করি,"দলছুট চড়ুই বেঁচে থাক তুই।"


                                                         ২

দু’দিকেই হাতুড়ি পেটার শব্দ, ভাঙচুর-নির্মাণে দালানবাড়ি
হিমেল দুপুরের এক শূন্যতা এতেই খুঁজছে উষ্ণতা
নেওয়া যায় নির্জনে পাতাপোড়া মায়াবী ধোঁয়া এলোপাথাড়ি
দৌড়ানো যায় মগজ, আখর সাজিয়ে দু’চার পাতা।
বহুদিন হয়নি কথা, বন্ধুরা চৌকো বাক্সে খেলছে পুতুল
সেই বাক্সে দমবন্ধ লাগে আমার—হাওয়া চাই একরাশ
স্নায়ুজুড়ে ইলেক্ট্রনের প্রবাহে অনুভূতির ক্ষণিক ভুল
ঘুম যায় দেয়ালঘড়ি শবাসনে যায় এক নিশ্চুপ লাশ।
পোষা কুকুরটা দেখে মনিবের ছিঁড়ে ফেলা একগাদা কাগজ
কী বুঝে চিবিয়ে ফেলার চেষ্টা, জান্তব গর্জনে স্নেহের আকুতি
কিছুতেই মেলানো যাচ্ছে না এই জীবনের বীজগণিত রোজ
চেপেচুপে দৈন্য ঢাকলেও মননে সংক্রমণের ঘুমতাড়ানো ভীতি !

ক্লান্তিকে রেখেছি লুকিয়ে ড্রয়ারে, অগুনতি ফাইলের তলায়
দেখছে, কে-ই দেখবে হিমেল শূন্যতায়, এই অবেলায়।

কোন মন্তব্য নেই: