ঐ আসছে ক্যাটারপিলার !কোমর দোলাতে দোলাতে । রোজদিন রিয়া টেনশন ফ্রি হয় এ ভাবে !! এরপর তো যুদ্ধ শুরু । ঐ এল । ওঠা গেলো । মহিলা কামরা । একটি ছোটখাটো প্রমিলা রাজ্য বল্লেও কম বলা হয় । আপাত শ্রেণি বিভাজন আছে কিন্তু আধিপত্য উচ্চবর্গের হাতে নেই। স্কুলের দিদিমনিরা সংখ্যায় বেশী। নরেন্দ্রপুর ,গড়িয়া , থেকে বনগাঁ , কৃষ্ণনগর ,ডানকুনি । কোথায় নয়? উত্তর থেকে দক্ষিন , পুব থেকে পশ্চিম ; মেন থকে কর্ড সব লাইন । কখনো গঙ্গা পেরিয়ে ,কখন ভ্যান রিক্সায় , ট্রেনের আগু পিছু সব কিছু চেপে হাঁপাতে হাঁপাতে ট্রেন ধরা । তবুও যথেষ্ট সেজেগুজে পরিচ্ছন্ন হয়ে আসেন । পোশাক নিয়ে অনেক হাল্লা চিল্লা পেরোতে হয়েছে তাদের । কেউ নড়াতে পারেনি । দিদিমনিদের দেবী ভাবের ধাচা থেকে বেশ ভালই মুক্ত হতে পেরেছেন নতুন প্রজন্ম । বসে কেউ একটু ঝিমিয়ে নেন । সকালে ঘুম থেকে ওঠা অব্দি ঘোড় দৌড় । রান্নার লোক থাকলেও বাচ্চার টিফিন , নিজের টিফিন , বরের টিফিন । এখন খাওয়া তখন খাওয়া বন্দোবস্ত করা ।দিনের সব কিছুর ব্যবস্থাপনা করে রেখে আসা । ফিরতে ফিরতে তো সেই সন্ধ্যে । সুতরাং একটু খানি চোখ বোজা । কেউ কেউ আবার বই খুলে বসেন । এই তো দিনে একটুখানি নিজের মত করে সময় পাওয়া । কখন দেড় , কখন দুই ঘণ্টার যাত্রা । কেউ কেউ আবার এই সময় টুকু নিজের খাতা খুলে বসেন । কোথায় কবে কি করলেন । বর কবার বিদেশ গেলেন ,ছেলে কত টাকা রোজগার করে , সে বছর ক টাকা বর ইনকামট্যাক্স দিয়েছে । তা নিয়ে আবার মজাও কম হত না । এই রকম লোকদের খচাতে জুড়ি ছিলনা সুমির । 'তারপর কি হল বলুন না সীমাদি । ছেলের জন্য পাত্রি পেলেন , কোটিপতি ,ইঞ্জিনিয়ার ?' তিনি অতি উৎসাহে বলতে লাগলেন বর এবং ছেলের খতিয়ান । আর তারপর পিটপিট করে হাসতে লাগলো আশপাশ।
তা সে দিদিমনিদের ওপর আবার অনেকে মহা খচা । 'এই এসেছেন ~ এখনি শুরু হবে কোথায় নামবেন , কোথায় নামবেন ।' দোষ নেই এতক্ষনের যাত্রা বসতে তো হবেই । কোন কোন যাত্রি সহৃদয় । উদ্যোগী হয়ে বল্লেন কোথায় নামবেন । কেঊ কেঊ কিছু বললেন না । কিন্তু টুক করে পরের স্টেশনে নেমে গেলেন । সিটটি হয়ত পাওয়া গেল না ।
সাড়ে দশটার ট্রেনে থাকে সবজি মাসিরা । ভোর চারটের উঠে বেরোতে হয় । তারপর শেয়ালদায় সবজি বিক্রি ।সব সময় কিছু বলার জন্য ব্যস্ত । হয়ত সারা দিনের ক্লান্তি । তবে প্রায়ই সবার সঙ্গে উচ্চকিত । দিদিমনিরা জায়গা পাননি দাঁড়িয়ে আছেন । চুল উড়ে যদি কোন কারণে গায়ে লাগে তাহলে খুব রাগ হয় মাসিদের । এ নিয়ে বেশি কথা বলতে গেলে বলে বসল হয়ত' জানি জানি ব্যাগ দুলিয়ে কোথায় যাও ! 'সব্বনাশ ! তারপর আর মুখ খোলে কেউ ? ভদ্রলোকের নিকুচি করেছে । পুরো আকুপাংচার ভদ্রতার মানদণ্ড। জেনারেল কামরায় থাকলে দেখা যাবে সঙ্গে একটি প্রেমিকপ্রবর বর নয়, আশনাই -এর রকম সকম দেখলেই বোঝা যায় । চোখে মুখে লজ্জা । এরপর উঠবে সকালের খাবার । সেই কোন রাতে উঠে কোনোমতে দৌড়ে বেরিয়ে আসা । কারো কারোকে আবার এর মধ্যে রান্না বান্না করে রেখে আসতে হয় । মুখে চা ছাড়া কোন কিছু দিয়ে আসা হয় না । তাই খাওয়া । পরোটা ,আলুর দম , ডিমের ঝোল কখনো কখনো । সঙ্গে জল ও নিয়ে আসে ভেন্ডার ছেলেটি । শেষে মিষ্টি । খুব যত্ন করে খাওয়ায় ছেলেটি । সবাই মিলে হই হই ,যেন যৌথ পরিবার খেতে বসেছে । এটাই হয়ত সারাদিনের পুষ্টিকর খাওয়া ! তারপর সারা পরিবার কে খাইয়ে কি আর জোটে । বাড়ি পৌঁছেই তো ঘোড় দৌড় শুরু হবে । ফুলওয়ালি ও ব্লাউস মাসিদের আবার কাজেও বসতে হয় বাড়ি গিয়ে । দশটি টি ব্লাউসে বোতাম লাগালে এক টাকা । দশটি মালা গাথলে এক টাকা । তখন বাড়ির কন্যা সন্তানটিকে রান্নার হাল ধরতে হয় । তাই কখন কখন ট্রেনে বসেই হাত চলতে থাকে ।বিকেলের ট্রেনে থাকে শেয়ালদার দিদিরা । দাঁড়াতে হবে স্টেশনের বাইরে খদ্দের ধরার জন্যে । ভেতরে গেলে পুলিশের ঝামেলা । তাদের মুখে সব সময় একটি সংকুচিত ভাব । সিঁথিতে এক ঢাল সিদুর । নিপুন শাঁখা পলা । মলিন একটি ব্যাগ । কথা খুব কম বলে । ঝামেলা হলে অন্যকথা । তখন রণরঙ্গিণী । আর আছেন সুনিপুন নারী সাজে মানুষ । দঙ্গল বেধে ওঠেন । চুন থেকে পান খসার দরকার নেই ,এমনিতেইরাখে হরি মারে কে । ভয়ে কাঁটা । বসার জায়গা দিয়ে নিশ্চিন্ত ।
অপূর্ব মানুষের অবিরাম চলা । মনে হয় সমস্ত সমাজটা যেন এক কামরায় ঢুকে গেছে । শ্রেণিহীন রেলের কামরা । ছোট্ট একটি বাংলা । ভারতবর্ষ ছোট হয়ে নিজস্ব অবয়ব খুঁজে নিয়েছে।
সাড়ে দশটার ট্রেনে থাকে সবজি মাসিরা । ভোর চারটের উঠে বেরোতে হয় । তারপর শেয়ালদায় সবজি বিক্রি ।সব সময় কিছু বলার জন্য ব্যস্ত । হয়ত সারা দিনের ক্লান্তি । তবে প্রায়ই সবার সঙ্গে উচ্চকিত । দিদিমনিরা জায়গা পাননি দাঁড়িয়ে আছেন । চুল উড়ে যদি কোন কারণে গায়ে লাগে তাহলে খুব রাগ হয় মাসিদের । এ নিয়ে বেশি কথা বলতে গেলে বলে বসল হয়ত' জানি জানি ব্যাগ দুলিয়ে কোথায় যাও ! 'সব্বনাশ ! তারপর আর মুখ খোলে কেউ ? ভদ্রলোকের নিকুচি করেছে । পুরো আকুপাংচার ভদ্রতার মানদণ্ড। জেনারেল কামরায় থাকলে দেখা যাবে সঙ্গে একটি প্রেমিকপ্রবর বর নয়, আশনাই -এর রকম সকম দেখলেই বোঝা যায় । চোখে মুখে লজ্জা । এরপর উঠবে সকালের খাবার । সেই কোন রাতে উঠে কোনোমতে দৌড়ে বেরিয়ে আসা । কারো কারোকে আবার এর মধ্যে রান্না বান্না করে রেখে আসতে হয় । মুখে চা ছাড়া কোন কিছু দিয়ে আসা হয় না । তাই খাওয়া । পরোটা ,আলুর দম , ডিমের ঝোল কখনো কখনো । সঙ্গে জল ও নিয়ে আসে ভেন্ডার ছেলেটি । শেষে মিষ্টি । খুব যত্ন করে খাওয়ায় ছেলেটি । সবাই মিলে হই হই ,যেন যৌথ পরিবার খেতে বসেছে । এটাই হয়ত সারাদিনের পুষ্টিকর খাওয়া ! তারপর সারা পরিবার কে খাইয়ে কি আর জোটে । বাড়ি পৌঁছেই তো ঘোড় দৌড় শুরু হবে । ফুলওয়ালি ও ব্লাউস মাসিদের আবার কাজেও বসতে হয় বাড়ি গিয়ে । দশটি টি ব্লাউসে বোতাম লাগালে এক টাকা । দশটি মালা গাথলে এক টাকা । তখন বাড়ির কন্যা সন্তানটিকে রান্নার হাল ধরতে হয় । তাই কখন কখন ট্রেনে বসেই হাত চলতে থাকে ।বিকেলের ট্রেনে থাকে শেয়ালদার দিদিরা । দাঁড়াতে হবে স্টেশনের বাইরে খদ্দের ধরার জন্যে । ভেতরে গেলে পুলিশের ঝামেলা । তাদের মুখে সব সময় একটি সংকুচিত ভাব । সিঁথিতে এক ঢাল সিদুর । নিপুন শাঁখা পলা । মলিন একটি ব্যাগ । কথা খুব কম বলে । ঝামেলা হলে অন্যকথা । তখন রণরঙ্গিণী । আর আছেন সুনিপুন নারী সাজে মানুষ । দঙ্গল বেধে ওঠেন । চুন থেকে পান খসার দরকার নেই ,এমনিতেইরাখে হরি মারে কে । ভয়ে কাঁটা । বসার জায়গা দিয়ে নিশ্চিন্ত ।
অপূর্ব মানুষের অবিরাম চলা । মনে হয় সমস্ত সমাজটা যেন এক কামরায় ঢুকে গেছে । শ্রেণিহীন রেলের কামরা । ছোট্ট একটি বাংলা । ভারতবর্ষ ছোট হয়ে নিজস্ব অবয়ব খুঁজে নিয়েছে।
1 টি মন্তব্য:
দারুণ! এমন আরো লিখে চলুন! বহু কথা জানাও যাবে!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন