“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১২

বিন্দু বিন্দু তারা......


          কালে আড়মোড়া ভাঙতে থাকা পৃথিবী কে দেখার লোভ কোন ভাবেই সংবরন করতে পারি নাযাওয়ার আগে ভোরের তারা আমাকে উঠিয়ে দিয়ে গেল। আকাশে একটু একটু ফর্সা ভাব চোখ কচলাচ্ছে । হাল্কা বাতাস গাছগুলির পাতায় পাতায় ফিসফিস করে বলে যায়, উঠো, ভোর হয় এল...। বড় বড় বৃক্ষ সব  আগে ভাগেই উঠে নিজের ডালে ডালে শুয়ে থাকা পাখিদের কে তুলতে আরম্ভ করে । এক এক করে তারা ঘুম থেকে উঠে, আর আস্তে আস্তে শুরু হয়ে যায় তাদের সংসারের কাজ । গাছে গাছে যেন মেলা, কথার মেলা, কিচির মিচির কিচির মিচির...। চারিদিকের স্তব্ধতার মাঝে কি অপূর্ব মধুর এই কথাগুলির সুর । কথাও আবার কাশ ফুলের কানে কানে বাতাস ফিসফিস করে কি জানি কি কথা বলে যায়, যা শোনে তারা খিলখিল করে হাঁসতে থাকে আর মাথা দুলিয়ে বাতাসের তালেতালে নাচতে আরম্ভ করে দেয়! নির্বাক হয় চেয় থাকি প্রকৃতির এই রূপ। কোন কথা বলতে ইচ্ছ্য করে না, দু চোখ ভরে শুধু আকুন্ঠ পান করে যাই......।
                   কেউ উঠে নাই, আমি ও পা টিপে টিপে হাঁটি, যেন একটু শব্দও এই পবিত্রতা ভঙ্গ করে দিতে পারে। বাদলা দিনে আবার দু চারটা মেঘও আমার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটে। এরকম একটা সঙ্গী পেলে কে না আনন্দে আত্মহারা হয়ে! বৃষ্টি বোধহয় শুনতে থাকে আমারও মেঘের কথোপকথন, তাই এক এক দিন ঘরে পোঁছানোর আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ জোরে... আমি বুঝি, এটা তার অভিমানের কান্না... বৃষ্টির এই একটা দোষ সে নীরবতার ভাষা বুঝতে পারে না, নাকি বুঝতে চায় না... সরবতার তলে চেপে রাখতে চায় নিজের অস্তিত্ব হারানর দুঃখ..., মেঘের সংসার থেকে বিদায় নেওয়ার দুঃখ...? যদিও সে জানে মেঘ  তো চির বঞ্জারা... তার কান্না দেখে আমিও তাকে জড়িয়ে ধরি আর দু জনেই ভেজাতে থাকি এক অপর  কে... বৃষ্টির চোখের জল মুছতে মুছতে আমি তাকে বলি, হক না মেঘ বঞ্জারা, এও তো সত্য, যেমন মেঘ ছাড়া তুমি অস্তিত্বহীন তেমনি তুমি ছাড়া মেঘেরও সংসার শূন্য...
                    এই চির পরিচিত মেঘও বৃষ্টির প্রেমও বিচ্ছেদ, চির সত্য... শাশ্বতআমি আবার প্রকৃতির কথা বলতে বলতে প্রেমের কথায় এসে পড়লাম। যদি ও প্রেম প্রকৃতি থেকে ভিন্ন কিছু নয়।আগে যে ঘরে থাকতাম, ওখানে একটা জঙ্গলের পোস্টের ছিল, তার ওপরে লেখা ছিল, “speak to the earth and it’ll speak to you.” এটা তো আমরা সবাই বুঝি যে এখানে বলা মানে নীরবে কান পেতে শোনা, অন্তর হতে অন্তরে অনুভব করা...। যখনই এরকম বসি, কত কথা যে গাছের ডালে, বাতাসে, তারায় তারায় ও চাঁদের চোখে দুলতে দুলতে আমায় ছুয়ে যায়...। স্তব্ধ বসে সুনি সে সব কথা। সিউরিয়ে উঠি শরত পূর্ণিমার রাতে প্রকৃতির মনের মত সাজ দেখে। পূর্ণ চাঁদে কে মেঘের আড়ালে খেলা করে পৃথিবীর সাথে খুনসুটি করতে।  
              এক এক রাতে পাহাড়্গুলি কে দেখি, চাঁদের জ্যোৎস্নায় স্নান করতে... সে সব রাতে শরতের  বাতাস গুন গুন করে গান গায়, সব গাছ মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে মৃদু তালে সংগত করে! প্রতিটি তারা যেন সেই  সুরের মূর্ছনায় ঝর ঝর করে কাঁদে... কি আশ্চর্য দৃশ্য!! প্রথমে চাঁদ কেঁদে ছিল বলে বিন্দু বিন্দু তারার সৃষ্টি হল আর তারপর তারাগুলো কাঁদল যখন, শিশির বিন্দু হয়ে ঝরতে থাকল!! আবার এই শিশির বিন্দু বাষ্প হয়ে চলে যাবে আকাশে; কিছু বৃষ্টি হয়ে পড়বে নীচে ও কিছু তারা হয়ে ঝুলতে থাকবে আকাশের শামিয়ানায় আর অপেক্ষা করবে সেই রাতের যখন আবার পাহাড়গুলো চাঁদের জ্যোৎস্নায় স্নান করবেও  বাতাসের গুনগুণ সুরের মূর্ছনায় তারা খসে পড়বে...।
                           খুব ভোরে প্রকৃতির সেই আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠা পবিত্র রূপ কি রাত্রের শিশির স্নান করার ফলেই? আপন মনে বলে উঠি, ঘাসের ডগায় বা পাতায় পাতায় আটকে থাকা ওগুলো কি?  শিশির বিন্দু না বিন্দু বিন্দু তারা.........।
                                        ........................
                                                                                                      (c) ছবি

কোন মন্তব্য নেই: