“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দানব-রূপী মানবের জন্য, যারা প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে (১)

                                                                         ।। সুমিত দেবনাথ।।
             সাপ নিয়ে যেমন মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই, তেমনি সাপ দেখলেই মেরে ফেলার স্বভাব মারাত্মক। ৩রা সেপ্টেম্বর,২০১৪ রাত প্রায় ১০টার দিকে লুপ্তপ্রায় দুটি সাপের নিধন হলো ত্রিপুরার ধর্মনগর মহকুমার, গঙ্গানগর গ্রামে। হয়তো ৫ মিনিট আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সাপ দুটিকে জনতার কাছে থেকে উদ্ধার করতে পারতাম। কালো-হলুদে ডোরা কাটা যে সুন্দর সাপটি দেখছেন সেটির স্থানীয় নাম - শঙ্খিনী, ইংরেজি নাম - Banded Krait, বৈজ্ঞানিক নাম - Bungarus fasciatus। এদের রাতের বেলা চলাচল করতে দেখা যায় (nocturnal), দিনে গুটি মেরে বড় গর্তে পড়ে থাকে।  বিরক্ত হলে তার মাথাটি গুটির মধ্যে লুকিয়ে ফেলে। এরা খুবই লাজুক প্রকৃতির এবং সাধারণত খুব বিরক্ত নাহলে ছোবল দেয় না। তবে এরা মারাত্মক বিষাক্ত, ভারতের যে কয়েকটি মারাত্মক বিষধর সাপ আছে তার মধ্যে এটি একটি। এদের বিষ স্নায়ুবিনাসী (neurotoxins)। ভারতীয় উপমহাদেশের বিশেষত ত্রিপুরা, আসাম, উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশে এদের বেশী দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে অন্যান্য বিষাক্ত এবং বিষহীন সাপই এদের প্রধান খাদ্য, তাছাড়া বিভিন্ন গিরগিটি, মাছ এইসবও খায়।
         মন্তর গতি এবং চোখে তীব্র আলো ফেললে চলতে না পারাই তাদের বিলুপ্তির প্রধান কারণ। যে কারণে মানুষ এদের সহজেই মেরে ফেলতে পারে।
         অজ্ঞতাবশত একে দু-মুখী সাপ বলা হয়, আসলে এদের একটাই মুখ । লেজের শেষপ্রান্ত একটু মোটা, মুখের মতো দেখতে। এটা তার শিকার ধরার সুবিধার জন্য বিবর্তিত হয়েছে। অন্যান্য প্রাণীগুলির সাথে তার মন্তরগতির জন্য দৌড়ে পারবে না, তাই সে যখন তার শিকারকে ঘিরে ধরে তখন তার লেজটিকে নাড়াতে থাকে। শিকার মনে করে লেজটাই মনে হয় মাথা সে তখন মাথার পাশে দিয়ে পালাতে চাইলেই তার মারণ ছোবল বসিয়ে দেয়।
 ০৩/০৯/২০১৪ তোলা শিকার এবং শিকারির মৃত ছবি।

 গত বছরের তোলা ছবি ভ্রাতৃপ্রতিম সুমিত নাথ দ্বারা উদ্ধারকৃত শঙ্খনী

গত মে মাসে এই সবুজ বোড়াকে দিনের বেলা টেক্টরের চাকা থেকে উদ্বার করে 
জঙ্গলে ছেড়েছিলাম।

          শঙ্খনীর পাশে যে সরু সাপটা দেখতে পাচ্ছেন সেটি শঙ্খিনীরই  আহার ছিল,  মানুষের হাতে পড়ে শিকার ও শিকারির এই পরিণতি। এই সাপটাও যথেষ্ট বিষাক্ত, এটির বাংলা নাম সবুজ বোড়া, ইংরেজি নাম - Green Pit Viper, বৈজ্ঞানিক নাম - Trimeresurus। এরাও নিশাচর, সাধারণত গাছে, ঝোপেঝাড়ে থাকে, গায়ের রং সবুজ হওয়ায় সহজেই ঝোপে-ঝাড়ে মিশে যায় এবং এটিই তার শিকার করার প্রধান কৌশল, সাধারণত টিকটিকি, ছোট পাখি, ব্যাঙ এইসবই তার প্রধান খাদ্য। এদের Hemotoxic বিষও মানুষ মারার পক্ষ্যে যথেষ্ট, Hemotoxic বিষ লোহিত রক্ত কণাকে ভেঙ্গে দেয়। একটু উগ্র প্রকৃতির সাপ, বিরক্ত হলে ছোবল দিতে কার্পণ্য করে না। এদের দাঁত অত্যন্ত উন্নত, বেশ বড়। অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে এরা ছোবল মারে। এদের মুখের কাছে তাপ সংবেদনশীল একটি যন্ত্র আছে (Pit) যার সাহায্যে অতি সহজে এরা সামান্য উষ্ণতার তারতম্য নির্ধারণ করতে পারে যা তাদের শিকারে সাহায্য করে। এই সাপের বাস প্রধানত ভারতীয় উপমহাদেশে হলেও ত্রিপুরায় এই সাপ খুব কম দেখা যায়, এটি আমার দেখা দ্বিতীয় সবুজ বোড়া, প্রথম টিকে রক্ষা করতে পেরেছিলাম এটি পারি নি। ( আজকের তোলা ছবিটি স্পষ্ট হয় নি বলে সঙ্গে আরোও দুটি ছবি দিলাম যেগুলি ধর্মনগর ত্রিপুরা থেকে তোলা)।

কোন মন্তব্য নেই: