“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

‘জোঁক-তালই’ উপাখ্যান।


                                                          ।। পার্থঙ্কর চৌধুরী।।
বাড়িতে পা রাখার দিন থেকেই নাছোড়বান্দা জোঁক ‘তালই-মসাই’-কে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। দুই দুই বার জোঁকের মুখে চুন দিয়েছিলেন ‘তালই-শ্রী’। লাভ হয় নি। হাই-টেক জোঁক তার ‘হিরুডিন’, অর্থাৎ, মুখের লালা দিয়ে নিমিষের মধ্যেই চুন-কে দুধ-ভাত বানিয়ে দিয়েছিল। দুধ, আর চুন, দুটোই সাদা, তাই দু দু বারই, জোঁকের ঐ কুকর্ম সুশীল-বাবুদের চোখে পড়ে নি!
            তালই আসার আগে এ বাড়িটাতে থাকতেন, উনারই দুঃসম্পর্কিত এক আত্মীয়। সে দিনগুলো ছিল হাই টেক জোঁকের পোয়া-বারো । রক্তপিপাসু জোঁক সেই দিনগুলো বিভিন্ন স্বাদের তরল লোহিত চেটেপুটে গায়ে গতরে বেশ অনেকটাই বড় হয়েছে। বড় হয়েছে সংসারের দিক দিয়েও। এখন অবশ্য সেরকম নেই। তবুও নেহাৎ  মন্দ নয়!
               ‘তালই-শ্রী’ ইদানিং আশ্রিত জোঁককে নিয়ে খুব একটা বিব্রত নন। কোথায় জানি কী করে জোঁক-তালই-য়ে তালগোল পেকে একটা মৌখিক চুক্তি হয়ে গেছে। জোঁক বলেছে, যদিও আমি আপনারই পোষ্য পরজীবী, তাই হয়তো বা আপনার জামা কাপড়ের উপর আমি ‘লুপিং মুভমেন্ট’ করে বেড়াবো, কিন্তু তরল লোহিত চেটেপুটে খাব অন্যজায়গা থেকে। তালই দেখলেন, ‘আরে তাতে তো  আমার ক্ষতি বিশেষ নেই। তালই-র স্বগতোক্তি, “এ বাড়িতে আমি আর ক’দিন থাকি? একাজে-অকাজে প্রায়ই তো হিল্লি-দিল্লি যেতে হয়। আমার গায়ে চেপে চড়ে বেড়ানোর জন্য বেচারা আমাকে আর কদিন-ই বা পাবে”...।
            এভাবেই দিনগুলো কাটছে, বছর দুয়েক হল...।
            কিন্তু বিপত্তি ঘটাল  জোঁকের অনাকাঙ্খিত এক অভিপ্রায়ে...
        নিত্যদিনের মতই শার্টের উপর ‘লুপিং’ করে বেড়াচ্ছে পরজীবী ঐ প্রাণীটি। ঘুরতে ঘুরতে শার্টের কলারে চেপে একেবারে কানের কাছে চলে এল। ফিসফিস করে বলল, “শুনুন, পাড়ার চা-এর দোকানে শুনেছি, লোকেরা বলাবলি করছে, আসন্ন নির্বাচনের মুখেই নাকি ‘গুরু’-মশাইদের দল আর ‘চণ্ডাল’-দের গ্রুপ নাকি এক হয়ে গেছে... এদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হয়ে গেছে। সেরেছে, এইবার তো বাঘে- গরুতে এক ঘাটে জল খাবে। এখন থেকে যা হবে সবই ‘গুরু-চণ্ডালী’! তবে আমার অবশ্য অসুবিধে নেই... আমি তো দুই ভিন্ন স্বাদের রক্ত এক জায়গায়ই পেয়ে যাব। বরং ভালই হল। সমস্যা তো আপনার”...।
           তালই-মসাই সব শুনে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন...।
          কথাগুলো শেষ করে তর-তর করে শার্টের গা বেয়ে জোঁক  নেমে পড়লো.....।।
          আবার একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন তালই-শ্রী ...।।
         এরপর একটু মুচকি হাসি হাসলেন...।
     আশ্রিত পরজীবী-কে ডেকে বললেন, সমস্যা তো গভীর বটেই; কিন্তু এর জন্য তো কিছু সাহসী পুরুষ চাই। 
           -- সে আমি দেখছি, আপনি একটুও ভাববেন না...।
        - -আরে আপনি দেখবেন কোত্থেকে ? আপনি তো ‘Hermaphorodite’, ‘হা-র-মা-ফ-র-ডা-ই-ট’-দের দিয়ে এ সমস্যার মোকাবিলা কি সম্ভব?
     সমস্যা যে আদৌ সমস্যা নয়, তালই মশাই তো কবেই বুঝে গেছেন, সম্ভবত মুচকি হাসিও তাই হেসেছেনও...
        কিন্তু ‘বৃহন্নলা’ –কে নিরস্ত্র করার জন্য এরকম কিছু তো একটা বলতে  হবে...
       অবশ্য তালই-শ্রীর এ কথায় জোঁক বাবাজী-র কী প্রতিক্রিয়া, তা জানা গেলো না...। তর-তরিয়ে ‘লুপিং’- করে করে সে ততক্ষণে বড় চেয়ারের পায়া বেয়ে উঠতে শুরু করল...!                                                                                                         

কোন মন্তব্য নেই: