যুগশঙ্খ, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ |
স্বাধীনতার স্পৃহা
বিষয়ের শুরুটা করছি এক ভিন্ন মাত্রা দিয়ে। সম্প্রতি একটি গল্পের বই উন্মোচনের অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতা হিসেবে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য শুনতে শুনতে আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে। সাহিত্য-অর্থনীতি-রাজনীতিকে কী এক অভিন্ন অবস্থান থেকে বিচার করা সম্ভব? এই সবকটিই যখন একই বাস্তবের, একই প্রকৃতির, একই মানব-সমাজের, একই গোলার্ধের ভিন্ন ভিন্ন দিক, তখন বিচারের এক সাধারণ প্যারামিটার কী খুঁজে নেওয়া সম্ভব নয়? সেই অনুষ্ঠানে বক্তারা বিভিন্ন গল্পের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিলেন এবং কেউ কেউ এও বললেন যে একই গল্পের পাঠক-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের পাঠ হয়। পাঠক তার নিজস্ব অবস্থান থেকেই পাঠ নেবেন সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই যারা এই গল্পগুলো পড়েছেন তাদের মধ্যে এক সাধারণ যোগসূত্রও রয়েছে। সবারই এই গল্পগুলো ভাল লেগেছে। ভাল লাগা জন্ম দেয় একধরনের অনুভূতির যা মস্তিষ্কে সঞ্চারিত হয়ে জন্ম নেয় নতুন চিন্তার। স্যুইচ টিপে দিলে তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বাল্ব জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ভাল-লাগার অনুভূতি স্যুইচ টিপে দেওয়ার কাজটি সেরে নেয়। বাল্বের ক্ষমতা অনুযায়ী যেমনি আলো দেয়, ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনুযায়ী চিন্তার উদ্রেক হয়। সেই ক্ষমতার প্রশ্নটি এক ভিন্ন আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই চিন্তার ভিত্তি যে অনুভূতি সেটাই তৈরি করে সাধারণ যোগসূত্র। পাঠকের মধ্যে সেই অনুভূতি লেখক তৈরি করতে পারেন শুধুমাত্র তাঁর গভীরে দেখার ও তাকে প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে বলেই, না লেখককে তাড়িত করে তাঁর দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন স্পৃহা যা ব্যতীত সাহিত্যের লেখক আর লেখক হয়ে উঠতে পারেন না। আসলে সেটাই হচ্ছে স্বাধীনতার স্পৃহা। লেখক স্বাধীন হতে চান, তাই খোঁজে দেখেন কোথায় তিনি আঁটকে আছেন। তাঁর দেখার ক্ষমতা দিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন দৃশ্য-অদৃশ্য, ব্যক্ত-অব্যক্ত, নিকট-সম্পর্কিত ও দূর-সম্পর্কিত হাজারো সম্পর্কের বাঁধন যাকে তিনি উন্মোচিত করেন পাঠকসমক্ষে। কারণ সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির দৌড়ে তিনি একা বিফল ও ভগ্ন-মনোরথ। এর থেকে বাঁচার জন্য লেখক হয়ে উঠতে পারেন একজন সমাজকর্মীও যার সাথে তাঁর লেখক সত্ত্বার কোন বিরোধ নেই – আছে সময়ের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। কিন্তু এই স্বাধীনতার স্পৃহা যতদিন তার অন্তরে জাগ্রত ও প্রাধাণ্যকারী অবস্থানে বিরাজিত, ততদিনই ব্যক্তি লেখকের কাছে সাহিত্য-স্রষ্টা হিসেবে তাঁর অস্তিত্ব।
রিউ-পে ও আর্থিক সম্পর্ক
অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা হয়েছে রিউ-পে প্রকল্পের মাধ্যমে আমজনতার জন্য ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা এবং সাথে ডেবিট কার্ড ও এক লাখ টাকার দুর্ঘটনা ইনস্যুরেন্স প্রদান। এই প্রকল্পের ঘোষিত উদ্দেশ্য এই যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আর্থিক ক্ষমতার স্বাদ পাবে, চাষীরা রক্তচোষা মহাজনী ধারের খপ্পরে পড়বে না, সবাইকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন প্রদান করার ব্যবস্থা করা যাবে যা এখন মাত্র ৪% এবং ব্যাঙ্ক লেনদেন বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক সচলতা বৃদ্ধি পাবে। তবে অনেকগুলো প্রশ্ন এখানে গুরুত্ত্বপূর্ণ। ক্যাম্প করে একাউন্ট খোলার ব্যাবস্থা না হয় করা গেল, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ব্যাঙ্ক, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ইত্যাদি কোন পরিকাঠামোই নেই, সেখানকার সাধারণ মানুষ গাঁটের কড়ি ব্যয় করে মাইলকয়েক দূরে অবস্থিত ব্যাঙ্কের সাথে সংযোগ বজায় রাখবেন কী করে? জনগণের হাতে যদি সঞ্চয় করার মত অর্থ না থাকে তাহলে একাউন্ট সচল রাখবেন কী করে? সবকিছুকে বেসরকারিকরণ করে দিয়ে সরকার উৎপাদনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধি করবে কী করে? গ্রামাঞ্চলে নতুন উৎপাদনী প্রক্রিয়া ও উৎপাদনী শক্তির বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সচলতা আনার কোন পরিকল্পনা ছাড়া ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ক্ষুদ্র লোন দিলে তা অনাদায়ে বেড-ডেট হয়ে যাবে এবং ব্যাঙ্ক এধরনের লোন দিতে উৎসাহ বোধ করবে না। বেসরকারি ব্যাঙ্ক তো আসবেই না, কারণ গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত কোন শাখাই তাদের প্রায় নেই এবং মুনাফা ছাড়া তাদের আর কোন লক্ষ্যও নেই, বরঞ্চ সাধারণের জমা অর্থ কীভাবে তাদের ব্যবসায়িক কাজে লাগানো যায় তাতে তারা উৎসাহী হয়ে উঠবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০০৯ সালের হিসেবে দেখা গেছে মোট ১৭১টি ব্যঙ্কের মধ্যে ২০টি জাতীয় ব্যঙ্ক, ৩২টি বিদেশি ব্যঙ্ক, ৮৬টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যঙ্ক, ২২টি অন্যান্য সিডিউল ও ৪টি নন-সিডিউল ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই ব্যঙ্কগুলির মোট ৭৯৭৩৫টি শাখা এবং শাখা প্রতি গড় জনসংখ্যা ১৫০০০। এই শাখাগুলির মধ্যে গ্রামীণ ও আধা-শহর এবং শহর ও মেট্রোতে বিদেশি ব্যঙ্কের শাখার সংখ্যা যথাক্রমে ৮ ও ২৮৫, এসবিআই’র ১০৩৯৫ ও ৫৬৬৭, জাতীয় ব্যঙ্কের ২২০৫০ ও ১৭৩২৬, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যঙ্কের ১৪৩৭২ ও ৭৫৫ এবং অন্যান্য সিডিউল ব্যঙ্কের যথাক্রমে ৩৭৫১ ও ৫১৫৬টি। এই হিসেবে আরও দেখা যায় যে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যেসব নতুন শাখা খুলেছে তার অধিকাংশই সেই সব অঞ্চলে যেখানে ইতিমধ্যে ব্যঙ্ক শাখা রয়েছে, এবং কিছু ব্যাঙ্কের স্বল্প সংখ্যক গ্রামীণ শাখা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যঙ্কের সুবিধে নেই, গ্রামীণ ও আধা-শহরে যা রয়েছে তার সবটিই সরকারি ব্যাঙ্ক। সেক্ষেত্রে ধরা যাক ভ্রাম্যমান ব্যাঙ্ক বা ফ্রেঞ্চাইজির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক-কাউন্টার খোলা হল। কিন্তু এইগুলিকে সচল রাখার জন্য পরিকাঠামো দরকার। তারচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় এই যে ফ্রেঞ্চাইজির মালিকানা পাবে আর্থিকভাবে সচ্ছল স্থানীয় প্রতিপত্তিশালী লোকরা। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে সরকারি ব্যঙ্কগুলোরই, কিন্তু তারজন্য প্রয়োজনীয় আইটি-সামগ্রী সরবরাহ করে লাভবান হবে ব্যক্তিগত মালিকরা যারা জনগণের জমা অর্থ থেকে ব্যঙ্ক লোনও পাবে। ব্যবসায়িক এই নেটওয়ার্কের সবচাইতে নিচে অবস্থিত যে ফ্রেঞ্চাইজি তারাও তাদের মুনাফার জন্য সচ্ছল গ্রাহকদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এই ফ্রেঞ্চাইজিদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে গ্রাহকরা ওয়াকিবহাল। অথচ গ্রামীণ উৎপাদনী কাজকর্ম সহ এই ব্যাঙ্কিং-এর গোটা প্রক্রিয়াকে যদি সামগ্রিকভাবে সরকারি মালিকানার অধীনে আনা যায় এবং বাংলাদেশের আদলে মোবাইল হাতে সরকারি ভ্রাম্যমান বেয়ার-ফুট গ্রাম-সেবকদের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সুবিধা দেওয়া যায়, তাহলে সরকারি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। সরকারি ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও কর্ম-সংস্কৃতির প্রশ্ন দেখা দেয় তাকে দূর করা অসম্ভব কিছু নয়। তারজন্য প্রয়োজন জনগণের ক্ষমতায়ন, কাঠামোগত রক্ষাকবচ ও প্রয়োজনীয় আইন। এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ হচ্ছে এই যে শ্রেণি-সচেতন ও পার্ফমেন্স-সচেতন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারদের কাছ থেকে বর্তমানে চালু কৃষি-লোন, তপসিলি স্কিমের লোন ইত্যাদি আদায় করতে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, নতুন একাউন্টের ক্ষেত্রে এসমস্যা হবে আরও গভীর। উপরন্তু দুর্ঘটনা বিমার ব্যয় বহন করতে সরকার উচ্চবিত্ত ও কর্পোরেটের উপর কর চাপায় না রেশন সামগ্রীর ভর্তুকি কমিয়ে গরিবের উপর বোঝা চাপায় এটাও দেখার বাকী। যেহেতু এই স্কিমের সাফল্য অন্যান্য অনেক স্কিমের মত সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল, তাই এর পরিণতি ক্রমশঃ প্রকাশ্য। কিন্তু শুরুতেই কিছু লক্ষণ দেখা গেছে যা মানুষের স্বাধীনতা স্পৃহার প্রশ্নের সাথে যুক্ত। দেশব্যাপী একাউন্ট প্রদানের প্রথম দিনে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলেও ফর্ম নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে এই ‘জিরো-ব্যালান্স’ একাউন্টের জন্য ন্যূনতম একশ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। একাউন্টে এই টাকা জমা থাকলে তো ভাল, নইলে নেপোয় মারে দৈ। কিন্তু প্রশ্ন হলো সাধারণ মানুষ জেনেশুনেই এই টাকা দিচ্ছেন, কারণ যারা অর্থ সংগ্রহ করছেন তাদের সাথে সাধারণ মানুষ এমন এক সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ যে তারা কোন ধরনের বিবাদে যাওয়ার সাহস পান না। এই বাঁধন থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার স্পৃহা এতো জাগ্রত হয়নি যা তাদেরকে বিরোধিতা করার মনোবল জোগাতে পারে। অর্থাৎ এখানেও নতুন চিন্তা ও কর্মের জন্য, বঞ্চিত ও বঞ্চনাকারীর স্বাধীনতার এক আন্দোলনে যুক্ত হওয়া জরুরি।
পরিচিতি ও স্বাধীনতা
কাশ্মীর সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধান ছাড়া যে ভারতীয় উপ-মহাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না তা পলিটিক্যাল সায়েন্সের যে কোন ছাত্র নির্বিঘ্নে বলে দিতে পারে। কাশ্মীর সমস্যা মানে পাকিস্তান ও ভারতীয় উভয় কাশ্মীরিদের সমস্যা। রাজনৈতিক ডিসকোর্স ও মতাদর্শগত প্রচারের দৌলতে কাশ্মীরিদের সমস্যা পরিণত হয়েছে সীমা বিবাদের সমস্যা হিসেবে। এই বিবাদের সমাধানে দুই দেশই তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরিণ রাষ্ট্র নীতি ও বিদেশনীতি অনুযায়ীই ভূমিকা পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কাশ্মীরিদের কী হবে যারা শুধুমাত্র উভয় রাষ্ট্র শক্তির সদম্ভ পদচারণায় নয়, সীমা বিবাদের সংঘর্ষেও আক্রান্ত। যে স্যাকুলার গণতান্ত্রিক কাশ্মীরি পরিচিতির আকাঙ্খার সমাধানের সূত্র খোঁজাই সমগ্র প্রচেষ্টার অন্তর্বস্তু, তারাই সেই প্রচেষ্টায় অপাঙক্তেয়। অথচ কাশ্মীরি জনগণ রুটি-কাপড়া-মোকামের জন্য বর্তমান নির্বাচনকে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তাদের পরিচিতির আকাঙ্খাকে বিসর্জন দেননি। কাশ্মীর প্রশ্নকে অনেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় মুসলমানের সাথে জড়িয়ে মুসলমান প্রশ্ন হিসেবে দেখেন। কিন্তু যারা কাশ্মীরি সংস্কৃতি, কাশ্মীরি জীবনযাত্রা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা এই স্যাকুলার পরিচিতিকে কুর্নিশ না করে পারেন না। কাশ্মীরের স্বাধীনতা-উত্তর দীর্ঘ লড়াইয়ে কখনও কোন দাঙ্গার নজির নেই। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবার বড়ে মানিয়ে ভারতীয় ও কাশ্মীরি রাজনীতিতে অনেক ছক সাজানো হয়েছে এবং তাতে পণ্ডিতদের স্বার্থই বিঘ্নিত হয়েছে। তথাপি কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এখনও নিজেদেরকে মনে প্রাণে সেই স্যাকুলার কাশ্মীরি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই ভাবেন। সব সমস্যার সমাধান সম্ভব যদি সমস্যাকে রাষ্ট্র শক্তির মদমত্ততায় দেখা না হয়, দেখা হয় ভুক্তভোগী মানুষের দৃষ্টি থেকে। এভাবে দেখা পথ দিয়েই সমাধান সম্ভব। পথমধ্যে অনেক ডিপ্লোম্যাসি চলতে পারে, কিন্তু শেষ বিচারে সব প্রচেষ্টাতে তারাই থাকা উচিত কেন্দ্রীয় ভূমিকায় যাদের পরিচিতির আকাঙ্খার নিস্পত্তি হবে। নাহলে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা শব্দদ্বয়ের কোন মানেই থাকে না এবং মানুষের সমস্যার কোন সমাধান হয় না। কারণ স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়।
স্বাধীনতা ও মানবিক সম্পর্ক
স্বাধীনতার বিষয়টি স্তরীভূত। একটি স্তর সরালে আরেকটি স্তর উন্মোচিত হয়। একটি বাঁধন ছিন্ন হলে, অন্য বাঁধন দৃশ্যমান হয়। কিন্তু শক্তিমত্তার দৃশ্য নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ না জানিয়ে মানুষে মানুষে সম্পর্কের মধ্যে বাজারের কেনাবেচার অদৃশ্য শক্তিকে আঘাত করা যায় না। এভাবে স্তরে স্তরে সজ্জিত স্বাধীনতার প্রশ্নকে সমাধানের মাধ্যমেই মানব সভ্যতা পৌঁছতে পারে তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে যেখানে বহুস্তরীয় ও সর্বত্র বিন্যস্ত জটিল অমানবিক সম্পর্ক প্রতিস্থাপিত হবে মানবিক সম্পর্কে।
বিষয়ের শুরুটা করছি এক ভিন্ন মাত্রা দিয়ে। সম্প্রতি একটি গল্পের বই উন্মোচনের অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতা হিসেবে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য শুনতে শুনতে আমার মনে একটি প্রশ্ন জাগে। সাহিত্য-অর্থনীতি-রাজনীতিকে কী এক অভিন্ন অবস্থান থেকে বিচার করা সম্ভব? এই সবকটিই যখন একই বাস্তবের, একই প্রকৃতির, একই মানব-সমাজের, একই গোলার্ধের ভিন্ন ভিন্ন দিক, তখন বিচারের এক সাধারণ প্যারামিটার কী খুঁজে নেওয়া সম্ভব নয়? সেই অনুষ্ঠানে বক্তারা বিভিন্ন গল্পের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিলেন এবং কেউ কেউ এও বললেন যে একই গল্পের পাঠক-কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের পাঠ হয়। পাঠক তার নিজস্ব অবস্থান থেকেই পাঠ নেবেন সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই যারা এই গল্পগুলো পড়েছেন তাদের মধ্যে এক সাধারণ যোগসূত্রও রয়েছে। সবারই এই গল্পগুলো ভাল লেগেছে। ভাল লাগা জন্ম দেয় একধরনের অনুভূতির যা মস্তিষ্কে সঞ্চারিত হয়ে জন্ম নেয় নতুন চিন্তার। স্যুইচ টিপে দিলে তারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে বাল্ব জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ভাল-লাগার অনুভূতি স্যুইচ টিপে দেওয়ার কাজটি সেরে নেয়। বাল্বের ক্ষমতা অনুযায়ী যেমনি আলো দেয়, ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনুযায়ী চিন্তার উদ্রেক হয়। সেই ক্ষমতার প্রশ্নটি এক ভিন্ন আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই চিন্তার ভিত্তি যে অনুভূতি সেটাই তৈরি করে সাধারণ যোগসূত্র। পাঠকের মধ্যে সেই অনুভূতি লেখক তৈরি করতে পারেন শুধুমাত্র তাঁর গভীরে দেখার ও তাকে প্রকাশ করার ক্ষমতা আছে বলেই, না লেখককে তাড়িত করে তাঁর দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন স্পৃহা যা ব্যতীত সাহিত্যের লেখক আর লেখক হয়ে উঠতে পারেন না। আসলে সেটাই হচ্ছে স্বাধীনতার স্পৃহা। লেখক স্বাধীন হতে চান, তাই খোঁজে দেখেন কোথায় তিনি আঁটকে আছেন। তাঁর দেখার ক্ষমতা দিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন দৃশ্য-অদৃশ্য, ব্যক্ত-অব্যক্ত, নিকট-সম্পর্কিত ও দূর-সম্পর্কিত হাজারো সম্পর্কের বাঁধন যাকে তিনি উন্মোচিত করেন পাঠকসমক্ষে। কারণ সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির দৌড়ে তিনি একা বিফল ও ভগ্ন-মনোরথ। এর থেকে বাঁচার জন্য লেখক হয়ে উঠতে পারেন একজন সমাজকর্মীও যার সাথে তাঁর লেখক সত্ত্বার কোন বিরোধ নেই – আছে সময়ের প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন। কিন্তু এই স্বাধীনতার স্পৃহা যতদিন তার অন্তরে জাগ্রত ও প্রাধাণ্যকারী অবস্থানে বিরাজিত, ততদিনই ব্যক্তি লেখকের কাছে সাহিত্য-স্রষ্টা হিসেবে তাঁর অস্তিত্ব।
রিউ-পে ও আর্থিক সম্পর্ক
অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে চালু করা হয়েছে রিউ-পে প্রকল্পের মাধ্যমে আমজনতার জন্য ব্যাঙ্ক একাউন্ট খোলা এবং সাথে ডেবিট কার্ড ও এক লাখ টাকার দুর্ঘটনা ইনস্যুরেন্স প্রদান। এই প্রকল্পের ঘোষিত উদ্দেশ্য এই যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আর্থিক ক্ষমতার স্বাদ পাবে, চাষীরা রক্তচোষা মহাজনী ধারের খপ্পরে পড়বে না, সবাইকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন প্রদান করার ব্যবস্থা করা যাবে যা এখন মাত্র ৪% এবং ব্যাঙ্ক লেনদেন বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক সচলতা বৃদ্ধি পাবে। তবে অনেকগুলো প্রশ্ন এখানে গুরুত্ত্বপূর্ণ। ক্যাম্প করে একাউন্ট খোলার ব্যাবস্থা না হয় করা গেল, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে ব্যাঙ্ক, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ইত্যাদি কোন পরিকাঠামোই নেই, সেখানকার সাধারণ মানুষ গাঁটের কড়ি ব্যয় করে মাইলকয়েক দূরে অবস্থিত ব্যাঙ্কের সাথে সংযোগ বজায় রাখবেন কী করে? জনগণের হাতে যদি সঞ্চয় করার মত অর্থ না থাকে তাহলে একাউন্ট সচল রাখবেন কী করে? সবকিছুকে বেসরকারিকরণ করে দিয়ে সরকার উৎপাদনী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণের আয় বৃদ্ধি করবে কী করে? গ্রামাঞ্চলে নতুন উৎপাদনী প্রক্রিয়া ও উৎপাদনী শক্তির বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সচলতা আনার কোন পরিকল্পনা ছাড়া ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ক্ষুদ্র লোন দিলে তা অনাদায়ে বেড-ডেট হয়ে যাবে এবং ব্যাঙ্ক এধরনের লোন দিতে উৎসাহ বোধ করবে না। বেসরকারি ব্যাঙ্ক তো আসবেই না, কারণ গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত কোন শাখাই তাদের প্রায় নেই এবং মুনাফা ছাড়া তাদের আর কোন লক্ষ্যও নেই, বরঞ্চ সাধারণের জমা অর্থ কীভাবে তাদের ব্যবসায়িক কাজে লাগানো যায় তাতে তারা উৎসাহী হয়ে উঠবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ২০০৯ সালের হিসেবে দেখা গেছে মোট ১৭১টি ব্যঙ্কের মধ্যে ২০টি জাতীয় ব্যঙ্ক, ৩২টি বিদেশি ব্যঙ্ক, ৮৬টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যঙ্ক, ২২টি অন্যান্য সিডিউল ও ৪টি নন-সিডিউল ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই ব্যঙ্কগুলির মোট ৭৯৭৩৫টি শাখা এবং শাখা প্রতি গড় জনসংখ্যা ১৫০০০। এই শাখাগুলির মধ্যে গ্রামীণ ও আধা-শহর এবং শহর ও মেট্রোতে বিদেশি ব্যঙ্কের শাখার সংখ্যা যথাক্রমে ৮ ও ২৮৫, এসবিআই’র ১০৩৯৫ ও ৫৬৬৭, জাতীয় ব্যঙ্কের ২২০৫০ ও ১৭৩২৬, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যঙ্কের ১৪৩৭২ ও ৭৫৫ এবং অন্যান্য সিডিউল ব্যঙ্কের যথাক্রমে ৩৭৫১ ও ৫১৫৬টি। এই হিসেবে আরও দেখা যায় যে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যেসব নতুন শাখা খুলেছে তার অধিকাংশই সেই সব অঞ্চলে যেখানে ইতিমধ্যে ব্যঙ্ক শাখা রয়েছে, এবং কিছু ব্যাঙ্কের স্বল্প সংখ্যক গ্রামীণ শাখা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যঙ্কের সুবিধে নেই, গ্রামীণ ও আধা-শহরে যা রয়েছে তার সবটিই সরকারি ব্যাঙ্ক। সেক্ষেত্রে ধরা যাক ভ্রাম্যমান ব্যাঙ্ক বা ফ্রেঞ্চাইজির মাধ্যমে ব্যাঙ্ক-কাউন্টার খোলা হল। কিন্তু এইগুলিকে সচল রাখার জন্য পরিকাঠামো দরকার। তারচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয় এই যে ফ্রেঞ্চাইজির মালিকানা পাবে আর্থিকভাবে সচ্ছল স্থানীয় প্রতিপত্তিশালী লোকরা। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে সরকারি ব্যঙ্কগুলোরই, কিন্তু তারজন্য প্রয়োজনীয় আইটি-সামগ্রী সরবরাহ করে লাভবান হবে ব্যক্তিগত মালিকরা যারা জনগণের জমা অর্থ থেকে ব্যঙ্ক লোনও পাবে। ব্যবসায়িক এই নেটওয়ার্কের সবচাইতে নিচে অবস্থিত যে ফ্রেঞ্চাইজি তারাও তাদের মুনাফার জন্য সচ্ছল গ্রাহকদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে। বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে এই ফ্রেঞ্চাইজিদের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে গ্রাহকরা ওয়াকিবহাল। অথচ গ্রামীণ উৎপাদনী কাজকর্ম সহ এই ব্যাঙ্কিং-এর গোটা প্রক্রিয়াকে যদি সামগ্রিকভাবে সরকারি মালিকানার অধীনে আনা যায় এবং বাংলাদেশের আদলে মোবাইল হাতে সরকারি ভ্রাম্যমান বেয়ার-ফুট গ্রাম-সেবকদের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সুবিধা দেওয়া যায়, তাহলে সরকারি আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। সরকারি ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি ও কর্ম-সংস্কৃতির প্রশ্ন দেখা দেয় তাকে দূর করা অসম্ভব কিছু নয়। তারজন্য প্রয়োজন জনগণের ক্ষমতায়ন, কাঠামোগত রক্ষাকবচ ও প্রয়োজনীয় আইন। এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্ত্বপূর্ণ হচ্ছে এই যে শ্রেণি-সচেতন ও পার্ফমেন্স-সচেতন ব্যাঙ্ক ম্যানেজারদের কাছ থেকে বর্তমানে চালু কৃষি-লোন, তপসিলি স্কিমের লোন ইত্যাদি আদায় করতে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, নতুন একাউন্টের ক্ষেত্রে এসমস্যা হবে আরও গভীর। উপরন্তু দুর্ঘটনা বিমার ব্যয় বহন করতে সরকার উচ্চবিত্ত ও কর্পোরেটের উপর কর চাপায় না রেশন সামগ্রীর ভর্তুকি কমিয়ে গরিবের উপর বোঝা চাপায় এটাও দেখার বাকী। যেহেতু এই স্কিমের সাফল্য অন্যান্য অনেক স্কিমের মত সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভরশীল, তাই এর পরিণতি ক্রমশঃ প্রকাশ্য। কিন্তু শুরুতেই কিছু লক্ষণ দেখা গেছে যা মানুষের স্বাধীনতা স্পৃহার প্রশ্নের সাথে যুক্ত। দেশব্যাপী একাউন্ট প্রদানের প্রথম দিনে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলেও ফর্ম নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে এই ‘জিরো-ব্যালান্স’ একাউন্টের জন্য ন্যূনতম একশ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। একাউন্টে এই টাকা জমা থাকলে তো ভাল, নইলে নেপোয় মারে দৈ। কিন্তু প্রশ্ন হলো সাধারণ মানুষ জেনেশুনেই এই টাকা দিচ্ছেন, কারণ যারা অর্থ সংগ্রহ করছেন তাদের সাথে সাধারণ মানুষ এমন এক সামাজিক-আর্থিক-রাজনৈতিক সম্পর্কে আবদ্ধ যে তারা কোন ধরনের বিবাদে যাওয়ার সাহস পান না। এই বাঁধন থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার স্পৃহা এতো জাগ্রত হয়নি যা তাদেরকে বিরোধিতা করার মনোবল জোগাতে পারে। অর্থাৎ এখানেও নতুন চিন্তা ও কর্মের জন্য, বঞ্চিত ও বঞ্চনাকারীর স্বাধীনতার এক আন্দোলনে যুক্ত হওয়া জরুরি।
পরিচিতি ও স্বাধীনতা
কাশ্মীর সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধান ছাড়া যে ভারতীয় উপ-মহাদেশে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না তা পলিটিক্যাল সায়েন্সের যে কোন ছাত্র নির্বিঘ্নে বলে দিতে পারে। কাশ্মীর সমস্যা মানে পাকিস্তান ও ভারতীয় উভয় কাশ্মীরিদের সমস্যা। রাজনৈতিক ডিসকোর্স ও মতাদর্শগত প্রচারের দৌলতে কাশ্মীরিদের সমস্যা পরিণত হয়েছে সীমা বিবাদের সমস্যা হিসেবে। এই বিবাদের সমাধানে দুই দেশই তাদের নিজস্ব অভ্যন্তরিণ রাষ্ট্র নীতি ও বিদেশনীতি অনুযায়ীই ভূমিকা পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কাশ্মীরিদের কী হবে যারা শুধুমাত্র উভয় রাষ্ট্র শক্তির সদম্ভ পদচারণায় নয়, সীমা বিবাদের সংঘর্ষেও আক্রান্ত। যে স্যাকুলার গণতান্ত্রিক কাশ্মীরি পরিচিতির আকাঙ্খার সমাধানের সূত্র খোঁজাই সমগ্র প্রচেষ্টার অন্তর্বস্তু, তারাই সেই প্রচেষ্টায় অপাঙক্তেয়। অথচ কাশ্মীরি জনগণ রুটি-কাপড়া-মোকামের জন্য বর্তমান নির্বাচনকে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু তাদের পরিচিতির আকাঙ্খাকে বিসর্জন দেননি। কাশ্মীর প্রশ্নকে অনেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় মুসলমানের সাথে জড়িয়ে মুসলমান প্রশ্ন হিসেবে দেখেন। কিন্তু যারা কাশ্মীরি সংস্কৃতি, কাশ্মীরি জীবনযাত্রা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তারা এই স্যাকুলার পরিচিতিকে কুর্নিশ না করে পারেন না। কাশ্মীরের স্বাধীনতা-উত্তর দীর্ঘ লড়াইয়ে কখনও কোন দাঙ্গার নজির নেই। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবার বড়ে মানিয়ে ভারতীয় ও কাশ্মীরি রাজনীতিতে অনেক ছক সাজানো হয়েছে এবং তাতে পণ্ডিতদের স্বার্থই বিঘ্নিত হয়েছে। তথাপি কাশ্মীরি পণ্ডিতরা এখনও নিজেদেরকে মনে প্রাণে সেই স্যাকুলার কাশ্মীরি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই ভাবেন। সব সমস্যার সমাধান সম্ভব যদি সমস্যাকে রাষ্ট্র শক্তির মদমত্ততায় দেখা না হয়, দেখা হয় ভুক্তভোগী মানুষের দৃষ্টি থেকে। এভাবে দেখা পথ দিয়েই সমাধান সম্ভব। পথমধ্যে অনেক ডিপ্লোম্যাসি চলতে পারে, কিন্তু শেষ বিচারে সব প্রচেষ্টাতে তারাই থাকা উচিত কেন্দ্রীয় ভূমিকায় যাদের পরিচিতির আকাঙ্খার নিস্পত্তি হবে। নাহলে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা শব্দদ্বয়ের কোন মানেই থাকে না এবং মানুষের সমস্যার কোন সমাধান হয় না। কারণ স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়।
স্বাধীনতা ও মানবিক সম্পর্ক
স্বাধীনতার বিষয়টি স্তরীভূত। একটি স্তর সরালে আরেকটি স্তর উন্মোচিত হয়। একটি বাঁধন ছিন্ন হলে, অন্য বাঁধন দৃশ্যমান হয়। কিন্তু শক্তিমত্তার দৃশ্য নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ না জানিয়ে মানুষে মানুষে সম্পর্কের মধ্যে বাজারের কেনাবেচার অদৃশ্য শক্তিকে আঘাত করা যায় না। এভাবে স্তরে স্তরে সজ্জিত স্বাধীনতার প্রশ্নকে সমাধানের মাধ্যমেই মানব সভ্যতা পৌঁছতে পারে তার ঈপ্সিত লক্ষ্যে যেখানে বহুস্তরীয় ও সর্বত্র বিন্যস্ত জটিল অমানবিক সম্পর্ক প্রতিস্থাপিত হবে মানবিক সম্পর্কে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন