“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১২

শুভ নববর্ষ


     আলাদা করে এই দিনটি নিয়ে কোন উচ্ছ্বাস আমার নেই। তবে হ্যা শুভকামনা তো করা যেতেই পারে, তাই আবারও শুভেচ্ছা সহ সবাইকে আমার শুভ নববর্ষের অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানালাম।
         জানি অনেকেই চোখ ট্যাঁরা করে তাকাচ্ছেন আমার দিকে! ভাবছেন এই হলো ইন্টেলেকচ্যুয়েল আঁতেলদের সমস্যা। কারণে অকারণে সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়ে। কি তাই তো! আসলে পাশের বাড়ি থেকে কচি পাঁঠার মাংসের গন্ধ ভেসে আসছে। আমার নিমন্ত্রণ নেই। তাই একটু সেন্টু সেন্টু গন্ধ! উমন'টাও আমার পাশে বসে আছে মাটিতে। ও বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। মনটা ভালো নেই, এবার চালের গুড়োর নাড়ু হয়নি। মহাজন চাল দেয়নি।
       বলেছি, বিকেলে মেলায় নিয়ে যাবো। তাই সেই লোভে মাংসের গন্ধ কে আপাতত পাত্তা দিচ্ছে না। ওর বাবা বেড়িয়েছে শেষ বাজারে পাঁঠার, খাসির ভুঁড়ি গুলি কিনে আনতে। কচি বাশের ভেতর ঢুকিয়ে ভর্তা হবে পাঁঠার নাড়িভুঁড়ির। আমি ওকে না করেছি আজ খাবি না তুই।
       কালই ওর বাবাকে দারুণ ধমকে গেছে চৌধুরী। সারা বছর চৌধুরীর মাঠে খেটেও তার তিন হাজার টাকার ঋণ শোধ হয়নি। শেষে বলে গেছে আজ এসে টাকা না পেলে পোষা শুয়োরটা নিয়ে যাবে। রূপবতীকে বলে গেছে বাংলা মাল এক নম্বরটা গরম গরম তৈরি রাখতে। ডান ঘাড় নেড়েছে রূপবতী। তখনই কোলের'টা মুখ দিতে গেল বুকে। বুকের কাপড় আলগা হতেই চৌধুরী আরও একশ টাকা পুষিয়ে নিল। বলে গেছে আসার সময় একটা লাল বেলাউজ নিয়ে আসবে। ভেতরেরটা আনবে নাকি সেটাও জিজ্ঞেস করতে ভুলেনি চৌধুরী।
          দিবাকর গত ক'বছর বাড়ি ফিরতে পারেনি। ছুটি পায়নি। বিদ্যুৎকে প্যারিসের কোন মায়া আর ধরে রাখতে পারছে না। আজ সকালেও বলছিল মায়ের কথা। নন্দিনী রান্না করছে ইলিশ সেদ্ধ। আর ভাবছে ইস একবার যদি রাজা এসে খেতে চাইত! মনামী শুনেছি বেশ ব্যাস্ত আজকাল। পিছন ফিরে তাকানোর সময় নেই।
       ইন্দ্রটা আজও রাতের কবিতা লিখে চলেছে। নায়মা'র মনটা সক্কাল থেকেই খারাপ। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আর রোখা যাবেনা বিয়েটা আসছে বছর। রাজীবের রঙের দোকানে প্রচুর বাকী হয়ে গেছে। একটা ছবিও বিক্রি হয়নি। রঙ ফুরিয়েছে সব। রাকিব আজও অপেক্ষা করবে তার প্রিয়তমার জন্য দুপুর রোদ্দুরেই লাল টি শার্ট পরে।
      ব্রেকিং নিউজের জন্য আজও ছুটি পায়নি গৌতম। মায়ের শাড়ি দুটো জমেছে। একটা পুজোর আর একটা পয়লা বৈশাখের। দেয়া হবে কিনা কোনদিন কে জানে! রিয়া জানেনা কোনদিন আর কাউকে ভালবাসতে পারবে কিনা! তানিয়া আজও ভাবে বোনটা কেন চলে গেল দুদিনের জ্বরে! এতো অভিমান!
অর্পিতা আজও শেষের কবিতা পরে, প্রতিদিন সক্কাল বেলায় ভাবে এই বুঝি এলো অমিত...। আমি জানিনা এরপরেও কিভাবে ভালো থাকার চেষ্টা করবো মিষ্টি মিষ্টি হাসি মুখ করে!
     ইতিহাসের খিলানগুলি দেখে মনে পড়ে গেলো, কোনদিনই মানুষ ভালো থাকতে পারেনি এই দিনগুলিতে। ইতিহাস বলে, রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মোঘল সম্রাট আকবরের যুগে প্রবর্তন হয়েছিল বাংলা সালের। বর্ষশুরুর সে দিনটিই এখন বাঙালির প্রাণের উৎসব।বাদশাহ আকবরের নবরত্ন সভার আমির ফতেহ- উল- সিরাজি বাদশাহি খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ফসলি সালের শুরু করেছিলেন হিজরি চান্দ্রবর্ষকে সৌরবর্ষের মতো মিলিয়ে নিয়ে। তিনিই হিজরিকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেছিলেন ও পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেছিলেন। আর বৈশাখ নামটি নেওয়া হয়েছিলো নক্ষত্র ‘বিশাখা’র নাম থেকে।
          পয়লা বৈশাখে আকবর মিলিত হতেন প্রজাদের সঙ্গে। চারদিকে বিতরণ হতো মিষ্টি। সঙ্গে চলতো খাজনা আদায়। এরপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বর্ষবরণ উৎসব চলে আসে জমিদার বাড়ির আঙিনায়। খাজনা আদায়ের মতো একটি রসহীন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত হয় গান বাজনা, মেলা আর হালখাতার অনুষ্ঠান।
         আজও খাজনা আদায় করতে আসবে চৌধুরী ফুলবতীর বাড়ি। তবে ফুলবতী আপাতত সব ভুলে ব্যাস্ত সকাল থেকে কালী গরুর দুধ ওগলাতে বিশাল লোহার কড়াইয়ে কাঠের চুলোয়। এতে নাকি সংসারের শ্রীবৃদ্ধি হয়। উমনটা কখন যে পালাল আমার পাশ থেকে চুপটি করে! ও পালালেই একটা দুর্ঘটনা ঘটে নিশ্চিত।
         যাই এবার আমিও, নন্দিনীর কোন খোঁজ পাই কিনা দেখি একবার আমার পাহাড়ে!

কোন মন্তব্য নেই: