“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২০

দুঃসময়

 ।। সুপ্রদীপ দত্তরায় ।। 


 
 
 
 
 
কটার পর একটা শহর
লজ্জায় মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে
হাথরাস, বলরামপুর, বুলন্দশহর --
আরো কত কত অনুচ্চারিত শহরতলী ।
নিজেদের ঐতিহ্য খুইয়ে
করজোড়ে ক্ষমা চাইছে 
              সমগ্র নারীজাতির কাছে ।
অগুন্তি মাতৃযোনী কাঁদে তীব্র অনুশোচনায়
আজ পৃথিবী বুকে অন্ধকারতম দিন।

টিভির পর্দায় যখন ঝলসে ওঠছিল খবরগুলো
একজন বাবা হিসেবে গুটিয়ে যাচ্ছিলাম আমি
আশপাশের কালো ছায়া 
          যমকালো হয়ে ওঠছিল ক্রমশ
আমি ভয়ে শিউরে উঠছিলাম --
ওই মেয়েটিও যে আমার মতোই 
           ‌ কোন এক বাবার আদরের কন্যা।
পুলিশ কিংবা প্রশাসন --
              ভূমিকা প্রসংশনীয় নয়
     অন্তত প্রচারিত খবর তো তাই।
কি করে ছাই দিয়ে আগুন চাপা যায়
অলক্ষ্যেতে তার‌ই চলছে ক্রমাগত মহড়া।
কিছু লোক সুযোগের সঠিক ব্যবহারে --
নাটকের পর নাটকের মঞ্চায়ন হয়
বাষ্প হয়ে উড়ে যায় চোখের কোণে জল,
শুধু যে যায় সে আর ফিরে আসে না।

আমার‌ও একটা মেয়ে আছে, নিষ্পাপ
এখনও তার চোখে, মুখে, বুকে
সমাজের মলিনতা স্পর্শ করেনি।
সে জানে না অদৃশ্য নেকড়ের বেষ্টনীতে
           তার নিত্য যাতায়াত।
এখনও সে সকাল দুপুর যখন তখন
ট্রামে বাসে ছুটে যায় জীবনের সন্ধানে।
আমি শুধু আতঙ্কে থাকি, কি জানি
কোন কালো দৈত্যের ছায়া লাগে গায়ে।

এখন আর আগুন জ্বলে ওঠে না
মিছিলের পর মিছিলে মোমবাতি জ্বালিয়ে
এখন বাজারে প্রদীপের বড়  অভাব।
গুমড়ে ওঠা কান্না আর চাপা আক্রোশ
কামড়ে কামড়ে রক্তাক্ত করে 
                 নিজের সাথে দুটো হাত ।
এখন বড় দুঃসময়।

মনে হয় চিৎকার করে বলি হে ঈশ্বর 
যদি পুরুষশ্রেষ্ঠ হ‌ও, আমাকে ক্লীব করে দাও।
নিজেকে পুরুষ পরিচয়ে ঘেন্না হয় আমার,
মনে হয় আমারও ঘামে সেই পুরুষের গন্ধ।


কোন মন্তব্য নেই: