(পরিবেশ মনস্ক সাংবাদিক প্রয়াত পীযুষ কান্তি দাস-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত)
প্রয়াত পীযুষ কান্তি দাস |
সঞ্চালনা এবং ভাষান্তরঃ
পার্থঙ্কর চৌধুরী
পার্থঙ্কর চৌধুরী
অধ্যাপক, বাস্তু ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ,
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়,
শিলচর,
মুঠোফোন
∶ ৯৪৩৫০৭৮২৯৬
শঙ্খচিল
দেখছিলাম, আর ভাবছিলাম সিনেমার নামটা নিয়ে। পাখিগুলোর
তো ভূগোলের জ্ঞান থাকে না! ভৌগলিক সীমানার ধার
ধারে না। আপনার
আমার পরিবেশটাও ঠিক তাই। দেশ এবং বিদেশের যে যেখানেই রয়েছেন, ঠিক ওই ছোট্ট মেয়েটার স্বাস্থ্যের মতো পরিবেশ নিয়ে যে উদ্বেক সেটাও কিন্তু
ভৌগোলিক সীমারেখাতে সীমাবদ্ধ নেই। এই প্রেক্ষিতেই
আজকের এই দিনটি নিয়ে, দেশের ভুখন্ডের বাইরে থাকা বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। জানতে
চেয়েছি, দিনটি নিয়ে তাদের কি ভাবনা চিন্তা, যেসব
দেশে তাঁরা রয়েছেন, সেসব জায়গার পরিবেশের খুনসুটি, এবং এ দিনটির জন্য কোনও বিশেষ বার্তা। যাদের
সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তাদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন
কর্মরত কিম্বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, আবার নতুন প্রজন্মের অনেকেই
গবেষনায় রত। কারোও সাথে পরিচয় হয়তঃ বা কোন সেমিনার-সিম্পসিয়াতে, কিম্বা শুধুই ইমেল মারফৎ।
রমেশ
বুনোরতন। থাইল্যান্ডের মহীডল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ষাটোর্ধ
বয়স। ফুরফুরে মেজাজ। চেহারা না দেখে কথা বললে মনে হবে
উঠতি যুবক। কথায় কথায় বললেন, ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছরই এই ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি
পালন করে আসছেন। জাতিসংঘের গৃহীত এই বিশ্ব পরিবেশ দিবসটা
পরিবেশ সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের প্রধান বাহন হিসেবে কাজ করছে বলে জানালেন। প্রতি বছর, এক একটি আলাদা আলাদা থিম নিয়ে দিনটা পালিত হয়। ২০২০,
এ বছরের থিমটি হ'ল ‘জীব বৈচিত্র্য উদযাপন’ (Celebrate Biodiversity)। কথা প্রসঙ্গে অধাপক বুনোরতন
বললেন, প্রায় চার দশক ধরে তিনি সংরক্ষণের প্র্যাকটিশনার। কিন্তু তারও
অনেক বেশি সময় ধরে তিনি এই প্রচলিত সংরক্ষণের মান সম্পর্কে সচেতন। প্রত্যেকটি দিনই
উনার কাছে এক একটি পরিবেশ দিবস, এবং প্রতিদিনই তিনি তা উদযাপন করেন।
দুঃখ
করে বুনোরতন বললেন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষতঃ, গত দুই দশকে, পরিবেশের গুনগত
অবক্ষয় দেখলে, ‘হৃদয় শিউরে উঠে’! সত্যিই তো! পরিবেশের দুর্বল ও ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা
মূলত আমাদের জন্যই। এটা খুব বেদনাদায়ক। হ্যাঁ, এটা
সত্যি যে জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের পরিবেশকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। তবুও, ভালো
করে দেখতে গেলে সেটা আবার সেই মানুষের জন্যই, যারা জলবায়ু পরিবর্তনের গতিটাকে আরও
ত্বরান্বিত করছে। প্রচণ্ড ক্ষমতাশীল এবং দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই মানুষের জন্যই জলবায়ু পরিবর্তনের
ফলে সৃষ্ট হওয়া পরিবেশের দ্রুত পরিবর্তনগুলি প্রশমিত করার যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া,
সেই স্থিতিস্থাপকতা বিকাশের সুযোগ (Opportunity to develop resilience) খুব
কমই হচ্ছে! পরিবেশের প্রত্যক্ষ উপকারভোগী হওয়া সত্ত্বেও যতই উপার্জন এবং জীবিকা
নির্বাহের দিকে ধাবিত হচ্ছে মানবকুল, ততই পরিবেশের স্বাস্থ্যকর অর্থাৎ সুফলদায়ী
দিকটাকে আরও খারাপ করে তোলা হচ্ছে। এতসবের পরও অন্ধদৃষ্টিকে মুলধন করে পরিবেশের ধ্বংসের দিকে আমাদের
যে যাত্রা, সেটা থেকে পিছ পা হতে আমরা যেন নারাজ। পৃথিবীতে সম্ভবত মানুষই একমাত্র প্রজাতি, যারা এই ধরনের আত্মঘাতী আচরণ করছে !
রাখঢাক
না করেই অধ্যাপক বললেন, যদি আমি আমার মতো করে বলি, তবে বলবো, এভাবে বছর বছর
পরিবেশের জন্য ঘটা করে এই ফিফথ জুন উদযাপনের প্রয়োজন নেই। আমি চাই, প্রতিটি দিন,
এমনকি প্রতিটি মুহূর্ত নিবেদিত হোক পরিবেশের জন্য। এছাড়া, আমি চাই না দিনটি নিয়ে
কোন সেলিব্রেশন হোক । যদিও পরিবেশ দিবসের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষার
জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা যাতে করে পরিবেশ
রক্ষার জন্য একশন প্ল্যানগুলা আরো বেশী কার্যকরী করা সম্ভব হয়, কিন্তু বাস্তবটা
ঠিক তার বিপরীত। বাস্তবে আমরা দেখছি, পরিবেশ রক্ষার এই গুঁড় তত্ত্বটুকু
উদযাপনকারীরা অনুধাবন করতে পারছেন না! পরিবেশ রক্ষার ‘তত্ত্ব-বার্তা’-গুলি সত্যি সত্যিই উদযাপনকারীদের কানের ভেতর গিয়ে
পৌঁছে না। বেশীর ভাগ দেশের লোকেরাই এটাকে ‘ক্রিসমাস’ বা ‘দিওয়ালি’-র মতো উদযাপন
করেন। সে রকম না করে, এই দিনটা আমাদের অন্তর্দর্শন এবং দৃঢ়়
পদক্ষেপের দিন হওয়া উচিত। আমি সেই দিনটার স্বপ্ন দেখছি যেদিন পরিবেশের হানিকারক কাজগুলোকে প্রকৃত অর্থে অপরাধ, মানে আরও জোরালো
ভাষায় বলতে গেলে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান কাঠগড়ায় বিচার করা হবে। এক
বুক নিরাশার মধ্যেও আশা করছি, এ বছরের
পরিবেশ দিবসে শেষ পর্যন্ত সম্বিত ফিরবে এবং লোকেরা বুঝতে সক্ষম হবে যে পরিবেশের অবনতির সাথে সাথে তাদের আরও বেশী করে হারানো
ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। দরিদ্র ও প্রান্তিক বর্গের লোকেরা সাধারণতঃ প্রথম ধাক্কায় এটা টের পায়। আর শক্তিশালী ধনীরা ? তাদেরও এ
থেকে পরিত্রান নেই। শুধু সময়ের ব্যাপার। অত্যাধুনিক হাজারো প্রযুক্তি
সত্ত্বেও, আমরা এখনও আমরা জীববৈচিত্রের উপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্য সমস্ত জৈবিক
সিস্টেম এবং প্রক্রিয়াগুলির একটি মৌলিক উপাদান।
জীবিকা এবং জীবন উপভোগের জন্য জীব বৈচিত্র্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই পথে
না হেটে, এই মানুষ নামের প্রজাতিটা যা করছে, তা তো নিজেরাই নিজেদের কফিন বানিয়ে
রাখার সামিল!
নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
মুকেশ কুমার চালিশে। মাস ছয়েক হল, অবসর নিয়েছেন। কথায় কথায় বললেন, পৃথিবীর মোট
স্থলভাগের শতকরা মাত্র ০.১ থাকলেও উনাদের দেশে বেশ কিছু আকর্ষণীয় জীববৈচিত্র্য রয়েছে। হিমালয়
অঞ্চলের চারটি হটস্পটগুলির মধ্যে সেদেশ জীববৈচিত্রের একটি হটস্পটের অংশ। ছয়টি জীব সংমন্ডল নেপালে রয়েছে।
নেপালের মোট অঞ্চলের প্রায় ২৫% এলাকা জুড়ে সুরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে, এর মধ্যে ৯টি
জাতীয় উদ্যান, ৩টি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগার, ৫টি সংরক্ষণ অঞ্চল, ১টি হান্টিং
রিজার্ভ রয়েছে এবং সেগুলোর প্রত্যেকটাকে ঘিরে বিশাল জায়গা জুড়ে বাফার অঞ্চল রয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পর্কিত সেদেশে স্থানীয় লোকেদের মধ্যে কিছু প্রচলিত রীতি বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এবং সংরক্ষন সম্পর্কে তাদের জ্ঞান অন্য জায়গার আরো দশজন লোকের তুলনায় বরং ভালই জানা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক পরে, অর্থাৎ ১৯৭০ সাল থেকে সরকারি পর্যায়ে সেদেশে সংরক্ষণের কাজ হাতে নেওয়া হয়। জীববৈচিত্র্য নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তাদের দেশ সক্রিয়ভাবে যোগদান করে চুক্তি সাক্ষর করেছে এবং জীববৈচিত্র্যের বিভিন্ন দিক নিয়েও নিরন্তর গবেষণা করে যাচ্ছে। হিমালয়ের পাদদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দেশটি রয়েছে। প্রয়োজনমতো বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানে প্রচুর অরণ্য রয়েছে এবং সেগুলোতে বন্য প্রাণীদের অবাধ বিচরন চোখে পড়ে। এদের মুক্ত চলাফেরার মধ্য দিয়ে উনার যে উপলব্ধি, তা পরিবেশের সুস্বাস্থ্যের ইঙ্গিত দেয় এবং বিশেষ করে এই লকডাউনের সময় বিভিন্ন দূষণকারী এজেন্টকে হ্রাস করার সহায়ক বলে মনে হয়। তাই, পরিবেশ দিবসে উনার এটাই প্রত্যাশা যে গোটা বিশ্বের লোকেদের জন্য জীববৈচিত্র্যে যেন বজায় থাকে, পাশাপাশি পরিমণ্ডলটাকেও যেন স্বাস্থ্যকর ও দূষণ মুক্ত রাখা যায়। ৫ জুন দিনটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার দিন এবং জীববৈচিত্র্য, মানব এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের সৌরজগতের এই একমাত্র জীবন্ত গ্রহকে বাঁচানোর জন্য অনুশীলন শুরু এবং বজায় রাখার অঙ্গীকার করার দিন।
হাঙ্গেরির জেন্ট ইস্তভান বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী
সংরক্ষন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত গবেষিকা, শ্রেয়া। বাঙালি মেয়ে। বেশ কবছর থেকে সে দেশে থাকলেও, জন্মসুত্রে ভারতীয়। বলল, ভারত সম্পর্কে ভেবে আমার মনে
প্রথম যে শব্দটি আসে তা হ'ল 'বৈচিত্র্য'; প্রাকৃতিক এবং নৃতাত্ত্বিক দুটোই।
দেশজুড়ে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক দৃশ্য, প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্রতা পাশাপাশি
সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বৈচিত্র্য দেশটাকে বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে তোলে।
পরিবেশ
উদযাপনের এই দিনটিতে, চারপাশের যে প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটছে তার ধারাবাহিকতা এবং এদের
সম্ভাব্য মোকাবিলা নিয়ে সবার জন্য একটি সুস্পষ্ট চিন্তাভাবনা এবং রূপরেখা তৈরি
করা খুবই জরুরি। অতিমারি, ভূমিকম্প, দাবানল, সুপার ঘূর্ণিঝড়ের মতো একের পর
এক বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকস্মিক প্রাদুর্ভাব সব কিছুই যেন এ বছর হচ্ছে। এই
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পিছনে থাকা অদৃশ্য বাস্তব টাকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা
উচিত। আমরা সত্যই প্রকৃতির করুনায় রয়েছি তা যেন বার বারই মনে
হচ্ছে।
করোনা
আক্রান্ত ভারতের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে আমাদের জনগণ ও সরকার পরিস্থিতি
মোকাবেলায় কঠোর সময়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। বিভিন্ন পেশার
লোকেরা যদি এই সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করেন,
তবে সম্ভবত একটি উপায় বেরোতে করতে পারে। বন্যজীবন
সংরক্ষণের শিক্ষার্থী হওয়ায়, আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, বাস্তুসংস্থান এবং বন্য
প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের গুরুত্ব সম্পর্কে সারা দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের
মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে সচেতনতা যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে। একইসাথে
গবেষণা এবং বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আমি দৃঢ়়ভাবে বিশ্বাস করি যে
পরিবেশের স্বার্থে এই পরিবেশ দিবসে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত এবং সুস্থ সমাজ,
আদর্শ পরিবেশ শিক্ষা এবং একটি সচেতন জাতি হিসাবে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার
জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত।
সিঙ্গাপুরের জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এন্ডি আংগ জানালেন, আসুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি উদযাপন করার সাথে সাথে আমরা আমাদের চারপাশের সুন্দর প্রকৃতির প্রশংসা করার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করি এবং আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় একসাথে কাজ করি।
বাংলাদেশ, ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী গবেষক, হাসান আল-রাজি
জানালেন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ
দিনটি খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উদযাপন করা হবে। বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণ
এবং পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করে এ ধরনের সংগঠনগুলো এই দিনটিকে পালন করতে বিশেষ
উৎসাহী। বাংলাদেশ সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এই দিনটিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতি বছর
উদযাপন করে থাকে। পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা পরিবেশ সংরক্ষণ এর তাৎপর্য এবং
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের করণীয় বিষয়গুলোকে সকলের সামনে তুলে ধরাই এই দিনটির
উদ্দেশ্য। প্রতি বৎসর ঢাকার আগারগাঁওয়ের বন ভবনে এই দিনটি উদযাপিত হয়। দিনটিকে কেন্দ্র করে রেলি,
সেমিনার, আলোচনা সভা ইত্যাদি আয়োজন করা
হয়। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, স্কুল
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে।
এ বছরের পরিবেশ দিবসের
বিষয়টা পুরোপুরি ভিন্ন। পরিবেশ দিবস
উদযাপনের ঠিক এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবী এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে
যেখানে জনসমাগম পুরোপুরি বিপদজনক। করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাবের ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে
সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাই এবছর হয়তো বা আগের বছরগুলোর মত
পরিবেশ দিবস উদযাপন করা সম্ভব হবে না। তবে এটাও সত্য যে করোনা ভাইরাসের
প্রাদুর্ভাব এর জন্য দিনটির উদযাপন থেমে থাকবে না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই উদযাপন হবে প্রযুক্তির
ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘরে বসেই উদযাপন করা হবে পরিবেশ
দিবস। এই কদিন আগে (অর্থাৎ ২২শে মে) বিশ্ব জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দিনটিও ঠিক
এভাবেই পালিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস
এবছর আমাদেরকে বুঝিয়ে দিল যে পৃথিবীতে মানব সভ্যতা টিকে থাকার জন্য পরিবেশের
প্রতি যত্নশীল হওয়া কতটুকু প্রয়োজন। এই
ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর জন্য অনেক জায়গাতেই পরিবেশ তার নিজের অবস্থায়
ফিরে আসছে বলে অনেকে নামি-দামি লোকেরাই মন্তব্য করছেন। তবে আমার মনে হচ্ছে, করোনা কালীন সময়েও কিছু
কিছু ক্ষেত্রে আমরা পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি,
হ্যান্ড গ্লোবসও ব্যবহার করছি। ব্যবহারশেষে সেগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি এখানে ওখানে যত্র
তত্র। এইদিকটাতে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম
মানা হচ্ছে না। কোন কোন দেশে নীতি নির্দেশিকা থাকলেও, সেভাবে সেটা দেখভাল করা
হচ্ছে না। এতে করে পরিবেশ, বিশেষ করে জলজ পরিবেশ
হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বলছিলাম, এই পরিবেশ দিবসে বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতির
কথা বিবেচনা করে আমাদের পরিবেশের প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে, পরিবেশের ভারসাম্য
যাতে নষ্ট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন