(দেশভাগ এবং পরের দশকের কাছাড় সিলেটের প্রেক্ষাপটে রণবীর পুরকায়স্থের এই উপন্যাস ছেপে বের করেছে দিন হলো। ভালো লাগা এই উপন্যাস পুরোটা টাইপ করে তুলে আমার প্রিয় কথা শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানালাম। আশা করছি আপনাদের সবার এটি পড়তে ভালো লাগবে। সম্পূর্ণ উপন্যাসের সংলাপ ভাগটি সিলেটিতে -সে সম্ভবত এই উপন্যাসের সবচাইতে আকর্ষণীয় দিক। আপনাদের পড়বার সুবিধে করে দিতে, ঈশানে এই উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে আসছে। আজ তার উজান পর্বের অধ্যায় ষোল ---সুব্রতা মজুমদার।)
ষোল
বৈতলের দিন কেটে যায় বুদ্ধির ব্যবহারিক প্রয়োগে । দিনের শরিক অনেক । সঙ্গীহীন
রাতের অসহায়তা কাটাতে রাতের উত্তর খুঁজে বেড়ায় দিনের আলোয় । বৈতলের চাই স্থায়ী আস্তানা ।
পশরাহীন মেলার দোকান নয় । ক্যাম্প আর রিফ্যুজি শব্দের অবজ্ঞা থেকে বেরোতে চায় বৈতল
। আর বৈতল চাইলেই তার উপায়ও বেরিয়ে আসে যথাসময়ে । হয়ে যায় যোগাযোগ ।
ইটখোলার তেমাথায় শৈলেন কবিরাজের ঔষধালয় ।
কবিরাজি দোকান তো নয়, এক বৈঠকখানা । ঘরের তিনদিকে
কাঠের আলমারিতে বৈয়াম । কোনোটা ভর্তি কালো কালো বড়িতে কোনোটা খালি । ছোটখাটো
চেহারার কবিরাজ মশাই তার চৌকির মধ্যমণি হয়ে গড়গড়ায় প্রথম টান দিয়ে শুরু করেন
সান্ধ্য আসর । তখন রোগী থাকে কম, সমবয়স্ক বান্ধব সমাজই প্রধান ।
বৈতলও ঘরের এক কোণে বসে ওদের কথোপকথন শোনে, কখনও মন্তব্য করে আলটপকা । হেড়ম্ব ভট্টাচার্যের গলাটাই থাকে চড়া । ইটখোলা
মালুগ্রাম হরিৎবরণের একমাত্র পুজারি ব্রাহ্মণ । বেঁটে মানুষটি এলাকায় বাট্টি ভট
নামেই বেশি পরিচিতি । সবার ভিতরবাড়ির অনেক খবরই তার নখদপর্ণে । গূঢ় সংবাদ পরিবেশনে
সতর্কতার কণ্ঠস্বর তার কিছুতেই নিচু থাকে । কারণ বাট্টি ভটের গলার আওয়াজ একই তারে
বাজে, কোনও ওঠা পড়া নেই । সব সময় ভম্ভম্
মুলি বাঁশের গাঁট ফাটা গলা । তাই সাংকেতিক ভাষার ঘেরাটোপ । বৈতলের বুঝতে অসুবিধা
হয় । বাট্টি ভট বলে,
--- রাহুয়ে বুঝছইন নি কবিরাজ মশায়, কেতুরে আর রাখাল না । পুড়ি ইগুরে লইয়া যেতা
ইচ্ছা করের, যেখানো ইচ্ছা ঘুরের । অউত্ত
গেছেগি এক চা বাগানো, ডার্বি না ভুবনডর ।
পুরনো বই এর দোকানদার বিনোদ চক্রবর্তীও
কেচ্ছাগল্পে সমান উৎসাহী । বলে,
--- লগে কিতা ভোলা গেছে না নি ।
--- ভোলায় কিতা করত । ভোলা ইগু তো দালালি করে ।
বদনাম হয় ভোলার, মাঠা খায় হিগুয়ে । রাহুয়ে ।
--- কেমনে গেল তাই, বাপে ছাড়ল কেনে ।
--- বাপ ছাড়াছাড়ির কে । কালা চেভরলেট অগু চালাইয়া
অউত্ত ডাইল ভাত কেতুর । বাগানো গেছে তখন তো উপরি ও পাইব ।
--- অ গাড়ি লই গেছে নি । তে আর কিতা বাপ লগে আছে
।
--- বাপ লগে থাকত কই । ইউনিয়নের জিপ লইয়া গেছে ।
পানি কাপড়র জিপ ।
কথোপকথনের শেষ পর্যায়ে এসে কিছু সত্য বৈতলের বোধগম্য হয় । কালো গাড়ির সূত্রে কিছু আন্দাজ করে । বৈতল আপন মনে
হাসে, রাবণের উপমাটা তার, আর রাহু । দুটোই বেশ জুতসই । কিন্তু পুড়ি কে
কেতুই বা কে । অপ্রয়োজনীয় ভাবনাকে দীর্ঘায়ীত করে না বৈতল । জমিদার যমুনাপ্রসাদের
এরূপটাও সে ধারণা করেছে, তথ্যে নিশ্চিত করতে পারেনি । তবে
বেঁটে মানুষটার উপস্থাপনাতে বেশ মজা আছে । সব কথা বলাও হয়, নামও নেওয়া হয় না । উপস্থিত মধ্যবয়সী জনেরাও তাকে রটনা
বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মানে । তাই আরো তথ্যের খোঁজে বাকিদের হামলে পড়তে দেখে বৈতল প্রমাদ
গোনে । সময় বয়ে যাচ্ছে এককথায় সেকথায় । বৈতলে ফিরে যাওয়ার জন্য তৎপর হয় । কম পথ নয়, সাত আটমাইল হবে ইটখোলা মেহেরপুরের দূরত্ব ।
কবিরাজ মহাশয়কে বলে,
--- কাকুবাবু, আমি ইখানো থাকি কিতা করতাম আম্মকর লাখান । পয়সা দিলাইন যাই
গিয়া ।
--- তুমি আম্মক অইতায় কেনে রেবা, আমার কবিরাজির বনাজি অইলায় তুমি । ইতা
জড়িবুটি গাছ গাছালি পাতালতা আনিয়া না দিলে অষুদ বানাইলাম নে কেমনে । আইজ থাকিউ যাও, কাইল তুমারে এক লিস্টি দিমু, আনি দেওন লাগব । তুমি তো কইছ বড় হাওরর পারো
তুমার বাড়ি, তে ত শালুক চিনো, বনতুলসী শিমূল ভুবি লুকলুকি দুরণ কলমী
এরেন্ডা আর শটির কিছু পাতা আনি দিও । তোমারে পুরা পয়সা দিতাম পারতাম নায় একলগে ।
তুমি তো দেখছউ সবে পুরা পয়সা দেয় না, পয়সা না দিয়াউ লই যায় অষুদ । গাছ
গাছালি নায় তুমি দিলায়, কিন্তু মধু তো কিনন লাগে, ধাতুঅ কিনন লাগে । বাড়ির সোনারূপা শেষ অই যার
। মার ইতা ভাঙ্গাই দিয়ার । মায়ে তো আর দেখরা না ।
শৈলেন কবিরাজকে গাছ গাছালির শিকড়।
পাতা ফল ফুল দেয় বৈতল । কবিরাজ বৈতলকে মূল্য দেওয়ার কথা বলেন কিন্তু দেওয়া আর হয়
না । বৈতল দুচার পয়সার জন্য চাতলা হাওরের পারে বনজঙ্গল থেকে লতাপাতা শিকড় বাকড় আনে
না । রোগী দরদী কবিরাজকে সাহায্য করার উদ্দেশ্য একটা তো আছেই, আর আছে তার স্থায়ি-ঠিকানার
খোঁজ, হদিশ । জমিদার বাড়ির পুকুরপারে
চালা ঘর একটা দেখে এসেছে । সেই ঘরের গেরস্ত হবে বৈতল । তার আগে তো টোপের মুখে
ঢালতে হবে মধু । জানতে হবে ভিতু জমিদারকে কাবু করার কৌশল । গুণের কথা, চরিত্রদোষের কথাও তো জানতে হবে । আর সে-কাজে ভাল মানুষ কবিরাজ যে তার কোনও সহায় হবে
না সে জানে বৈতল ।
জলের জাদুকর বৈতল জানে জাদু দিয়ে কিছু হয় না । জানতে হয় কৌশল । নদী
বিল পুকুরে জলের বুড়বুড়ি দেখে, মকা পুঁটি দাড়কিনার চালচলন দেখে
বুঝে বড় বোয়ালের হালহদিশ, রুই কাতলার ঠিকানা । কবিরাজ
কাকুর সভাঘরের ভিতরও বৈতল কৌশলে খুঁজে নেয় তার ঠিকানা । হেড়ম্ব ভট্টাচার্য ওরফে
বাট্টিভটই এখন তার টোপের নিশানা । মোটা গলার মানুষটার শয়তানি তার চোখে মুখে ।
নিজের সুখ নেই আনন্দ নেই লাভ নেই তবু পরনিন্দা আর পরচর্চায় কাটিয়ে দেয় সময় । যজমান
বাড়ি গিয়ে আহরণ করে পারিবারিক আর ব্যক্তিগত কুটকচাল, শৈলেন কবিরাজের ঔষধের বড়িতে মিশিয়ে দেয় কথার বিষ । ভদ্রলোক কবিরাজও মাঝে মধ্যে
বিরক্ত হয়ে বলেন,
--- তাইন যে কিতা মাতইন ।
কথা শুরু করতেও হেড়ম্ব ভট্টাচার্যর সুতো ধরতে
হয় না । সুতো এসে ওর হাতে ধরা দেয় । যেমন বৈতল আহম্মকির কথা । ওই এক কথায়ই তোপ
ঘুরিয়ে দেয় বৈতলের দিকে । হুকোর নাইড়চা এদিক থেকে ওদিকে ঘুরিয়ে মুখ লাগিয়ে আয়েস
করে দেয় এক টান । ধোঁয়া গেলে একপেট । বৈতলের দিকে ঘুরে ধোঁয়া মিশিয়ে দেয় বাতাসে ।
বলে,
--- আম্মকির কথা কিতা কইলে বেটা । আমরা কিতা ইনো
আম্মকির মাত মাতিয়ারনি ।
--- এ ঠাকুর, ইতা কিতা কইরা। আপনারা তো কিচ্চু মাতলাউ না । আর আমার আম্মকির
লগে আপনারার কিতা কইন । আমি অইলাম আম্মক ছয়, যে হক্কল কথাত কয় অয় অয় । আপনার যেতা কইবা সবতাতঅউ আমারে অয় অয় করন লাগব ।
রিফুজি মানুষ তো কিচ্চু চিনি না । এর লাগিউ কইয়ার যাই গিয়া ।
--- যাইতায়গি কই রেবা, বাবন বাড়িত আইছ না খাইয়া গেলে অইবনি ।
ব্রাহ্মণ বাড়িতে খাওয়ার অভিজ্ঞতা বৈতলের ভাল
নয় কিন্তু শৈলেন কবিরাজের বাড়ি অন্যরকম । খাওয়ার ব্যবস্থা এক সিদ্ধ চাল ডাল সব্জি
নুন সব এক সঙ্গে । কবিরাজের পরিবার বলতে এক খোঁড়া কিশোর শিক্ষার্থী । কবিরাজ
শিখেছে, বাড়ি ভুবন পাহাড় । ওরা কেউই তার
জাত গোত্র জানতে চায় নি । কবিরাজও না তাঁর ছাত্রও না । একসাথে বসে খেয়েছে, নিজেরা নিজের পাত্র ধুয়ে রেখেছে । খাওয়া শেষে
এক টুকরো যষ্টিমধু এনে দিয়েছেন কবিরাজ । বলেছেন,
--- খাওরেবা । মিঠা লাগব ।
মিষ্টি মানুষের লোভেই আসে বৈতল । দুর্গাবতীর রাগ সহ্য করে থেকেও যায়
ভালমানুষের কাছে দুদণ্ড । নির্লোভ সাধু মানুষের জীবনে শখ দেখতে হলে শুনতে হলে
থাকতে হবে এক রাত এক ভোর । রাত ভোর হওয়ার আগেই ঘুম ভেঙে যায় কবিরাজ ঠাকুরের । পেছন
ঘাটা খুলে ভাঙা বালতি আর ঘটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন । অনেক দূরে খাটা পায়খানার কাজ সেরে
ফিরেও আসেন তৎক্ষণাৎ । আর ঘরে ঢোকা হয় না, চিলিম উল্টে পোড়া তামাকের গুড়ো মুখে দিয়ে কচর মচর করতে করতে শুরু হয়
বাটিসাবানে বুরুষ ঘষে গালে ফেনা তোলা । রেজারে ভারত ব্লেড লাগিয়ে ফটকিরি ঘষে একবার
ছোট হাত-আয়নায় দেখে নেওয়া গালের মসৃণতা ।
বৈতল মাটির বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাকাবাবুর কান্ড কারখানা দেখে আর শোনে মিষ্টি মানুষের
মিহি সুরের গান।,
‘রাইজাগো গো
জাগো শ্যামের মনমোহিনী’
তারপর শ্যামাভোগের মুড়ি বাতাসা আর জল আহার শেষে বেরিয়ে পড়া । দুপুরের খাওয়া, বলেন, ভোজনং যত্র তত্র । শহরে তো আর আখড়ার অভাব নেই । দুপুর পর্যন্ত ভ্রাম্যমান
ঔষধালয়ের চিকিৎসা শেষে ভোগের প্রসাদ । মেহেরপুর কিংবা শিলকুড়ির উদ্বাস্তু শিবিরে
গেলে হরিমটর । দুর্গার সঙ্গেই প্রথম পরিচয় শৈলেন কবিরাজের রবির বারবেলায় । ক্যাম্পে
বিনাপয়সায় রোগী দেখা এবং ঔষধ দেওয়ার দিন রবিবার । ইটখোলা থেকে পায়ে হেঁটে যান
মেহেরপুর । সেখানেই পরিচয় এই অকৃতদার চিকিৎসকের সঙ্গে । রোগের লক্ষণ জেনে কালো বড়ি
খাইয়ে বাঁচিয়ে দেন দুর্গাবতীকে । বলেন, অতিসার । সঙ্গে নুন জলের অনুপান । কৃতজ্ঞতায় বৈতল কাবু হয়ে যায় । তারপর যে-কোনো ছুতোয় চলে যায় অ্যাওলা হরতুকি
ব্রাহ্মীশাক যা পায় তা নিয়ে । বিস্বাদ হবিষ্যি আহারের লোভে থেকেও যায় । প্রথম রাতে
যষ্টিমধু মুখে দিয়ে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে বৈতল । বলেছে,
--- কবিরাজ মশয় একখান কথা কইতাম নি ।
--- কও না, কে না করছে ।
--- না, বাবন বাড়িত খাইতে আমার খুব ডর লাগত ।
--- কেনে বা ?
--- তারা খুব ছুয়াছুয়ি মানইন ত ।
--- আমিও মানি । আমি চিকিৎসা করি । নিয়ম মানিয়া
জীবনধারন করি । তে আমি ছুয়াছুতর বাবন নায় রেবা ।
--- না, আপনার কথা কইয়ার না । আমরার ছাতকো আছিল এক বাবনবাড়ি ।
--- তুমার বাড়ি ছাতক নি । ছাতকর মানুষ বুলে খুব
আড়ুয়া ।
--- আমি কুনু আড়ুয়া নি ?
--- না রেবা, ইতা এক কথার কথা । এক ছড়া মনো পড়ল । হুনো,
‘ছাতক তনে আইলা এক আড়ুয়া, যাইতা বদরপুর ।
সিলট আইয়া জিগার করলা, জৈন্তা কতদূর ।’
নেও কও, কিতা কইছলায় ।
--- না, আমরার ছাতকো আছিল জৈন্তেশ্বরীর মন্দির । অউ মন্দিরর পুকইরো এক মাছ ধরি দিছি পুরইতরে । অউ
বড় বড় কালিয়ারা । বাবনি এইন আছলা বড় ভালা, কইল খাইয়া যাইছ বেটা । আমি তো আদরর পাগল, খাইলাম । জীবনে ভুলতাম নায় সোয়াদ । পুস্তু বাটিয়া রান্দচইন
কালিয়ার মাছর ঝুল, পিয়াইজ উয়াইজ ছাড়া । অত আদর করি
খাওয়াইলা মাসীয়ে । খাওয়াইয়া দেখি হক্কলর উছিত উঠাইলা, ধইয়া আনি রাখলা, আমার উছিত উঠাইলা না । শেষে উঠাইলা, উঠাইয়া ছান করিয়া আইলা ।
--- কেনে ?
--- আমি নু ...
বৈতলের মনে পড়ে দুর্গাবতীর কথা ।
দেশভাগের কথা, ওপারের বৈতল কৈবর্ত, এপারে যে শর্মা । ব্রাহ্মণ । তাই বৈতল শুদ্ধ
করে নিজের বয়ান । বলে,
--- তারা নু চক্রবর্তী বাবন । সবর
উপরে ।
--- তুমার কিতা ?
--- আমার শর্মা । অগ্রদানী বাবন ।
হেড়ম্ব ভট্টাচার্য বা বাট্টি ভট সন্তুষ্ট নয় বৈতলের জবাবে ।
বলে,
--- আম্মক ছয় কইলে কেনে বেটা । আমরা
কুনু আম্মক পাঁচ নি ? বেশ চালাকি করিছ না, পুরা কতা ক ?
--- পুরা কথা কইতাম কেমনে, আপনারা কে কিতা কুনু জানি নি ?
--- আবার চালাকি কররে । ফকরামি নি ?
--- আইচ্ছা, ঠিক আছে কইয়ার, হুন্ততাউ যখন হুনইন । গাইল্লাইন না যেন ।
‘আম্মক এক-অল্প বয়সে লয় ভেক ।
আম্মক দুই-চাল ছাইয়া টুল্লিত থয় খুট ।
আম্মক তিন-যে ছুটলুকর কাছে করে ঋণ ।
আম্মক চাইর-যে থাকে শরিকি বাড়ি ।
আম্মক পাচ – যে শরিক অইয়া মাছ কিনে ।’
আর আমি অইলাম আম্মক ছয় । অউ শেষ
।
--- না আরো আছে আমি জানি । তুই আমারে
কইরে, আমি ঘরজামাই এর লাগি কইরে । ক
কইলা আম্মক চৌদ্দ কিতা ? তুইতো বেটা ছয় নায় খালি, তুই আম্মক এগারো ও, তুই পরর কাম করছ বেগার । ই কবিরাজর বেগার খাটিয়া কিতা লাভ
তর । এর থনে জমিদারর বেগার খাট, পয়সা পাইবে ।
--- পয়সা দিলে খাটতাম না কেনে । কত
দিবা ।
--- যত চাছ দিব । ইতা কুনু নাড়ী
টিপিয়া জ্বর দেখা আর ছালি দিয়া বড়ি বানানি নি । জমিদার বাড়িত সব পাইবে । বিয়া
করচছনি, বৌ আছেনি ।
বাট্টি ভট দরিদ্র কবিরাজকে অবজ্ঞা করলেও সোজা কথার
মানুষটিকে ভয় পায় বিলক্ষণ । তাই শৈলেন ঠাকুরের সামনে সব কথা বলার সাহস করেনি ।
বৈতলকে একান্তে ডেকে জানায় যমুনাপ্রসাদ জমিদারের দুর্বলতা । বলে,
--- সুন্দর সান্দর না অইলেও অইব, গতর থাকন লাগব ।