“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর মুকুন্দ দেবনাথের জন্মদিনে

          
৯৭২থেকে ৮২ এই আটবছর আমার বাল্য কৈশোর কেটেছিল শিলচর চণ্ডীচরণ রোডে নালার ওপারে এক ভাড়া  বাড়িতে। পাঠশালা, স্কুল জীবনে পার করে কলেজে পা দেয়া সেই বাড়িতে থেকেই । কাছেই থাকতেন চিত্রশিল্পী মুকুন্দ দেবনাথ। দূর থেকে দেখতাম। লোকের মুখে গল্প শুনতাম । প্রাণোচ্ছ্বল তরতাজা লম্বাটে তরুণ তিনি তখন। তাঁর সবুজ পাঞ্জাবী, সাদা ট্রাউজার আমাকে এতো টানতো যে এক সময় আমি নিজেও এক জোড়া তেমন সংগ্রহ করে নিয়েছিলাম। স্কুল ডিঙিয়ে ধীরে ধীরে আলাপ হয়। এই পাড়াতেই ক্লাব ছিল 'শান্তসেনা' সেখানে খুব কাছাকাছি পরিচয়ের সুযোগ হয়। আসতেন তিনি মাঝে মধ্যে। পাবলিক স্কুল উচ্চতর মাধ্যমিকের স্বীকৃতি পেলে পরে এক অনুষ্ঠানে প্রথম তাঁর পাশে বসবার সুযোগ যেদিন পেয়েছিলাম আর কথা হচ্ছিল, হাতে যেন চাঁদ পেয়েছিলাম। চাঁদই বটে। কবি গল্পকার, গাইয়ে বাজিয়ে অনেককে চিনতাম শহরের। ছবি আঁকিয়ে একজনই মুকুন্দ দেবনাথ। পরে তাঁর বাড়ির ভেতরে গিয়ে ছড়ানো ছেটানো ছবি দেখবার সৌভাগ্য অনেকদিনই হয়েছিল। তখনতো আর গ্যালারিতে প্রদর্শনী হতো না । এখন যেমন সন্দীপনেরা  রীতিমত এক চিত্রশিল্প আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। তখন সেসব ছিল না। সেই মুকুন্দ দেবনাথকে আজ সকালে এভাবে ছবিতে দেখে প্রথমে চিনতেই পারিনি। মন খারাপ হয়ে গেছিল, দেখে যে নিজের জন্মদিনের কেকটা নিজে কাটতে পারছেন না। আবার ভালো লাগছে যে ছাত্রেরা এবং বাড়ির লোকে জন্মদিনটি মনে রেখেছেন।


              শিলচরের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের চিত্রশিল্পের শিক্ষক ছিলেন মুকুন্দ দেবনাথ। ২০০২ সালে অবসর নেন। সেই হিসেবে শনিবার ৭সেপ্টেম্বর,১৩  তাঁর ৭২বা ৭৩তম জন্মদিন হবে। এমন কিছু বয়স হয় নি, আরো বহুদিন দাপটে চালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ২০০৯ প্যারালাইসিস হয়ে তাঁকে অক্ষম এবং চলৎশক্তিহীন করে ফেলে। তাঁর দেবনাথ আর্ট স্কুল এখনো আছে। চালান তাঁর সুযোগ্যা কন্যা ডালিয়া দেবনাথ। ছবিতে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে হাত ধরে বাবার জন্মদিনের কেক কেটে দিচ্ছেন। তিনি হয়তো কিছুই বলেন নি, কিন্তু কোত্থাও কি একটুকু আনন্দের বান ডাকে নি?   শুধু ছাত্ররাই নয়, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাদের অভিবাবকেরাও। সংবাদ পড়ে যা জেনেছি, তাঁর স্ত্রী সেদিনের অনুষ্ঠানে চোখের জলে সোনাঝরা সেদিনের গল্প শুনিয়েছিলেন। মনে হলো, আমরাও শরিক হই এই উৎসবে। তাঁর স্মৃতি এবং কীর্তিকে সামান্য হলেও ছড়িয়ে দেয়া শুরু করি আন্তর্জালে। ঈশানের পুঞ্জমেঘ ফেসবুক গ্রুপে  সেটি শুরু, সেই প্রক্রিয়াতেই তাঁর উত্তরসুরি সন্দীপন দত্ত পুরকায়স্থ কিছু ছবি আর ভাস্কর্য দেখালো তাঁর । সেগুলোও এখানে ছড়িয়ে দিচ্ছি নিচে। আশা করছি, তিনি সুস্থ হোন, নিজের চোখে দেখুন, এখন শহর শিলচরে ছবি আঁকিয়েরা কেমন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আশীর্বাদ করুন তাদের নিজ হাতে। 
মনসামঙ্গল; তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলোর একটি। শক্তপদ ব্রহ্মচারীর একই নামের কবিতার চিত্রায়ন।কবিতাটি এখানে পাবেন। ক্লিক করুন
TITLE- CARD PLAYERS



কোন মন্তব্য নেই: