“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

'কলি’র অবতারদিগের বিষয়ে দু'ছত্র

                                                               ।।সপ্তর্ষি বিশ্বাস।।

১।

              র্ম এবং ঈশ্বর-বিশ্বাস যে সম্পূর্ণ ভিন্ন বস্তু তা আজ আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখেনা। কোনোদিনই রাখেনি প্রকৃত প্রস্তাবে। ‘ধর্ম’ সর্বদাই পালন করেছে, আজো করছে নানা “প্রয়োজনীয়” ভূমিকা – কখনো রাজার, কখনো মন্ত্রীর, কখনো সেইসব “প্রয়োজন” এর চাকার গুঁড়িয়ে যাওয়া মানুষও তার কথা, ব্যথা নিয়ে এসেছে “ধর্ম” প্রাঙ্গনে । কখনো ঐ “ধর্ম” সামাজিক উপকার করেছে, কখনো অপকার। কাজেই ঐ “ধর্ম” কে দিয়ে ‘ভালো’-‘মন্দ’ দুইটি কাজই যাঁরা করিয়ে নিতে গেছেন তাঁদের প্রয়োজন পড়েছে যুক্তির, তর্কের। যেমন ‘বিধবা বিবাহ’কে আইনসিদ্ধ করতে গিয়ে যুক্তি তর্কের পথে যেতে হয়েছে বিদ্যাসাগর মহাশয়’কে। কিন্তু বিদ্যাসাগর কদাপি ‘দেব দর্শন’ পেয়েছেন বলে দাবী করেননি। কদাপি ঐ পথে হেঁটেছেন বলেও জানা নেই। একই ভাবে ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতারা যখন ‘ঈশ্বর এক না বহু’ নিয়ে তত্ত্ব ও তর্ক জুড়েছেন তখনো নিজস্ব ঈশ্বর বিশ্বাসের চেয়ে ‘ধর্ম’ নামক প্রতিষ্ঠানই পেয়েছে প্রাধান্য। ঐ প্রাধান্যের পেছনেও সমাজ ও যুগের দাবী এবং তার সাপেক্ষে রামমোহন থেকে রাজনারায়ণ বসু – সবারি সামাজিক উন্নয়ন-ইচ্ছার তাড়নাটিও ছিল। কিন্তু নিজস্ব ঈশ্বর-বিশ্বাসের কাহিনী কি ঠিক একই রকম? মনে হয়না। রামপ্রসাদ সেন’কে আমরা কি দেখেছি কেশব সেন’এর ভূমিকায়? লালন কে? হাসন্‌ রাজা’কে? হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে লালন বা হাসন রাজা’র মতো যাঁরা নিজস্ব বিশ্বাস নিয়েও সাধারন লোকের আওতার ভেতরেই ছিলেন তাঁদের কে সেই সাধারন মাষুষদের দুঃখের পাশে দাঁড়াতে হয়েছে – যেমন লালন গিয়েছিলেন জমিদারের কাছে প্রজা সাধারনের হয়ে দরবার করতে। দাঁড়িয়েছিলেন ঠাকুর পরিবারের বিপক্ষে কাঙ্গাল হরিনাথকে সহায়তা করতে।  কিন্তু তার সঙ্গে ‘ধর্ম’ নামক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সমাজের ভালো বা মন্দ করবার অভিপ্রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ‘ঈশ্বর’ জিনিসটিকে যদি সাদামাটা ভাবে মানবমনের শুভ আলোকের প্রতীক বলে ধরে নিই তাহলে লালনের বা তাঁর মতো আরো অনেক ‘বিশ্বাসী’র সামাজিক আন্দোলনে জড়িয়ে পরার অর্থ পাওয়া যায় সহজেই আর সেই জড়িয়ে পড়া তত্ত্বতাড়িত নয় কদাপি। কিন্তু যে মানুষ বা মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের ‘বিশ্বাসী’ বলে দাবী করে, দাবী করে ঈশ্বরই তাদের কানে কানে বলে যান, রোজ, ছাতে, যে কি কি করতে হবে, লিখতে হবে – ইত্যাদি, সেরকম একদল মানুষ যখন ২০১৩ সালে এসে প্রমাণ করতে চায় যে বর্ণাশ্রম শুধু যুক্তিপূর্ণই ছিল না অদ্যাপি তার প্রয়োজন রয়ে গেছে অথবা বলতে চায় যে বৌদ্ধ ধর্ম মূলতঃ নিজের মুক্তি নিয়ে মেতে থাকার ধর্ম – ইত্যাদি তখন সন্দিহান হয়ে উঠতে বাধ্য হই।

     
    ব্রাহ্ম ধর্মের ইতিহাসের একটা সময় রাজনারায়ণ বসু হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কয়েকটি বক্তৃতা করেছিলেন।

          হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বক্তৃতা দিতে স্বামী বিবেকানন্দ গিয়েছিলেন শিকাগো। ঠিক। তবে ব্রাহ্ম ধর্মের ঐ সময়টাতে  ঝাঁকে ঝাঁকে বাঙ্গালীর ট্যাঁশ ফিরিঙ্গিয়ানা আটকাতে ব্রাহ্ম ধর্মের ঐ ভূমিকাটি ছিল সামাজিক প্রয়োজন। বিবেকানন্দের শিকাগো যাওয়া ও হিন্দুধর্ম বিষয়ে বক্তৃতা যতোনা ‘হিন্দু ধর্ম’ টির জন্য প্রয়োজনীয় ছিল তার চেয়েও বেশী প্রয়োজনীয় ছিল পরাধীন ভারতবর্ষের জন্য। ঐ বক্তৃতায়, ঐ ব্যক্তিত্বে সারা বিশ্ব ‘ভারত’ নামক দেশটিকে নতুন করে দেখেছিল। ভেবেছিল তার পরাধীনতা নিয়ে। যে কোনো কারনেই হোক নিবেদিতা’র মতো মহিলা এসে আপনাকে নিযুক্ত করেছিলেন ভারতীয়দের সেবায়। এতদ্‌ভিন্ন বিবেকানন্দের ঐ শিকাগোযাত্রা আর ঐ বক্তৃতা আমার কাছে কোনো অর্থ রাখেনা। আজ, এই গ্লোবালাইজ্‌ড্‌ যুগে যদি কোনো মানুষ বিবেকানন্দের চেয়েও বেশী কৃচ্ছ সাদন করে এন্টার্কটিকায় কোনো ধর্মমহাসভায় গিয়ে একরম একটি বক্তৃতা করে তাকে নিয়ে আমি এক লহমা সময়ও নষ্ট করবোনা ।

          এখানে এ’ও বলে রাখা দরকার যে, শ্রীরামকৃষ্ণ বা চৈতন্যদেবেরা যেভাবে ‘ঈশ্বর’কে দেখেছেন বলে দাবী করেছেন ব্রাহ্মরা তা করেননি। অন্ততঃ যাঁর কথা বল্লাম সেই রাজনারায়ণ বসু’ত করেননি। বিবেকানন্দ  করেছেন। হ্যাঁ, নিজস্ব ঈশ্বর-বিশ্বাস আর ‘ধর্ম’ নামক প্রাতিষ্ঠানিকতাকে মিলিয়ে দেওয়ার পথে তিনিও এক পথিকৃৎ বটে। কিন্তু সেই বিবেকানন্দই সারা ভারত চষে বেড়িয়েছেন। অস্পৃশ্যতার প্রতিবাদ ও প্রতিকার করার উদ্যম নিয়েছেন নিজের মতো করে। তাই তাঁকে  ‘স্বঘোষিত’  God-man বলা যাবেনা আর তা ছাড়া তাঁর সময়েও দু লাইন মেক্‌লে পড়ে আর দুই বোতল শেরী গিলে বাঙ্গালীর ট্যাঁশ্‌ ফিরিঙ্গি হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা বিদ্যমান ছিল। ফলে যেকোনো অছিলায় বাঙ্গালীকে, ভারতীয়দেরকে ঐ খপ্পড় থেকে বাঁচানোর চেষ্টার নিরিখে বিবেকানন্দের কার্য্য কলাপের একটা চলনসই অর্থ পাওয়া যায়। তবে বিবেকানন্দ নিয়ে কথা বেশী না বাড়ানোই ভালো কেননা তাঁর কথিত প্রতি পঞ্চম বাক্য তাঁর প্রথম বাক্যের বিরোধিতা করে। তিনি’ত এ’ও বলেছেন ঈশ্বর লাভের প্রয়োজনে তাঁকে যদি মানুষ খুনও করতে হয় তিনি তা করতে প্রস্তুত ( তিনি বলেছেন আর নিজ বিশ্বাসের মূল্যে মারতে এবং মরতে পারায় প্রকৃৎ হিম্মৎ তো দেখিয়েছে সত্তরের সেই ছেলেমেয়েরা – কিন্তু তারা বিবেকানন্দ বা নিবেদিতা উপাধিপ্রাপ্ত হয়নি)।

             অন্তিম প্রস্তাবে বলতে চাইছি যে যাঁরা “ধর্ম”কে দিয়ে কিছু একটা করিয়ে নিতে চেয়েছেন, আজো চান – কেশব সেন থেকে আদ্‌বানী, সোনিয়া বা হালের মোদী – এঁদের নিয়ে এই আলোচনা নয়। আলোচনা সেই মানুষটিকে নিয়ে যার সঙ্গে অপর্ণার মৃত্যুর পরের বিবাগী অপুর দেখা হয়েছিল অমরকন্টকে – যে মানুষ রেঁঢ়ির তেলের বাতি জ্বেলে, একা একা তুলসীদাসী  রামায়ণ পড়তো আর স্বপাকে মোটা রুটি খেতো সেই আজবলাল ঝা’ নামের  মানুষটিকে নিয়ে বা অপুরই বাল্যকালে দেখা নরোত্তম গোঁসাই’কে নিয়ে। তাঁদের বিশ্বাসের জন্য কোনো তত্ত্ব, তথ্য কিছুরি প্রয়োজন ছিলোনা। আজো যাঁরা তাঁর মতো প্রকৃতার্থেই বিশ্বাসী তাঁদের দরকার নেই লোক ডেকে তর্ক করে জানান দেওয়ার যে ঈশ্বর এক না বহু, ঈশ্বর রাম না রহিম। কিন্তু হালের সমস্যা অন্য। হালের যে একদল বুদ্ধিমান বাঙ্গালী নিজেদের সেই ‘আজবলাল ঝা’ বা ‘নরোত্তম গোঁসাই’ বলে জানান দিয়ে মাঠে নেমেছেন ,আপাতঃভাবে তাঁদের কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য নেই ( সামাজিক লক্ষ্যও আছে বলে বোঝা যায়না) তবু তাঁরা তাঁদের বিশ্বাসের সমর্থনে যুক্তি খোঁজেন, যুক্তি দেখান । এভাবে যুক্তি দেখাতে গিয়ে, তাঁদেরো যে সমর্থক আছে বাজারে জানাতে গিয়ে আজ কবর খুঁড়ে তুলে আনেন জনৈক কেন্টিশ্‌ কুমারস্বামীর বক্তৃতাকে, কাল নরক থেকে ডেকে আনছেন মাদক ও মেয়ে পাচারের অভিযোগে একদা দেশ ছেড়ে পালানো সেই ‘মহান’ ‘ওশো’কে! পাতার পরে পাতা ঐসব মানুষের লেখার অনুবাদ ও প্রচারে  ( অনায়াস প্রচারে, সভা ডেকে বলবার সাহস ও যোগ্যতার অভাবে ফেস্‌বুকের পাতা ভরাচ্ছেন ) কাটছে তাঁদের দিন।  এঁরা বিজ্ঞানের সমস্ত কিছুর আদ্য শ্রাদ্ধ করেন অথচ কেউ নন বনবাসী! এঁরা কেন  মানুষের অন্তর্গত বিশ্বাসের জায়গাটির সঙ্গে ‘ধর্ম’ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় গুলিয়ে দেওয়ার কাজে কোমড় বেঁধে নেমেছেন? আরো বিপজ্জনক হচ্ছে তাঁদের উদ্দেশ্যটি যা’ই হোক্‌  তাঁদের এই প্রচারের ফলে যা হচ্ছে তা হলো আসারাম’হেন কীটেদের পা রাখার জায়গাটি হতে চলেছে মজবুত। ‘নীচু জাত’এর মানুষদের জন্য যারা আলাদা শ্মশানের দাবী তুলছে বা যারা ‘নীচু জাত’ এর লোক জাতীয় পতাকা তুল্লে গিয়ে খুন খারাবা করছে – সেইসব রাজনৈতিক ও সামাজিক শয়তানদের সমর্থনের ভূমি হচ্ছে শক্ত। - আরো যেটা হচ্ছে এঁদের এই রকমের বেলেল্লাপনা দেখে দেখে আমার মতো মানুষ ‘বিশ্বাস’ – নিজের অন্তর্গত শুভের প্রতি – যদি তাকে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি ‘জীবনদেবতা’ – সেই দেবতারো প্রতি বিশ্বাস তো হারাচ্ছেই – অবস্থা এমনি হচ্ছে যে যদি কোনোদিন কোনো সত্য ‘আজবলাল ঝা’ বা ‘নরোত্তম দাস’এর সন্ধান মেলে তাহলেও লোকে তাদেরকে চিনবেনা, চিনতে চাইবে না। বরং ঘৃণা করবে।

২।

               যদিও আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি জাতিভেদ, সতীদাহ – ইত্যাদি’র জন্ম ও বিকাশ সমস্তই বিশেষ একদল মানুষের স্বার্থে তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে যে সময়ে সেগুলির আমদানী হয়েছিল – জাতিভেদ, সতীদাহ – ইত্যাদি – সেই সময়ের সাপেক্ষে এগুলি ছিল ‘ঠিক’ তথাপি আমাদের বুঝে দেখতে হবে, ক্রমে, সমাজের ক্রম বিকাশের স্তরে স্তরে সেই জিনিসগুলি ঠিক কি ভূমিকা পালন করেছে বা আজই তাদের ভূমিকা ঠিক কি? আরো বড় কথা হলো ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী’ এই কথা প্রমাণবা প্রচারের জন্য ঐ সমস্ত বর্বরতাকে সমর্থনের বা ওশো হেন ধুরন্ধরের অনুবাদ ও উদ্ধৃতির যে কোনো প্রয়োজন নেই তা ঐ ‘আজবলাল ঝা’ বা ‘নরোত্তম দাস’এ প্রমাণিত। ‘ওশো’ র যে বইগুলি বাজারে চলছে সেগুলির থেকে মুনাফা বানাচ্ছে তাদের প্রকাশক। সেই বইগুলি লিখছে, বেনামে, হয় এমন কিছু মানুষ যারা পন্ডিত, যারা বুদ্ধিমান কিন্তু ‘বাজার’ যাদের চেনেনা নয় বাজারের নামী লেখকেরা, বেনামে। বেশী পয়সার জন্য। - এ’ই প্রাথমিক সত্য গুলিকে এড়িয়ে গিয়ে এই মানুষগুলি কি চাইছে ঠিক? এরা নিজেরাই কি তবে বাঙ্গালীর কাছে ওশো’ বেচার ‘পেইড্‌ দালাল’? না’কি এরাই ‘নিও নাজি’র ভারতীয় সংস্করণ?

              এদের নিয়ে আমার কিছু বলবার ছিলনা যদি এরা নিজেদের ‘ঈশ্বরের বরপুত্র’ বলে নিজেরাই ঘোষণা না করত। এটা করায় যা হচ্ছে একদল দুর্বল মস্তিষ্ক ‘বিশ্বাসী’ এদের ধুয়া ধরছে যে ধুয়া’র ধোঁয়ায় এরা সমর্থন করে বসছে তাদের প্রচারিত মতামতকে - জাতিভেদ, সতীদাহসহ এরা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সমস্ত অন্ধকারকে আনয়ন করছে নিজের গহনে যার সুযোগ নিচ্ছে ‘ধর্ম’কে সামনে রেখে যারাই রাজনীতি করে তারা সকলেই ( ভারতবর্ষে ‘প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম’কে ব্যবহার নাকরে রাজনীতি করে এমন কোনো দল কোনোদিন ছিলনা)।  এতে যা হচ্ছে তা হল সৎ ও সরল বিশ্বাস যা থেকে লালনের মতো মানুষের জন্ম বা তাঁকে চিনে নেওয়ার চোখটি সৃষ্ট হওয়ার কথা ছিল তার সম্ভাবনা যাচ্ছে বিলীন হয়ে।

              অন্তিমে বলতে চাই, যে,  ‘স্বঘোষিত বিশ্বাসী’রা বিশ্বাসী নয় আদতে। হয় তাদের নিজেদের বিশ্বাসের ভিত্‌টা এতোটাই দুর্বল যে তাকে খাড়া রাখতে দরকার পরে ওশো’র, আশারামের। নতুবা এরা কোনো না কোনো কুচক্রী গোষ্ঠীর ‘পেইড্‌ দালাল’।

কোন মন্তব্য নেই: