“...ঝড়ের মুকুট পরে ত্রিশূণ্যে দাঁড়িয়ে আছে, দেখো ,স্বাধীন দেশের এক পরাধীন কবি,---তার পায়ের তলায় নেই মাটি হাতে কিছু প্রত্ন শষ্য, নাভিমূলে মহাবোধী অরণ্যের বীজ...তাকে একটু মাটি দাও, হে স্বদেশ, হে মানুষ, হে ন্যাস্ত –শাসন!—সামান্য মাটির ছোঁয়া পেলে তারও হাতে ধরা দিত অনন্ত সময়; হেমশষ্যের প্রাচীর ছুঁয়ে জ্বলে উঠত নভোনীল ফুলের মশাল!” ০কবি ঊর্ধ্বেন্দু দাশ ০

শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১১

মতি-ঝিল

             মানুষের জীবনে কিছু সম্পর্ক এমন হয় যেগুলির কোন নাম থাকেনা। অনাকাঙ্খিতভাবে তৈরী হওয়া এই সম্পর্কগুলি টিকিয়ে রাখা যেমন কঠিন তেমনি নষ্ট করাও সহজ হয়না। আবার এই সম্পর্কগুলির কোন নাম দেওয়া বা অন্যরূপ দেওয়াও দুরূহ ব্যাপার| কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো এই সম্পর্কের অবসান মানে জীবনের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা বোঝায় বা বলা যায় মৃত জীবনের এগিয়ে চলা| ঝিলের সাথে মতির সম্পর্কটাও ঠিক তাই|
          প্রায় বছর দুয়েক আগে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেছে মতি| বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাপুটে ফিল্ড অফিসার| স্বভাব-চরিত্র বা সামাজিক কর্ম–কাণ্ডে তার সুনাম সর্বজন বিদিত| কিন্ত মুশকিল হল এই- পৈতৃক সম্পত্তি না থাকার দরুন তার চলমান জীবন ধারায় অনিশ্চয়তার ছায়া দেখে কেউ কেউ তাকে উপযুক্ত মর্যাদা দিতে চায় না| অনেকে তো আবার অবহেলাও করে| তবে মতির মধ্যে সম্ভাবনা প্রচুর, কোনদিন তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না -এই অভিমত গ্রামের জ্ঞানীগুণী যে কয়জনের, তাদের মধ্যে অন্যতম হল অবিনাশদা| তিনিই একদিন মতিকে বলেছিলেন ঝিলের কথা, মানে ঝিল আর মতির বিয়ের কথা|
          ঝিল, মানে ঝিলমিলকে মতি এর আগে দেখেছে মোট একবার এবং একবারই, কথা হয়নি কখনও| তবে ভাল যে লেগেছিল সেকথা বলেছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের| এমনকী আলোচনাও হয়েছিল সন্ধ্যার অড্ডায়। তাই অবিনাশদার কথায় না বলার কোন কারণ ছিলনা তার কাছে। যদিও ঝিলের বাবার সম্পত্তি ও সামাজকি প্রতিপত্তির কথা কিছুটা সে জানত তবু এই ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায়নি মতি কারণ প্রস্তাবটা যেহেতু অবিনাশদা রেখেছে। এদিকে ঝিলের বিষয়ে তেমন কিছু জানতে পারেনি মতি তবে মোবাইলে কথা হয়েছিল একবার, মাত্র একবারই, তাও অন্যকারণে। এর পর থেকেই ভাল লাগার ইচ্ছেগুলি ডানা মেলতে শুরু করে মতির মনে। কয়েকবার পথে যাওয়া আসার সময় মুখোমুখি হয়েছিল তারা তবে চোখে চোখ রাখতে পারেনি কেউই কারণ এতদিনে তাদের বিয়ের আলাপের কথা জেনে গিয়েছিল ঝিল, আর মতি ছিল যতেষ্ট সংযমী, সম্ভ্রমও বজায় রেখেছিল যথেষ্ট। তখন থেকেই ঝিলের মনে শ্রদ্ধাবোধ জন্মায় মতির প্রতি আর মুগ্ধতায় মজে মতির মন। নতুন সম্পর্কের বীজ বুনা হয়ে যায় নিজের থেকেই।
          এইভাবে চলতে চলতে একদিন মতির বাইকের চাকা এসে থামল এমন এক পয়েন্টে যেখান থেকে একটি পথ যায় পশ্চিমে ঝিলমিলদের বাড়ির দিকে তো অন্য পথটির প্রশস্তি এত বৃহৎ যে চলে যাওয়া যায় যেকোন দিকে। ঠিক তখন পিছন থেকে অবিনাশদার ডাক- ‌‌‌‌‌‌মতি শোন, ঝিলের কথা মন থেকে বাদ দিয়ে দে। ওরা বোধহয় অন্য পাত্র খোঁজছে।
             ...সামনে থেকে একটি বড় গাড়ী আসছে। তাকে পথ করে দিতে সরতে হবে মতিকে। বাঁ পায়ে গিয়ার বদল করে ডান হাতে এক্সিলেটর দাবায় মতি শুধু একবার এবং মাত্র একবারই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পশ্চিমে।

কোন মন্তব্য নেই: